আব্দুল করিম কিম

২৭ আগস্ট, ২০১৬ ১৩:১২

প্রধানমন্ত্রীর কাছে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের ঘোষণা চাই

রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে আন্দোলনরতদের জন্য বিশেষ করে পরিবেশবাদীদের জন্য আজ (শনিবার) গুরুত্বপূর্ণ দিন।

বিশ্বের অন্যতম প্রাকৃতিক বিস্ময় সমুদ্র উপকূলবর্তী সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনের ভবিষ্যৎ নিয়ে সৃষ্ট উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, প্রতিবাদ-প্রতিরোধ, আলোচনা-সমালোচনার জবাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সংবাদ সম্মেলন করবেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদেরকে জানিয়েছেন বিকেল ৪টায় গণভবনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশের বাস্তবতায় প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণা প্রদান অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। মার্কিন প্রেসিডেন্টের মত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যে কোন সময় যে কোন বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন না । তাই প্রধানমন্ত্রীর এই সংবাদ সম্মেলন বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে রামপালে নির্মিত কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র সম্পর্কে সরকারের সর্বশেষ অবস্থান তুলে ধরা হবে বলে ধারণা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ।

সাম্প্রতিক সময়ে রামপাল প্রকল্প নিয়ে সরকারের উপর নানামুখী চাপ সৃষ্টি হয়েছে। বামধারার কিছু রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা 'তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি'র রাজপথে সৃষ্ট চাপ সরকার উপেক্ষা করে নিলেও মানবাধিকার ও পরিবেশ আন্দোলনের নেত্রী মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট সুলতানা কামাল-এর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি'র নাগরিক আন্দোলনের চাপ উপেক্ষা করতে পারছে না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহপাঠিনী ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এডভোকেট সুলতানা কামাল রামপাল প্রকল্পকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন। সুন্দরবন ধ্বংসকারী এ প্রকল্পকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী বলেছেন।

এডভোকেট সুলতানা কামাল-এর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি যদিও সংবাদ সম্মেলন, গোলটেবিল বৈঠক, মানববন্ধন, সেমিনার ইত্যাদি নিরীহ ঘরোয়া কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে এ প্রকল্প বাতিলের জন্য সরকারকে প্রতিনিয়ত চাপ দিচ্ছে কিন্তু সরকারের জন্য তা ক্রমান্বয়ে বিপদজনক হয়ে উঠছে।

প্রকল্প বিরোধী নাগরিক আন্দোলনকে শুরুতে সরকার ধর্তব্যে না নিলেও ধিরে ধিরে জনমত তীব্র হচ্ছে। বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে আয়োজিত টকশোতে প্রকল্প বিরোধী বিশেষজ্ঞদের যৌক্তিক মতামতের জবাবে প্রকল্পের পক্ষের বিশেষজ্ঞদের অজ্ঞতা নাগরিকরা প্রত্যক্ষ করছে।

সরকার সমর্থক থেকে শুরু করে সরকার বিরোধী প্রায় সকল সংবাদপত্রে নিয়মিতভাবে প্রকল্প বিষয়ে নেতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশ হচ্ছে। দেশের বিশিষ্ট লেখক ও গবেষকরা সুন্দরবন ধ্বংসকারী এ প্রকল্পের সমালোচনা করে নিয়মিত সংবাদপত্রে কলাম লিখে যাচ্ছেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও সুন্দরবন ইস্যুতে সরব। এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে খোদ ভারতেও কথা বলা শুরু হয়েছে। বিশ্বের প্রভাবশালী বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন সুন্দরবন নিয়ে তাদের উদ্বেগ জানিয়ে প্রকল্পের কাজ বন্ধ করতে বাংলাদেশ সরকারকে আহবান জানিয়েছে। শুধু তাই নয় রামপালে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে বিনিয়োগ না করতে আহবান জানানো হয়েছে। তাদের আহবানে সারা দিয়ে ফ্রান্সের তিনটি প্রভাবশালী ব্যাংক পিছিয়ে এসেছে।

রামপাল প্রকল্প নিয়ে সরকারের ভেতরেও ভিন্নমত রয়েছে। ১৪ দলের অন্যতম শরীক বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি 'তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি'র অন্যতম অংশীদার হিসাবে রামপাল বিরোধী আন্দোলনে মাঠে আছে।

গৃহপালিত বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হো মো এরশাদ রামপাল প্রকল্পকে আত্মঘাতী বলেছেন। এমন বাস্তবতায় গোঁদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে সরকারের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ময়দানে আবির্ভূত হয়েছে। ২০ দলীয় নেতাদের পাশে রেখে বিএনপি নেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া  সুন্দরবন বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। হঠাত করে নিজের সুবিধা অসুবিধার কথা না বলে সুন্দরবন নিয়ে সংবাদ সম্মেলন সর্বমহলে আলোচিত হচ্ছে। তিনি সুন্দরবন নিয়ে আন্দোলন করার কোন হুমকি না দিলেও তইরি হওয়া জনমতকে কাজে লাগানোর চেষ্টা যে করবেন না তা বলা কঠিন। আপাতত উদ্বেগ উৎকণ্ঠা প্রকাশ করলেও সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে ভবিষ্যতে ভারত বিরোধী পুরনো রাজনীতি নতুন করে শুরু করতে পারেন। যা সরকারের চলমান স্থিতিশীলতাকে নষ্ট করবে পাশাপাশি জনদুর্ভোগের বিরোধী রাজনীতির পুনর্জন্ম হবে।

তাই আজকের সংবাদ সম্মেলনে লুটেরা আমলাদের মায়াজাল ছিন্ন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসাবে সাংবাদিকদের সামনে দেখতে চাই।

শুনতে চাই বিচক্ষণতার সাথে পরিস্থিতিকে মূল্যায়ন করে ‘বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড’-এর রামপাল কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের সুস্পষ্ট ঘোষণা।

আব্দুল করিম কিম : পরিবেশকর্মী।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত