রেজা ঘটক

২১ মার্চ, ২০১৬ ০০:২৬

তাসকিন-সানি আইসিসি'র চূড়ান্ত রাজনীতির শিকার

ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল বা আইসিসি বাংলাদেশের ফাস্ট বোলার তাসকিন আহমেদ ও স্পিনার আরাফাত সানি'র বোলিং অ্যাকশন অবৈধ ঘোষণা করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাদের অবৈধ ঘোষণা করেছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এটি এখন নতুন একটি নীল নকশার অংশ।

আলোচনায় যাবার আগে শুরুতে আমরা একটু সেই ম্যাচের দিকে যাই, যে ম্যাচে তাসকিন ও সানির বোলিং অ্যাকশন নিয়ে কথা উঠেছে। ৯ মার্চ ২০১৬ তারিখে ধর্মশালায় অনুষ্ঠিত টি২০ বিশ্বকাপের কোয়ালিফায়িং রাউন্ডের তৃতীয় ম্যাচ, যেটি 'এ-গ্রুপ'-তে বাংলাদেশ বনাম নেদারল্যান্ডের মধ্যেকার প্রথম ম্যাচ। ওই খেলায় নেদারল্যান্ড টস জিতে বাংলাদেশকে প্রথমে ব্যাট করার আমন্ত্রণ জানায়। নির্ধারিত ২০ ওভারে বাংলাদেশ ৭ উইকেট হারিয়ে ১৫৩ রান করে। ম্যাচ সেরা ৫৮ বলে অপরাজিত ৮৩ রান করেন তামিম ইকবাল। তামিম সেদিন ৩টি ছক্কা ও ৬টি চারের সাহায্যে ৫৮ বলে ৮৩ রানে অপরাজিত ছিলেন। জবাবে নেদারল্যান্ড নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৪৫ রান করতে সক্ষম হয়। ফলে বাংলাদেশ ৮ রানে নিজেদের প্রথম ম্যাচ জিতে টি২০ বিশ্বকাপে শুভ সূচনা করে। তামিম ইকবাল হন ম্যান অব দ্য ম্যাচ।

নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের সেই খেলায় মাঠ আম্পায়ার ছিলেন ভারতের সুন্দরম রবি ও অস্ট্রেলিয়ার রড জেমস টাকার। টিভি আম্পায়ার ছিলেন নিউজিল্যান্ডের ক্রিস গাফফানি। ম্যাচ রেফারি ছিলেন জিম্বাবুয়ের অ্যান্ডি পাইক্রফট। আর অতিরিক্ত বা রিজার্ভ আম্পায়ার ছিলেন ইংল্যান্ডের নাইজল লিয়ং। ওই খেলায় বাংলাদেশের মোট সাত জন বোলার বল করেন। তাসকিন ৪ ওভার বল করে ২১ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি। আল-আমিন ৩ ওভার বল করে ২৪ রান দিয়ে পান ২টি উইকেট। আরাফাত সানি ২ ওভার বল করে ১০ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি। নাসির হোসেন ২ ওভার বল করে ২৪ রান দিয়ে পান ১টি উইকেট। মাহমুদুল্লাহ ১ ওভার বল করে ৮ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি। মাশরাফি মুর্তজা ৪ ওভার বল করে ১৪ রান দিয়ে পান ১টি উইকেট। আর সাকিব আল হাসান ৪ ওভার বল করে ২৯ রান দিয়ে পান ২টি উইকেট।

এস রবি ও রড টাকার যেহেতু তাসকিন আর সানির বোলিং অ্যাকশন নিয়ে কথা বলেছেন। এবার চলুন তাসকিন আর সানির সেই ৬ (৪+২) ওভার বলের বিশ্লেষণ দেখি। নেদারল্যান্ডের ইনিংসের প্রথম ওভার বল করেন তাসকিন। তাসকিন প্রথম দুটি ডট বল দেন। দ্বিতীয় বলটি কিছুটা বাউন্স ছিল। তৃতীয় বলে ব্যাটসম্যান স্টিফেন মাইবার্গ একটি চার মারেন। চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ বল ছিল ডট। তার মধ্যে পঞ্চ বলটি ছিল গুডলেন্থ ডেলিভারি, যার গতি ছিল ১৪০ কিমি/ঘণ্টা। আর ষষ্ঠ বলটিও ছিল গুডলেন্থ ডেলিভারি, যার গতি ছিল ১৩৬ কিমি/ঘণ্টা। ইনিংসের তৃতীয় ওভারটি আবার তাসকিন করেন। প্রথম বলে মাইবার্গ একটি রান নেন। দ্বিতীয় বলে ওয়েসলি বারেসি একটা চার মারেন। তৃতীয় বলে বারেসি এক রান নেন। চতুর্থ বলটি ছিল গুডলেন্থ মিডল স্টাম ও লেগ স্টাম বরাবর। সেই বলে মাইবার্গের বিরুদ্ধে জোরালো এলবিডাব্লিউ'র আবেদন ছিল। আম্পায়ার বলটি লেগ স্টাম মিস করতো এই অজুহাতে আউট দেননি। এটি একটি ডট বল। পঞ্চম বলটিও গুডলেন্থ ডেলিভারি ছিল। আরো একটি ডট বল। ষষ্ঠ বলটিও গুডলেন্থ ডেলিভারি ছিল। এটিও ডট বল।

চতুর্থ ওভারটি করেন আরাফাত সানি। প্রথম বলটি ছিল অফ-স্পিন। বারেসি ঠিকমত খেলতে পারেনি। ডট বল। দ্বিতীয় বলটি তেমন স্পিন হয়নি। বারেসি লেগ স্কয়ারে ঠেলে দিয়ে একটি রান নেন। তৃতীয় বলটি ছিল একটু হাফভলি টাইপের। মাইবার্গ সেটিকে স্কয়ার লেগ বাউন্ডারি মারেন। চার হয় সেটি। চতুর্থ বলটি খুব বাজে ডেলিভারি ছিল। লেগস্টাম্পের বাইরে ফুলটস বলটি সরাসরি মাইবার্গের প্যাডে লেগে ফাইন লেগে যায়। এটি একটি লেগ বাই অতিরিক্ত রান। পঞ্চম বলটি ছিল মিডল স্টাম বরাবর কিছুটা ফ্লাট। বারেসি সেটিকে লং অফে ঠেলে দিয়ে এক রান নেন। ষষ্ঠ বলটি ছিল পঞ্চম বলের মত মিডল স্টাম বরাবর কিছুটা ফ্লাট। মাইবার্গ স্কয়ার লেগে ঠেলে দেন। এটি ছিল একটি ডট বল।

এরপর ইনিংসের তেরোতম ওভারটি করেন আবার আরাফাত সানি। প্রথম বলটি রিভার্স সুইপ করেছিল। ব্যাটসম্যান পিটার বোরেন থার্ডম্যানে ঠেলে দিয়ে একটি রান নেন। দ্বিতীয় বলটি ছিল কিছুটা ফ্লাট তারপর নিচু হয়ে যায়। ব্যাটসম্যান টম কুপার এটি খেলতে পারেননি। এটি ছিল একটি ডট বল। তৃতীয় বলটি ছিল মিডল স্ট্যাম্পে কিছুটা ফ্লাট। কুপার লং অনে ঠেলে দিয়ে একটি রান নেন। চতুর্থ বলটি গুড লেন্থ ডেলিভারি ছিল। ব্যাটসম্যান বোরেন কিছুটা সামরে এসে খেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বলটি তার প্যাডে লেগে কভারে চলে যায়। ব্যাটসম্যানরা দ্রুত একটি রান নেন। পঞ্চম বলটি ছিল মিডল স্ট্যাম্প বরাবর কিছুটা ফ্লাট। কুপার লং অফে ঠেলে দিয়ে একটি রান নেন। ষষ্ঠ বলটি বোরেন সুইপ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বলটি ব্যাটে না লেগে প্যাডে লাগে। একটি ডট বল।

এরপর ইনিংসের অষ্টাদশ ওভারটি করেন তাসকিন। প্রথম বলটি গুড লেন্থ ডেলিভারি। ব্যাটসম্যান ঠিকমত খেলতে পারেননি। ব্যাটসম্যান পিটার সিলার পয়েন্টে ঠেলে দিয়ে একটি রান নেন। দ্বিতীয় বলটি ছিল ইয়র্কর। কিছুটা লেগ সাইড। বলটি কুপারের বুটে লেগে গড়িয়ে যায়। ততক্ষণে একটি রান। তৃতীয় বলটি ছিল চমৎকার ইয়র্কর। এটিও ব্যাটসম্যান সিলারের প্যাডে লাগে। লেগ বাই একটি রান। চতুর্থ বলটি কুপার শর্ট ফাইন লেগে ঠেলে দিয়ে একটি রান নেন। পঞ্চম বলটি ছিল আবারো চমৎকার ইয়র্কর। ব্যাটসম্যান সিলার কোনোমতে এটাকে ঠেকান। বল চলে যায় পয়েন্টে। একটি রান। ষষ্ঠ বলটিও ছিল পারফেক্ট ইয়র্কর। কুপার এটাকে কভারে ঠেলে দিয়ে একটি রান নেন। এই সময় ধারা ভাষ্যকাররা বলছিলেন যে, এই ওভারটি ম্যাচ উইনিং ওভার। কারণ তখন নেদারল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ১৮ বলে ৩৯ রান। কিন্তু ব্যাটসম্যান সিলার আর কুপার মাত্র ছয়টি রান নিতে পেরেছিলেন।

ইনিংসের ঊনিশতম ওভারটি করেছিলেন আল-আমিন। কুপারের উইকেটটি নিয়েছিলেন। কিন্তু দিয়েছিলেন ১৬টি রান। ইনিংসের শেষ ওভারে নেদারল্যান্ডের ৬ বলে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১৬ রান। বল করতে আসেন তাসকিন। প্রথম বলে মুদাসসর বুখারি দুই রান নেন। পরের বলটি ছিল ইয়র্কর। বুখারি বলটি লং অনে পাঠিয়েছিলেন। একটি রান নেবার পর অপর ব্যাটসম্যান সিলার কল করায় দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে বুখারি রানআউট হন। তৃতীয় বলটি নতুন ব্যাটসম্যান লগন ভন বিক লং অনে ঠেলে দিয়ে দুই রান নেন। চতুর্থ বলটি বিক মিউ-উইকেটে ঠেলে দিয়ে একটি রান নেন। পঞ্চম বলটি সিলার হিট করতে গিয়ে মিস করেন। বল লাগে সিলারের প্যাডে। লেগ বাই একটি রান। ষষ্ঠ ও ইনিংসের শেষ বলটি বিক কভারে ঠেলে দিয়ে একটি রান নেন। নেদারল্যান্ড ৭ উইকেট হারিয়ে নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৪৫ রান তুলতে সক্ষম হয়। বাংলাদেশ ৮ রানে জয়ী হয়।

তাসকিন ৪ ওভার আর সানি ২ ওভার বল করেছেন। ম্যাচ শেষে ভারতের আম্পায়ার সুন্দরম রবি আর অস্ট্রেলিয়ার আম্পায়ার রড টাকার অফিসিয়ালি তাসকিন আর সানির বোলিং অ্যাকশন নিয়ে রিপোর্ট করেন। নিয়ম অনুযায়ী একটি ওভারে একজন বোলার একটির বেশি বাউন্স দিতে পারবে না। তাসকিন ৪ ওভার বল করে একটি মাত্র বাউন্স দিয়েছিলেন। আর সানি'র দুই ওভার বোলিংয়ের একটি মাত্র ব্যাড ডেলিভারি ছিল। পুরো ম্যাচ রিভিউ করে দেখা যায় দুই মাঠ আম্পায়ার অনেকটা ইচ্ছাকৃতভাবেই তাসকিন ও সানির বোলিং অ্যাকশনকে অবৈধ করার জন্য এই নালিশ দেন। কারণ তাসকিন ও সানি উইকেট না পেলেও নেদারল্যান্ড হেরেছে আসলে এই দুই বোলারের ভালো বোলিং করার কারণে। আসল রাজনীতিটা এখানেই। টি২০ খেলায় উইকেটের চেয়ে ইকোনোমিক বোলারই সেরা। কারণ রানটা এই ইকোনোমিক বোলাররা আটকে দেন। তাই তাসকিন আর সানিকে টার্গেট করেন টি২০ বিশ্বকাপ থেকে বের দিতে।

আর কে না জানে দুই জন ইকোনোমিক বোলারকে হারিয়ে বাংলাদেশের বোলিং শক্তির ধারটা অনেকটা কমে যাবে। ফলে কোয়ালিফাইয়িং রাউন্ড থেকেই এবারের টুর্নামেন্টে সবচেয়ে ভয়ংকর দল বাংলাদেশকে হটিয়ে দিতে পারলেই সুপার ১০ গ্রুপে আর বাংলাদেশ থাকবে না। তখন সুপার ১০ গ্রুপের ভারত বা অস্ট্রেলিয়াকে আর বাংলাদেশের সাথে খেলতে হবে না। কিন্তু বিধি বাম। তামিম ইকবাল সুপারমানব হিসাবে আবির্ভূত হন। ৮ মার্চ ধর্মশালায় আয়ারল্যান্ডের সাথে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ম্যাচটি বৃষ্টির কারণে পণ্ড হয়। যদিও কার্টেল ম্যাচের ১২ ওভারের মধ্যে ৮ ওভারে তামিম ঝড়ে বাংলাদেশ ২ উইকেট হারিয়ে তুলেছিল ৯৪ রান। পরে আবার বৃষ্টি হানা দিয়ে আয়ারল্যান্ডের সাথে বাংলাদেশের দুর্ভাগ্যজনক পয়েন্ট ভাগাভাগি করতে হয়।

গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচ ছিল ১২ মার্চ ধর্মশালায়। ওমান ও বাংলাদেশ উভয় দলের ছিল সমান ৩ পয়েন্ট। কিন্তু রান রেটে বাংলাদেশ এগিয়ে ছিল। সেই ম্যাচে ওমান টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাট করতে পাঠায়। তামিম ঝড়ে বাংলাদেশ নির্ধারিত ২০ ওভারে মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে তোলে ১৮০ রান। তামিম ইকবাল করেন ৬৩ বলে দৃষ্টিনন্দন অপরাজিত ১০৩ রান। তারপর সেই বৃষ্টির ছোবল। তারপর কার্টেল ম্যাচে ম্যাচ নির্ধারণ হয় ১৬ ওভার। ১৬ ওভারে ওমানের জয়ের টার্গেট হয় ১৫২ রান। খেয়াল করুন ৪ ওভার বল কাটা হয়েছিল। আর বাংলাদেশের রান কাটা হয়েছিল ২৮ রান। এখানেও ডাকওয়ার্থ লুইস মেথডে এক ধরনের কেলেঙ্কারি। ভাগ্যিস বাংলাদেশ ১৮০ রান তুলেছিল। নইলে তো পুরোটাই কাটা পড়তো। ১৬ ওভারে জয়ের জন্য ওমানকে করতে হবে ১৫২ রান। কিন্তু ৭ ওভার খেলা শেষে ওমান ২ উইকেট হারিয়ে করতে পেরেছিল মাত্র ৪১ রান। আবারো বৃষ্টির ছোবল। এবার একটু খেয়াল করুন, এবার ওমানের জন্য নতুন টার্গেট ঠিক করা হলো ১২ ওভারে ১২০ রান। মাত্র ৪ ওভারের জন্য এবার বাংলাদেশের রান কাটা হয়েছে ৩২টি। শেষ পর্যন্ত ৬৫ রানে ৯ উইকেট হারিয়ে ওমানের ১২ ওভারের নতুন টার্গেট শেষ হয়। বাংলাদেশ ৫৪ রানে বিজয়ী হয়। এখানে খেয়াল করুন, ওমানকে জেতানোর জন্য ডাকওয়ার্থ লুইস মেথডে দুইবার চার ওভার করে বাংলাদেশের ৮ ওভার থেকে মোট ৬১ রান কাটা হয়েছিল। যে ওমান দলটি ৯ উইকেট হারিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল মাত্র ৬৫ রান, তাদের জেতানোর জন্য আইসিসি কি প্রাণান্ত চেষ্টাই না করেছিল। কিন্তু সেই চেষ্টায় কোনো লাভ হয় নাই। এ-গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে যোগ্যতম দল হিসাবেই বাংলাদেশ সুপার ১০ মূল রাউন্ডে চলে আসে। বাংলাদেশের এই সুপার ১০ রাউন্ডে আসাটা সোজা কথায় পছন্দ হয়নি আইসিসি'র।

এখন কিছু সোজা ও সরাসরি কথা বলে আমার এই লেখা শেষ করতে চাই। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, যদি ওমানের কাছে বাংলাদেশ হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিতো, তাহলে আইসিসি তাসকিন ও সানির বোলিং অ্যাকশনকে তেমন গুরুত্ব না দিয়ে বৈধ ঘোষণা করতো। যেহেতু বাংলাদেশ সুপার ১০ পর্বে চলে এসেছে। যেখানে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড আর পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ। এবার আসুন প্রথম ম্যাচে ভারত নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে যাওয়ায় তাসকিন আর সানির কপাল আরো পুড়লো। কারণ, ভারতের পরের ম্যাচটি চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের সাথে। যদিও পাকিস্তানের সাথে সুপার ১০ পর্বে প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ হারে। কিন্তু আয়োজক ভারতে অন্তত সেমি-ফাইনাল বা ফাইনাল পর্যন্ত না ওঠাতে পারলে ভারতের মাটিতে অন্য খেলাগুলো দর্শক হারাবে। আইসিসি'র লাভের মউ পিপড়ায় খাবে। তাই পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারত খেলতে নামার আগেই পথের কাঁটা বাংলাদেশকে এক ঘা দেখিয়ে নিল। টুর্নামেন্ট থেকে অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের জন্য খড়গ তুলে ধরলো তাসকিন আর সানির উপর।

এখানে আইসিসি'র আরেক মাতব্বর অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ডের কাছে ৮ রানে হেরেছে। তারমানে গ্রুপ চ্যাম্পিয়নে লাইনে এখনো নিউজিল্যান্ড এগিয়ে। দ্বিতীয় স্থান নিয়ে টানাটানি করবে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারত, অস্ট্রেলিয়া আর বাংলাদেশ। তো আর কী বাংলাদেশকে ছাড় দেওয়া যায়? তাই বাংলাদেশ দলের মনোবল ভেঙ্গে দিতেই আইসিসি ভারত পাকিস্তান খেলা শুরু হবার আগেই আর কোনো রিস্ক নিতে চায়নি। কারণ ইডেন গার্ডেনে পাকিস্তানের রেকর্ড ভালো। কোনো কারণে যদি ভারত পাকিস্তানের বিপক্ষে ধরা খায়, তাহলে সুপার ১০ পর্বে গ্রুপ-২ থেকে প্রথমে ছিটকে পড়ার সম্ভাবনা ছিল এবারের টি২০ বিশ্বকাপ আয়োজকের ভারতের। তাই পথের কাঁটা বাংলাদেশকে আগেই ঘায়েল করে ভারতীয় শিবিরে কিছুটা মনোবল চাঙ্গা করেছে আইসিসি।

ভারত আইসিসি'র সেই চাওয়াকে খানিকটা মিটিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে ৬ উইকেটে জিতে এখনো বেশ ভালো ভাবেই টুর্নামেন্টে টিকে আছে। ভারতের খেলা বাকি দুইটি। একটি ২৫ মার্চ ব্যাঙ্গালোরে বাংলাদেশের সাথে। অপরটি ৩১ মার্চ মোহালিতে অস্ট্রেলিয়ার সাথে। ভারতের এই দুই ম্যাচেই জয় চাই। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার? ২৫ মার্চ বাংলাদেশের সাথে ভারত আইসিসির পরিকল্পনা অনুযায়ী একটি নীলনকশার পাতানো ম্যাচ খেলবে। এদিন বাংলাদেশের জন্য ভাগ্য সহায়তা না করলে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়ার দিন। তখন ভারতের সামনে বাকি থাকবে কেবল অস্ট্রেলিয়া। তার আগে আসি অস্ট্রেলিয়ার আর ম্যাচ বাকি ৩টা। ২২ মার্চ ব্যাঙ্গালোরে বাংলাদেশের সাথে। ২৬ মার্চ মোহালিতে পাকিস্তানের সাথে। আর ৩১ মার্চ মোহালিতে ভারতের সাথে। আইসিসি'র চোখ থাকবে নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তানের ম্যাচের দিকে। যে ম্যাচটি ২৩ মার্চ মোহালিতে। এটি যদি নিউজিল্যান্ড জিতে যায়। তখন নিউজিল্যান্ড গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন। আর যদি পাকিস্তান জেতে তখন নিউজিল্যান্ড আর পাকিস্তানের পয়েন্ট থাকবে সমান। আইসিসি আসলে সেটিই চায়। কারণ তখন অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের সামনে তখনো টুর্নামেন্টে টিকে থাকার লড়াই থাকবে।

কারণ বাংলাদেশ বনাম নিউজিল্যান্ড ম্যাচটি হবে ২৮ মার্চ ইডেন গার্ডেনে। কারণ ভারত বাংলাদেশের বিপক্ষে জিতলে পয়েন্ট হবে নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তানের সমান। আর যদি নিউজিল্যান্ড পাকিস্তানের সঙ্গে জেতে, তাহলে ভারত হয়ে যাবে গ্রুপে রানার-আপ। তখন অস্ট্রেলিয়াকে আর পাত্তা দেবে না। তখন এক মাতব্বর চিৎপটাং। কিন্তু যদি পাকিস্তান যদি জেতে তখনো দুই মোড়লের সম্ভাবনা থাকবে বাকি দুই ম্যাচ জিতে টুর্নামেন্টে টিকে থাকার। তাই এখন সবচেয়ে আতংক এখনো বাংলাদেশ। কারণ বাংলাদেশ টুর্নামেন্ট থেকে এখনো যদি বাকি তিন ম্যাচ জিতে যায়, গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন কিন্তু বাংলাদেশ হবে। তখন মোড়লদের আর খাওয়া নাই। বাংলাদেশ আর নিউজিল্যান্ড গ্রুপ-২ থেকে সেমিফাইনালে যাবে। আর যদি বাংলাদেশ বাকি ৩টা ম্যাচের কোনো টা হারে তাহলে মোড়লরা আবার ঘুটি পাকাতে থাকবে।

মোদ্দাকথা, ভারতকে টুর্নামেন্টে সেমি-ফাইনালের আগে বিদায় করে আইসিসি মুনাফা হারাতে চায় না। তাই বাংলাদেশের মনোবল ভেঙ্গে দিতেই তাসকিন ও সানিকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। আরেকটা বিষয় একটু ক্লিয়ার করি। তাসকিনের ৪ ওভার বোলিং আর আরাফাত সানির ২ ওভার বোলিং নিয়ে তো দুই আম্পায়ারের সন্দেহ। সেখানে চেন্নাইয়ে তাসকিনকে দিয়ে ৯টা বাউন্স করানো হয়েছে পরপর। যেখানে একজন বোলার এক ওভারে একটির বেশি বাউন্স দিতে পারে না। সেখানে পরপর ৯টি বাউন্স দিয়ে আইসিসি যে পরীক্ষাটি নিয়েছে, সেটি আইসিসি নিজেই তাদের নিজেদের বানানো আইন ভেঙ্গে করেছে। আর সানি একটি মাত্র বাজে ডেলিভারি দিয়েছিল। সেটির জন্য তাকেও অবৈধ ঘোষণা করেছে। আচ্ছা, ভারতের অশ্বিন, জাদেজা, বুমরা, পান্ডিয়া এদের বোলিং অ্যাকশন পুরাই ঠিক আছে তো? আমার কাছে কিন্তু এই চার বোলারের কিছু বল সন্দেহ লেগেছে। আইসিসির আম্পায়ারদের নজরে আসলো না কেন?

এবারের টি২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ যদি অপর তিনটি ম্যাচের সবগুলোও হারে আমি অন্তত অবাক হব না। কারণ এবারের এই টি২০ বিশ্বকাপ হচ্ছে আইসিসি'র মুনাফা লোটার পাতানো খেলা। সেই টুর্নামেন্টে সবচেয়ে ভয়ংকর দলকেই তারা টার্গেট করেছে। তাই বাংলাদেশ টুর্নামেন্ট থেকে সবার আগে বিদায় নিলে আমি অন্তত অবাক হব না। কারণ, বাংলাদেশকে হারানোর চেষ্টা শুরু হয়েছে সেই নেদারল্যান্ডের সাথে প্রথম ম্যাচ খেলা থেকেই। এখনো বাংলাদেশ টুর্নামেন্টে আছে, এটাই বরং বড় বিস্ময়। আশার কথা যে আমাদের মুস্তাফিজ ভারতের বিপক্ষে আগামী ম্যাচে খেলতে পারবে বলেই আমার দৃঢ় বিশ্বাস। আর যদি মুস্তাফিজ একবার ফিট হয়ে যায়। তখন অস্ট্রেলিয়া, ভারত, নিউজিল্যান্ডকে কী পরোয়া করার কিছু আছে? প্রয়োজনে রুবেলকে উড়িয়ে নেওয়া হোক। সামনে আমি মুস্তাফিজ কার্টার আর রুবেলের বোলিং দেখার জন্য মুখিয়ে আছি। আইসিসি আমাদের কয়জন তাসকিন আর সানিকে বাদ দিকে। বাংলার ঘরে ঘরে হাজারো মুস্তাফিজ-রুবেলরা তৈরি হয়ে আছে। আসো আইসিসি।

আমাদের লড়াইটা ভারত, অস্ট্রেলিয়া বা নিউজিল্যান্ডের সাথে আর নেই। আমাদের মূল লড়াইটা এখন কার্যত আইসিসির সাথে। আরেকটা বিষয় আমার কিছু সন্দেহ হয়, ফেসবুকে তাসকিনের হাতে এমএস ধোনি'র যে ছবিটা ভাইরাল হয়েছিল, সেটি হতে পারে ভারতের দৃষ্টিতে তাসকিনকে শিকার করার একটা জঘন্য নির্মম চক্রান্ত। কারণ আইসিসি'র মোড়ল তো ওরাই।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত