গোলাম সাদত জুয়েল

১৯ মে, ২০১৬ ০২:২০

একজন সাংসদ কি পাঁচ জন মন্ত্রীর চেয়েও প্রভাবশালী?

লিখব না লিখব দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলাম, জাফর ইকবালের লেখার পর শাবির ছাত্রছাত্রীদের প্রতিবাদের পর কেন লিখব?

কিন্তু লিখতে বসলাম এ কারনে, পাঁচ জন মন্ত্রীর ঘোষণার পর সরকার কে চালায় দেখার জন্য। আইনমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, পরারষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী  ও তথ্যমন্ত্রী পাঁচ জন মন্ত্রী শিক্ষকের পক্ষ নেবার পর  কি হবে তা দেখছিলাম। সরকার কে চালায়।

প্রধানমন্ত্রী বুলগেরিয়ায়, আমাদের কি উনার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। শেখ হাসিনাকে বিদেশে থেকেই কি এ ঘটনায় উদ্যোগি হতে হবে। হায়রে বাংলাদেশ?

একজন শিক্ষক যিনি কিনা ১৮ বছর তার প্রতিষ্ঠানকে তিল তিল করে টিনের ঘর থেকে অট্টালিকায় পরিণত করতে পেরেছেন। তার শ্রম ও মেধার মূল্য এ ভাবে দিতে হবে কে জানত । যদি কারও যোগ্যতা না থাকে তিনি প্রধান শিক্ষক হতে পারেন না। তিনি মুসলিম হোক আর হিন্দু হোক, একটি মিথ্যা অপবাদে তাকে অপমানিত হতে হল, মিথ্যার কাছে সত্য জয়ী হয়ে যাচেছ।

মিডিয়া কত দ্রুত তদন্ত করতে পারে তারপরও আমাদের দেশের প্রশাসন কতটা সেকেলে। সারা দেশের মানুষ জেনে গেছে ঘটনা কি ঘটেছিল, একজন সম্মানিত শিক্ষক মানেজিং কমিটির অন্যায় আবদার না রাখায় কী সুকৌশলে ধর্মীয় অনুভুতির অপবাদ দিয়ে তার প্রতিষ্ঠানে তাকে অপদস্ত করা হল। হায়রে জাতি। আমাদের আরও অনেক কিছু দেখতে হবে।

সেলিম ওসমানের মত ১৮ বছর পুবে যদি গামেন্টস ব্যবসায় প্রধান শিক্ষক প্রবেশ করতেন তাহলে বাংক এর টাকা লোন নিয়ে চুরি করে ৪/৫ টা গামেন্টস দিতে পারতেন। অনেক টাকার মালিক হতে পারতেন, নারায়নগঙ্জে তা সম্ভব ছিল। তিনি মানুষ বানাবার কারিগড়, মনন মেধা বিকাশের তাগিদে শিক্ষকতা শুরু করলেন। টিন শেডের আদলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আজ বিরাট অট্টালিকা হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী আজ দেশ বিদেশে। অথচ ম্যানেজিং কমিটি নামক একটি কমিটি যেটি সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আছে তারা প্রধান শিক্ষককে ম্যানেজ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি করে।

শ্যামল কান্তি প্রধান শিক্ষক,  প্রধান শিক্ষকরা সব সময় কড়া হয়ে থাকেন। তাদের সব সময় কঠোর ও কড়া থাকতে হয় এডমিনিস্ট্রেশন চালাবার জন্য। তার অপবাদ এ মাত্র। কোন কিছুতে সুবিধা করতে না পেরে হিন্দু ভদ্রলোক প্রধানশিক্ষক কে একটি পরিকল্পিত নাটক সাজাল ম্যানেজিং কমিটি তিনি ফেঁসে গেলেন । নারায়নগঞ্জের কলংক ওসমান পরিবারের নতুন সংস্করন সেলিম ওসমান যে কান্ডটা করলেন তাতে সারা দেশ স্তম্ভিত। তার মত লোকের কাছে কি আর আশা করা যায়।  

দ্বিতীয় ঘটনাটা ম্যানেজিং কমিটি শিক্ষক শ্যামলকে সাময়িক বহি:স্কার করলেন। জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কমর্কতা ও ইউএনও বা জেলা প্রশাসক বলে কিছু আছে কিনা আমার জানা নে্ই । আইনমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও সবশেষ সিলেটে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল ইনু শিক্ষক অবমাননা মেনে নেয়া হবে বলার পর কি হবে দেখার অপেক্ষায় দেশবাসী।  নাকি প্রধানমন্ত্রী বিদেশে বা ঢাকা বিমা্ন বন্দরে নামার পর কোন ঘোষণা দিবেন এ পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।  

জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকেও কোন টু শব্দ শোনা যাচেছ না । রওশন এরশাদ নামের একজন পৌঢ় রাজনীতিবিদ যিনি আবার বিরোধী দলীয় নেত্রী, তিনি বেঁচে আছেন না মরে গেছেন জাতি জানতে চায়।

হায়রে শিক্ষক সমাজ, সারা বাংলাদেশের শিক্ষক সমাজ কেন চুপ। সবাই তামাশা দেখছে। শিক্ষকদের রাস্তায় নেমে আসলে সেলিম ওসমানের বিচার হতো আর ভবিষ্যতে কেউ শিক্ষকদের অপদস্ত করতে সাহস করত না।

শিক্ষক সমাজ আমাদের অহংকার। তাদের প্রতি কোন অনুকম্পা নয়, নৈতিক দায়িত্ব শিক্ষকদের সম্মান করা। একজন শিক্ষক যখন আহাজারি করে বলে, আমার যে টুকু সম্মান ছিল তা নেই- আমি মৃত । তখন প্রবাসে বসেও তার জন্য চোখের পানি ফেলা ছাড়া আমাদের কি আছে।  

তবু প্রত্যাশা করি শ্যামলকান্তি স্বসম্মানে যথাযথ মর্যাদায় তাঁর প্রতিষ্টানে ফিরে আসবেন। তার আগে, এই শিক্ষকের কাছে আমরা ক্ষমা প্রাথনা করছি। আর সেলিম ওসমানের প্রতি ঘৃণা।

গোলাম সাদত জুয়েল : প্রবাসী সাংবাদিক -কলামিস্ট

আপনার মন্তব্য

আলোচিত