নিউজ ডেস্ক

০৬ জানুয়ারি, ২০১৫ ০২:৩০

সোশ্যাল সাইট ফেসবুকে যেভাবে দেখা ৫ জানুয়ারি ২০১৫

প্রযুক্তির সহজলভ্যতা এবং ব্যবহারে উতকর্ষতার কারণে সামাজিক সোশ্যাল সাইট বিশেষ করে ফেসবুকে অফলাইনের আন্দোলনের ঝড় অনলাইনে এসেও আছড়ে পড়ে। অনেক এক্টিভিস্ট-ফেসবুকার তাদের নিজস্ব মতামতগুলো লিপিবদ্ধ করে রাখেন ব্যক্তিগত টাইমলাইনে। ওখানে মানুষের পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে এক ভাবনার সাথে আরেক ভাবনার যোগ হয়। রাজনৈতিক সচেতনতা আর চিন্তাধারায় অপূর্ব এক মিলনমেলার মাধ্যমে এক জন আর একজনের ভাবনার সাথে খুব সহজেই পরিচিত হয়। তথ্যের আদান-প্রদান আর চিন্তার সমন্বয়ের মাধ্যমে অনেক ক্ষেত্রে জন্ম নেয় নূতন কোন চিন্তার।

 


সোশ্যাল সাইট ফেসবুকে কেমন ছিল ৫ জানুয়ারি ২০১৫, তার সামান্য কিছু নমুনা নিম্নে প্রদত্ত হলো:



 

আবু এম ইউসুফ তাঁর টাইমলাইনে লিখেছেন- গত বছর ৫ জানুয়ারী দেশে জাতীয় নির্বাচন না হলে দেশে ১/১১'এর পর একটা অসাংবিধানিক সরকারের সংকটে আবার পতিত হতে পারতো। এটা সাধারন মানুষ, ছোট-বড় সব রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরাই বুঝেছিলেন। তাই, জামাত- বিএনপি' এর নজিরবিহীন সহিংস ও সন্ত্রাসমূলক আন্দোলন সত্ত্বেও সেদিনের নির্বাচনের ফলাফল দেশের সাধারন মানুষ, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মহলের অধিকাংশই সেটা মেনে নিয়েছিলেন। দেশ গত একবছরে যেভাবে চলছিল তাতে ছোট-খাটো সমালোচনা ছাড়া সরকার পালটে দিতে হবে এরকম কোন বিশাল অভিযোগ জনগনের পক্ষ থেকে বিদ্যমান হতে দেখা যায় নাই। আর তাছাড়া সরকার পালটে দেয়ার মতো গনদাবী সম্পৃক্ত কোন ব্যপক গনবিক্ষোভ বা আন্দোলনেরও কোন বাস্তব অস্তিত্ব দেখা যায় নাই। কোন অধিকতর গ্রহনযোগ্য ও গনসমর্থিত নেতৃত্বও জনগনের আস্থা ও আকাঙ্ক্ষার স্থান অর্জন করতে দেখা যায় নাই।



জাতীয় নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে হবে না সর্বদলীয় সরকারের অধীনে হবে এটা ক্ষমতাসীন ও বিদ্যমান ক্ষমতাকামী শাসক শ্রেণির অন্তর্দন্ধ হিসাবে দৃশ্যমান। কিন্তু, সেটা যেমন গনদাবীর বিষয় নয় তেমনই সেটা গভীর-রাজনীতিরও বিষয় নয়। জাতীয় আয় ও প্রবৃদ্ধি অথবা মূল্যস্ফীতি সব মিলিয়ে সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল রয়েছে, তাছাড়া অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি মানবউন্নয়ন সূচকেও যেমন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন সূচকে জাতীয় আয়ের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের অগ্রগতি সারাবিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। দেশের সাধারন মানুষ মনে করে না যে, সামাজিক ও অর্থনীতি সূচকে ক্ষমতাসীন সরকারের বিপরীতে ক্ষমতাকামী বিএনপি 'এর জোট অধিকতর কার্যকরী ব্যবস্থাপনা উপহার দিতে পারবে। বরঞ্চ এই ব্যপারে সন্দিহান যে, সুশাসনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যা যেমন, দুর্নীতি, দলীয়করন, আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসুত্রিতা, ইত্যাদীর ক্ষেত্রে বিএনপি-জোট'এর কাছ থেকে বিদ্যমান পরিস্থিতি থেকে আরো ভালো কিছু পদক্ষেপ আশা করা যেতে পারে।



অন্যদিকে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, ধর্মীয় জঙ্গীবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতার মত জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে বিএনপি জোটের কোন সুস্পষ্ট এবং ইতিবাচক অঙ্গীকার নেই।



সুতরাং, বিএনপি জোট'এর যে আন্দোলন, যে আন্দোলনের পেছনে রয়েছে দেশকে অস্থিতিশীল করে ষড়যন্ত্র করে অগনতান্ত্রিক এবং অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার একটা প্রচেষ্টা। এবং যার সাথে কোন গনদাবী নেই, নেই কোন গণ-সম্পৃক্ততা। সুতরাং, এই আন্দোলন'কে কঠোর হাতে দমন করার সম্পূর্ণ আইনগত, নৈতিক ও ন্যায্য অধিকার সরকার এবং জনগনের আছে। 



 শওগাত আলী সাগর লিখেছেন- প্রথম আলোর সাংবাদিকতা এবং বিএনপির আন্দোলন

বেগম খালেদা জিয়া যখন 'অবরোধ কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে' বলে ঘোষনা দেন,সেটি টিভি চ্যানেলগুলো লাইভ প্রচার করেছে। রুহুল কবীর রিজভি তখন হাসপাতালে। 


প্রথম আলো রিজভীকে উদ্ধৃত করে জানাচ্ছে,'খালেদা জিয়া পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত সারা দেশে নৌ, রেল ও সড়কপথ অবরোধের ডাক দিয়েছেন।" রিজভী আবার কথাটা সরাসরি প্রথম আলোকে বলেনি। স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সম্পাদক আমিনুল ইসলাম রিজভীকে উদ্ধৃত করে এই তথ্য নাকি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।


'অবরুদ্ধ' খালেদা জিয়া পুলিশি হেফাজতে থাকা রিজভীর সঙ্গে যদি আন্দোলনের কর্মসূচী নিয়ে আলোচনা করতে পারেন, তাহলে তিনি অবরুদ্ধই বা হন কিভাবে, রিজভীইবা গ্রেফতার হলেন কিভাবে।খালেদা জিয়ার সরাসরি ঘোষনার চেয়েও আমিনুল ইসলামের টেক্স ম্যাসেজ অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেলো প্রথম আলোর কাছে? প্রায় সবকটি পত্রিকাই যেখানে খালেদাকে উদ্ধৃত করে অবরোধের কথা প্রচার করছে, প্রথম আলো তখন নৌ-রেল সড়ক পথ অবরোধের বাড়তি কর্মসূচী প্রচার করছে।
বেগম খালেদা জিয়ার অস্পষ্ট কর্মসূচী স্পষ্টীকরনের দায়িত্বও তা হলে প্রথম আলোর?



আজম খান (মহামান্য কহেন) তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে জামায়াতপ্রেমের পরিণতিকে ইঙ্গিত করে লিখেন- খালেদা জিয়ার বাড়ির সামনে এই মুহুর্তে ৪ ট্রাক বালু আর ইট।


সরকার মনে হয় বিএনপিরে এইবার কবর না দিয়ে ছাড়বে না। ইট- বালু দিয়ে সেখানে এপিটাফে লেখা থাকবে, এখানে ঘুমিয়ে আছে জামাতের দুর্দিনের বন্ধু বিএনপি।


রেস্ট ইন পিস, বিএনপি!


"অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ" বাক্যটারে সত্য প্রমান কইরা জামাতের সাথে বন্ধুত্বের মুল্য নিজের জীবন দিয়ে চুকাইলা।



অনিমেষ রহমান তাঁর টাইমলাইনে লিখেন- এই মুহুর্তে নিরপেক্ষতা মানে তুমি ৭১ এবং ৭৫ এর ঘাতকদের পক্ষে। 



শামস রাশীদ জয় লিখেছেন- আগে পুলিশ পার্টি অফিসে ঢুকে লাঠি দিয়ে পেটাতো, বুটের লাথি দিতো, রাইফেল দিয়ে পেটাতো, ভাঙচুর করতো, কম্পিউটার নিয়ে যেত। এখন সেগুলো করে না, শুধু নিরাপত্তা দেয়। রাজনৈতিক সরকারের আচরণে সহনশীলতার সুস্পষ্ট উন্নতি। রাজনীতির উন্নতির ধারা অব্যাহত থাকুক। 



আজাদ মাস্টার লিখেছেন- রাজধানী ঢাকার বুকে ৯০ এর মতো আন্দোলন করার জন্যে লোক পাওয়া যায় না কারণ ঢাকার নাগরিকেরা বেশিরভাগ অর্থনৈতিক বিষয়ে সরকারের মুখাপেক্ষি নয় আর । , ৯০ দশকে যেমন সরকারি ফ্যাক্টরিতে চাকুরি , রেশন কার্ড বানানো , লাইসেন্স , পারমিট ইত্যাদি নানা কারণে রাজনৈতিক দলগুলার নেতাদের সাথে তাদের একটা লিয়াজো রেখে চলতে হতো । ব্যক্তি উদ্যোগ, কর্পোরেট সার্ভিস সেক্টর এইখানে রুজি রুটির ব্যবস্থা করে এখন , আগে যেখানে একটা ল্যান্ড ফোনের জন্যে দরখাস্ত দিয়ে মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হতো সেই যুগ খতম হয়ে গেছে নানা ধরনের পরিসেবা লাভের সরকারি বিকল্প রয়েছে । এই কারণে ঢাকার বুকে আন্দোলন জমে না সহজে ।


তবে ঢাকার বাইরে বিভাগীয় , জেলা মফস্বল শহরগুলাতে এখনো বড় রাজনৈতিক দলগুলা কর্মসূচি দিলে মারামারি করার জন্যে , মিছিল মিটিং করার জন্যে লোক পায় কারণ সরকারি সেক্টর এখনো সেইখানকার অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি , রাস্তাঘাটের ব্রিজের টেণ্ডার , কাবিখা প্রজেক্ট , স্থানিয় সরকারের নানা প্রকল্পের ভাগ বাটোয়ারা , প্রাইমারি ইস্কুলের চাকুরি নিয়োগ বানিজ্য আয় ইনকামের মূল উৎস ।


ঢাকার বাইরে যেদিন প্রাইভেট সেক্টর শক্তিশালি হবে সেইদিন সেইখানেও মারমারি করার লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না । 



আতিক বাঙাল লিখেছেন- বিএনপি বাঙালীর পালস বোঝেনা, বোঝার কোন কারন নাই। তারা বাংলা সংকৃতি বোঝেনা, বাংলা গানও বোঝেনা। পাড়ার মোরে মোরে বাজানো দেশের গানগুলি থেকে কি বিপুল শক্তি উৎসারিত হয় আওয়ামিলীগের কর্মী -সমর্থকদের মাঝে তার সন্ধান তারা কোন দিন জানবেনা। 

দিন শেষে তারা একটি পরগাছা উৎপাত।

 

 



সৈকত কুল লিখেছেন- খালেদা জিয়ার পক্ষে বামমোর্চার জুনায়েদ সাকির মায়াকান্না দেখে ভাবছি বিপ্লব শুধুমাত্র তাদের কাছে আলোচনা সভাতেই সীমাবদ্ধ থাকে , রাজপথে নয়।

তাহারা এমন নির্বাচন চান যেখানে তাহাদের ক্ষমতায় যাওয়ার গ্যারান্টি দেয়া থাকবে। 



হয্রত বিনয় ভদ্র ব্যঙ্গ করে লিখেন- অঘোষিত সরকারী অবরোধে সমর্থন দিলেন খালেদা জিয়া  তিনি বলেছেন অবরোধ অব্যাহত থাকবে  ঐক্যমত্যের নিদর্শন পেলাম যে’ 



রাজীব রাসেল লিখেছেন- সরকারি অবরোধের শেষবেলায় এসে সরকারবিরোধী নেত্রীও ঘোষণা দিলেন- অবরোধ চলবে!

বাহ! কি সুন্দর মিলেমিশে একই কর্মসূচিকে এগিয়ে নেয়া!

আফসোস, তারা কখনো এক হয়ে পরস্পরকে বলবেন না- চলেন, দু'দল মিলে জামায়াত-শিবিররে এদেশ থেকে বহিস্কার করি!



ওহী আলম রেজা তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন-  বহুবছর আগে আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন বলেছিলেন- গণতন্ত্র হচ্ছে জনগণের কল্যানের জন্য, জণগণের দ্বারা পরিচালিত, জনপ্রতিনিধিত্বমূলক শাসন ব্যবস্থা। কিন্তু বাংলাদেশে একি হাল গণতন্ত্রের। বারবার রক্ত ঝরছে গণতন্ত্রের। গণতন্ত্রকে এক পক্ষ হত্যা করছে আবার আরেক পক্ষ রক্ষা করছে। সোমবার এমনই এক দূশ্য দেখেছে দেশের মানুষ। সরকারি দল আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা দিনভর ব্যস্ত ছিলেন গণতন্ত্র রক্ষা করতে। তারা দিনটি গণতন্ত্র রক্ষা দিবস হিসেবে পালন করেছে। অপরদিকে, বিএনপিও দিনটি গণতন্ত্র হত্যা দিবস হিসেবে পালন করেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। আহত হয়েছেন শতাধিক। নাটোরে দুইজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আব্রাহাম লিংকন কি জানতেন এতো বছর পরে গণতন্ত্র নিয়ে এমন হবে। হত্যা আর রক্ষার নামে গণতন্ত্র নিয়ে খিস্তিখেউরে মেতে উঠবে দুই দল।

 

 



গ্রন্থনা: রাকা/২০১৫০১০৬/সিলেট

আপনার মন্তব্য

আলোচিত