আ স ম মাসুম, ইডিমিনি ক্যাম্প, গ্রীস থেকে

০১ এপ্রিল, ২০১৬ ১১:১৬

সভ্যতা আটকে আছে ইডিমিনিতে!

গ্রীসের ছোট্র পাহাড় ঘেরা একটি শান্ত গ্রাম ইডিমিনি। গ্রীস-ম্যাসেডোনিয়ার বর্ডার। শান্ত স্নিগ্ধ এই গ্রামটি এতোদিন গুগল ম্যাপ জায়গা নেয়া ছাড়া আর কোন কাজেই আসেনি।

যে গ্রামে নেই কোন হোটেল, নেই নিজস্ব বাজার সেই গ্রাম আজ বিশ্ব মিডিয়ার আলোচিত একটি নাম! কারন সিরিয়া থেকে জীবনের ঝুকি নিয়ে আসা প্রায় ৫০ হাজার শরণার্থী আটকা আছেন ২০১৬ সালের জানুয়ারীর ১ তারিখ থেকে। ইউরোপিয়ান ইউনোনিয়নের সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত এভাবেই এখানে এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে থাকতে হবে সব হারা মানুষের।

ইডিমিনি-গ্যাবগেলিয়া সীমান্তে ঘুরে দেখা গেলো সেখানে সভ্যতার কোন ছিটেফোটা নেই! ছোট ছোট তাবুতে গাদাগাদি করে ৫০ হাজারের মতো শরণার্থী তাদের দিন গুজরান করছেন। অনেকের রয়েছে দুধের শিশু, রয়েছে অতিশীপর বৃদ্ধ বাবা-মা! কোনরকমভাবে বিভিন্ন বেসরকারী সাহায্য সংস্থার সহায়তায় হয়তো আধপেটা খাবার জুটছে! রেল লাইনের আশেপাশে বিস্তীর্ন জমি দখল নিয়ে বসবাস করছেন তারা।

ক্যাম্পের ভিতর থাকলে মনে হবে এখানে সভ্যতা আটকে আছে কাঁটাতারের বেড়ায়! আসলেই তাই! এই কাটাতারের বেড়া ডিঙ্গোলেই ইউরোপের ধনী দেশের হাতছানি! কিন্তু ইউরোপের বড় বড় দেশের হর্তকর্তাদের ইচ্ছা অনিচ্ছার উপর নির্ভর করছে এই কাটাতারের বেড়ার ওপাশের জীবনের স্পর্শ পাবে কি না ইডিমিনিতে আটকানো হাজার হাজার শরণার্থীর!

আটকে থাকা শরণার্থীদের মধ্যে কথা হয় সিরিয়া থেকে আসা যুবক শাবানের সাথে। যে ক্ষোভের সাথে বলে, আমাদেরতো এক সময় সবই ছিলো। আমার কতো বিশাল ব্যবসা ছিলো! সব ছেড়ে জীবনের মায়ায় পরিবার সাথে নিয়ে এখানে এসে আটকা আজকে ৪৫ দিন ধরে! জানিনা কি আছে কপালে!

একই কথা বলেন রুদাব নামের আরেকজন। তিনি জানান, আমরা মরতে মরতে এখানে এসেছি। কিন্তু এখানেওতো মরনের মতোই অবস্থা!

রুদাব যখন এই কথাগুলো বলছিলেন তখন রাজ্যের হতাশা তার মধ্যে। রান্না করার জন্য ভারী লাকড়ি নিয়ে হাটতে হাটতে ক্লান্ত হয়ে বসে পড়া রুদাব যেনো স্মরণ করায় বিশ্বখ্যাত শিল্পী বব ডিলানের বিখ্যাত গান “ব্লোয়িন ইন দ্যা উইন্ড” এর অনুবাদ করে কবির সুমনের সেই বিখ্যাত গানের লাইন - কতটা পথ পেরুলে তবে পথিক বলা যায়? / কতটা পথ পেরুলে পাখি জিরোবে তার ডানা?...

আপনার মন্তব্য

আলোচিত