নাজমুল আহসান

০৪ মে, ২০১৬ ২২:২৬

ধর্মনিরপেক্ষ ধর্মতন্ত্র ও ষড়যন্ত্র তত্ত্ব

ব্লগার ও সেক্যুলার অ্যাক্টিভিস্ট হত্যা চলছেই। আন্তঃদেশীয় জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) ও আল-কায়দার উপমহাদেশ শাখার (একিউআইএস) সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আনসার আল-ইসলাম এ হত্যাকাণ্ডগুলোর দায় স্বীকার করছে। অন্তত, গণমাধ্যমের খবরে এ চিত্রই দেখতে পাই। তবে এ খুনগুলো এ দুই জঙ্গিগোষ্ঠী করছে, তা না মানতে সরকার যেন ধনুকভাঙ্গা পণ করেছে।

গত বছরের নভেম্বরের দিকে দুই বিদেশী হত্যার দায় আইএস স্বীকার করেছে বলে খবর আসে। তখন নেদারল্যান্ড থেকে ফিরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিছু বিস্ফোরক মন্তব্য করেন। নভেম্বরের ৮ তারিখে তিনি বলেন, ‘তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে চায়। আফগানিস্তান, পাকিস্তান বানাতে চায়। যে কোনো সময় হামলা চালাতে পারে’। ক’দিন পর অর্থাৎ ২৯শে নভেম্বর ইঙ্গিতটা আরও পরিষ্কার করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। খাদ্যমন্ত্রী সরাসরি বলেন, ‘আইএস’র জন্মদাতা যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে প্রবেশ করতে চায়’।

যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ‘সাইট ইন্টেলিজেন্স’ নামে একটি জঙ্গি তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী ওয়েবসাইট নিয়েও প্রশ্ন উঠে। ওয়েবসাইটটির পরিচালক রিটা কাটযের বরাতেই মূলত বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জঙ্গিদের দায় স্বীকারের খবর ছেপে আসছে। ইহুদী রিটা কাটযের মোসাদ-সংশ্লিষ্টতার প্রসঙ্গও উঠে আসে। সবখানে ষড়যন্ত্রের গন্ধ।

২.
প্রশ্ন হলো, এই ‘ডিনায়াল’ কীসের জন্য? এসব কি হত্যাকাণ্ড নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপ থেকে বাঁচতে সরকারের কৌশল? নাকি, সত্যিই বাংলাদেশে হামলা চালানোর ছুতা বের করতে পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছে যুক্তরাষ্ট্র? এ প্রশ্নের উত্তর আমাদের জানা নেই। সম্প্রতি, নতুন এক ধরণের প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এলজিবিটি কর্মী ও মার্কিন সরকারের কর্মী জুলহাজ মান্নান হত্যার পরই নিউ ইয়র্কে এক বাংলাদেশী দম্পতি খুন হওয়ার প্রসঙ্গ উঠায় সরকার। এমনকি সরকারপ্রধান ওই খুনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী জন কেরির সঙ্গে ফোনালাপেও তিনি এ প্রসঙ্গ তোলেন। শাসক দলের ঘনিষ্ঠ বুদ্ধিজীবীরাও প্রসঙ্গটি তুলছেন। পত্রিকার কলামে যুক্তির বহর দেখা যায়। এসব হয়তো কূটনৈতিক রাজনীতি হতে পারে। সরকারের কর্তাব্যক্তিরা একে যুক্তরাষ্ট্রকে ‘ঘায়েল’ করার মোক্ষম দাওয়াই ভাবতে পারেন। কিন্তু চোখ বুঝে থাকলেই কি প্রলয় বন্ধ হবে?

আইএস বা আল কায়দার দায় স্বীকারের প্রসঙ্গটি আসলেই অনেকে ‘সাইট ইন্টেলিজেন্স’ সূত্রের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। কিছুক্ষেত্রে সেটি যৌক্তিকও বটে। কিন্তু, ‘সাইট ইন্টেলিজেন্স’ কীভাবে এসব তথ্য পায়, তা কি গণমাধ্যম ঘাঁটাঘাঁটি করে না? আন্তর্জাতিক সংবাদ নিয়ে কাজ করার সুবাদে আমি জানি, আল কায়দার চেয়েও আইএস’র কর্মকাণ্ড-সম্পর্কিত তথ্য ইন্টারনেটে বেশি উপলভ্য।

তাদের ‘আমাক’ নামে একটি বার্তাসংস্থা আছে। এ বার্তাসংস্থার একটি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ আছে। কিন্তু, গুগল প্লে-স্টোরে এটি পাওয়া যাবে না। আইএস সমর্থকরা সুরক্ষিত এনক্রিপ্টেড প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ অ্যাপ ব্যবহার করে। এ বছরের জানুয়ারিতে নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি নিবন্ধে এ বার্তাসংস্থা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। বলা হয়, পেশাদার সংবাদ সংস্থার মতো ‘আমাক’ও পক্ষপাতিত্ব পরিহারের চেষ্টা করে! এছাড়া তাদের নিজস্ব অনলাইন ম্যাগাজিন ‘দাবিক’ আছে। তাই আইএস’র কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানা সহজ।

ইতিমধ্যেই, আমাদের গণমাধ্যমে খবর এসেছে, ‘দাবিক-এ বাংলাদেশে আইএস’র কর্মকাণ্ড নিয়ে বেশ ক’টি নিবন্ধ লেখা হয়েছে। সর্বশেষ বাংলাদেশে আইএস’র কথিত কমান্ডারের সাক্ষাৎকার ছাপা হয়েছে। আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ওরা খুন করে আইএস, আল কায়দার নাম বলে’। তাহলে খোদ আইএস যে ‘ওদের’ কথা বলে, সে প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কী বলবেন?

ঠিক তেমনি, টুইটারে আনসার আল-ইসলামের কর্মকাণ্ডও ব্যাপক। তাই সেখান থেকেও তথ্য পাওয়া সহজ। আনসার আল-ইসলামকে ঘরোয়া গোষ্ঠী হিসেবেই ভাবা হয়। তাদের সঙ্গে আল-কায়দার সম্পর্ক কতটুকু, সেটা একটা প্রশ্ন বটে।

তবে আল কায়দার প্রধান আয়মান আল-জাওয়াহরির ভিডিওবার্তার কথা এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। ওই ভিডিওতে বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারে জঙ্গি কর্মকাণ্ড বিস্তারের কথা বলা হয়েছিল। ২০১৫ সালের জুলাইয়ে তার ওই ভিডিওবার্তার পরপরই আল কায়দার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা অর্থাৎ একিউআইএস’র তৎপরতা দেখা যেতে শুরু করে বাংলাদেশে। এর জবাব সরকার কী দিয়েছে, জানা নেই।

৩.
তার মানে কি সিরিয়া বা ইয়েমেন থেকে আইএস বা আল কায়দার যোদ্ধারা বাংলাদেশে ব্লগার মারছে? আসলে তা নয়। এ ক্ষেত্রে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো একটি কৌশল অবলম্বন করে। কোন দেশে ঢুকতে হলে, সেখানকার স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এরপর সহায়তা, স্বীকৃতি ও প্রচারের আশ্বাস দিয়ে তাদের ‘আনুগত্য’ আদায় করা হয়। যেমন, মিশরে ‘সিনাই পেনিনসুলা’ নামে স্থানীয় একটি জঙ্গিগোষ্ঠী ছিল। তারা আইএস’র প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে নাম পালটে আইএস  হয়ে গেছে। লিবিয়ায় একই অবস্থা। আফগানিস্তান, তিউনেশিয়া – সর্বত্র একই কৌশল।

আমাদের দেশে জেএমবি’র কথা সবাই শুনেছেন। খবরে এসেছে, জেএমবি’ও একই কায়দায় বিলুপ্ত হয়ে, আইএস হয়ে গেছে! তেমনি আনসারুল্লাহ’র কথা প্রথম শোনা যায় ২০১৩ সালের দিকে (সম্ভবত)। কিন্তু উপমহাদেশে জঙ্গি কর্মকাণ্ড বিস্তারে জাওয়াহরির ঘোষণা আসার ক’দিন পরই আনসারুল্লাহ ঘোষণা দেয়, তারা আল-কায়দায় যোগ দিয়েছে! সেই থেকে তারা আল কায়দা! অর্থাৎ, খুনগুলো আপনার আমার মতো বাঙালি বা বাংলাদেশী কারও করার সম্ভাবনাই বেশি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে ‘হোমগ্রোন’ জঙ্গি বলছেন, তা এক হিসেবে সঠিক। কিন্তু তারা যে এখন আন্তঃদেশীয় জঙ্গিগোষ্ঠীর শাখা – এটাই তিনি বা তার সরকার মানতে চাইছে না। অথচ, সিরিয়া/ইরাক ছাড়া, পৃথিবীর বাকি যেসব দেশে আইএস আছে, তারা আসলে মূল আইএস’র শাখা, যারা কিনা আগে স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠী ছিল।  

.
প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার কী করছে? সরকার কি অপরাধীদের ধরতে পারছে? উত্তর হচ্ছে, ‘না’। ধরতে পারলে, খুন হতো না বা কমে যেতো। কিন্তু ক’দিন বাদেই কিছু না কিছু ঘটছে।

দ্বিতীয় প্রশ্ন, সরকার আন্তরিক কিনা? উত্তর হলো, ‘জানা নেই’। সরকার যদি খুনিদের ধরতেই চাইতো, তাহলে প্রতিটি খুনের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলতেন না, ‘তিনি (খুন হওয়া ব্যক্তি) কী লিখতেন, তার খোঁজ নেয়া হবে’। তিনি বলতেন না, ‘সমকামিতা আমাদের দেশে অ্যালাউড না’। সরকার থেকে আমেরিকার দোষ খোঁজা হতো না, ষড়যন্ত্র তত্ত্ব দেখানো হতো না। পুলিশ থেকে নিয়মিত লেখালিখি নিয়ে সবক দেয়া হতো না।

ভিকটিমের পরিচয় বা লেখালিখি সম্পর্কে জানা থাকাটা তদন্তের জন্য প্রয়োজনীয়, আমরা সেটি বুঝি। মামলার ‘মোটিভ’ বুঝতে এটি প্রয়োজন। কিন্তু সেটা জনসম্মুখে জোর গলায় প্রচার করার হেতু কী? কারও লেখালিখির সঙ্গে খুনিদের ধরার সম্পর্ক কী?

আমরা যা বুঝি, তার মর্মার্থ এই: খুনিদের ধরে বা খুনের ভিকটিমদের মৃদুমন্দ গালাগালি না করে, একটি বিশেষ গোষ্ঠীর অসন্তোষে পড়তে চায় না সরকার। অর্থাৎ, সরকার বুঝিয়ে দিতে চায়, আমরা খুনিদের ধরবো বলেছি বটে; এর মানে এই নয় যে, আমরা নিহতদের পক্ষ নিচ্ছি! এই প্রবণতা বিপজ্জনক। একটি সরকার যখন এ ধরণের লজ্জাজনক আচরণ করে, তখন সামগ্রিক পরিস্থিতি আরও সঙ্গিন পথে মোড় নেয়। পুলিশ যখন কী লেখা যাবে বা কী লেখা যাবে না, সেই সবক দেয়, তখন ভিন্ন ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। যেমন, যারা হত্যার হুমকি পায়, তারা পুলিশকে বিষয়টি জানাতে ভয় পায়। কারণ, পুলিশকে জানালে হয়রানি বাড়বে। জুলহাজ মান্নানের ক্ষেত্রেও এমনটি হয়েছে বলে দ্য টেলিগ্রাফে খবর বেরিয়েছে।

সরকার এখন নিউ ইয়র্কে নিহত বাংলাদেশী দম্পতির খুনের কথা তুলছে। কেন সেই খুনের তদন্ত আমেরিকা করতে পারছে না, এ নিয়ে মেকি গোস্বা দেখাতেও দেখেছি। কিন্তু বাস্তবতা হলো, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে আমেরিকায় ওই খুনের তদন্ত হয়েছে। ওই দম্পতির ছেলেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওই দম্পতির দুই ছেলে খুনে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। আমেরিকা যদি বাংলাদেশী দম্পতি খুন হওয়ার জন্য ওই দম্পতিকেই দায়ী করতো, কেমন লাগতো? আর আমেরিকা তো তাদের কাজ করেছে, বাংলাদেশ কী করেছে?

কোন খুনের ঘটনাই সাধারণ নয়। কিন্তু নির্মম হলেও সত্য হচ্ছে, গোটা দুনিয়ায় খুন নিত্য ঘটছে। আমেরিকা বা পশ্চিমা বিশ্বের ক্ষেত্রে, এ ধরণের ঘটনা খুবই কম। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অপরাধী ধরা পড়ে। খুব আন্তরিকভাবে পুলিশ তদন্ত করে। হ্যাঁ, সেখানেও অবিচার হয়। কিন্তু এসব এতটাই ব্যতিক্রম যে, ‘বিচ্ছিন্ন’ বলা চলে। অপরদিকে বাংলাদেশে যেসব খুন হচ্ছে, সেসব অন্য ধরণের। কথা বলার জন্য, লেখার জন্য মানুষ খুন হচ্ছে। কেউ কেউ সেক্সুয়াল অরিয়েন্টেশনের জন্য খুন হচ্ছে। কেউ ভিন্ন ধর্মের বলে খুন হচ্ছে। এসব হলো ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশন – মত প্রকাশের স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত করতে খুন করা।

পৃথিবীতে যত অধিকার আছে মানুষের, তার মধ্যে নিজের মনের কথা বলার অধিকার সবচেয়ে বেশি প্রাসঙ্গিক, সবচেয়ে বেশি জরুরী। ‘স্বাধীনতা’ বা ‘ফ্রিডম’ বলতে আমরা যা বুঝি, তা আসলে এই ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা’। একটু চিন্তা করুন, আপনার যা মনে হয়, তা বলতে গেলে কেউ আপনাকে মেরে ফেলবে! এ ভাবনাটা কত ভয়ানক! আরও বড় পার্থক্য হলো, আমেরিকায় খুনের ঘটনায় কোন ফ্যানাটিক গোষ্ঠী দায় স্বীকার করছে না। কিন্তু আমাদের এখানে করছে। একেবারে ঘোষণা দিয়ে দায় স্বীকার করছে একাধিক গোষ্ঠী। সাধারণ অপরাধী বা খুনি চক্রের সঙ্গে এদের পার্থক্য হচ্ছে, সাধারণ অপরাধীরা অপরাধ করে জাগতিক কিছুর জন্য। এরপর তারা পালিয়ে বেড়ায়। কিন্তু এই ফ্যানাটিকরা হচ্ছে একটি ভুল আদর্শ বা বিশ্বাস দ্বারা চালিত। তারা অপরাধ করে বুক ফুলিয়ে প্রচারও করে! ফলে একটা শীতল আতঙ্ক তৈরি হয় সমাজে। যারা আমেরিকার দম্পতি খুনের সঙ্গে এই জঙ্গিপনাকে তুলনা করছেন, তাদের জন্য করুণা, একরাশ করুণা।

৫.
কোন বিষয় নিয়ে লেখালিখি করা যাবে এবং কোন বিষয় নিয়ে যাবে না, সেই ডিকটেশন দেয়ার অধিকার কারও নেই। কিন্তু এ নিয়ে যৌক্তিক বিতর্ক ও আলোচনা হতে পারে। রাষ্ট্রের মন্ত্রী, আইনপ্রণেতা ও রাজনীতিকরা এ নিয়ে অবশ্যই কথা বলতে পারেন। কিন্তু কোন সিভিল সারভেন্ট এ বিতর্কে কীভাবে যুক্ত হন? এ বিতর্কে পুলিশ প্রধানের উপস্থিতি অনাকাঙ্ক্ষিত ও অযাচিত। এবং রাজনীতিকরা, বিশেষ করে ক্ষমতাসীনরা, এ বিতর্ক তুলতে পারেন অবশ্যই। কিন্তু, সেটা হওয়া উচিৎ স্বাভাবিক সময়ে, যখন খুন-খারাবী হবে না। তখন গঠনমূলক আলোচনা সম্ভব। এবং অতীতে এ ধরণের আলোচনা আমরা করেছিও।

যারা অনলাইনে সরব, তাদের অনেকেই নাস্তিকতার নামে বিদ্বেষ ছড়ানো বন্ধের দাবি জানিয়েছি। কিন্তু এখন কি সেই আলোচনার সময়? এখন যদি সরকার এসব বলে, তখন স্বাভাবিকভাবেই মনে হবে, সরকার খুনিদের উৎসাহ দিচ্ছে অথবা ভোট হারানোর সংকীর্ণ চিন্তা থেকে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

আবদুল গাফফার চৌধুরীর ভাষায়, এতে খুনিরা উৎসাহিত না হলেও; অন্তত নিরুৎসাহিত হবে না। বিপন্ন বোধ করবে ঝুঁকিতে থাকা মানুষজন। সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল এ লেখক বলেন, কট্টর ইসলামপন্থী পাকিস্তান আমলে যা বলা যেত, এখনকার ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ বাংলাদেশে তা বলা যায় না। আওয়ামী লীগ নিজেকে ধর্মনিরপেক্ষ দাবি করে। আওয়ামী লীগের শাসনকে কেউ যদি এখন ‘সেকুলার থিওক্রেসি’ বা ‘ধর্মনিরপেক্ষ ধর্মতন্ত্র’ ডাকে, ভুল হবে?

৬.
আমাদের প্রজন্ম ছোটবেলায় শুনেছে ওসামা বিন লাদেন একজন ‘ওলি’, যিনি কিনা মুহূর্তেই গায়েব হয়ে যেতে পারেন, যার কাছে কিনা অলৌকিক ক্ষমতা আছে, যে কারণে তাকে আমেরিকা ধরতে পারে না। বড় হয়ে জ্ঞান-বুদ্ধি হওয়ার পর আমাদের প্রজন্মকে গেলানো হয়েছে, আসলে ওসামা বিন লাদেন আমেরিকার সৃষ্টি। তাকে দিয়ে আমেরিকা সব করাচ্ছে।

আমাদের শোনানো হয়েছে যে, টুইন টাওয়ার হামলা আসলে ইহুদীরা করেছে। হামলার দিন নাকি সেখানে কর্মরত হাজার হাজার ইহুদীকে আগেই সরিয়ে ফেলেছিল মোসাদ। লাদেন সাহেব নির্দোষ। অথচ, একটু খবর নিলেই জানা যাবে, বহু ইহুদী ওই দিন মরেছে। সবচেয়ে বড় কথা, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ওসামা বিন-লাদেন টুইন টাওয়ার হামলা নিয়ে গর্বিত ছিল। কোনদিন অস্বীকার করেনি। সুতরাং, এ প্রজন্মকে ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ গেলানো সহজ।

সরকার ইঙ্গিত দিচ্ছে, ব্লগার-প্রকাশক হত্যাযজ্ঞ আসলে পশ্চিমাদের ষড়যন্ত্র। প্রশ্ন হলো, তা-ই যদি হয়, তাহলে লেখালিখি নিয়ন্ত্রণ করার কথা উঠছে কেন? চোর কি কখনও ধর্মের কথা শোনে? লেখালিখি বন্ধ হলে কি খুনোখুনি থামবে? আরেকটা অজুহাত বের করতে তো ষড়যন্ত্রকারীদের বেশি সময় লাগবে না।

আমরা জানতে চাই না, খুনিরা কারা – তারা কি আইএস বা আল কায়দার সদস্য, নাকি আমেরিকার কোন গুপ্তচর বা গুপ্তঘাতক। আমরা জানতে চাই না, তারা কি ভাড়াটে গুণ্ডা, নাকি কোন ছ্যাঁচড়া খুনি। আমরা শুধু চাই, বিচার হোক, অপরাধীদের ধরা হোক। কূটনীতির মারপ্যাঁচ আমরা বুঝি না। রাজনৈতিক বক্তব্য নিয়েও আমরা মাথা ঘামাতে চাই না।

রাজনীতি করুন, সমস্যা নেই। কিন্তু অপরাধীদের ধরুন। মানুষও আর খুন হলো না, আর আমেরিকাও বাংলাদেশে হামলা চালানোর কোন ছুতা পেলো না। প্লেইন অ্যান্ড সিম্পল।

নাজমুল আহসান : সাংবাদিক
এ বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত