সরোজ কান্তি দাশ

১২ মার্চ, ২০১৬ ১৬:৫০

কারাগারের বন্দি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি: উন্নতি নাকি অবনতি?

শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মানিক গোপ বলেন- "Bad-News is news; but Good-News is no NEWS"। আমি প্রায়-ই উনার মুখে উল্লিখিত কথাটি শুনি ও ভাবি, আসলেই তো আজকাল সংবাদের নামে দুঃসংবাদ-ই প্রচারিত হচ্ছে এবং সেই সঙ্গে, এই সমস্ত দুঃসংবাদের সঙ্গে একটি লাভজনক ব্যবসায়ও জড়িত।

'দুঃসংবাদের সঙ্গে লাভজনক ব্যবসায় জড়িত' পঞ্চশব্দ পড়ে, যাঁরা এই-শব্দগুলোর দ্বারা একটি পূর্ণাঙ্গ অর্থ দাঁড় করাতে পারছেন না, তাঁদের উদ্দেশে বলি- ভারতের প্রয়াত চলচ্চিত্রকার 'হৃত্বিক ঘটক' বলেছিলেন- "ভাবো, ভাবো; ভাবার প্র্যাকটিস করো"।

আপনারা কি উনার কথাটি কখনও শুনেননি? শুনে থাকলে ভাবছেন না কেন? আজকাল বেশিরভাগ সময়-ই, পত্রিকা কিংবা যেকোনও সংবাদ মাধ্যমের অকল্পনীয় শিরোনাম দেখে কিংবা শুনে, শুধু অবাক-ই হই না; রীতিমতো আতঙ্কিত হই এবং মাঝেমাঝে বিরক্তও। তাই, একবিংশ শতাব্দীর বিশ-দশকের গত কয়েকবছর আগেও, সপ্তাহের যতোটা সময় পত্রিকা পড়ে ব্যয় করতাম; এখন আর ততোটা সময় পত্রিকা পড়ে ব্যয় করা হয় না। এর-পেছনের কারণ একটি-ই, 'সংবাদ'-এ আমি 'সন্ত্রস্ত' হয়ে পড়েছি।
তবে, কোনও সকালেই পত্রিকার চেহারা না-দেখলে ভালো লাগে না; মনে হয়, আমি ছিটকে পড়ে গেছি, আমার দেশের মানচিত্র হতে; আমি খবর নিলাম না, আমার মা-মাটি-মানুষের। তাই, পত্রিকা পড়া আমার দায়িত্বগুলোর একটি অন্যতম দায়িত্ব হয়ে গেছে; যে দায়িত্বের দায়ে তাকে পড়তে হয়- হয় ভাবতে।

সংবাদ মাধ্যমে জানলাম, আমাদের দেশের কেন্দ্রীয় কারাগারের বন্দি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। যেহেতু দিনদিন অপরাধ বৃদ্ধির তালে-তাল মিলিয়ে, অপরাধীর সংখ্যা বাড়ছে, সেহেতু কারাগারের বন্দি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করা বিষয়ক সংবাদে খুব বেশি অবাক হই না; কিন্তু যখন আমাদের দেশের উচ্চশ্রেণির ব্যক্তিবর্গ কিংবা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা, কারাগারের বন্দি ধারণক্ষমতাকে তাদের রাজনৈতিক উন্নতি ও দেশের উন্নতির উদাহরণ হিসেবে উদাহরণদান করেন, তখন অবাক হই- বিনোদিত হই এবং সবশেষে চিন্তিত হই এই ভেবে যে, কোথায় আছি? কোথায় যাচ্ছে আমার বাংলাদেশ?

উল্লিখিত প্রশ্নদ্বয়ে অনেকেই অবাক হতে পারেন, অনর্থক চিন্তা  নিয়ে। কিন্তু কেউ কি বলতে পারবেন, কারাগারের বন্দি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধিতে দেশের উন্নতি কোথায়? উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম। অন্যদিকে, কারাগারের বন্দি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধিতে, প্রকৃত কোনও উন্নতি দেখতে পাই না। তার মানে এই না যে, আমি সরকারের উন্নতির বিরোধিতা করছি কিংবা সরকারের উন্নতিও অবনতি বলে ঠেকায়। শুধু বলতে চাই, একটি দেশের উন্নতি বলতে আমরা আসলে কী বুঝি? আমার মতে, যখন একটি রাষ্ট্র তার রাষ্ট্রের জনগণের সকল মৌলিক চাহিদার যোগান ও সকল মৌলিক সমস্যার সমাধান নিশ্চিত করে, জনগণের পূর্ণ-নিরাপত্তা, শান্তি, জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা বৃদ্ধির সঙ্গে, বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রের তুলনায় এগিয়ে যেতে থাকে- তখন-ই তাকে আমি একটি দেশের উন্নতি বলে মনে করি। কিন্তু, উল্লিখিত সংজ্ঞার কোন বিন্দুতে আমরা শক্তভাবে দাঁড়িয়ে আছি? কোনওটাতেই না; আবার সবকটাতেই আছি- বায়ুর ডাস্ট-পার্টিকেলের মতো।

