ফারজানা মৃদুলা

০৮ মার্চ, ২০১৬ ০০:০৮

নারী, ভালো আছো তো?

জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেজ বিগত কয়েক বছর ধরেই পৃথিবীর অন্যতম প্রভাবশালী রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে গণ্য হচ্ছেন। সকলেই জানেন, তিনি একজন নারী। পৃথিবীর অন্যতম জনবহুল দেশ ভারতের প্রথম নারী রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন প্রতিভা পাতিল, কংগ্রেসের মতো এশিয়ার একটি ঐতিহ্যবাহী দলকে যোগ্যতার সাথে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সোনিয়া গান্ধী তিনিও নারী। সিপিএন-ইউএমএল’র ভাইস চেয়ারপার্সন বিদ্যা দেবী ভান্ডারী নেপালের প্রথম নারী রাষ্ট্রপ্রধান হয়েছেন। কিছুদিন আগে কলিন্ডা গ্রাবার কিতারোভিচ হয়েছেন ক্রোয়েশিয়ার প্রথম নারী রাষ্ট্রপ্রধান। অতিসম্প্রতি সময়ে নির্বাচনে জয় লাভ করে তাইওয়ানের প্রথম নারী রাষ্ট্রপতি হয়েছেন ডেমোক্র্যাটিক প্রগ্রেসিভ পার্টি (ডিপিপি) প্রধান সাই ইং ওয়েন। এর বাইরেও নারী রাষ্ট্রপ্রধানের সংখ্যাটা নেহাতই কম নয়।

বহিঃবিশ্বে নারীর প্রতিষ্ঠা লাভ এটি খণ্ডচিত্র। এবার দৃষ্টি ফেরানো যাক নিজের দেশের দিকে। বাংলাদেশ নারী প্রধানমন্ত্রী পেয়েছে আজ থেকে ২৬ বছর আগে। হিসেব করলে দুই যুগেরও বেশি সময় হবে। তারচেয়েও লক্ষণীয় হলো প্রায় ২৬ বছর ধরে দেশটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন নারীরা। প্রধানমন্ত্রীর পদটিতে নারীরা যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। দেশের সবচেয়ে বড় দুটি দলের প্রধান নারী। এই সরকারের আমলে আমরা পেয়ে গেছি জাতীয় সংসদের প্রথম নারী স্পিকার। দেশের সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীরা দক্ষতার সাথে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। দেশের ক্ষমতার কেন্দ্রে নারীদের দৃপ্ত পদচারণার চিত্র এটি।

এবার একটু ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখা যাক, বিশ্বজুড়ে বাংলার নারীদের পদচারণা। দেশের সীমানা ছাড়িয়েও বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের নারীরা পদচিহ্ন এঁকে চলেছেন। ২০০১ সালে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সপ্তম মহাসচিব নির্বাচিত হন বাংলাদেশের আইরিন জুবাইদা খান। যিনি আইরিন খান নামে অধিক পরিচিত। তিনি হচ্ছেন প্রথম বাংলাদেশী নারী, প্রথম এশিয় এবং প্রথম মুসলিম নারী যিনি পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ মানবাধিকার সংস্থার শীর্ষপদে আসীন হন। নারীদের প্রতি দাঙ্গার বিরুদ্ধে বৈশ্বিক অভিযানের সূচনা হয় এই কীর্তিময়ীর হাতে।

আমাদের প্রধানমন্ত্রী দেশের সীমানা ছাড়িয়ে পৃথিবীর অগ্রগণ্য রাষ্ট্রপ্রধানদের একজন হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। সম্প্রতি ওয়াশিংটনভিত্তিক একটি প্রভাবশালী ম্যাগাজিন জরিপে বিশ্বের সেরা চিন্তাবিদদের তালিকা ‘ডিসিশন মেকার্স’ হিসেবে তেরোতম স্থান উঠে এসেছে তাঁর নাম।

পৃথিবীর দিকে দৃষ্টি মেলে তাকালে কিংবা নিজের দেশের দিকে তাকালে নারীদের উঠে আসার, প্রতিষ্ঠা পাওয়ার কিংবা নেতৃত্ব দেওয়ার অনেক বড় বড় উদাহরণই চোখে পড়ে। এসব দেখে আপাত দৃষ্টিতে মনে হয় নারীরা বুঝি নিজেদের প্রাপ্য মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন। মানে নারীর অধিকার বলতে আমরা যে বিষয়টি বুঝাই সেটা। কিন্তু আসলে কি তাই? নাকি এটা শুধুই ক্ষত-বিক্ষত, ঘুণে ধরা বইয়ের উপরে লাগানো সুন্দর মলাট?

আমরা যদি তৃণমূল পর্যায়ের নারীর দিকে চোখ রাখি তাহলে কি তাই দেখতে পাই না? তৃণমূল বলছি কেন, কোন পর্যায়েই তো আসলে নারী ভালো নেই। তা তিনি অজঁপাড়া গায়ের কোন গ্রাম্য বধূ হোন আর ইট-কাঠের নাগরিক জীবনের তথাকথিত আধুনিকা কিংবা শিক্ষিতা নারী হোন। আপনাকে দেখে যে নারী হাসিমুখে সম্ভাষণ জানাচ্ছেন তিনি কি আদৌ ভালো আছেন? আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি প্রতি একশজন নারীর পঁচানব্বইজনই আসলে ভালো নেই। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে পুরুষ নিয়ন্ত্রিত সমাজে তাদের কোন না কোন বিড়ম্বনার মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে। সেই বিড়ম্বনা কখনও বেদনার, কখনও অপমানের, কখনও অমানবিক পর্যায়ের।

জীবনে কখনও ‘ইভ টিজিং’ এর শিকার হননি এমন একজন নারীও খুঁজে পাওয়া যাবে বলে আমার মনে হয় না। চলতি পথে প্রতিমুহূর্তে তাদের অজানা আশঙ্কা নিয়ে চলতে হয়। নিজের দেশে, নিজের শহরে এমনকি নিজের পাড়ার গলিতেও নারী নিশ্চিন্ত, নির্ভার নন। নিজের ঘরেও নারী অনেকসময় নিজেকে নিরাপদ মনে করতে পারেন না। এর ভুরি ভুরি উদাহরণ আমরা বছরজুড়ে পেয়ে যাই সংবাদপত্রের পাতা ধরে। নিজের ঘরই বা বলছি কেন? নারীর আবার নিজের ঘর! একথা বলছি কারণ নানা পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে আমার কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা হয়েছে। তার দু’একটা উল্লেখ করতে চাই।

সালমার (ছদ্মনাম) বিয়ে হয়েছিলো প্রায় দুই যুগ আগে। অজোপাড়া গাঁয়ের সেই নারীর দু’টি সন্তান। তারাও বড় হয়ে গেছে। সন্তানরা তাদের আপন ঠিকানা পেয়ে গেছে ঠিকই। কিন্তু এই দীর্ঘ জীবনে সালমার আর নিজস্ব ঠিকানা গড়ে উঠতে পারেনি, নিজের একটা স্বতন্ত্র পরিচয়ও না। সালমা কথা প্রসঙ্গে একদিন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেছিলেন- বুঝলেন আপা, কখনও আমি অমুকের বউ, কখনও অমুকের মা। এই আমার পরিচয়। বিয়ের আগে ছিলাম বাবার বাড়িতে, বিয়ের পর স্বামীর বাড়ি কিংবা শ্বশুর বাড়িতে। নিজের যেন আলাদা কোন অস্তিত্ব নেই। নেই মত প্রকাশের অধিকার। এতবছর সংসার করার পরও আমার কথার কোন গুরত্ব নেই সংসারে। কিছু বলতে গেলে শ্বাশুড়ি হাঁক দিয়ে উঠেন, তুমি না বাড়ির বউ, এত কথা কিসের? চুপ থাক। স্বামীর কথার বাইরে যাওয়া যাবে না, এটা না হয় মেনে নিয়েছি। কিন্তু আমি জানি এরপর ছেলে সংসারের হাল ধরবে। তখন ছেলের পরিচয়ে পরিচিত হতে হবে। ছেলের কথার বাইরে গিয়ে কিছু বলতে পারবো না ভয়ে। কারণ ছেলে যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, বুড়ো বয়সে যাবো কোথায়, খাবোই বা কিভাবে। আসলে আমি কে?

গ্রামের অল্প শিক্ষিত এই নারীর প্রশ্নের জবাব আসলে আমার জানা নেই। সালমা না হয় শহুরে আধুনিকতা কিংবা তথা কথিত নারী অধিকারের আবহের বাইরের একজন মেয়ে। কিন্তু আমাদের শহুরে জীবনে বেড়ে উঠা মেয়েরা কতটা পারছেন নিজের অধিকার আদায় করে নিতে। কতটা পারছেন নিজের বিকাশ সাধন করতে কিংবা নিজেকে প্রমাণ করতে? নিজের আরেকটি অভিজ্ঞতার কিছুটা এখানে উল্লেখ করতে চাই।

সামিয়া দেশের সেরা একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর। পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে যাওয়ার প্রায় সাথে সাথে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন। মাত্র তিন বছরের মাথায় অসাধারণ কর্মদক্ষতা দেখিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠানের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে নিজেকে নিয়ে যান। এসময় পারিবারিকভাবে বিয়ের আয়োজন করা হয়। স্বামীও দেশের একটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েট। সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। সামিয়া ভেবেছিলেন, এই পর্যায়ের একজন মানুষ নিশ্চয়ই তাঁকে মূল্যায়ন করবেন। বিয়ের পর প্রথম প্রথম তাই মনে হলো। সামিয়া পড়ার পাঠ চুকানোর পর আরো তিনবছর চাকুরী করেছেন। তাই আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে বেশি বয়সে বিয়ে। পরিবার, আত্মীয় স্বজনের চাপ সন্তান নিতে হবে। সেই কাজটি করতে গিয়ে দেখা গেলো সন্তান লালন-পালন করে তার পক্ষে আর কর্মস্থলে ফেরা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ রাজধানীতে স্বামী-স্ত্রীর সংসারে আর কোন আত্মীয় নেই। সামিয়াকে নিজের ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করতে হলে নিজের জন্ম শহরে ফিরতে হবে। সেখানে হয়তো মায়ের কাছে সন্তানকে রেখে তিনি চাকুরী করতে পারবেন। কিন্তু সেখানে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ালো স্বামীর ক্যারিয়ার। কারণ স্বামী চেষ্টা তদবির করলে হয়তো জন্ম শহরে ডেপুটেশনে চলে আসতে পারবেন। কিন্তু তাতে তাঁর স্বাভাবিক পদোন্নতি ব্যাহত হবে। ভবিষ্যতের অংক মিলাতে গিয়ে সামিয়াকে স্বামীর চাকুরীটিকেই প্রাধান্য দিতে হল। নিজের উজ্জ্বল ক্যারিয়ারকে বিসর্জন দিলেন তিনি। যদিও দু‘জনে আলোচনা করেই সিদ্ধান্তটা নিলেন। কিন্তু তাতে তো নিরবে নিভে গেলো সামিয়া নামের বহুমুখী প্রতিভাবান একটি মেয়ের স্বপ্ন।

সামিয়া তারপরও সান্তনা পেতে পারেন, সিদ্ধান্তের বেলা স্বামী তার সাথে অন্তত আলোচনা করেছেন। শান্তার বেলায় সে সান্তনাটুকুও ছিলো না। কারণ ভালো ফলাফলের স্বাক্ষর রেখে গ্র্যাজুয়েশন করা মেয়েটির বিয়ে হয় পারিবারিকভাবে। বিয়ের পর শান্তা আবিস্কার করলেন তিনি অতি রক্ষণশীল পরিবারের বেড়াজালে আটকা পড়েছেন। অর্থনীতি বিষয়ের ছাত্রীটি ইন্টারনীশিপ করেছিলেন বেসরকারী একটি ব্যাংকে। পরবর্তীতে একটা ব্যাংকে চাকুরীও হয়েছিলো। কিন্তু বিয়ের পর পাত্র পক্ষের একটাই কথা, বাড়ির মেয়ে বেগানা (অপরিচিত) পুরুষের সামনে বসে থাকবে। আমাদের কি টাকার অভাব পড়েছে নাকি যে ঘরের বউকে বেগানা পুরুষের সামনে নাচিয়ে পয়সা রোজগার করাবো।

এই হলো নারী মুক্তির শহুরে নমুনা। এভাবে প্রতিনিয়ত নারীকে নিরবে নিজের সাধ, স্বপ্ন, ক্যারিয়ারকে বিসর্জন দিতে হচ্ছে। একসময় বার্ধক্য আসে। জীবনেরও অবসান হয়। কিন্তু জীবনের চাওয়া আর পাওয়ার হিসেবে গড়মিল থেকে যায়। আমরা তার কতজনের খোঁজ রাখি।

নারী স্বাধীনতা সম্পর্কে রোকেয়া বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে (১৮৮০-১৯৩২) বলেছিলেন, ‘স্বাধীনতার অর্থ পুরুষের ন্যায় উন্নত অবস্থা বুঝিতে হইবে। পুরুষের সমকক্ষতা লাভের জন্য আমাদিগকে যাহা করিতে হয়, তাহাই করিব। যদি এখন স্বাধীনভাবে জীবিকা অর্জন করিলে স্বাধীনতা লাভ হয়, তবে তাহাই করিব। আবশ্যক হইলে আমরা লেডি-কেরানি হইতে আরম্ভ করিয়া লেডি-ম্যাজিস্ট্রেট, লেডি-ব্যারিস্টার, লেডি-জজ সবই হইব, পঞ্চাশ বৎসর পর লেডি Viceroy হইয়া এ দেশের সমস্ত নারীকে ‘রাণী’ করিয়া ফেলিব। উপার্জন করিব না কেন? আমাদের কি হাত নাই, না পা নাই, না বুদ্ধি নাই? কী নাই? যে পরিশ্রম আমরা স্বামীর গৃহকার্যে ব্যয় করি, সেই পরিশ্রম দ্বারা কি স্বাধীন ব্যবসায় করিতে পারিব না? আমরা যদি রাজকীয় কার্যক্ষেত্রে প্রবেশ করিতে না পারি, তবে কৃষিক্ষেত্রে প্রবেশ করিব। ভারতে বর দুর্লভ হইয়াছে বলিয়া কন্যাদায়ে কাঁদিয়া মরি কেন, কন্যাগুলিকে সুশিক্ষিতা করিয়া কার্যক্ষেত্রে ছাড়িয়া দাও, নিজেরা অন্নবস্ত্র ও উপার্জন করুক।’ বেগম রোকেয়া কত বছর আগেই না এ উপদেশ বাণী দিয়ে গেছেন? আর আমরা এসময়ে এসেও কতদূর এগোতে পেরেছি?

তবে এটাও সত্য যে, পুরুষ শাসিত সমাজে কোনো কোনো নারীর বিস্ময়কর অবদান চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে নারী দুর্বল নয়, সে টিকে থেকে সংগ্রাম করতে জানে। রোমহর্ষক অত্যাচারের মধ্যেও টিকে থেকে কেউ কেউ কখনো কখনো বিস্ময়ও সৃষ্টি করে। তবে এ-ও তো মনে রাখতে হবে, শুধু টিকে থাকাই জীবন নয়। যদি টিকে থাকাই সবকিছু হতো, তবে ক্রীতদাসরা কখনো বিদ্রোহ করতো না। নারী আন্দোলনও ইতিহাস সৃষ্টি করতো না। জীবন সৃষ্টিশীলতা, ইন্দ্রিয়ের স্বাধীনতা, সুখের সন্ধানে পথচলা, প্রতিটি মুহূর্ত স্বাধীনভাবে উপভোগ করা, স্বাধীনভাবে নিজের মতামত ব্যক্ত করা, ক্রমশ মানুষ হয়ে ওঠার সংগ্রাম ও আরো অনেক অনেক কিছু। নারী স্বাধীনতার মূল বিষয়গুলো শুধু গ্রন্থে বন্দী হয়ে থাকার জন্য নয়, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে যদি তার কোনো প্রতিফলন না ঘটে, তবে তা মূল্যহীন।

দক্ষিণ এশিয়ায় নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে পরীক্ষামূলকভাবে তিনটি দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রাধান্য দেয়া হয়। সমন্বিত উন্নয়ন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সচেতনতা বৃদ্ধি। সমন্বিত উন্নয়ন তত্ত্বের মূল দর্শন হচ্ছে- পরিবার ও সামাজিক উন্নয়নের চাবিকাঠি হলো নারী উন্নয়ন। অর্থনৈতিক উন্নয়ন তত্ত্বের মূল বক্তব্য হলো যে বিষয়গুলো নারীর অধস্তনতা সৃষ্টি করে সে বিষয়গুলো সম্পর্কে তাদের সচেতন করে তুলতে হবে। নারীর ক্ষমতায়নের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ক্ষমতার উৎস ও কাঠামোর পরিবর্তন, নারীর সুপ্ত প্রতিভা এবং সম্ভাবনার পূর্ণ বিকাশের সুযোগ, তার ওপর প্রভাব বিস্তারকারী সিদ্ধান্তসমূহে অংশ নিয়ে নিজের জীবন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা ইত্যাদি।

নারী সমাজের জীবনের বাস্তব দিকগুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে তার অবস্থান কোথায় তা তাকে উপলব্ধি করতে হবে। বিশ্বায়নের যুগে তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং কাঠামোগত সংস্কার হয়নি।

বিশ্বের দিকে তাকালে দেখা যাবে একমাত্র নরডিক দেশগুলো ছাড়া বিশ্বের প্রায় সব দেশেই পার্লামেন্টে নারী প্রতিনিধিত্বের হার অতি নগণ্য। উন্নয়নশীল ৫৫টি দেশের জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধিত্বের হার শতকরা ৫ ভাগেরও কম। অন্যদিকে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে এবং সর্বোচ্চ পদে নারী অধিষ্ঠিত হলেও রাজনীতিতে সাধারণ নারীর অংশগ্রহণ কম। যারা এসেছেন তারা পারিবারিক উত্তরাধিকার সূত্রেই রাজনীতিতে এসেছেন এবং আছেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নারীর অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মতো ছিল। শুধু মুক্তিযুদ্ধে নয়, ভাষা আন্দোলন, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন সব জায়গায় ছিল নারীর অংশগ্রহণ। সব আন্দোলনে নারীরা অংশগ্রহণ করেছেন নিজেদের বিবেক-বুদ্ধি এবং দেশ ও ভাষার কথা চিন্তা করে। নয় মাস চলা যুদ্ধে এমন কথা খুব কমই শুনেছি বললে ভুল হবে। মনে হয় শুনতে বা জানতে পারিনি যে কোন দল বা দলীয় বা কোন পুরুষ নারীদের যুদ্ধে যেতে বা অংশগ্রহণ করতে বলেছে। দেশের কথা ভেবে মা-মাটি ও দেশমাতৃকার কথা ভেবেই নারীরা অংশগ্রহণ করেছিল স্বাধীনতা যুদ্ধে। বরং এমন অনেক নজির আছে যে পরিবার থেকে নারীদের যেতে দেয়নি বা দেবে না জেনে লুকিয়ে তারা যুদ্ধে নেমেছেন।

এমন অনেক ঘটনা জেনেছি যে, বাবা-ভাইয়ের হত্যার প্রতিশোধ নিতে মায়েরা-মেয়েরা অস্ত্র হাতে নিয়েছেন। অনেকক্ষেত্রে নিজের সম্ভ্রম হারিয়েছেন, হারিয়েছেন স্বাভাবিক জীবন। এসব আমাদের সচেতন করে তোলে, জাগ্রত করে তোলে, বিবেককে তাড়া দেয়।

এতোকিছুর পরও বাংলাদেশের নারীরা থেমে থাকেনি। হাঁটি-হাঁটি পা-পা করে তারা এগিয়েছে অনেকদূর। কিন্তু আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাচ্ছে না।

এ বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত