মো. আশরাফ উদ্দিন

১৬ এপ্রিল, ২০১৬ ২০:২৪

মাজার ও মসজিদের নামে টাকা আত্মসাত

ধর্মকে পুঁজি করে সমাজের এক শ্রেণীর মানুষ গড়ে তুলছে সম্পদের পাহাড়। প্রায়ই লক্ষ্য করলে দেখা যায়, মাজার ও মসজিদের নামে বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য দান বাক্স দেখা যায়। রমজানসহ ধর্মীয় বিভিন্ন দিবসে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের দান করার প্রবণতা আরো বেড়ে যায়। কিন্তু পূণ্যের আশায় দান করা এসব মানুষ জানে না তাদের টাকা যাচ্ছে কোথায়। ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে সংগ্রহ করা এসব টাকার অধিকাংশই আত্মসাত হয়ে যায়। বিনা পুঁজির ব্যবসায় অনেকেই বনে যান কোটিপতি। বাড়ী, গাড়ী, ফ্লাট, মার্কেট সহ অনেকে গড়ে তোলেন কোটি কোটি টাকার সম্পদ।

অনেক সময় মাজারের টাকার ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে তাদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে  অহরহ। বিভিন্ন মাজারে কিছু কিছু মুখোশধারী খাদেম ও মোতাওয়াল্লী ধর্মীয় পুঁজি এবং ভন্ডামী করে নিরাপরাধ মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে নিঃস্ব করছে। সরল বিশ্বাসে চরম দুঃসময়ে মানুষ শরাপন্ন হয় অলি আউলিয়ার মাজার খানকায়। সাধারণ ধর্মভীরু মানুষরা মানুষরা মনে করে মাজার শরীফে বড় অংকের দান খয়রাত করলে বিপদ-আপদ দূর হবে, পূর্ণ হবে মনের বাসনা। তাই অনেকে মাজারে মুক্ত হস্তে দান করে।

প্রতিনিয়ত পত্রিকার পাতা খুললেই মাজার নিয়ে অর্থ আত্মসাত সহ নানা ধরনের লুটপাটের খবর পাওয়া যায়। সম্প্রতি রাজশাহীর একটি মাজার শরীফের দানকৃত টাকা আত্মসাতের অভিযোগে স্থানীয় প্রশাসন মাজারের প্রবেশ পথে গ্রীলে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, মাজার শরীফে ঘুরতে ও মানত করতে আসা শত শত মানুষ দান বাক্সে এবং পীরের কবরস্থানের উপর টাকা রাখত। সুকৌশলে মাজারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা এসব টাকা আত্মসাত করেছে।

জুড়ী উপজেলার এক পীরের মাজারের প্রতিদিন ভক্ত মুরিদানরা হাজার হাজার টাকা দান করেন। আর প্রতিবছর ওরশের সময় ভক্তরা দান করেন লাখ লাখ টাকা। এসব টাকার ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে প্রায়ই সংঘর্ষ বাঁধে। মাাজরের টাকা আত্মসাত  নিয়ে প্রতিনিয়ত দেশের সব মাজারে দুপক্ষের মধ্যে দ্বন্দ লেগেই থাকে।

স্থানীয়ভাবে ও লক্ষ্য করলে দেখা যায়, কিছু মানুষ আছে যারা ধর্মের নামে অনেক টাকা লোটপাট করে খাচ্ছে। বড়লেখা শহরের পূর্ব পাশে অবস্থিত আরেকটি মাজারে প্রতি বছর ওরশ শরীফের  সময় হাজার হাজার মানুষ সমবেত হয় এবং সরল বিশ্বাসে অনেক টাকা পয়সা দান করে। কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখা যায় মাজারের উন্নয়ন তো দূরের কথা, এসব টাকা পয়সা কোথায় যাচ্ছে তার কোন সঠিক তথ্য নেই। এছাড়া স্থানীয় আরো কিছু মাাজর শরীফ আছে যে গুলোর অবস্থা একই রকম।

মাজারের মতো মসজিদের টাকা আত্মসাত ঘটনার ও খবর প্রতিদিনের পত্রিকায় বের হচ্ছে। রাজধানীর একটি জামে মসজিদের ২০ কোটি টাকা আত্মসাতের করেছেন মসজিদ কমিটির লোকজন। এনিয়ে এলাকাবাসী থানায় ও লিখিত অভিযোগ করেছেন। টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের একটি মসজিদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে খোদ ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ নেতার বিরুদ্ধে। ঐ আওয়ামীলীগ নেতা স্বাক্ষর জাল করে ব্যাংক প্রায় ৭ লাখ টাকা তুলে ফেলেন। বিষয়টি জানাজানি হলে তিনি গা ঢাকা দিয়ে অন্যত্র চলে যান।

কিছু উচ্চ পর্যায়ের লোক যারা ধর্শকে পুঁজি করে এবং ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সহযোগিতায় মাজার ও মসজিদ কমিটির নেতারা এসব টাকা আত্মসাত করেছেন। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় ধর্মকে পুঁজি করে একশ্রেনীর মুখোশধারী ধর্ম সেবার নাম নিয়ে টাকা আত্মসাত করে কোটিপতি বনে সমাজে অরাজকতার পরিবেশ সৃষ্টি করছে। ধর্মকে পুঁজি করে যারা এসব অনৈতিক কর্মকান্ড করে যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্ছার হতে হবে।  
 
মো. আশরাফ উদ্দিন : লেখক, সংগঠক    

আপনার মন্তব্য

আলোচিত