আর, এর জন্যেই হয়তো শূন্য কোনও স্থানে রাজনীতির টর্চের সুইচ-অন করে, যখন কিছু আলোর ঝলকানি দেখতে পাই, তখন আনন্দে-দিশেহারা হয়ে উন্নতি-উন্নতি বলে চিৎকার করি; কিন্তু এটা ভাবি না, এগুলো আসলে উন্নতি নয়, বায়ুর চিরন্তন ডাস্ট-পার্টিকেল।

বলছিলাম, কারাগারের বন্দি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধির 'উন্নতি-সংবাদ'-এ আমি সন্তুষ্ট নই। কিন্তু কেন? লক্ষ করুন, আমাদের দেশে যখন কারাগারের বন্দি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে, তখন পৃথিবীর অন্যান্য দেশের কারাগারগুলো বন্ধ করা হচ্ছে, অপরাধী না-থাকায়। অর্থাৎ, আমাদের দেশে দিনদিন অপরাধ বাড়ছে, কমছে মানুষের সচেতনতা-মূল্যবোধ পক্ষান্তরে পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোতে অপরাধ কমছে, বাড়ছে মানুষের সচেতনতা-মূল্যবোধ। তাহলে, আপনি উন্নতি বলবেন কোনটিকে? আপনার শরীরে ক্যান্সার রোগটি ৩০% থেকে ৬০%-এ বর্ধিত হয়েছে, এটা কি আপনি উন্নতি বলবেন? (আবার, অনেকে এ-ও বলতে পারেন, "না, না, আমার তো ক্যান্সার হয়নি! ক্যান্সার বাড়বে কেন?")

পত্রিকার মাধ্যমে এ-ও জানলাম যে, আমাদের দেশের কেন্দ্রীয় কারাগারের বন্দি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করে, এটাকে রূপান্তর করা হবে এশিয়ার সবচেয়ে বড় ও উন্নত কারাগার হিসেবে। যখন, এই 'বড়', 'উন্নত' শব্দগুলো দ্বারা সংবাদের বাক্যগুলো পড়লাম, তখন অজান্তেই ভাবলাম- হ্যাঁ, আমরা অবশ্যই বড় ও উন্নত কারাগার বানাচ্ছি। কিন্তু এটা নিয়ে তো আমাদের গৌরবের কিছু নেই; বরং অগৌরব আছে এই বলে যে- আমাদের দেশ-ই হলো সেই দেশ, যে দেশের জনগণ বেশি অপরাধ সংঘটিত করে আর তার সরকার তৈরি করে বৃহৎ বৃহৎ কারাগার। আমার কৈশোরে দিদিমার মুখে বহুল প্রচলিত একটি বাংলা প্রবাদ শুনতাম- "খাজনার চেয়ে বাজনা বড়"। অর্থাৎ, দেশের গরিব ভূমিহীন মানুষের মৌলিক চাহিদার যোগান নিশ্চিত না-করে, অপরাধীদের থাকার জন্য কারাগার উন্নত করা হচ্ছে। যাকে আমরা উন্নতি বলছি, বলছি বিশ্বরেকর্ড। কিন্তু, এটা কি আসলেই উন্নতি?


বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। যে-দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে জীবনযাপন করে। আর, এই জনবহুল দরিদ্রের দেশে অপরাধ না-থাকাটাই অস্বাভাবিক। তাই, স্বাভাবিক হলো- অপরাধ সংঘটিত হওয়া। (আমি কখনও কামনা করি না, কোনও সমাজে কোনওরূপ অপরাধ সংঘটিত হউক।) কিন্তু অপরাধ দমন কিংবা নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাদের দেশ কী কী পদক্ষেপ নিচ্ছে? আর, অপরাধ দমনের জন্য সমুচিত পদক্ষেপ না-নিয়ে, কারাগারের বন্দি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করাটা কি অনেকটা 'গাভীর বাছুর প্রসবের পূর্বে, দুধ-দোহানোর পাত্র ঠিক করা'র মতো না? আমাদেরকে প্রথমেই জানতে হবে, একটি সমাজে কখন অপরাধের মাত্রা বেড়ে যায়? আর, এর জন্য প্রয়োজন রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের গবেষণা ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণের উপায় খুঁজে বের করা। কিন্তু সেই-সকল কর্মকর্তারা কি তাঁদের কাজ সঠিকভাবে করছেন; করছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের জনগণের টাকার উচ্চ বেতনভোগী আমলারা?

আজকাল উন্নয়নের নামে যখন শুনি, অমুক খাতে, অতো পরিমাণ অর্থবরাদ্দ করা হয়েছে। তখন আমার অবচেতন মন, প্রায়-ই বলে উঠে, অমুক খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ঈশ্বর তাদের প্রতি সদয় হলেন। যাঁরা বুঝতে পারেননি তাঁদের উদ্দেশে বলছি, আমরা যে-হারে উন্নয়নের সংবাদ শুনি, ঠিক সেই হারে কি বাস্তবে উন্নয়ন দেখতে পাই?

ধরুন, যখন শুনলেন, আপনার শহরের পুরনো ব্রিজটি ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করতে, সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়, সেই ব্রিজটির জন্য ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। কিন্তু ব্রিজটি নির্মাণের পর, যখন শুনলেন নতুন ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায়, ব্রিজটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে; তখন কি আপনার মনে প্রশ্ন জাগে না, ব্রিজটির জন্য আসলে কতো টাকা খরচ করা হয়েছে? আমি নিশ্চিত, সচেতন মানুষমাত্রই এই প্রশ্নটি এড়িয়ে যেতে পারেন না। কিন্তু যাঁরা সচেতন নন, তাঁদের উদ্দেশে বলছি, উন্নয়নের নামে এই বরাদ্দকৃত অর্থ আর ব্যয়িত অর্থের পার্থক্য আমাদের দেশের প্রায় সকল উন্নয়ন-খাতেই আছে। আর, এই পার্থক্যের মোটা অঙ্কের অর্থ ভোগ করেন, সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যক্তিবর্গরা। আজকাল অমুক-খাতে দুর্নীতি কিংবা তমুক-খাতের দুর্নীতির সংবাদ শুনতে-শুনতে, আমরা এতোটাই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি যে, 'দুর্নীতি' শব্দটি আমাদের একটি 'নীতি' হয়ে গিয়েছে, যা আমরা বলতেই পারি না। আর ঠিক সে-কারণেই হয়তো, যখন উন্নয়নের নামে নতুন কোনও খাতে অর্থবরাদ্দের সংবাদ শুনি, তখন আমার অবচেতন মন বলে ওঠে- 'গেলো-রে! জনগণের টাকা গেলো!' আর সে-কারণেই সচেতনভাবে বলছি- উন্নতি-উন্নতি বলে, যে কারাগারের বন্দি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করছেন, সেই কারাগারে আবার তারাই বন্দি হবেন না তো, যারা কারাগারের বন্দি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করে দেশের উন্নতি করছেন? অবশ্য, তা-হলে মন্দ না। যদি এখন-ই কারাগারের বন্দি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করে দেশের উন্নতি না-করেন, তাহলে হয়তো ভবিষ্যতে দুর্নীতির দায়ে এই অনুন্নত কারাগারেই আপনাদের থাকতে হতে পারে।


আমার দেশের প্রকৃত উন্নতি ব্যাহত হউক, এমন কোনও কাজ-ই আমি পছন্দ করি না। আমি আমার দেশের জনগণের শান্তির জন্য যুদ্ধ করতে পারি। আর এই যুদ্ধের সৎসাহস ও দেশপ্রেম নিয়ে আমি আমার দেশের সরকারসহ উন্নতি সংশ্লিষ্ট উচ্চশ্রেণি হতে নিম্নশ্রেণির সকল ব্যক্তিকে উদ্দেশ করে বলছি- আপনারা যখন দেশের জন্য সত্য-সুন্দর কোনও কাজ করেন, তখন আমি আপনাদের প্রতি শ্রদ্ধায় কুর্ণিশ হই; গর্ববোধ করি এই দেশের একজন মানুষ হিসেবে। তাই, আপনাদের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি- আপনারা দেশের উন্নতির নামে যা করছেন তা কেবল অনুন্নতি-ই নয়; অপ্রকাশ্যে তিলেতিলে দেশের ক্ষতি করা। না, আমি আমার এই-কথা দ্বারা আমার দেশের সকল উন্নয়নকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছি না; আমি সেটার উদ্দেশেই আঙুল তুলছি- যা আসলেই প্রশ্নবিদ্ধ, দেশের জন্য ক্ষতিকর।

বর্তমান বাংলাদেশে যে-হারে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে, সে-হারে বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোতে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে না। তাহলে, কেন শুধু বাংলাদেশেই সংঘটিত হচ্ছে অপরাধগুলো? কেন এক-ই অপরাধী বারংবার একই অপরাধ করছে? এই সকল মৌলিক প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করা খুবই জরুরী। যার জন্য প্রয়োজন একটি দেশের সরকারের নিরলস প্রচেষ্টা ও গ্রহণ করা সমুচিত পদক্ষেপ। কিন্তু, এই বিন্দুতে, আমি যখন আমার দেশের সরকারের কার্যকলাপ লক্ষ করি, তখন আশানুরূপ কোনওকিছু দেখতে পাই না। আমাদের দেশের সরকার ও তার আইন-ব্যবস্থা এতোটাই দুর্বল যে, আমাদের দেশে মানুষ হত্যার মতো অপরাধ সংঘটিত হয়, বিনাবাধায়। যেখানে, অপরাধ শব্দটি দিনদিন আমাদের মগজের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে।

এর অন্যতম কারণ, বিচারহীন আইন-ব্যবস্থা; যেখানে ক্ষমতাসম্পন্ন অপরাধীরা, একের-পর-এক অপরাধ করে যাচ্ছে; পার পেয়ে যাচ্ছে ক্ষমতার জন্য। কিন্তু কীভাবে তারা এতো ক্ষমতার অধিকারী হয়? এই প্রশ্নের জবাবে, প্রথমেই যে দু'টি উত্তর আসে, তন্মধ্যে-
(ক) রাজনৈতিক ক্ষমতা এবং
(খ) অর্থ-প্রতিপত্তির ক্ষমতা। কিন্তু, এই-সকল ক্ষমতাকে বুড়ো আঙুল দেখাতে কি আমার দেশের সরকার ও আইন-ব্যবস্থা বদ্ধপরিকর? এর উত্তর: না, তারা বদ্ধ পরিকর নয়। আবার, এর উত্তর হ্যাঁ-ও হয়; যখন তারা ক্ষমতাশীলদের প্রতি উত্থিত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তাদের অনাচার সমর্থন করেন। আমাদের বাংলাদেশে যেভাবে, সকল ক্ষেত্রে দুর্নীতির মাত্রা বাড়ছে, তার নিয়ন্ত্রণ করতে না-পারলে, যে-সকল উন্নতি হচ্ছে, এই-উন্নতির কোনও মূল্যই থাকবে না। তাই, আমাদের খতিয়ে দেখা জরুরী, কোথায় হচ্ছে দুর্নীতিগুলো এবং এই-সকল দুর্নীতিকারীদের সনাক্ত করে, সে যে দলের, যে কেউ হউক, শাস্তি নিশ্চিত করা।

পূর্বেও একবার বলেছিলাম, অপরাধের মাত্রা দমন কিংবা অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে, প্রথমেই জানা জরুরী, কেন সংঘটিত হয় অপরাধগুলো? আর, এই প্রশ্নের উত্তর হিসেবে মনে করি, মানুষের মৌলিক চাহিদার যোগানের অভাব ও মৌলিক সমস্যার সমাধান নিশ্চিত না-হলেই, সবচেয়ে বেশি অপরাধ সংঘটিত হয়। তাই, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের প্রতি আমার একান্ত অনুরোধ, মানুষের মৌলিক চাহিদার যোগান নিশ্চিত করুন; সমাধান করুন, মানুষের মৌলিক সমস্যা। তা-না-হলে একসময় দেখা যাবে, সম্পূর্ণ ঢাকা শহরকে কেন্দ্রীয় কারাগার বানিয়েও, অপরাধীদের জায়গা করা যাচ্ছে না।

আমরা বাঙালিরা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মতো, নিত্যাপরাধের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। এর থেকে পরিত্রাণ প্রয়োজন; প্রয়োজন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। গতসপ্তাহে পত্রিকায় দেখলাম, একজন 'মা' তার দুই সন্তানকে খুন করেছেন। এই ঘটনা শুনে আমরা চমকে উঠেছি ঠিকই; দোষারোপও করেছি সেই 'মা'-কে, "কীভাবে সে হত্যা করলো তার সন্তানদের" এই বলে। কিন্তু আমরা কি কখনও ভেবে দেখেছি, কেন হচ্ছে এ রকম জঘন্যতম অপরাধ? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যখন একজন মা, তার ৫ সন্তানকে হত্যা করেছিলেন, তখন সম্পূর্ণ যুক্তরাষ্ট্র এতোটাই সচেতন হয়েছিল যে, সকল মায়ের চিকিৎসার জন্য তারা নড়েচড়ে বসেছিল। যখন তাদের দেশের মনোবিজ্ঞান বিভাগের কয়েকব্যক্তি আবিষ্কার করলেন, হন্তারক মায়ের সন্তান হত্যার কারণ, তখন তাদের দেশের প্রতিটি মানুষ সজাগ হয়েছিল এবং জেনেছিল 'পোস্টপার্টাম' শব্দটি কতোটা ভয়ঙ্কর। আমাদের দেশে কি এ-রকম কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে? আমাদের দেশে প্রায় প্রতিদিন-ই শুনা যায়, মায়ের হাতে সন্তান হত্যা, পিতার হাতে মা কিংবা সন্তানের দ্বারা পিতা-মাতা নতুবা ভাইয়ের দ্বারা বোনকে ধর্ষণের সংবাদ। সেদিন পত্রিকায় এ-ও দেখলাম, 'কারাগারে বন্দি নারীদের সঙ্গে কারাসংশ্লিস্ট কর্মকর্তাদের যৌন-অত্যাচারের' শিরোনাম। এ রকম শিরোনাম যখন পত্রিকায় প্রচার হলো, তখন কি সমুচিত পদক্ষেপ নিয়েছিল, আমার দেশের আইন-ব্যবস্থা?

অপরাধের নিয়ন্ত্রণ জরুরী। এখন এটি যেকোনও অপরাধই হউক। অপরাধ সর্বদাই অপরাধ। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আমাদের সরকার ও আইনব্যবস্থাকে আরও কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে হবে। কিছুদিন পূর্বে, আমার পরিচিত একজন আইনজীবীর মাধ্যমে জানলাম, ভারতে যদি কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়, তাহলে সেই অভিযুক্ত ব্যক্তির পক্ষে কোনও আইনজীবী লড়তে পারবেন না। ধর্ষণের মতো একটি জঘন্যতম অপরাধ দমনের জন্য এটি অবশ্যই ভারত সরকারের ও আদালতের একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ। পক্ষান্তরে, আমাদের দেশে কি অপরাধ দমনের জন্য আমাদের সরকারের কিংবা আইন-আদালতের এমন কোনও কার্যকরী ভূমিকা আছে? আমাদের দেশে, যুদ্ধাপরাধীর পক্ষেও আইনজীবী লড়েন, যা আমার কাছে ভালো কিছু বলে মনে হয় না।

সবকথার শেষকথা হলো- অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণ জরুরী। জরুরী মানুষকে সুশিক্ষার মধ্যদিয়ে সচেতন করে সমৃদ্ধ একটি জাতি হিসেবে গড়ে তোলা। গরিব, অসহায়, ভূমিহীনদের আশ্রয়স্থলসহ, সকল মানুষের মৌলিক চাহিদা ও অধিকার নিশ্চিত না-করে, এশিয়ার বৃহত্তম, উন্নত কারাগার তৈরির মধ্যদিয়ে দেশের উন্নতির নামে অবনতি করাটা, একজন সুস্থ-সচেতন নাগরিক হিসেবে কোনওভাবেই সমীচীন বলে মনে করি না।

আমি বিশ্বাস ও আশা করি, দেশের উন্নতি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সুবুদ্ধির উন্নতির মধ্যদিয়ে, আমাদের বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে একটি উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক।

এ বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত