জাহানারা নুরী

০৭ মে, ২০১৬ ০০:৫৩

একটি যৌথ অপরাধ ও স্পর্ধার ব্যবচ্ছেদ

জনাব মতিউর রহমান নিজামী,
আপনাকে আমি সালাম জানাবো না। সালাম মানে তো শান্তি। শান্তির অপর নাম পিস কমিটি। ভুলিনি। আপনার বিচারের পর থেকে আমাকে ভাবাচ্ছে ক’টি কথা। কেন, কি কারণে, কি ঘটে তা দেখার ও বোঝার তাড়না কাজ করছিল। আমি বুঝতে চাচ্ছিলাম যৌথ অপরাধে মানুষ হিসেবে আপনার আমার ব্যক্তিগত দায় দায়িত্ব কি থাকে? না কি থাকে না? আপনি কি কখনও ভেবে দেখেছেন? দায় কি থাকে?  এ জাতীয় কৃতকর্মের ভার এবং ধার কতোখানি? না আপনি ভাবেন নি। এ দেশে তা আর কেউ যেন না ভাবে, যেন মানুষ ভাবতে ভুলে যায় সে জন্য আপনাদের রাজনীতি সক্রিয় ছিল।

শৈশবের সেই আপ্তবাক্য ‘ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না যা আমাদের শিক্ষার অঙ্গ ছিল তা ঠিক নয় বোঝাতে চাইছিলেন আপনারা। আপনারা ধরে নিয়েছিলেন আপনি বা আপনারা যা খুশী করতে পারবেন, আপনাকে, আপনাদের কেউ দায়বদ্ধ করতে পারবে না। আপনাদের এ দেশের কারো কাছে দায়বদ্ধতা নেই।

কিন্তু বিষয়টি কি এত সোজা? বিংশ শতকে বাস করে আপনি ভাববেন আপনাদের তথাকথিত আদর্শের দোহাই দিয়ে কয়েক লক্ষ মানুষ মেরে ফেলতে পারবেন, এবং দায়বদ্ধতা থাকবে না! এতবড়ো অন্যায় ধরিত্রী নিজেই আর নিতে পারছিলো না । আপনি কি তা উপলব্ধি করেন? বোধহয় না। আপনার দায়বদ্ধতা মানুষের কাছে নয়, অশরীরি এক অলৌকিকের ভয় দেখিয়ে আপনারা ৪৪ বছর পার করে দিয়েছেন বেশ ভালোভাবে। আপনাদের ধারণা সে অশরীরি আপনাদের এত শনৈঃ শনৈঃ উন্নয়ন ঘটিয়ে দিচ্ছে? সে আপনাদের বাঁচাবে? না, সে বাঁচায় নি।  

আপনার রিভিউতে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা আপনার পক্ষের খন্দকার মাহবুব হোসেনকে বলেছেন- "আপনারা রিভিউর আবেদনে যে লিখিত জবাব দিয়েছেন, তাতে বলা হয়েছে নিজামী সাহেব পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগী ছিলেন। এট্রোসিটির সঙ্গে ছিলেন। তাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট।”

বিস্মিত হয়েছিলাম যে কেন আপনাদের পক্ষের ব্যারিস্টার এ কথাটা লিখলো?

সত্য বলার জন্য লিখেছে না কি আর কিছু? আপনার পুত্র নিজে ছিলেন আপনার পক্ষে লড়তে। পাশে ছিল বেতনভোগী সুবিধাভোগী আপনার দলের পয়সায় বিদেশ থেকে বার এট ল’ ডিগ্রীধারী এক ঝাঁক নতুন ও প্রবীণ ব্যক্তি। তারা আপনার ও আপনার দলের পাশে ছিল, আছে। তবে তারা কি কখনও ভেবে দেখেছে যে তারা যে টাকার বিনিময়ে আপনাদের কেনা গোলামের ভূমিকা পালন করছে সে টাকা এ দেশের সাধারণ মানুষের। আপনারা যে অর্থ জলের মতো ছিটিয়ে বেড়াচ্ছেন তার উৎস মুক্তিযুদ্ধকালে এ দেশের সম্পদ লুঠ ও বিনিয়োগ করে পাওয়া লাভ। তার উৎস এ দেশেরই মানুষের দারিদ্র্য দেখিয়ে গত ৪৪ বছর পাওয়া মধ্যপ্রাচ্যের ও সউদী যাকাতের দান। এ দশের মানুষকে শেষ করে দেওয়ার জন্য গোপনে পাওয়া জঙ্গি অনুদান? সে অর্থে বিদেশে পড়ে এসে এসব ব্যারিস্টার তার দেশের মানুষের গণহত্যার আসামীর পা ধরে দোয়া চায়। তারা কি জানতো না ‘আপনি পাকিস্তানী বাহিনীর সহযোগী ছিলেন’?

এ কথা বলে বস্তুত স্বীকার করে নেয়া হচ্ছে যে নিজামী ঐ সময়ের ভয়ঙ্কর ঘটনাসমূহের এক সুপ্রিম সাক্ষী, সে  এদেশীয় বদর বাহিনীস্থ সহযোগীদের পক্ষের প্রধান সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী ও নিয়ন্ত্রক। জানার পরও কেন এ বাক্য লিখলো তারা?

আমি রায় শোনার পর থেকেই ভাবছি কথাটা। আপনাদের ও তাদের মনস্তত্ত্ব বোঝার চেষ্টা করছি। নিজে স্বাভাবিক জীবনে থেকে পরিকল্পনা করা, নিজ দেশের মানুষের হত্যায়  হাত মেলানো, পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সাথে থেকে পাকিস্তানী আর্মির হাতে কিংবা নিজের দলের লোকদের হাতে নিজ দেশের লক্ষ লক্ষ তরুণের, বৃদ্ধের, বা শিশুর টর্চার, ডিটেনশন, ও করুণ মৃত্যু দেখা? এভাবে যারা সেই ভয়ঙ্কর হত্যাযজ্ঞের হোতা তাদের সবচেয়ে বিশ্বস্ত হয়ে ওঠা? ভাবা যায়! হ্যাঁ, বোঝা যায় আপনারা  ভাবতে পেরেছেন যে ঐসব ভূমিকা অত্যন্ত স্বাভাবিক ছিল এবং এখনও তা স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবেই আপনাদের মনে ও মনান্তরে রয়েছে। বাংলার অগুনতি মানুষের গণহত্যাকে ’স্বাভাবিক’ ধরে নেয়ার এই মানসিকতা গায়ের লোম দাঁড় করিয়ে দেয়।

আমাদের প্রায়ই শুনতে হয় এটা রাজনীতি। হ্যাঁ, গণহত্যাকারীদের কাছে এই রাজনীতি ছিল স্বাভাবিক রাজনীতি। কেমন লাগে শুনতে, একটু উচ্চারণ করে দেখুন দেখি ‘স্বাভাবিক’ এবং ‘রাজনীতি’।

আপনি পাকিস্তানী বাহিনীর সহযোগিতা করেছেন! সহযোগিতা মানে তো এই; নিজ দলের ছেলেদের নিয়ে সামরিক বাহিনীর ডান হাত হিসেবে আলবদর বাহিনী তৈরি করা যাদের কাজ হলো- কারা হিন্দু, কারা মুক্তিবাহিনী, মুজিব বাহিনী, কারা তাদের সমর্থক সেই ঘরগুলো বা মানুষগুলো চিনিয়ে দেয়া। ‘আল বদর’! কি চমৎকার তামাশা! নবীর জীবনকে প্রায় নিজের জীবনে বাস্তব করে তোলা। তাই না। নবীর বদর বাহিনী ছিল। আপনারও একটা বদর বাহিনীর দরকার হলো। আপনারা নিশ্চয় নিজেদের নবীর কালের খোলাফায়ে রাশেদীনের যোদ্ধা ধরে নিয়েছিলেন। নিজ দেশের মানুষের বিরুদ্ধে পাকিস্তানী বাহিনীকে আপনাদের সহযোগিতা এভাবে নবীর জীবনকে নিজেদের জীবনে বাস্তবে নাট্যরূপ দেবার একটা সুযোগ এনে দিল। যার পাণ্ডুলিপি, শো, ডায়ালগ আপনার হাতে রচিত।

বাস্তবতা এই যে এর ফলে একটি গোটা জনপদের সাত কোটি মানুষের জীবনে মহা দুর্যোগ নেমে এল। কোটির উপর মানুষ উদ্বাস্তু হলো। লক্ষ লক্ষ লাশ একসাথে আপনারা মাটির তলে পুঁতে ফেললেন। গণহত্যা যেন প্রমাণ করা না যায় সে জন্য আপনারা যেমন মানুষ পিঁপড়া দলে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয় তেমনি করে মানুষকে মাটি চাপা দিলেন।  

বলুন দেখি! মুখে উচ্চারণ করে দেখুন- মাত্র  তিন মিলিয়ন স্বাভাবিক হত্যা, অথবা ধরেন চার লাখের কাছাকাছি নারী ধর্ষণ ও হত্যা বা একের পর এক ধর্ষণ করে গর্ভবতী করে দেয়ার জন্য পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীকে লাগাতার সেই সব মেয়ে সাপ্লাই দেওয়া, সম্ভব হলে তাদের একাধিকবার গর্ভবতী করে দেয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ক্যাম্প স্থাপন- সহযোগিতা তো এগুলোই, না কি? হিন্দু ও স্বাধীনতাকামী বাঙালির বাড়ি লুণ্ঠন ও আগুন দেয়া, তাদের মেয়েদের ছলে বলে কৌশলে ক্যাম্প পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া, গরু ছাগল, খাদ্য, ব্যাংক ব্যালেন্স লুটে নিয়ে নিজে ফুলে ফেঁপে ওঠা। মেয়েকে বা ছেলেটাকে যেন আপনার বাহিনী না নেয় সে জন্য কত লক্ষ পিতা শেষ জমির টুকরোটা বা জমা টাকার তলানিটুকু আপনাদের হাতে তুলে দিয়েছিল?

সামরিক বেসামরিক পাকিস্তানীদের খুশী করার জন্য আপনার বদর বাহিনী কি পরিমাণ ব্যস্ত ছিলো তা তো চোখের সামনে দেখেছি।  জানের ভয়ে আদেশ পালন এক জাতের সহযোগিতা। আর রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি নিয়ে দেশের শত্রুর হাতে হাত মিলিয়ে স্বদেশের ও দেশের নাগরিকদের সর্বোচ্চ ক্ষতি করার মিশনে নামা আরেক কথা। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর পায়ের তলে নিজেকে বিলিয়ে দিতে আপনার বদর বাহিনীকে চরম বর্বর একটা বাহিনী হিসেবে পরিচালিত করার জন্য আপনারা কুরআনকে ব্যবহার করেছেন, রসূলের জীবন থেকে উদাহরণ উপস্থাপন করেছেন। আপনার সে সময়ের বেতার বার্তা, কথোপকথন থেকে কোনও অর্থেই আপনারা যে ‘মানুষ’ সে চিত্রটি পাওয়া যায় না। আপনার কাছে পবিত্র ছিল পাকিস্তান, সে দেশের সামরিক পুরুষরা। আপনার কাছে তারা ধর্মের দেশের বাহিনী। আপনার পবিত্র কর্তব্য তাদের সহযোগিতা দেয়া।

মুক্তিবাহিনীর খোঁজে ঘরের পর ঘর চষে বেড়ানো, গ্রামের পর গ্রাম মাটিতে মিশিয়ে দিতে তাদের সাহায্য করা তাও ধর্ম ছিল কি? ও হ্যাঁ,‘মিট্টি চাহিয়ে’ তো । তাই না?  তবে  মুক্তিবাহিনীর কোনও সদস্যকে হাতে পেয়ে কি করেছে আপনার বদর বাহিনী, সে সবের বর্ণনা কেন উচ্চারণ আজও কেন কহতব্য নয়? আপনার মিত্রবাহিনীর শত্রু আপনারও শত্রু-তাই তো? তো সেই হিসেবে বাঙালিদের টর্চার করে মেরে ফেলেছেন, বদর যুদ্ধের নিয়ম ধরে নিলাম। কিন্তু টর্চার ও হত্যার পর নারীর স্তন কেটে ফেলা, তার যোনি প্রদেশে বেয়নেট ঢুকিয়ে দিয়ে আনন্দলাভের উন্মত্ততা, মুক্তিযোদ্ধার শিশ্ন কেটে তার মুখের ভেতর ঢুকিয়ে দিয়ে হা-হা হেসে ওঠা পাকিদের সাথে সাথে আপনার বাহিনীর যে ফুর্তি- তাও ধর্ম কি? তা কি ধরণের সহযোগিতা? তা কি আপনার কুরআন? তা কি রসূল? তা কি উপায়ে পবিত্র হয়ে ওঠে?

আমি যত ভাবছি আপনাদের বদর বাহিনীর ‘সহযোগিতা’র ধরণ মনে পড়ে যাচ্ছে।      

আমি যত ভাবছি তত আমার মন ব্যাকুল হয়ে উঠছে একটু দেখার আপনার হাতে ঘটা এই সব ঘটনার ইতিহাসের পথ পরিক্রমায় আপনার ও আপনাদের মধ্যে কি কোথাও একটুকু মনুষ্যত্বের আলো অবশিষ্ট আছে কি না। আপনার ব্যারিস্টারদের ওই যে যুক্তি প্রদান করতে গিয়ে লেখা ‘আপনি পাকিদের সহযোগিতা করেছেন মাত্র’ জানার পর মনুষ্যত্ব শব্দটির ওপরই অশ্রদ্ধা এসে গেছে।

স্বদেশের মানুষকে মাটির সাথে মিশিয়ে শুধু মাটি রেখেছেন। একাত্তরে এমন কি যদি কেউ বলতো যে সে মুক্তিযোদ্ধা নয় এ স্বীকারোক্তিও যথেষ্ট ছিল না, আপনাদের চোখে বাঙালি হয়ে জন্মানোটাই ছিল অপরাধ। কিন্তু আপনার বদর বাহিনীর ঐ তরুণরা? তাদের যে অধিকাংশই বাঙালির ঘরের ছেলে ছিল। যে ভাবে আর দশ জন বাঙালি সে ভাবেই তারাও এই জাতিরই অংশ। আপনারা তাদের ব্রেন থেকে সে সত্য বের করে নিতে পেরেছিলেন এখনও নিচ্ছেন অনেকের। আপনারা জামায়াতের নেতারা কয়জন নিজ রক্তের ডিএনএ দিয়ে প্রমাণ করতে পারবেন আপনারা হাজার বছরের বাঙালির যে বৈশিষ্ট্য তা থেকে আলাদা? অনেকেরই তো চেহারাই বলে দেয় যে সে কোল ভিল মুন্ডাদের উত্তরসূরি। তো এই বাঙালিত্বকে ঐ ভাবে অপমান অস্বীকার করে আপনারা কি অর্জন করেছেন? ধর্মীয় বাণী অনুযায়ী জান্নাত? বিশ্বাসঘাতকের জন্য জান্নাত আছে বলে তো শুনি নি।

আমরা ৪৪ বছর দিনের পর দিন শুনেছি ঐ সব নৃশংস ঘটনার পেছনের দলটির পরিকল্পনাকারী মাথাটির ভিতরে না কি একটি মানুষ আছে। দেখতে চেষ্টা করেছি তার ভেতর ছিটে ফোঁটা মানবিকতার যেটুকু রয়েছে তা কেমন, কার জন্য কিসের তরে তা কাজ করে! কিংবা আদৌ আছে কি? তার অত্যন্ত সংকীর্ণ মানবিকতা এখনও কিছু অবশিষ্ট থাকতে পারে- তার নিজের জন্য, তার দলের জন্য, তার পরিবারের জন্য, সন্তানের জন্য এবং তার পাকিস্তানের জন্য।

এ দেশের নাগরিকদের জন্য সহজ ছিল যদি আমরা দেখতাম মানুষ আছে; সে মানুষ ফিরে দেখছে অতীত। তাদের হাতে রক্ত দেখে বিচলিত হচ্ছে তারা। তাদের নিয়ে যাওয়া ধর্ষণের নির্মম হত্যার শিকার নারীদের স্মৃতিতে নিজের কন্যার মুখ খুঁজে পেয়ে আতঙ্কিত হচ্ছে, আফসোস করছে। অপরাধীর বিচারের পর সাজা হতো, সাজা শেষে আমরা হাত ধুয়ে ফেলে চলে যেতাম নিজ নিজ কাজে।

কিন্তু ভাবনার বিষয় হচ্ছে ওই আপনাদের মানুষ চেহারার আড়ালের মনটি এবং আপনাদের সহজ স্বাভাবিক জীবন যাপন। খুব স্বাভাবিক জীবন যাপন করেছেন আপনারা। আপনাদের কোনও আত্মপীড়ন ছিল না, নেই। তিন মিলিয়নের হত্যার রক্ত লেগে থাকা হাতে আপনারা নিঃসঙ্কোচে এ দেশের চালের ভাত মুখে তুলে খাচ্ছেন-দাচ্ছেন এবং দলের পরবর্তী ‘ভিক্টরি’ কিভাবে আসতে পারে সে পরিকল্পনা ও তা এক্সিকিউট করছেন। অত্যন্ত স্বাভাবিক মানুষের মতো একাত্তরের পরিকল্পনাই একের পর এক কৌশলে বাস্তবায়ন করার পথে এগিয়েছেন আপনারা। এ তো দানব নয় যে রাষ্ট্র এর মাথা একের পর এক কেটে একে শুইয়ে দেবার পর জনতা শো শেষে বাড়ি চলে যাবে। এ এমন একদল মানুষ ও তার নেতা; যার মন তিন মিলিয়ন হত্যাকে অপরাধ মনে করে না। ফলে তার পক্ষের ওকালতনামায় সগর্বে এটা ঘোষণা করতে আপনাদের বাধে নি যে- আপনার কাজ একাত্তরে ছিল পাকিদের ‘সহযোগিতা’ দান।

এই যে অপরাধী মানুষের অস্তিত্ব, এই যে অপরাধী মন যে মনে করে এত নির্মম ব্যাপক অপরাধও আসলে অপরাধই না, আমার দেশের মাটিতে এই অমানুষ মনটির উপস্থিতি আমাকে বিচলিত করে। আমাকে নিজের কাঠগড়ায় দাঁড় করায়। মানুষ হিসেবে আমি নিজেকে কম্পিত হতে দেখি এই সত্য উপলব্ধি করে যে মনুষ্যত্ব সম্পর্কে আমার ধারণা এখনও কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছুতে পারে নি।

কেননা আমি অনেক মানুষকে জানি যারা এখনও লজ্জা পায় যে তারা পথ দিয়ে যেতে কোনও হিন্দু বাড়ির লুট করে নিয়ে যেতে যেতে ঝরে পড়া একটি বই বা একখণ্ড বস্ত্র হয়তো কুড়িয়ে পেয়েছে, এবং তা উপেক্ষা না করে ঘরে নিয়ে এসেছে। সেই কুড়িয়ে নেয়ার লজ্জার ভেতর আগুনে পুড়ে মাটি হয়ে যাওয়া নিজ দেশের হিন্দু বা মুসলিম প্রতিবেশীর প্রতি কি সংগুপ্ত সম্মান ও মমতা প্রকাশিত হয় নিশ্চয়ই। কিন্তু ঐ কঠিন সময়ে, শূন্য ঘরে ঐ টুকু কুড়িয়ে নিয়ে নেবার লজ্জা ও তো প্রকাশ করে মানুষকে দেখেছি নিজেকে পরিশুদ্ধ করতে। আমি দেখেছি বিবর্ণ মুখে অনেককে বর্ণনা করতে কিভাবে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন কাউকে বাঁচাতে।

আর গণহত্যার অপরাধে অপরাধী বেঁচেছে বুক ফুলিয়ে, গাড়ি দৌড়িয়ে আপনারা গেছেন আমাদের নাকের ডগার ওপর দিয়ে। বাঙালির সৎ,স্নেহ ভালোবাসাময় চেতনার ভেতরে আপনারা একর পর এক পরস্পরদ্বিমুখী চিন্তা ও কূটতর্কের বিষ ঢুকিয়েছেন আপনারা ধর্মের কথা বলে। যুদ্ধকালে যা ছিল আপনার বদর বাহিনীর নিরবচ্ছিন্ন কৌশল।

৪৪ বছর পর আজ যারা সগর্বে আপনার পক্ষে মামলা লড়ছে তারা নিঃসংকোচে লিখতে পারছে যে নিজামীর মতো যুদ্ধাপরাধী পাকবাহিনীর সহযোগী ছিল। তারা ধরে নিয়েছে পাক বাহিনীর সহযোগী হওয়া স্বাভাবিকই শুধু নয়, বেশ গর্বেরও! তারা ভেবে রেখেছিল এটা সত্য এবং আশা করেছিল এটাই লক্ষ লক্ষ বাঙালি হত্যার অপরাধ থেকে মুক্তি পাওয়ার অন্যতম লজিক হয়ে উঠবে।

একটিমাত্র শব্দে আপনাদের সে আশা বেলুনের মতো ফুটো হয়ে উড়ে গেছে 'dismiss'- অর্থাৎ আপিল বিভাগের রায় বহাল আছে। আপিল বিভাগে বহাল ছিল ট্রাইব্যুনালের রায়। না আমি ভুলিনি যে ট্রাইব্যুনাল তাদের পর্যবেক্ষণে বলেছেন যে, ‘মতিউর রহমান নিজামী একজন প্রখ্যাত ইসলামী পণ্ডিত (আসামি পক্ষের দাবি অনুযায়ী) হওয়ার পরও কোরআনের আদেশ ও মহানবীর শিক্ষার পরিপন্থী হয়ে আলবদর বাহিনী গঠন করেন, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল বাঙালি বুদ্ধিজীবী ও মুক্তিকামী মানুষদের হত্যা ও নিধন এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বর কর্মকাণ্ডকে সহযোগিতা ও অনুমোদন আদায়।’... “আমরা ধরে নিতে বাধ্য হচ্ছি যে মতিউর রহমান নিজামী ইসলামিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও সচেতনভাবে এবং স্বেচ্ছায় ‘আল্লাহ’ ও পবিত্র ধর্ম ‘ইসলাম’ এর নামের অপব্যবহার করে ‘বাঙালি জাতিকে’ সমূলে ধ্বংস করতে চেয়েছিলেন।”  

ইসলামের কোন বিষয়ে পণ্ডিত আপনি? শুধু মওদুদীর ওয়াহাবিজমে? তা তো সউদী রাজপরিবারের তত্ত্বাবধানে তৈরি ব্যাখ্যা। তা আপনারা চাপিয়ে দিতে চান বাঙালি মুসলমানের ওপর? প্রতিটি দেশের মুসলমান তার নিজ ঐতিহ্য ও মাটির আচার সংস্কারে লালিত পালিত। তার মাটি তার প্রথম পরিচয়। তাই দেশে দেশে ইসলাম বহু রকম। এই বহুরূপ-ই ইসলামের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এ কারণেই সিন্ধু অববাহিকা পার হয়ে আসা মানুষদের আবাসভূমি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে মধ্যযুগের বর্ণবাদী সমাজগুলো থেকে নিপীড়িত মানুষেরা ইসলামের ছায়াতলে এসেছিল আশ্রয় নিতে। স্থানীয় সংস্কৃতির সাথে ইসলামের শুভ মূল্যবোধ মিশে এই মানব সমাজের নানা ভাবনা স্রোতের মহা মিলন ঘটেছে। ইসলাম যে এই সমাজগুলোতে একটা ইতিবাচক বোধ হয়ে গড়ে উঠতে উঠতে ব্যর্থ হয়েছে তা আপনাদের মতো রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি নিয়ে চলা নরঘাতকদের জন্য। আপনাদের গুরু মওদুদী যা আরও বাড়িয়ে তুলেছে এবং নিজেকে এই জনপদের জন্য এক মূর্তিমান অভিশাপরূপে প্রমাণ করে প্রস্থান করেছে।

আমরা খেয়াল করেছি আপনার ট্রাইব্যুনালের রায়ই আপিল বিভাগে বহাল থাকে। এবং আপিল বিভাগের রায়ের রিভিউ আবেদনও খারিজ হয়ে যায়। এত স্তর পার হয়ে আসার কারণ এ বিষয়ে যে কোনও অবান্তর প্রশ্ন তোলার পথ যেন না থাকে তা আইনি প্রক্রিয়ায় নিশ্চিত করা। চূড়ান্ত বিচারে দালিলিক প্রক্রিয়ায়  দেশের সর্বোচ্চ আদালত নিঃসংশয়ে প্রমাণ করলেন যে ‘নিজামী’ যুদ্ধাপরাধী এবং মানবতাবিরোধী অপরাধী ছিল। এরপর আমাদের আর কৌতূহল থাকার কথা ছিল না। যদি আপনি ৭১-এ কি কি করেছেন সে বিষয়ে আমাদের হাতে তথ্য না থাকতো।

এপ্রিল ১৯৭১। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করতে আপনি ও আপনার দলের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের কর্মীদের নিয়ে গড়ে তোলেন আলবদর বাহিনী। ছাত্র সংঘের নাজিমে আলা বা সভাপতি হিসেবে আলবদরের নেতৃত্বের দায়ও আপনার কাঁধে আসে । পাকিস্তানভিত্তিক ছাত্র সংগঠন ছাত্র সংঘের ওয়েবসাইটে সাবেক ‘নাজিমে আলা’ অর্থাৎ সভাপতিদের তালিকায় এখনও আপনার নাম রয়েছে যদিও আপনার জামায়াত সমর্থকরা মিথ্যে অনলাইন প্রচারণায় বলে চলেছে আপনার মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণ নাকি প্রসিকিউশন দেখাতে পারে নি।

পাশাপাশি আপনি ছিলেন শান্তি কমিটিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় যা ট্রাইব্যুনালের রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ‘একাত্তরে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি ও আল-বদর বাহিনীর প্রধান নিজামী নিজে বিভিন্ন অপরাধের ঘটনায় অংশ নেন।   বুদ্ধিজীবীদের হত্যায় নিজামীর ভূমিকা ‘ডি-জুর ও ডি-ফ্যাক্টো’ (প্রচ্ছন্ন ও সরাসরি) ছিল।’

আপনার অপরাধের প্রত্যক্ষ সাক্ষী হিসেবে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্ত্রী সালমা হক ও শ্যামলী নাসরিন আজও বেঁচে আছেন।

আপনার পুত্র বলেছেন আপনি মতিউর রহমান নিজামী নাকি ’আগাগোড়াই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ইসলামি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসী’। আপনারা যদি মওদুদীর ইসলামকে ভিত্তি করে আপনাদের প্রিয় পাকিস্তানী বাহিনীর অপারেশনে অংশ নিয়ে তিন মিলিয়ন গণহত্যা, চার লক্ষ ধর্ষণ এবং কোটি উদ্বাস্তুর ধন সম্পদ লুণ্ঠনের রমরমা কর্মকাণ্ডকে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি বলেই আপনার পুত্রকে শিখিয়ে থাকেন তা হলে তো আপনার বিরুদ্ধে এ দেশের অসংখ্য তরুণকে ভুলপথে হত্যা, রক্তপাত, সহিংসতা ও জঙ্গিবাদী পথে নিয়ে আসার যে অভিযোগ রয়েছে তা সত্যি বলেই প্রমাণিত হয়।

আপনার পুত্র আপনার পক্ষে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে বলেছেন, তিনি মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী প্রকাশিত বই, ম্যাগাজিন, পত্র-পত্রিকা, গল্প ও উপন্যাস পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছেন, ১৯৭১ সালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ ও বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের ঘটনার কোথাও মতিউর রহমান নিজামীর নাম নেই। মুক্তিযুদ্ধের পর এসব ঘটনায় প্রায় এক লাখেরও বেশি মামলা হয়েছিল তার কোনোটিতেই তার বাবার নাম ছিল না।

তার মতে ১৯৮৬ সালে আপনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে ইসলামী আন্দোলনের একজন সম্ভাবনাময় নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন  সুতরাং ‘মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে আনিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ মিথ্যা এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত…কেবল জামায়াতের আমির হওয়ার কারণেই তার বাবার বিরুদ্ধে স্বাধীনতার ৪২ বছর পরে নতুন করে এ অভিযোগ আনা হয়েছে। শুধু বাংলাদেশের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে তিনি উল্লেখযোগ্য একজন বলে এসব অভিযোগ আনা হয়েছে।’

গণহত্যার শিকার পরিবারগুলোর ভাঙা হৃদয়,অবরুদ্ধ কান্না ও অপেক্ষার মাঝে এক শিক্ষিত তরুণ প্রজন্মের মুখে এসব কথায় উদ্ভাসিত হয় পেছনের অন্ধকারে বসে থাকা মানসিকতাটা। গণহত্যা প্রমাণে দেশে বিদেশে যত ধরণের স্যাম্পল রয়েছে তার সব ক’টিতে আসামী পক্ষের বৈশিষ্ট্য দেখা গেছে একই ধরণের। গণহত্যাকারী ও তাদের সমর্থকদের ছিল ‘নিজদিগকে স্বাভাবিক ও গণতান্ত্রিক’ প্রমাণ করার পক্ষে যুক্তি প্রদর্শনের আকুল প্রয়াস; কি প্রিন্ট মিডিয়ায়, কি ভিডিও,টিভি শো তে বা সাংবাদিকের সামনে।

মনস্তত্ববিদদের মতে গণহত্যাকারীর মন এক সংগ্রাহক। তা ‍নিজের অবস্থানকে জাস্টিফাই করতে দীর্ঘকাল ধরে সঙ্গোপনে সংগ্রহ করে চলে নানা কল্পিত অপমান, অবমাননার গল্প। তার বা তাদের প্যারানয়েড বীক্ষণে নিজেদের সোশ্যালি বিচারের মুখোমুখি হতে দেখে,সামাজিক হিংসা তাদের বিরুদ্ধে কাজ করছে দেখে, দেখে বিশেষ সুবিধাভোগীরা তাদের বিরুদ্ধে আঙুল তুলছে। তার বা তাদের বিশ্বাস জাগে সে বা তারা যা পাওয়ার কথা তা অন্যরা পাচ্ছে আর তারা দূরে দাঁড়িয়ে চেয়ে আছে। তাদের অমানুষিক দণ্ডভোগ করতে হচ্ছে এমন কাজের জন্য যা আসলে তারা বৃহত্তর সমাজের জন্যই করেছে।

আপনার পুত্রের কথায় প্রমাণ হয় আপনাদের হাতে ব্রেনওয়াশ হওয়াটা কি ভয়ঙ্কর। তা সত্য বলা ভুলিয়ে দেয়। সত্যকে আপনারা ফেস করতে পারেন না। তাকে মিথ্যা দিয়ে ঢেকে দেওয়াই আপনাদের রাজনীতি। আপনাদের দলীয় প্যারানয়েড ভাবনা আপনার চারপাশে দাঁড়িয়ে থাকা ওই বিলেত ফেরত তরুণরাও তাদের মাথায় ঢুকিয়ে নিয়েছে। অথচ এদের এই সেকুলার বাংলাতেই পেশার জগতে আরও পথ পাড়ি দিতে হবে ।  

আপনার পুত্রের কথিত গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ইসলামিক রাষ্ট্র কায়েম মানে কি? শরিয়া? ভয়ের চাষ ও বিনিয়োগ? যা আপনারা করে চলেছেন বাংলায় রাজনীতির নামে? পুরুষতান্ত্রিক বলপ্রয়োগে পরিবার ও সমাজকে কোণঠাসা করে দেশ চালানো? হেফাজতকে নামিয়ে দিয়ে যা বলার চেষ্টা করছেন আপনারা? বর্বরতম উপায়ে প্রতিটি মানুষের কথা ও কাজের, বেঁচে থাকার ও জীবন যাপনের অধিকারকে দমন করে কোন গণতন্ত্র হাসিল করা সম্ভব? একজন ব্যারিস্টার গণতন্ত্র শব্দটি ব্যবহার করছেন অথচ তিনি গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠানগুলো কি কি তা তিনি জানেন না বা জানলেও তার অপব্যাখ্যা দিয়ে জনতাকে মিসগাইড কারর চেষ্টা করছেন। অথচ তিনি গণতন্ত্রের পথে চলা একজন ব্যক্তিরূপে তার পিতাকে পরিচয় করিয়ে দিতে চাইছেন দেশের মানুষের কাছে। এই কথা বলে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বিচারালয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রয়াস পেয়েছেন। তাহলে একাত্তরের ৫ আগস্ট দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকায় আপনি বলেছিলেন, ‘পাকিস্তান আল্লাহর ঘর। আল্লাহ একে বারবার রক্ষা করেছেন। ভবিষ্যতেও রক্ষা করবেন। দুনিয়ার কোনও শক্তি পাকিস্তানকে নিশ্চিহ্ন করতে পারবে না।’ এ ও কি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠারই উক্তি। আর সে গণতন্ত্রের মানে বুঝি পাকিস্তান সামরিক বাহিনীকে সহায়তা?’

ট্রাইব্যুনাল বলেছেন আপনার পিতার ওই উক্তি ‘স্পষ্টতই সূরা হজের ২৬ নম্বর আয়াতের বিকৃতি। কারণ, এই সূরায় একমাত্র কাবাঘরকে আল্লাহর ঘর বলা হয়েছে। কিন্তু নিজামী পাকিস্তানকে আল্লাহর ঘরের সঙ্গে তুলনা করেছেন।’ ট্রাইব্যুনাল যা বলে নি তা এ দেশের জনগণ বলছে, ধর্মের দোহাই দিয়ে যে আপনি,  আপনারা যে মানুষকে বোঝাতে চান ৭১-এ যা করেছেন তা সঠিক, ‘স্বাভাবিক’ গণতন্ত্র-এই চেষ্টাটাই প্রকৃত অর্থে একটা মহা ধাপ্পাবাজি। আইন আদালতে, বিচার বিভাগের ও জনগণের সামনে একাধারে আপনারা এই ধাপ্পাটা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। তার নিদর্শন আপনাদের আপিল আবেদনে ওই স্পর্ধিত স্বীকারোক্তি যাতে বলা হয়েছে, ‘মতিউর রহমান নিজামী পাকিস্তানী বাহিনীর সহযোগী ছিলেন।’

আপনাদের সে স্পর্ধার উৎস ছিল একাত্তরে এবং আজও আপনাদের সহযোগী - ভিন্ন একটি দেশ। সে দেশ আপনাদের ত্যাগ করে নি, না আপনারা সে দেশকে ত্যাগ করেছেন। আপনারা আজও সে দেশের জন্যই বাঙালি বাঙালিত্বের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন । গণতন্ত্র তারা বোঝে কি না সে ব্যাখ্যায় যাব না, তবে গণতন্ত্র বোঝে এমন মানুষ বাংলায় কম নয়। তারা জেগে আছে। কুরআন তাদের বলে ‘একজন মানুষ হত্যার অর্থ গোটা মানবতার ঘাড়ে খড়গ তোলা’। এ দেশের মানুষ কিন্তু নিজের হাতে বিচার তুলে নেয় নি। তারা স্বদেশের সরকারের, বিচার বিভাগের ন্যায় বিচারের ওপর আস্থা রেখেছে। তাদের প্রতীক্ষা বৃথা যায় নি।

আমরা আশা করি আগত দিনগুলোতেও মানবতা এভাবেই মনুষ্যত্বহীনতার স্পর্ধাকে গুঁড়িয়ে দেবে। জয় হবে সহনশীলতার ও শান্তির।
জয় বাংলা।

এ বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত