আল আমিন হোসেন মৃধা

২৫ এপ্রিল, ২০১৭ ১৯:৫১

কৃষকের আর্তনাদ মনেছা বোঝেন, বোঝে না শাসক গোষ্ঠী

আকস্মিক অতিবৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল হাওরের পানির অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সীমাহীন দুর্নীতিতে নির্মিত বাঁধ ভেঙ্গে যাবার ফলে বাংলাদেশের বৃহৎ হাওর অঞ্চল সুনামগঞ্জের মেহনতি কৃষকের একমাত্র ফসল বোরো ধান ঘরে তোলার আগেই তলিয়ে গেছে। গত রোববার সচিবালয়ে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মাকসুদুল হাসান খান জানান, হাওরে বন্যায় মোট এক হাজার ২৭৬ মেট্রিক টন মাছ নষ্ট হয়েছে এবং তিন হাজার ৮৪৪টি হাঁস মারা গেছে। একই সংবাদ সম্মেলনে কৃষি সচিব মঈন উদ্দীন আবদুল্লাহ্ বলেন, বন্যায় দুই লাখ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।

কিন্তু খোদ প্রধানমন্ত্রী এই হিসেব মানতে নারাজ। তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, কিসের ভিত্তিতে এই ক্ষতির হিসাব? তিনি বলেম, আপনারা বলছেন হাওরে বন্যায় এত মাছ মরেছে, এত ধান নষ্ট হয়েছে। কিন্তু এই পরিমাণ কে মেপেছে? কীসের ভিত্তিতে এ ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হল?

প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ ক্ষতি খুব বেশি না হয়তো। কিন্তু কৃষকের হতবিহ্বল চেহারা, চোখের কোণে জমে থাকা অশ্রু, হাওরাঞ্চলে পানির তীব্র স্রোতের নিচে তলিয়ে থাকা কষ্টার্জিত শেষ সম্বলের কথা ভেবে কপালে গভীর চিন্তামগ্নতার হাতই বলে দেয় অপূরণীয় ক্ষতির হিসেব।

৩৫টি দেশী-বিদেশী সংস্থার যৌথ হিসাবে প্রাথমিকভাবে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার ক্ষতির কথা বলা হচ্ছে। এদিকে, সোমবারই হাওরের পাশাপাশি কিশোরগঞ্জের ৮ হাজার হেক্টর জমি বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে পানির নিচে।

সমগ্র দেশের সচেতন নাগরিক সমাজ যখন হাওরাঞ্চলকে দুর্গত অঞ্চল ঘোষণার দাবি তুলেছিল, তখনই আমাদের সম্মানিত দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল মনগড়া ২২ ধারা আবিষ্কার করে ফেললেন। এ ধারায় নাকি বলা আছে, কোনো এলাকার অর্ধেকের উপরে জনসংখ্যা মরে যাওয়ার পর ওই এলাকাকে দুর্গত ঘোষণা করতে হয়। সচেতন মহলের এ দাবিকে তিনি সস্তা দাবি বলে উড়িয়ে দেন।

গত রোববার ঢাকায় ত্রাণমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, হাওর এলাকার পরিস্থিতি এতটা খারাপ হয়নি যে, দুর্গত এলাকা ঘোষণা করতে হবে। তিনি জানান, হাওর এলাকায় প্লাবনে ক্ষতিগ্রস্ত ৩ লাখ ৩০ হাজার পরিবারকে আগামী ১০০ দিন প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল এবং নগদ ৫০০ টাকা দেওয়া হবে।

প্রতি পরিবারে যদি ৫ জন সদস্যও হয়, তাহলে প্রতি জনের দৈনিক মাথাপিছু চাল ২০০ গ্রাম এবং প্রতিজন দৈনিক মাথাপিছু পাবেন ৩.৩৩ টাকা। এ দিয়ে কি একটা পরিবার আদৌ চলতে পারে?

বাঁধ রক্ষা কাজের দিন মজুর ছিলেন মনেছা বেগম। আক্ষেপের সুরে তিনি ( একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের সঙ্গে আলাপচারিতায়) বলেন, "বানধের কামে গেছিলাম চৈতের (চৈত্রের) ১১ তারিখ। টানা ২৪ দিন বানধে ছিলাম। জানটা দিয়া দিলাম বানধের লাইগা, কিন্তু বাঁচাইতে পারলাম না।"

এই দিনমজুর মনেছা বেগমের হয়ত হাওরে নিজস্ব জমি বা ধান ছিল না, কিন্তু এই হাওরাঞ্চলের কৃষকের বহু কষ্টে অর্জিত ফসল তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকের কষ্টে তাঁর আক্ষেপ ছিল, তাঁর সমবেদনা ছিল কৃষকের বুকের চাপা আর্তনাদে।

এ দেশের মনেছারা কৃষকের আর্তনাদ বোঝেন। আমাদের শাসক গোষ্ঠীরা তা বুঝবেন কি?

মাননীয় সরকারের কাছে অনুরোধ, হাওরাঞ্চলের কৃষকের শেষ সম্বলটুকু হারানোর বেদনাকে নিজেদের বেদনা মনে করে অনুদান নয়, রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষতিপূরণ দিন।

 

  • আল আমিন হোসেন মৃধা: সভাপতি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ঢাকা কলেজ।
  • এ বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত