মো. জাকারিয়া আহমদ

০৫ এপ্রিল, ২০১৭ ১৩:০৫

সুনামগঞ্জকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করে সহায়তা দিন

কৃষিনির্ভর দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। এদেশের শতকরা ৮০ ভাগ মানুষই কৃষির উপর নির্ভরশীল। আর এই কৃষকদের হাত ধরেই আমরা স্বপ্ন দেখি সমৃদ্ধশালী এক বাংলাদেশের। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে আমরা দেখে আসছি কৃষকের বুকফাটা আর্তনাদ আর হাহাকারের চিত্র।

দুঃখজনক হলেও সত্য কৃষকের মুখে হাসি ফুটাতে আমাদের সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করলেও কিছু অসাধু, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার কারণে আজ পথভ্রষ্ট হতে চলেছেন বাংলাদেশের কৃষকরা। যেমন আসছে বোরো মৌসুম তোলার সময়। অনেক স্বপ্ন আর আশায় বুক বেধে ছিলেন আমাদের কৃষকরা। কেউ কেউ স্বপ্ন দেখে ছিলেন বোরো ধান ঘরে তুলে ঋণের বোঝা মাথা থেকে সরিয়ে হাসি-খুশি আর আনন্দে পরিবারকে নিয়ে একটু সুখে দিন যাপন করবেন। আবার কারো কারো স্বপ্ন ছিল বোরো মৌসুম তোলার পর পরিবারের কারো বিয়ে দেবেন অথবা পরিবার পরিজন নিয়ে আগামী বছরটা একটু আনন্দে কাটাবেন। কিন্তু তার আগেই যে সব স্বপ্ন পানির নিচে ঢাকা পরে গেল অকাল বন্যা আর পাহাড়ি ঢলে।

হাওর পাড়ে কৃষকের কান্নায় আকাশ-বাতাস জুড়ে বইছে দীর্ঘশ্বাস। বিষাদের কালো মেঘে ঢাকা পড়েছে কৃষকের ভবিষ্যৎ। তাঁদের অসহায়ত্ব, কান্না দেখে চোখের জল ধরে রাখার কোন উপায় নেই কারো। আর এসব সমস্যার জন্য প্রতি বছর দায়ী করা হয় হাওর রক্ষা বেড়িবাঁধ নির্মাণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, পিআইসি কমিটি, পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো)।

কৃষকরা প্রতিবছরও অভিযোগ করে আসছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, পিআইসি কমিটি,পাউবোকে; যারা অধিক লাভের আশায় বোরো মৌসুম তুলার কিছুদিন আগে কয়েক টুকরি মাটি ফেলে দুর্বল বেড়িবাঁধ নির্মাণের নামে হাতিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সরকারী বরাদ্দের অর্থ। ফলে অল্প একটু বৃষ্টির পানিতে হাওর রক্ষা বেড়িবাঁধ ভেঙে লাখ লাখ কৃষকের কষ্টে অর্জিত সোনালী ফসল নিমিষেই তলিয়ে যায় পানির নিচে। কিন্তু প্রতি বছরই এরকম সমস্যার সম্মুখীন কৃষকের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে ; নেই তার সঠিক কোন সমাধান।

এভাবে প্রতি বছর কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে, কি সম্ভব এদেশের কৃষি খাতকে টিকিয়ে রাখা। মোটেই সম্ভব হবে না। বরং ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে আমাদের কাঙ্ক্ষিত কৃষি খাত। বাংলাদেশের বড় বড় হাওর বেষ্টিত জেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম একটা জেলা হচ্ছে সুনামগঞ্জ। এখানে ছোট বড় হাওর রয়েছে প্রায় ১৩২ টি। প্রতি বছর এসব হাওরে কৃষিজ ফসল উৎপাদন করা হয়। উৎপাদিত কৃষিজ ফসল রক্ষার্থে নির্মাণ করা হয় বেড়িবাঁধ। এসব বাঁধের জন্য সরকার প্রচুর পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দিয়ে থাকেন। কিন্তু যৎসামান্য কাজ করে নিজেদের পকেট ভারি করে এক শ্রেণীর লোক। ফলে একটু পানির ধাক্কায় ভেঙে যায় বাঁধ; তলিয়ে যায় কয়েক লাখ হেক্টর বোরো ধান।

এর ব্যতিক্রম হয়নি এবছরও। প্রতি বছরের মতো এবছরও সরকার সুনামগঞ্জ জেলার প্রায় ৪২-৪৫ টি হাওর রক্ষার স্বার্থে বেড়িবাঁধ নির্মাণে প্রায় ৫৯ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করলেও; অসাধু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, পিআইসি কমিটি, পাউবোর দুর্নীতির কারণে দুর্বল বেড়িবাঁধ ভেঙে এক-নিমিষেই তলিয়ে গেল কয়েক হাজার হেক্টর বোরো ফসল।
 
এছাড়াও অল্প একটু বৃষ্টির কারণে এমনটা হওয়ার আরো একটি কারণ হলো নদী ভরাট বা খাল-বিল ভরাট। গত এক দশকে ছোট ছোট খাল বিল ভরাটের পাশাপাশি বড় বড় নদ-নদী ভরাট হয়ে নদীর বুকে জন্ম নেয় চর। ফলে এক পশলা বৃষ্টিতে ফুলে-ফেঁপে ওঠে নদ-নদী; হাওরে পড়ে এর রেশ।

এ সমস্যার একমাত্র সমাধান হচ্ছে নদ-নদী খনন করা আর বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা। পাশাপাশি কৃষি খাতকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে হাওর বেষ্টিত জেলা সুনামগঞ্জকে বন্যা দুর্গত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা উদ্যোগ গ্রহণ করে এ ব্যাপারে জোরালো পদক্ষেপ নিলে এ অঞ্চলের কৃষি খাত টিকে থাকবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পদক্ষেপ গ্রহণ করলে সকল পর্যায়ে দুর্নীতি দমন হবে। তখন কৃষিখাতে সৃষ্টি হবে নতুন এক জাগরণ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত