রেজা ঘটক

০৮ মার্চ, ২০১৬ ০২:৩৭

বাংলাদেশ এখন এশিয়ার দ্বিতীয় সেরা দল

৬ মার্চ এশিয়া কাপ টি২০ ফাইনাল নিয়ে মন খারাপ থাকায় কিচ্ছু লিখিনি। আজ শরীর খারাপ তবুও না লিখে পারছি না। টিম টাইগার্সদের অভিনন্দন এশিয়া কাপ টি২০ রানার আপ গৌরব অর্জনের জন্য। টি২০ ফরমেটে বাংলাদেশ এখন এশিয়ার দ্বিতীয় সেরা দল। আমাদের এক নম্বর হবার সুযোগ ছিল, কিন্তু আমরা সেই সুযোগ যথার্থভাবে কাজে লাগাতে পারিনি। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং কোনো সাইডে কাল আমাদের দেখার মত আহামরি তেমন কিছু ছিল না। রোববার দিনটা আমাদের ফেবার করেনি।

এতবড় ফাইনালে ভারতের মত অভিজ্ঞ একটি দলের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই করতে হয়েছে সামান্য পুঁজি নিয়ে। তবুও আমরা সম্মানজনক রান করেছি, হেরেছি কিন্তু এই হারায় হারানোর কিছু নেই। একবার ভাবুন তো ভারত কাল হারলে, ধোনি'র বাড়িতে কয়টা ঢিল পড়তো? কিংবা ভারতীয় মিডিয়া টিম ইন্ডিয়াকে কী করতো? তাই এই হারায় আমি কষ্ট পেলেও খুশি। আমরা টাইগার্সদের নিঃস্বার্থ সমর্থন দিয়ে যাব। একদিন আমাদের টাইগার্স বাহিনী নিশ্চয়ই বিশ্বকাপ জয় করবে। এটাই আমি বিশ্বাস করি।

নির্ধারিত সময়ে খেলা শুরুর দেড় ঘণ্টা আগে যে কালবৈশাখী আঘাত হেনেছিল, প্রকৃতির সেই বৈরী আচরণ আমাদের স্বপ্নকে আসলে তছনছ করে দিয়ে গেছে। হঠাৎ প্রকৃতি'র এমন বৈরী হয়ে ওঠা আসলে কীসের লক্ষণ? মানুষ যখন বারবার অন্যায়, অবিচার, পাপ করে শেষ সীমা লঙ্ঘন করে, তখন প্রকৃতি ব্যালান্স করার জন্য বৈরী আচরণ করে। এমনটা আমি নিজে বিশ্বাস করি। নি"সন্দেহে আমরা যোগ্যতম দল হিসাবেই এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠেছি। কিন্তু আমাদের টিম ম্যানেজমেন্ট ফাইনালে ওঠার পর কী করেছে? আমাদের সাংবাদিকরা কী করেছে? আমাদের আয়োজকরা কী করেছে? আজ বেশি কথা বলব না। অল্পকথায় বলি, আমাদের টিম ম্যানেজমেন্টে বড় ধরনের একটা ঝামেলা আছে। টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কোচ এবং খেলোয়াড়দের মধ্যে একটা অঘোষিত অদৃশ্য এমন কিছু ঘটেছে, যার প্রতিফলন আমরা মাঠে টের পেয়েছি। কোনো খেলোয়াড়ের মধ্যে কাল উচ্ছ্বাস ছিল না! কারণ কী? টস হেরেছি তো কী হয়েছে? ম্যাচ খেলতে হবে ছক কসে, স্ট্রাটেজি করে।

কার্টেল ম্যাচে ১৫ ওভারের পুরো ৯০টি বলকেই পুরোপুরি হিসাবে নিতে হবে। আমরা কী সেই হিসাব ঠিকমত করেছিলাম? করলে কতটা আস্থা ও কৌশলের সঙ্গে সেটি করেছিলাম? আমাদের রান এবং উইকেটের হিসাব কেমন ছিল? আমাদের ব্যাটিং অর্ডার কেমন ছিল? আমাদের বোলিং স্ট্রাটেজি কেমন ছিল? আমাদের ফিল্ডিং স্ট্রাটেজি কেমন ছিল? যে সাংবাদিক মাশরাফি'র অবসর নিয়ে প্রশ্ন করেছেন, তার কাণ্ডজ্ঞান নিয়ে আমি সন্দিহান। পুরো ১৬ কোটি মানুষের দায়িত্ব যার ঘাড়ে, কখন কোন মুহূর্তে সেই মানুষকে কেমন প্রশ্ন করা উচিত, সে বিষয়ে যাদের ন্যূনতম জ্ঞান নাই, তাদের সাংবাদিকতা পেশায় সত্যি সত্যি মানায় না। টিকিট নিয়ে কালোবাজারির যে কাহিনী ঘটল, এটা প্রকৃতি সহ্য করতে পারেনি। তাই এই কালবৈশাখীর আগমন! আর সেই কালোবাজারিতে সাংবাদিকদের একটা অংশ সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিল, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। টিকিট কালোবাজারিদের জায়গা হওয়া উচিত জেলখানায়, কোনোভাবে গ্যালারিতে নয়। আমি এসব নষ্টদের ধিক্কার ও ঘৃণা জানাই।

ঝড়ের পর ম্যাচ যখন ২০ ওভার থেকে ১৫ ওভারে ঠেকল, তখন নতুন স্ট্রাটেজি করায় আমরা অনেক পিছিয়ে ছিলাম। অভিজ্ঞ দল হিসাবে এবং ভারতের ক্যাপ্টেন ধোনি'র কারিশমার কাছে আমরা আসলে হেরে গেছি। টস হারার পর থেকেই সেই সত্যিকার হারের শুরুটা হয়েছে। এসব হিসাবে নিলে আমরা ভারতের তুলনায় এখানেই ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়েছিলাম। প্রথমেই বলি, একাদশ নির্বাচনে আমাদের একটা বড় ভুল ছিল। ম্যাচ যেহেতু কার্টেল হচ্ছে। পুরো ২০ ওভার ম্যাচ না হয়ে ১৫ ওভার হচ্ছে। আর পিসটা যেহেতু ব্যাটিং পিস। তাই একাদশ নির্বাচনে আমি চার ফাস্ট বোলার রাখার বিপক্ষে। আবু হায়দার রনি একেবারে নতুন ছেলে। তাকে নিয়ে ফাইনালের মত বিগ ম্যাচে এই বাজিটা ধরা একদম উচিত হয়নি। বরং আরাফাত সানি উনিং কম্বিনেশনে একাদশে ছিল। উইকেটও পাচ্ছিল। সানিকে একাদশে রাখাটাই যথার্থ ছিল। মিথুনের জায়গায় নাসিরকে নেওয়ায় কিছুটা যুক্তি আছে। নাসির ফিল্ডিং এবং বোলিং করে কিছুটা পুষিয়ে দিতে পারবে। নাসিরের অভিজ্ঞতাও একটা ফ্যাক্টর। বিগ ম্যাচে ভালো খেলোয়াড়ের চেয়ে অভিজ্ঞতা ও সাহস একটা বিশাল ফ্যাক্টর। তাই নাসিরের একাদশে ফেরাটা মোটামুটি ঠিক আছে। কিন্তু সানিকে বাদ দিয়ে রনিকে নেওয়াটা একটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল।

তবুও টস হারার পর আমাদের যখন ব্যাটিং করতে নামতে হলো, তখন আমাদের ব্যাটিং কৌশল কী ছিল? ৯০টা বলের আমরা কয়টা ডট বল দেব? ভারতের মত বড় দলের অভিজ্ঞতার ব্যাপারে আসি এবার। অনেকে বলছিল ধোনি হয়তো এমন কন্ডিশনে জাদেজার জায়গায় কুমারকে একাদশে নেবেন। কিন্তু ধোনি উইনিং কম্বিনেশন বদল করেননি। স্পিনারদের উপরই ভরসা রেখেছেন। শুধু ভরসা নয় ফাইনাল খেলার প্রথম ওভার করিয়েছেন অশ্বিনকে দিয়ে। কারণ কী? এটাও একটা বাজি। আর সেই বাজি এবং কৌশলে ধোনি সাকসেস। তামিম বামহাতি ব্যাটসম্যান আর অশ্বিন ডানহাতি অফ-স্পিনার। প্রথম ওভারে যদি ধোনি নেহারা বা বুমরাকে দিয়ে ম্যাচ ওপেন করাতেন, তাহলে তামিম কিন্তু প্রথম চার বলে ডটের বদলে অন্যকিছু করতেন। বাংলাদেশ ইনিংসে ১৫ ওভারের ম্যাচে প্রথম রানটি আসে পঞ্চম বলে! এটাই আমাদের অনেকটা কোনঠাসা করে দেয়, ম্যাচের শুরুতেই। কিন্তু ষষ্ঠ বলে সৌম্য চার মেরে ধোনি'র কৌশলকে মোটামুটি টেক্কা মারেন।

তামিম প্রথম ওভারের ৫ বল থেকে ১ রান নিলেও পরের ওভারে ফাস্ট বল পেয়ে নেহারাকে প্রথম বলেই চার মেরেছেন। পরের বলটি নেহারা ওয়াইড দিলেন। তামিম যখন মারার জন্য মুখিয়ে ঠিক তখন নেহারার সঙ্গে ধোনি কথা বললেন এবং একটা গুডলেন্থ ডেলিভারি দিলেন নেহারা। পরের দুটি বল তামিম টাইমিং করতে পারলেন না। মানে পরপর তিনটা ডট। পঞ্চম বলে তামিম এক রান নিলেন। কিন্তু ষষ্ঠ বলে সৌম্য আবার ডট দিলেন। কারণ ওটা নেহারার গুডলেন্থ ডেলিভারি ছিল। দুই ওভারে বাংলাদেশের রান ১১। তামিম ১১ বলে ৬, কারণ তামিম একটা ওয়াইড বলও ফেস করেছে আর সৌম্য ২ বলে ৪ রান। তার মানে ১১ বল ফেস করে তামিম ৩ বল থেকে রান নিয়েছেন, বাকি ৮টা ডট। আরে ভাই এটা তো টেস্ট ম্যাচ না যে দুই ওভারে ৯টা ডট বল দিতে হবে!! তাও মানলাম যে উইকেট হারানো চলবে না, তাই বল বোঝার চেষ্টা ওটা। কিন্তু ৯০ বলের খেলায় কয়টা বল বোঝার জন্য এভাবে ডট দিতে হবে?

যে কারণে নন স্ট্রাইকে থাকা সৌম্য'র উপর রান নেবার চাপ তৈরি হলো। তৃতীয় ওভারে বুমরার প্রথম বলটা তামিম আবার ডট দিলেন! পরের বলে ১ রান নিয়ে স্ট্রাইক দিলেন সৌম্যকে। সৌম্য সেটাই চাচ্ছিলেন। কিন্তু সৌম্য এবার বুমরার তৃতীয়, চতুর্থ ও ষষ্ঠ বল ডট দিলেন। পঞ্চম বলে সৌম্য ২ রান নিলেন কিন্তু অল্পের জন্য তামিম রানআউট থেকে বেঁচে গেলেন। তামিম ও সৌম্য'র রানিং বিটউইন দ্য উইকেট খুব দুর্বল ছিল। যেটা মাহমুদুল্লাহ ও সাব্বির ঠিক উল্টো করে দেখিয়েছেন। প্রথম রানটি খুব দ্রুতগতিতে নিয়েছেন। পরের রানটি বলের ও ফিল্ডারের অবস্থান বুঝে নিয়েছেন। এবং সেটাই সঠিক ছিল। চতুর্থ ওভারে তামিম নেহারার প্রথম বলটি ডট দিলেও পরের বলে চার এবং তৃতীয় বলে ১ রান দিয়ে সৌম্যকে স্ট্রাইক দিলেন। সৌম্য নেহারার চতুর্থ ও পঞ্চম বলে পরপর দুটি চার মারলেন। গোটা বাংলাদেশ এই মার দেখার জন্যই মুখিয়ে ছিল। কিন্তু নেহারার ওভারের লাস্ট বলে সৌম্য'র একুট ধৈর্য ধরা উচিত ছিল। গ্যালারিকে খুশি করতে গিয়ে পান্ডিয়ার কাছে সহজ ক্যাচ দিয়ে বরং পুরো বাংলাদেশকে চুপ মারিয়ে প্যালভিলিয়নে ফিরে গেলেন সৌম্য সরকার। তুবও আমি সৌম্য'র আক্রমণাত্মক খেলায় খুশি। ৯ বলে ১৪ রান দলের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় রান।

পাওয়ার প্লে'র লাস্ট ওভার মানে দলীয় পঞ্চম ওভারে বুমরাকে প্রথম বলেই মেরে রানের খাতা খোলেন সাব্বির। বুমরার দ্বিতীয় বলে তামিম ১ রান নিলেন। অবস্থা দেখে মনে হয়েছে তামিম ইচ্ছে করেই নন-স্ট্রাইক সাইডে থাকতে চাচ্ছে। তৃতীয় বলে সাব্বির আবার ১ রান নিয়ে তামিমকে স্ট্রাইক দিলেন। আর বুমরার চতুর্থ বলেই তামিম এলবিডাব্লিউ'র ফাঁদে পড়লেন। তামিম যে ১৭ বল খেলে ১৩ রান করেছেন, এটা দলের জন্য দুঃখের। বরং এই ম্যাচে তামিমের করার কথা ছিল মিনিমাম ১০ বলে ২৫ রান! তাহলে সেটা দলের জন্য পোষাতো। চতুর্থ ও পঞ্চম ওভারে পরপর দুই ওপেনার বিদায় নিলে অনেকটা ব্যাকফুটে চলে যায় বাংলাদেশ। সেখান থেকে শাকিব আর সাব্বির আক্রমণাত্মক খেলেই দলকে আবার টেনে তুলেন। শাকিব ব্যাটিংয়ে একটু অফ-ফর্মে থাকলেও কাল অ্যাটাকিং ব্যাটিং করেছে। শাকিবের ১৬ বলে ২১ রান দলের জন্য প্রয়োজনীয়। তবে দশম ওভারের অশ্বিনের প্রথম বলে শাকিব যখন আউট হয় তখন কিন্তু দল মোটামুটি ভালো অবস্থায়। সাব্বিরকে নিয়ে শাকিব ৩৪ রানের মূল্যবান জুটি গড়েছিলেন। কিন্তু যার উপরে আমরা সবাই বেশি প্রত্যাশা করেছিলাম সেই মুশফিক কালকে আমাদের হতাশ করেছে। দ্বাদশ ওভার তৃতীয় বলে দলীয় ৭৫ রানের মাথায় মুশফিকের দুর্ভাগ্যজনক রানআউট হয়ে যাবার পর ক্যাপ্টেন মাশরাফি পরের বলেই আউট হওয়ায় দল একটু চাপে পড়েছিল। কিন্তু মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ এসে সাব্বিরকে নিয়ে সেই ঝড় সামাল দিয়ে পাল্টা আঘাত হেনে বরং বাংলাদেশকে একটা সম্মানজনক পুঁজি গড়ে দিয়েছেন।

মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ১৩ বলের অপরাজিত ৩৩ রানের ইনিংস বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এবং ফাইনাল ম্যাচের জন্য উৎকৃষ্ট ব্যাটিং। রিয়াদের মত সাব্বিরের কাছ থেকেও আমার আক্রমণাত্মক ব্যাটিং প্রত্যাশা ছিল। সাব্বির ২৯ বলে ৩২ রান করলেও সেটা পুরো সিরিজে সাব্বিরের অন্য ম্যাচের অ্যাটাকিং ব্যাটিংয়ের চেয়ে কাল কিছুটা রক্ষণাত্মক মনে হয়েছে আমার কাছে। রিয়াদ এটা না করলে দল ১০০ রান ক্রোস করতো কিনা সন্দেহ। ৯০ বলের খেলায় মিনিমাম ১৫০ রান করতে পারলে আমরা লড়াই করার মত পুঁজি পেতাম। ক্যাপ্টেন মাশরাফি বলেছেন অন্তত ২০/২৫টা রান হলে খেলাটা অন্যরকম হতো। আমিও তাই মনে করি। আমাদের হাতে উইকেট ছিল, সাব্বিরের আরো অ্যাটাকিং খেলা উচিত ছিল। তবুও সাব্বির-রিয়াদ জুটি যে মূল্যবান ৪৫ রানের জুটি গড়েছিলেন, সেটাই বরং লড়াই করার সাহস জুগিয়েছিল টাইগার্সদের। ভারতের বোলিং অনেক ভালো ছিল। একমাত্র অশ্বিন আর বুমরা ছাড়া ওদের কিন্তু হার্ডিক পান্ডিয়া ও নেহারা মার খেয়েছে। জাদেজা দুই ওভার ভালো করলেও এক ওভারে মার খেয়েছে।

আমরা সবাই জানি বিশ্বে ভারত ওয়ানডে এবং ছোট ফরমেটের খেলায় সবচেয়ে বড় ব্যাটিং শক্তি। তাদের বিরুদ্ধে ১২০ তেমন বড় কোনো টার্গেট না। ১৫০ হলে ভারতকে ভাবিয়ে তুলতো। শুরুতে বোলিংয়ে আল-আমিন রোহিত শর্মাকে আউট করে যে ব্রেকথ্রো এনে দিয়েছিলেন, আমরা সেটা আর কনটিনিউ করতে পারিনি। পাওয়ার প্লে'র পঞ্চম ওভারে শাকিবের প্রথম ওভারে ধাওয়ান আর বিরাট কোহলি মিলে ১৩ রান নিয়েছেন। এই ১৩ রান থেকেই ভারত আক্রমণাত্ম খেলা শুরু করে। তারপর যাকে সামনে পেয়েছে, তাকেই অ্যাটাক করে খেলেছে। ৯০ বলের খেলায় এটা ছাড়া বিকল্পও নাই। পুরো টুর্নামেন্টে শেখর ধাওয়ান যেখানে অফ-ফর্মে ছিলেন, সেখানে কাল রোহিত শর্মা আউট হবার পর তিনি জাত চিনিয়ে নিজের সেরাটা দিয়ে দলকে টেনে তুলেছেন। ম্যাচ জেতানো ব্যাটিং করেছেন ধাওয়ান মাত্র ৪৪ বলে করেছেন ৬০ রান। আর বিরাট কোহলি অ্যাটাকিং খেলোয়াড় হলেও কাল তিনি উইকেট ধরে রেখে বিশাল দায়িত্ব পালন করেছেন। কোহলি'র ২৮ বলে অপরাজিত ৪১ রান তাই ভারতকে জয়ের বন্দরে সহজে পৌঁছে দেয়। কোহলি-ধাওয়ান কাল যে ৯৪ রানের পার্টনারশিপ গড়লেন, এটাই কালকের খেলায় ভারতে চ্যাম্পিয়ন করেছে।

দলীয় ৯৯ রানের মাথায় ধাওয়ান আউট হলেও তখনো ভারতের প্রয়োজন ছিল ১৪ বলে ২২ রান। তাসকিনের করা ১৩তম ওভারের চতুর্থ বলে ধাওয়ান আউট হবার পর তাই ভারতীয় ক্যাপ্টেন এমএস ধোনি আর কোনো রিস্ক নিতে চাননি। অফ-ফর্মে থাকা সুরেশ রায়ানা ও যুবরাজকে টপকে ব্যাটিং অর্ডার বদল করে নিজেই মাঠে আসলেন। তাসকিনের পঞ্চম বলে ২ রান ও ষষ্ঠ বলে ১ রান নিয়ে ধোনি আবারো স্ট্রাইকে গেলেন। আল-আমিন এর আগে দুই ওভারে যেখানে দিয়েছিলেন মাত্র ১০ রান এবং রোহিত শর্মার উইকেট, সেখানে ধোনি আল-আমিনের শেষ ওভারের ৫ বলেই নিয়েছেন ২০ রান। প্রথম বলে ছক্কা, পরের বলে ১ রান, পরের বলে কোহলি মিস ফিল্ডিংয়ের সুযোগ নিয়ে ৩ রান, চতুর্থ বলে আবার ধোনি'র চার, পঞ্চম বলে ছক্কা মেরে খেলাই শেষ করে দেন ধোনি। ষষ্টবারের মত এশিয়া কাপ ঘরে তোলে ভারত।

কাল মাশরাফি'র ক্যাপ্টেনসিতে কোনো চৌকশ বা নতুনত্ব চোখে পড়েনি বরং অসহায় ক্যাপ্টেন যেন সাগরে জাহাজ ডুবছে দেখে অসহায় ছটফট করেছেন। এমনকি খেই হারানো মাশরাফি'র ব্যক্তিগত দ্বিতীয় ওভারে ধাওয়ান ও কোহলি ৯ রান নিয়েছেন। ২ ওভারে দিয়েছেন ১৬ রান। কিন্তু শাকিব প্রথম ওভারে ১৩ আর দ্বিতীয় ওভারে ১৫ রান দিয়েছেন এক্সট্রাসহ মানে মোট ২৮ রান দিয়েছেন দুই ওভারে, যা এই খেলায় ভারতকে পুরোপুরি ১২১ টপকাতে সহজ করে দিয়েছে। ভারতের যেহেতু হাতে উইকেট ছিল, তাই আল-আমিনের উপর ধোনি যখন চড়াউ হলেন, তখন বিশ্বের যে বোলারই হোক না কেন, তার উপর চড়াউ হবার কথা। যে কারণে আলআমিন প্রথম দুই ওভারে ১০ রান ও একটি উইকেট পেলেও শেষ ৫ বলেই দিয়েছেন ২০ রান।

আমরা টস জিতলেও ভারতে ব্যাটিংয়ে পাঠানো হতো। সেক্ষেত্রে খেলা কিন্তু অন্যরকম হতো। ভারত হয়তো আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতো। কিন্তু রান কত করতো? ১২০? ১৩০?১৪০? যা-ই করতো না কেন, তখন আমরা ছক করে ব্যাট করতে পারতাম। মূলত টস হেরেই আমরা প্রথম ধাপ হেরে গেছি। কার্টেল ম্যাচের পুরো সুবিধা ভারত নিয়েছে। এর বাইরে কালবৈশাখী ঝড় আমাদের খেলোয়াড়দের মনে এক ধরনের নির্লিপ্ততা বা রিলাক্সেশন এনে দিয়েছিল। হয়তো অনেকেই ভেবে বসেছিলেন খেলা তো আর হচ্ছে না, অতএব আমরা যৌথ চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাচ্ছি। মনের টেমপার ছোটো ফরমেটের খেলায় একবার হারিয়ে ফেললে সেখান থেকে আর ব্যাক করার সুযোগ থাকে না। অভিজ্ঞ দল হিসাবে ভারত যে টেমপার নিশ্চিত ধরে রেখেছিল। সবচেয়ে বড় কথা কালকের দিনটা আমাদের ছিল না। প্রথমে প্রকৃতি বৈরি আচরণ করেছে, তারপর টস হেরেছি, তারপর দুর্বল ব্যাটিং ছিল। সব মিলিয়ে ১২০ রান ফাইনালের মত বড় ম্যাচে মোটেও নির্ভর করার মত রান নয়। যা ভারতের মত শক্তিধর ব্যাটিং লাইনআপকে ধ্বসাতে পারে।

আমাদের ফিল্ডিং খুব বাজে ছিল। একটা ক্যাচও মিস হয়েছে। স্লিপ না থাকায় ধাওয়ান যে চারটা মারলেন, পরের বলে মাশরাফি একজন ফিল্ডার দেওয়ার পরেও সেখান থেকে চার হলে কিচ্ছু করার নেই। তাসকিন যে ক্যাচ মিস করেছে, সেটা পরে চার হয়ে গেল। সৌম্য আরেকটু চেষ্টা করলে ধাওয়ানের ক্যাচটা নিতে পারতেন। কোথায় যেন হেরে গেছি হেরে গেছি এমন একটা বডি ল্যাংগুয়েজ টাইগার্সদের মধ্যে ভর করেছিল কাল। যা শেষ পর্যন্ত ভারতে জিততে আরো সহায়তা করেছে।

কাল পুরো বাংলাদেশ আবার ক্রিকেটকে ঘিরে একবিন্দুতে মিলেছিল, এটা আমার খুব ভালো লেগেছে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের পর দীর্ঘ ৪৫ বছর পর ২০১৬ সালের ৬ মার্চ পুরো বাংলাদেশ আবার একবিন্দুতে মিলেছিল, সবার মনের চাওয়া এক ছিল, এটা বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে জরুরি। কারণ ছোট্ট এই দেশে এত মতভেদ, এত টানটানি, কোনোকিছুতে আমরা ঐক্যমত হতে পারি না। যা গতকাল ক্রিকেটকে ঘিরে আমরা নিজেদের অন্যসব স্বার্থ ভুলে আবার একবিন্দুতে মিলেছিলাম। যদিও আমাদের সেই চাওয়া পূরণ হয়নি। তবুও আমরা এখন এশিয়ায় দ্বিতীয় সেরা দল, এটাই বা কম কিসে? এই ঐক্য আমাদের একদিন বিশ্বকাপ এনে দেবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। ফাইনালে হারলেও আমাদের হারানোর কিছু নাই। এখন আমাদের এগিয়ে যাবার সময়। বিশ্বের এক নম্বর দলের সাথে দশ নাম্বার দল ফাইনাল খেলেছে, এটাই তো আমাদের গর্ব করার জন্য যথেষ্ঠ। আগামীকাল আবার আইসিসি টি২০ বিশ্বকাপ শুরু হচ্ছে ভারতের মাটিতে। তাই আমাদের মনবল চাঙ্গা রাখতে হবে। আজই টাইগার্স বাহিনী উড়ে যাচ্ছে ভারতে। টিম টাইগার্সদের প্রতি আমাদের আস্থা আছে। তোমরাই একদিন বিশ্ব জয় করবে। যতদিন তোমরা ক্রিকেট খেলবে, ততদিন আমরা তোমাদের সঙ্গে আছি। হারজিত খেলার অংশঅ। এটা খেলা শেষে ভুলে যাওয়াই ভালো। আইসিসি টি২০ বিশ্বকাপের জন্য টিম টাইগার্সের জন্য রইল অন্তুর নিঙরানো শুভ কামনা ও ভালোবাসা। তোমরাই পারবে। এখনও তোমাদের সেরাটা দিতে বাকি, এটা আমরাও বিশ্বাস করি। জয়তু টিম টাইগার্স। জয়তু ক্রিকেট।

রেজা ঘটক : কথাসাহিত্যিক।

এ বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত