কেশব কুমার অধিকারী ও হাসান গোর্কি

১৭ মার্চ, ২০১৭ ১২:১০

২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস ঘোষণার দাবি উত্থাপন প্রসঙ্গে

‘ক্রিয়েশন অব বাংলাদেশ: মিথস এক্সপ্লোডেড’ নামে করাচী থেকে ড. জুনায়েদ আহমেদ সম্প্রতি একটা বই প্রকাশ করেছেন। লেখক ড. জুনায়েদ একজন একাডেমিক রিসার্চর এবং করাচি কাউন্সিল অব ফরেন রিলেশনস এর মেম্বার। গত ১৭ ডিসেম্বর বইটির প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, “ভারত ও বাংলাদেশ ’৭১-র যুদ্ধ বিষয়ে তাদের ভাষ্য যখন প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছে তখন এ বিষয়ে পাকিস্তানের ভাষ্য লক্ষণীয়ভাবে অনুপস্থিত। তাই বিগত ৪৫ বছর ধরে বাংলাদেশ ও ভারত যা বলে এসেছে তার জবাবে পাকিস্তানের যা বলা উচিত সেটা বলার দায়িত্ব আমি আমার কাঁধে নিচ্ছি।”

এই বইয়ে তিনি পাকিস্তানী বাহিনী কর্তৃক গণহত্যার বিষয়টিকে স্পষ্ট মিথ্যাচার বলে দাবি করেছেন। তার ভাষায়, “পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বৈশিষ্ট্য এমন নয় যে তারা তাদের নিজ দেশের জনগণকে হত্যা করে। এটা নিশ্চিত হওয়া যায় করাচি এবং সোয়াতে পরিচালিত তাদের অপারেশন থেকে। অতএব তিন মিলিয়ন বাংলাদেশি হত্যা এবং দুই লাখ নারী ধর্ষিত হবার কাহিনী ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা।”

শেষোক্ত উদ্ধৃতি থেকে পিএইচডি ডিগ্রীধারী এই লেখকের বুদ্ধির স্তর সম্পর্কে পাঠক নিশ্চয়ই ধারণা পেয়ে গেছেন। তার যুক্তি হলো ’৭১ সালে করাচি এবং সোয়াতে উদ্ভূত গণ-অসন্তোষ দমন করার ক্ষেত্রে পাক সেনাবাহিনী যখন সংযমের পরিচয় দিয়েছিল তখন তাদের বিরুদ্ধে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা চালানোর উত্থাপিত অভিযোগ বিশ্বাসযোগ্য নয়।

সাম্প্রতিক বেলুচিস্তান প্রসঙ্গ না টেনেও অবলীলায় বলে দেওয়া যায় যে বইটিতে কিছু কাল্পনিক তথ্য-উপাত্তের পরিসংখ্যান জুড়ে দিয়ে তিনি দাবি করেছেন, হত্যাকাণ্ডের যে সংখ্যা বলা হচ্ছে তা প্রকৃত সংখ্যার চেয়ে কুড়ি গুণ বেশি এবং এ হত্যাকাণ্ডের বেশিরভাগ ঘটিয়েছে মুক্তিবাহিনী!

পাঠক মাত্রই লক্ষ্য করবেন যে, বইয়ের লেখক অন্তত ১৯৭১ এ আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করতে পারেন নি। বাংলাদেশের মুক্তি-পাগল মানুষের বিরুদ্ধে সেদিন পাক সেনাবাহিনীর রীতিমতো যুদ্ধ ছিলো সেটি! পরে পরাজয় নিশ্চিত জেনে ষড়যন্ত্রের যুদ্ধে লিপ্ত হয় ভারতের সাথে! ঠিক আজকের একথা গুলো বলার জন্যেই। সেই যুদ্ধে পাকবাহিনী তাদের বৈশিষ্ট্যানুযায়ী প্রতিপক্ষকে আঘাত করেনি! রাইফেল হাতে ভালবাসতে এসেছিলো! মিথ্যার গীত ছন্দ-সুরের ধার ধারে না, বেসুরো বুনো ঢেউয়ে যেমন আবর্জনা ছড়ায় এ-ও ঠিক তেমনি। বইটি পড়লে একজন স্কুল পড়ুয়া পাঠকও এটা বুঝবেন যে লেখক তার কাল্পনিক বক্তব্যকে বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য শুধু তার পছন্দের সূত্রগুলো থেকে গোঁজামিল দেওয়া কিছু তথ্য সংগ্রহ করে বইটিতে ঢুকিয়ে দিয়েছেন।

তবে, বইটির ভেতরে সারবত্তা কিছু না থাকলেও প্রচ্ছদে চিরায়ত ভঙ্গিতে তর্জনি উঁচিয়ে বক্তৃতারত বঙ্গবন্ধুর ছবি এবং আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর দানরত অবনত মস্তক নিয়াজির ছবি দেখে স্বজাত্যাভিমান কিছুটা হলেও শাণিত করার সুযোগ পাবেন।  

বইটির বিষয়ে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে আলোচনা হয়েছে। এবং বলতে গেলে এই সূত্র ধরেই ২৫ মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।  

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস ঘোষণার সময় সংসদে জানিয়েছেন “আন্তর্জাতিকভাবে যাতে এই দিবসটি পালিত হয় সেজন্য আমরা বিভিন্ন দেশের কাছে গণহত্যা সংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত সরবরাহ করব।”

গত বছর ২২ মার্চ তারিখে রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণ-বিচার আন্দোলন’ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে  পঁচিশে মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস ঘোষণার দাবি জানিয়েছিলেন এই সংগঠনের আহবায়ক ও নৌ-মন্ত্রী শাহাজান খান। যতদূর জানি ঐ অনুষ্ঠানের পরে নৌ-মন্ত্রী সিফাড আয়োজিত ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসের সান্ধ্য অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন সোডা, কোডা ও ইউডার ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক কর্মকর্তাবৃন্দের সাথে। গভীর রাত অবধি চলা এই সমাবেশে তিনিও দীর্ঘ সময় ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে অনুষ্ঠানে ছিলেন বিবেকের টানে আন্তরিকতায়।

আমরা জানি এরকম একটা আন্তর্জাতিক দিবসের স্বীকৃতি আদায় করা সহজ কাজ নয়। ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণার আগে ইউনেস্কো অনেক তথ্য যাচাই বাছাই করেছে, অনেক বিষয় বিবেচনায় নিয়েছে।  ’৫২-র ভাষা আন্দোলনের থেকেও বড় আত্মত্যাগের ইতিহাস আছে এবং সেটা বাংলা ভাষার জন্যই ।

আমাদের ভাষা আন্দোলনের নয় বছর পর ১৯৬১ সালের ১৯ মে তারিখে ভারতের আসাম রাজ্য সরকার কর্তৃক অহমীয়াকে (অসমীয়া) একমাত্র ‘সরকারি ভাষা’ হিসেবে ঘোষণার প্রতিবাদে আন্দোলনরত জনতার ওপর আধা সামরিক বাহিনী ও রাজ্য পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালালে নিহত হয়েছিলেন ১১ জন বাংলা ভাষাপ্রেমী মানুষ। ইউনেস্কো এই ইতিহাসকেও বিবেচনায় নিয়েছিল। কিন্তু সার্বিক গুরুত্ব বিবেচনা করে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আমরা যদি ২৫ মার্চের গণহত্যার পূর্ব পরিকল্পনা, ভয়াবহতা, পরিসর এবং একটা নিরপরাধ মুক্তিকামী জাতিগোষ্ঠীর ওপর তার সুদূরপ্রসারী প্রভাবের চিত্রটি স্পষ্টভাবে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরতে পারি তাহলে এক্ষেত্রেও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন সম্ভব।

সবচেয়ে বড় কথা, ওদের ঐসব পৈশাচিকতা ছিলো বাংলা ও বাঙালির বিরুদ্ধে। ভাষা ও সংস্কৃতিকে ধ্বংসের মধ্য দিয়ে একটি আত্মমর্যাদাশীল জাতিকে শেকড় শুদ্ধ উপড়ে ফেলার সুদূরপ্রসারী ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা। ব্যর্থ হবার পরে, জাতি বিধ্বংসী চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধের অবতারণা,যা ছিলো ইয়াহিয়ার পূর্বাহ্ণে দেওয়া এক ইঙ্গিতের স্পষ্ট বাস্তবায়ন। তারা বাঙালি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার ছক আঁকে এবং শেষ অস্ত্র হিসেবে বেছে নেয় গণহত্যা!

এক্ষেত্রে প্রথম বিবেচ্য হলো,২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আমরা কি পরিচয়ে দেখতে চাই সেটা স্থির করা। বিশেষত: বিশ্বব্যাপী গণসচেতনতা, মুক্তবুদ্ধি চর্চা ও মানবিক অধিকার সংরক্ষণের পক্ষে যে ব্যাপকতর আকাঙ্ক্ষার ব্যাপ্তি তার প্রেক্ষিত বিবেচনায় নিয়েই আমাদের ভাবতে হবে। ঠিক যেমনটি হয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ক্ষেত্রে। যা শুধুমাত্র বাংলা ভাষার অধিকার ও ব্যাপ্তিতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি বরং পৃথিবীর প্রত্যেকটি প্রান্তে প্রত্যেক জনগোষ্ঠীর আপন ভাষার মহিমাকে স্বীকৃতি দিয়েছে, যা আমাদের ভাষা আন্দোলনের গর্ভে লালিত হয়েছে, বেড়েছে এবং শেষ পর্যন্ত পূর্ণতা প্রাপ্তিতে বিশ্বের প্রতিটি মানুষের ভাষার অধিকার ও বাক স্বাধীনতাকে পরিপূর্ণ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছে।

২০০৫ সালের ১ নভেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬০/৭ রেজুলেশন, ২৭ জানুয়ারিকে ‘ইন্টারন্যাশনাল হলোকস্ট রিমেমব্রেন্স ডে’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ১৯৪৫ সালের এই দিনে সোভিয়েত রেড আর্মি পোল্যান্ডের অসউইজ কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প অধিকার করে। দিবসটিকে জেনোসাইড ডে বলা হয়নি সম্ভবত একারণে যে, বিশেষ কোন জাতি গোষ্ঠীর নিধনযজ্ঞকে স্মরণ করার জন্য এ দিনটি নয়। এই দিনে স্মরণ করা হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত সকল বেসামরিক মানুষকে যাদের মধ্যে আছে ৬০ লাখ ইহুদি, দুই লাখ রুমানিয়ান, আড়াই লাখ মানসিক এবং/অথবা শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং নব্বই হাজার হোমোসেক্সুয়াল। ১৯৯৪ সালে রুয়ান্ডা গণহত্যার স্মরণে সাধারণ পরিষদ ৯ ডিসেম্বর তারিখে যে দিবসটি পালন করে সেটাকে বলা হচ্ছে International Day of Commemoration and Dignity of the Victims of the Crime of Genocide and of the Prevention of this Crime.

তাহলে দেখা যাচ্ছে ‘বিশ্ব গণহত্যা দিবস’ হিসেবে কোনকিছু এখনও স্বীকৃতি পায়নি। হলোকস্ট শব্দের সরাসরি বাংলা প্রতিশব্দ নাই। এর অর্থ ব্যাপক হত্যাকাণ্ড। আর ‘জেনোসাইড’অর্থ সেই গণহত্যা যা কোন বিশেষ জাতিগোষ্ঠীকে সুপরিকল্পিতভাবে নির্মূল করার উদ্দেশ্যে চালানো হয়। ’৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যা তাৎক্ষণিক পরিস্থিতিতে পরিচালিত কোন হত্যাকাণ্ড ছিল না। ১৯৭১-এর ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত এক গোপন কনফারেন্সে ইয়াহিয়া খান বলেছিলেন, “ ...তাদের তিন মিলিয়নকে হত্যা করুন; বাকিরা আপনার হাতের মুঠোয় চলে আসবে।”

২২ ফেব্রুয়ারি ’৭১ তারিখে ১৪-ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনের জি ও সি মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা এবং মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী মিলে অপারেশন সার্চলাইটের পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। হালকা নীল অফিস প্যাডে লেড পেন্সিল দিয়ে রাও ফরমান আলী পাঁচ পৃষ্ঠার যে খসড়াটি তৈরি করেছিলেন আত্মসমর্পণের আগে তিনি সেটা ধ্বংস করার সময় পাননি। ফলে সেটা গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে আমাদের হাতে থেকে গেছে। পূর্ব পাকিস্তান আর্মির জি ও সি লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাহেবজাদা ইয়াকুব খান এবং তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ভাইস এডমিরাল সৈয়দ মোহাম্মাদ আহসান এই ব্যাপক গণহত্যা পরিকল্পনার বিরোধিতা করলে তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে গণমাধ্যমের কাছে তারা সেসব কথা প্রকাশ করেছেন। মোটকথা ২৫ মার্চকে বিশ্ব গণহত্যা দিবস হিসেবে দাবি করার স্বপক্ষে যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত ও যুক্তি আমাদের হাতে আছে।  

তাই এ দিবসটিকে আমরা ‘আন্তর্জাতিক বা বিশ্ব গণহত্যা দিবস’ পরিচয়ে দেখতে চাইতে পারি। সেক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কি? মনে রাখা দরকার সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত দলিল ছাড়া বিশ্ব সম্প্রদায় এরকম একটা দিবসের স্বীকৃতি দিতে রাজি থাকবে না। ১৯৭১-’৭২ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রকাশিত পত্র-পত্রিকা, রেডিও টিভিতে প্রচারিত সংবাদ, প্রামাণ্য চিত্র, সরকার সমূহের ক্লাসিফাইড ডকুমেন্টস থেকে এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায় যে, ১৯৭১ সালে আমাদের দেশে যে গণহত্যা ঘটেছে সেটা ভয়াবহ ও ব্যাপক এবং শুধুমাত্র পরিচালিত হয়েছিলো বাঙালি নিধনে।

১৯৭২ সালের ৪ জানুয়ারি সংখ্যায় ‘প্রাভদা’ লিখেছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তিন মিলিয়ন মানুষ নিহত হয়েছে। এই সংখ্যাটি পরবর্তীতে ‘ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক’ সেপ্টেম্বর ১৯৭২ সংখ্যার প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে সমর্থন করেছে। ‘নিউজউইক’ ২৭শে মার্চ ১৯৭২ সংখ্যায় দেড় মিলিয়ন মানুষ নিহত হবার কথা লিখেছে। ২৫শে মার্চ  ’৭১ দিবাগত রাতের হত্যাকাণ্ড বিষয়ে ২৮ মার্চ ’৭১-র ‘নিউইয়র্ক টাইমস’ প্রথম পৃষ্ঠায় যে  প্রতিবেদন ছেপেছিল তাতে দশ হাজার মানুষ নিহত হবার খবর দিয়েছিল। ২৯ মার্চ তারিখের ‘সিডনি মর্নিং হেরাল্ড’ লিখেছিল নিহতের সংখ্যা দশ হাজার থেকে এক লাখের মধ্যে হতে পারে। নতুন পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পহেলা এপ্রিল ‘নিউইয়র্ক টাইমস’ শুধু ঢাকাতেই পঁয়ত্রিশ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে বলে সংশোধিত খবর ছাপে।

সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছায়ই আমাদের বিগত পঁয়তাল্লিশ বছরের আত্মপীড়ন ও ভূলুণ্ঠিত জাতীয় মর্যাদার আংশিক উপশম হয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের সাজার মাধ্যমে! সে প্রক্রিয়া এখনো চলমান! আদালতের রায়ে প্রমাণিত হয়েছে এরা প্রত্যেকেই কোন না কোনভাবে নির্দয়, পৈশাচিক ও জঘন্য গণহত্যায় সামিল ছিলো। তিরানব্বই হাজার পাকিস্তানি সমরবন্দি সেনাকে ভারতের মধ্যস্থতায় সেদিন আমরা মুক্তি দিয়েছিলাম নিছক মানবিক বিপর্যয় এড়াতে; পশ্চিম পাকিস্তানে আটকে থাকা বাঙালিদের ফিরিয়ে আনতে। কথা ছিলো তাদের মধ্যে একশত পঁচানব্বই জনের, যাদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট  অভিযোগ ছিলো, বিচার পাকিস্তান করবে। কিন্তু করে নি! তাদের হাতে নিশ্চয়ই ব্যবহৃত অস্ত্র ও গোলাবারুদের হিসেব আছে! জল-কাদার বাংলার প্রান্তরে নিশ্চয়ই তারা সেদিন বাজি পোড়াতে আসেনি! এসেছিলো পরিকল্পনার গণহত্যা সংঘটনে। সেই ভয়াবহতম গণহত্যার শুরুটা হয়েছিলো ২৫ মার্চের দিবাগত রাত থেকে; চলেছিলো নয় মাসব্যাপী! শুধু বাঙালি নিধনের মচ্ছবে মেতেছিলো তারা! ২৫ মার্চকে বিশ্ব গণহত্যা দিবস হিসেবে দাবি করার স্বপক্ষে কয়েক সহস্র দলিল উপস্থাপন করা সম্ভব।

এক্ষেত্রে আগামী এক বা দুই বছরের মধ্যে যে কাজগুলো পর্যায়ক্রমে করা যেতে পারে, এবার তার একটা তালিকা তৈরি করা যাক:

  • ১) ’৭১-র গণহত্যা সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করে শ্রেণীভুক্ত করা।
  • ২) প্রাপ্ত তথ্য সংশ্লেষণের মাধ্যমে ইংরেজিতে এক বা একাধিক পুস্তক রচনা করা।
  • ৩) আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কয়েকটি বিদেশি জার্নালে বেশ কিছুসংখ্যক নিবন্ধ প্রকাশ করা।
  • ৪) দেশি বিদেশি খ্যাতনামা ইতিহাসবিদ এবং বুদ্ধিজীবীদের অংশগ্রহণে দেশের প্রায় সবকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ও প্রধান প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সেমিনার অনুষ্ঠান করা। কমপক্ষে পাঁচটি বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে একইভাবে সেমিনার অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা।
  • ৫) তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে হানাদার পাক আর্মি ও তাদের দোসরদের পরিকল্পনা, অপকর্ম ও গণহত্যার সংক্ষিপ্ত তথ্য-উপাত্ত সমেত আলাদাভাবে একাধিক ডকুমেন্টারি প্রস্তুত করে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র ও  তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটের মাধ্যমে সম্প্রচারের ব্যবস্থা করা।
  • ৬) যেসব দেশে আমাদের দূতাবাস কাজ করছে, সেসব দেশে দূতাবাসের মাধ্যমে বা দূতাবাস আয়োজিত অনুষ্ঠান ও সেমিনারে এ সব তথ্যচিত্র প্রদর্শন, প্রচার ও নানাবিধ সেমিনারের আয়োজন করা এবং সবশেষে,
  • ৭) ’৭১ সালে দেশি- বিদেশি পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ/নিবন্ধ, রেডিও টিভিতে প্রচারিত সংবাদ/ ডকুমেন্টারি সংযোজন করে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জাতিসংঘের কাছে একটা আবেদন পেশ করা। ষাটোর্ধ বয়সের (যারা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কমপক্ষে কিশোর ছিল) এক মিলিয়ন মানুষের স্বাক্ষর সম্বলিত একটা স্মারকলিপিও সাথে জুড়ে দেওয়া যেতে পারে।

প্রশ্ন হলো কাজগুলো করবে কে? প্রথাগত ধারণা অনুযায়ী এটা তথ্য, পররাষ্ট্র বা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব।

আমরা এক্ষেত্রে নতুন একটা ধারণা উপস্থাপন করতে চাই। উচ্চতর পড়াশোনা এবং পরে শিক্ষকতায় নিয়োজিত হবার সুবাদে আমরা, লেখকদ্বয়, দীর্ঘদিন বিদেশে বাস করছি। আমরা দেখেছি উন্নত দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজ নিজ দেশের সরকারের জন্য নীতি নির্ধারণী গাইড লাইন তৈরি করে থাকে। কোন নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে আর্থিক নীতি বা পররাষ্ট্রনীতি কেমন হওয়া উচিত সে বিষয়ে সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা লব্ধ তথ্যের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে। আমাদের দেশে এই প্রবণতা লক্ষণীয়ভাবে কম। আমরা দেশে থাকতে কলেজ অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ (কোডা) এবং পরবর্তীতে ইউনিভারসিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ-এ (ইউডা) দীর্ঘ সময় কাজ করেছি। ১৯৯৩ সালে এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুজিব খান ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দানের দাবিতে একটা অত্যন্ত সুশৃঙ্খল আন্দোলন গড়ে তোলেন। তরুণ প্রভাষক হিসেবে আমরাও তাতে সক্রিয়ভাবে শামিল হয়েছিলাম।

উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি দেশের বরেণ্যজনেরা যাঁরা সহযাত্রী হিসেবে বিভিন্ন সময়ে এ উদ্যোগের সাথে সম্পৃক্ত থেকেছেন তাঁদের মধ্যে শিল্পাচার্য কাইউম চৌধুরী এবং শিল্পী হাশেম খানের নাম উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়াও বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের সাবেক ডেপুটি স্পীকার কর্নেল শওকত আলী, প্রখ্যাত  চলচ্চিত্রকার  সুভাষ দত্ত, টেলিভিশন ও নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশিদ, রফিকুন নবী, মোস্তফা মনোয়ার, ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী, সমরজিৎ রায় চৌধুরী, আবুল বারক আলভী, কালিদাস কর্মকার, বীরেন সোম, মনিরুল ইসলাম, রুহুল আমীন কাজল, ফরিদা জামান, শিল্পী কনক চাঁপা, মনিরুজ্জামান, শহীদ কবীর, নাদিম আহমেদ নাদভী, অলকেশ ঘোষ, চন্দ্র শেখর দে, গোলাম ফারুক বেবুল, সিদ্ধার্থ শংকর তালুকদার, আব্দুল মান্নান, নাট্যব্যক্তিত্ব আফজাল হোসেন, বিপাশা হায়াত, আব্দুর রাজ্জাক, অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও সদস্য সচিব ড. সারোয়ার আলী, সাবেক সেনা প্রধান মেজর জেনারেল হারুন অর রশীদ, কর্নেল জাফর ইমাম, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, বর্তমান বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন তাজুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ড. তারেক চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের  আইইআর এর সহযোগী অধ্যাপক ড. আব্দুল হালিম, বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি  বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ঈশিতা রায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন, অধ্যাপক আ ব ম ফারুক (ফার্মেসী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) প্রমুখ সরাসরি সম্পর্কিত ছিলেন।

ইউডার ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসের কর্মসূচিতে বক্তব্যরত চলচ্চিত্রকার ও অভিনেতা সুভাষ দত্ত
সোডা, কোডা ও ইউডার তরফে যাঁদের কথা মনে পড়ছে তাঁদের মধ্যে উপাচার্য অধ্যাপক এমাজ উদ্দীন আহমদ, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রহমতুল্লাহ, অধ্যাপিকা ড. রওশন আরা রহমত উল্লাহ, অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল বাসারসহ এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তৎকালে আমাদের সহকর্মীদের যারা এখানে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন তাদের মধ্যে যাদের নাম এমুহূর্তে স্মরণ করতে পারছি তারা হলেন, ট্রেজারর অধ্যাপক নাজাকাত আলী, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. ইফফাত চৌধুরী, কলা অনুষদের ডীন অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান, বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য সচিব জনাব মুনির আহমদ, প্রকটর জনাব তপন কুমার বিশ্বাস, ডেপুটি রেজিস্ট্রার জনাব হায়দার ফারুক, ফয়জুন নাহার, কল্যাণ কুমার মল্লিক, ড. আতিকুর রহমান, ছাত্র উপদেষ্টা সুলতানা আরেফিন নূরী, উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সুভাষ রায়, সহযোগী অধ্যাপক রমণী রঞ্জন রায়, ফারহানা রহমান, কোডার অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. স্বপন কুমার দাস, সোডার অধ্যক্ষা সালমা ইহসান, কিশোয়াড়া সুলতানা (কোডা), দাস দিলীপ কুমার (ইউডা), অধ্যাপিকা ফেরদৌসি বেগম (বর্তমানে কানাডা প্রবাসী), অধ্যাপক হাসান তারিক (বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অধ্যাপনায় নিয়োজিত), শারমীন চৌধুরী আ্যনী (বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী), পরিচালক খাজা জিয়া (সিফাড)সহ আরও অনেকে।


কালরাতের অমর শহীদদের স্মরণে পথ-চিত্রাঙ্কনের উদ্বোধনীতে শিল্পী ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী
আমরা প্রতি বছর ২৫ মার্চ সন্ধ্যা থেকে শুরু করে সারারাত “২৫ মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস ঘোষণা করা হোক” লেখা সম্বলিত পোস্টার, ফেস্টুন, ব্যানার নিয়ে  ঢাকার মানিক মিয়া এভিনিউ এ অবস্থান করতাম। সেখানে কোডা, সোডা এবং ইউডা-র চার থেকে পাঁচ হাজার ছাত্র ছাত্রী, এক হাজারের মত শিক্ষক, কর্মকর্তা , কর্মচারী উপস্থিত থাকতেন। প্রশস্ত রাস্তার পুরোটা জুড়ে গণ-চিত্রাঙ্কন করা হতো। স্টেজে সারারাত চলত মুক্তিযুদ্ধের গান এবং গণসংগীত। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে শপথ বাক্য পাঠের মাধ্যমে এই কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করা হতো। এরকম অহিংস ও অভিনব পন্থায় দাবি উত্থাপনের রেওয়াজ বাংলাদেশে নাই বললেই চলে।

২৫ মার্চ দিবাগত রাতে মানিক মিয়া এভিনিউ এ কোডা-সোডা-ইউডা-র গণঅবস্থান কর্মসূচিতে গণসংগীতের অংশ
আমরা জীবিকার সন্ধানে বিদেশে বাস করি। কিন্তু দেশের সোঁদা মাটির টান ভুলতে পারিনা। ভুলতে পারিনা কিছু মানুষের দেশপ্রেমকেও। অধ্যাপক মুজিব খান তাঁদের একজন। সম্মুখ সমরে প্রাণ বাজি রেখে যুদ্ধ করা একজন মুক্তিযোদ্ধা তিনি। বেশ কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পাশাপাশি গড়ে তুলেছেন সিফাদ নামে শিক্ষা আন্দোলন। গড়েছেন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়।  ২৫ মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস ঘোষণার দাবিতে আজ থেকে দুই দশক আগে তিনি যে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন তা থেকে তিনি একচুলও বিচ্যুত হননি। এখনও প্রতি বছর ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে অনুসারীদের নিয়ে সমাবেশটি চালিয়ে যান তিনি। তার গুণমুগ্ধ সহকর্মী হিসেবে নয় বরং দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে আমাদের উপলব্ধি, ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস ঘোষণার দাবি উত্থাপনে ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ ও এর কর্মকর্তাদের, বিশেষ করে চেয়ারপার্সন অধ্যাপক মুজিব খানের অবদান অবিস্মরণীয়; বলা যেতে পারে এটাই ছিল স্বপ্নের বীজ! এ দিবসটির ব্যুৎপত্তিগত উন্মেষে তাঁদের অভিজ্ঞতা, সংগৃহীত তথ্য ও অন্ততপক্ষে অন্তরে লালিত স্বদেশপ্রেম ও জাতির প্রতি দায়িত্ববোধের শিক্ষাটুকুকে আত্তীকরণ করা যেতে পারে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সংসদে আকস্মিকভাবে আলোচনাক্রমে উত্থাপিত প্রস্তাবে ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ হয়তো আনন্দে আজ আত্মহারা! হয়তো এটি একটি বিজয়, তাদের অন্তরে লালিত নিখাদ দেশমাতৃকার প্রতি ভালবাসার অমোঘ এক স্বীকৃতি!  আমরা বলবো এ বিজয় কাঙ্ক্ষিত বিজয়ের সূচনা মাত্র ;এর জন্যে আরও যেতে হবে অনেকটা পথ। সেই বন্ধুর পথে সরকারের পাশাপাশি চলুক ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ সহ দেশের সব ক’টি বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষার্থী ও কর্তৃপক্ষ।

বিশাল একটি কর্মযজ্ঞ হোক শুরু, যাতে সুবিন্যস্তভাবে যুক্ত হোক বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা। তাদের অমিততেজী বীরত্ব ও মেধা, কর্মচঞ্চলতা আর সঙ্গে থাকা অধ্যাপক ও শিক্ষকবৃন্দের অনুপ্রেরণা ও দিক নির্দেশনা। যা অযুত চোখের জল ও রক্তের বিনিময়ে জাতির জন্যে  বয়ে আনা অহংকার, গৌরব ও শৌর্যের বিজয়ে উত্তর প্রজন্মের অতি সামান্য অংশীদারিত্ব।

আমাদের মহান মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে হোক আমাদের আত্মার বন্ধন। অনাগত সময়ের মেলবন্ধনে আমাদের জাতীয় অহঙ্কারের অসামান্য সম্পদটি ছড়িয়ে দিতে আজকের বিশ্বায়নে উপেক্ষিত হতাশ প্রজন্ম সুযোগ পাক আর একটিবার। এ দেশটির গভীরে প্রথিত শেকড়ের সাথে তাদের অবিচ্ছেদ্য নাড়ীর যোগটি খুঁজে পাক নতুন করে নিজেকে আবিষ্কারে, যাতে আগামীর আলোয়, মুক্ত বাতাসে তারা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে স্পর্ধায় আর অহঙ্কারে।

আর একটা কথা, এটা অনুমান করা চলে যে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে গণহত্যা বিষয়ে সেমিনার অনুষ্ঠানের প্রস্তাব দিলে তারা তাতে উৎসাহ নাও দেখাতে পারে। বিষয়টা তাদের কাছে রাজনৈতিক বলে মনে হতে পারে। কিন্তু যখন কোন বিশ্ববিদ্যালয় অন্য একটা বিশ্ববিদ্যালয়কে এই প্রস্তাব দেবে তখন সেটা সব পক্ষের কাছেই একাডেমিক মনে হবে। এধরনের সেমিনারে আন্তর্জাতিক মহলে পরিচিত বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, থিংক ট্যাঙ্ক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও মানবাধিকার সংগঠনকে সম্পৃক্ত করার সুযোগ থাকবে। তাদের বক্তব্যকে নথিভুক্ত করে জাতিসংঘের কাছে আমরা যে আবেদন পেশ করব তার সাথে জুড়ে দেওয়া যাবে গুরুত্বপূর্ণ  দলিল হিসেবে।

২৫ মার্চ দিবাগত রাতে মানিক মিয়া এভিনিউ এ কোডা-সোডা-ইউডা-র গণ-চিত্রাঙ্কন কর্মসূচির সমাপ্তিতে প্রত্যূষে শপথবাক্য পাঠ
আমাদের যতদূর মনে আছে গণহত্যা দিবস বিষয়ে প্রাথমিক গবেষণার কাজটিও শুরু হয়েছিল ১৯৯৩ সালে কোডার ধানমণ্ডি ২৫ নম্বর সড়কে অবস্থিত সদর দপ্তরে। বর্তমান সময়ের অগ্রগতি বিষয়ে আমাদের স্পষ্ট ধারণা নাই।  তবে আমরা এতটুকু নিশ্চিত করে জানি যে এ কাজগুলো সফলতার সাথে সম্পাদন করার জন্য যে জনবল ও মেধা দরকার তা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আছে। আমরা যে কথাটি বলে উপসংহার টানতে চাই তা হলো, আমরা যদি পূর্ণ প্রস্তুতি না নিয়ে তাড়াহুড়ো করে জাতিসংঘের কাছে একটা আবেদন করে বসি তাহলে তা ব্যর্থ হতে পারে। মনে রাখতে হবে জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট দপ্তর নিজ উদ্যোগে তথ্য সংগ্রহ করে আমাদের দাবির স্বীকৃতি দিতে যাবে না। আমরা যে তথ্য দেব এবং যে যুক্তি প্রদর্শন করব তারা সেসবের বস্তুনিষ্ঠতা এবং যথার্থতা যাচাই করে ইতিবাচক বা নেতিবাচক সিদ্ধান্ত দেবে। শেষের পরেও নাকি অবশেষ থাকে!

আবারও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি, এবছর ২৫ মার্চ দিবাগত রাতটি কি সোডা-কোডা-ইউডার আদলে সারা দেশে রাতের অতন্দ্র প্রহরী হয়ে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করা যায়? এটা সম্ভব করা গেলে বিশ্ববাসী অবাক বিস্ময়ে দেখবে, বাংলাদেশের কয়েক কোটি মানুষ দেশমাতৃকার জন্য প্রাণ বিসর্জন দেওয়া ত্রিশ লাখ শহীদের বিদেহী আত্মার সাথে কালের নিকষ কালো অন্ধকারেও ন্যায় ও সত্যের অতন্দ্র প্রহরী হয়ে জেগে আছে আজও!  

সাবাস, বাংলাদেশ, এ পৃথিবী
অবাক তাকিয়ে রয়,
জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার-
তবু মাথা নোয়াবার নয়।

  • কেশব কুমার অধিকারী:  ইনহা ইউনিভার্সিটি, রসায়ন বিভাগ, ইনছন, কোরিয়া।   
  • হাসান গোর্কি: রয়েল রোডস ইউনিভার্সিটি, ইন্টারকালচারাল কমুনিকেশন বিভাগ, ভিক্টোরিয়া, ব্রিটিশ কলম্বিয়া, কানাডা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত