রাজু আহমেদ

১৮ জুন, ২০১৭ ১৩:৪৭

বাবা, বড্ড বোকা!

হাঁটতে শেখা, বলতে শেখা..
মানুষ হওয়ার যাত্রায়...
বাবা দিলেন সেরা দীক্ষা..
বন্ধন গেঁথে আত্মায়...

বাবা কেমন সত্ত্বা তা বুঝতে হলে তাদের উপলব্ধিকে উপলব্ধি করুন, যাদের বাবা গত হয়েছে। ধরণীর বুকে তারাই তো সৌভাগ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত যাদের বাবা জীবিত। বাবা যে সন্তানের জন্য কত বড় বটবৃক্ষ তা কেবল তারাই অনুভব করেন যাদের বাবা নাই কিংবা যারা তেমন করে আঘাত পেয়েছেন।

পুরুষকুলের মধ্যে পৃথিবীতে এই একটি মাত্র মানুষ যিনি আপনাকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসেন; সতত-সর্বত্র। সন্তানের সুখের জন্য যিনি নিজের সকল ভোগকে ত্যাগের চাদর জড়িয়ে নেন, তিনি আর কেউ নন; আমাদের জন্মদাতা মহান পিতা। যার সকল সুখ-আনন্দকে সন্তানের সুখের জন্য লগ্নি করেন। সন্তানের সাফল্যে যিনি নিজের সাফল্যের অন্তঃসুখ অনুভব করেন। সন্তানের স্বার্থ রক্ষার সংগ্রামের পথে বাবাদের ত্যাগ আমাদের কাছে বোকামো মনে হয়! সন্তানকে নিয়ে তার সারাক্ষণের ভাবনা আমাদের কাছে বাড়াবাড়ি মনে হয়; কখনো বিরক্তিও লাগে! যিনি নিজের ভালো না বুঝে সন্তানের ভালোর জন্য চিন্তায়-কর্মে নিজের ভেতর-বাহিরের সব উজাড় দেন-তাকে কি বুদ্ধিমান বলা চলে?

বাবা তুমি কেন হলে..
বোকার রাজা ভবে...
কোন আনন্দে বল..
তোমার সব সুখ আমায় দিলে...

উচ্চশিক্ষিত বাবাদেরকেও সন্তান যা বোঝায় তারা তাই বোঝে! এর অর্থ এই নয় যে, বাবা সত্য বোঝেন না। বাবা সর্বদা তার সন্তানের সুখ চান, চান আগামীর সমৃদ্ধ। তাই সন্তানের প্রতি বাবার সর্বোচ্চ ভালোবাসা বিরাজিত থাকার পরেও বাবা কখনো কখনো সন্তানের জন্য শুধু বন্ধু নন বরং শাসকও হন। সন্তানের মঙ্গলযাত্রায় বাবাদেরকে যখন যে চরিত্র অভিনয় করার প্রয়োজন হয় বাবারা তখন অনায়াসে সে চরিত্রের সাথে খাপ খাইয়ে নেন। তাইতো জর্জ হার্বাট বলেছেন, ‘একজন পিতা একশত জন স্কুলশিক্ষকের চেয়েও ভালো। বাবাদের ত্যাগে পিতা-পুত্রের মধ্যে যে সম্পর্কের গোড়াপত্তন হয় সে সম্পর্ক নিছক রক্ত মাংসের নয় বরং হৃদয়ের সম্পর্ক।

তুমি যদি আমি হতাম..
আমি হতে তুমি...
তবেও কি হৃদয় মাঝে..
এমন যত্ন পেতে তুমি...

‘জন্মদাতা হওয়া সহজ; কিন্তু পিতা হওয়া বড় কঠিন’-বাবা তুমি এমন কঠিনেরেই ভালোবাসলে। শুধু আমার জন্মদাতা হয়েই তুমি তোমার দায়িত্ব শেষ করোনি বরং আমার জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে তুমি আমার পিতা হলে; সে শুধু পিতা নও, শ্রেষ্ঠ পিতা। আমি ইতিহাসের পাতায় কিংবদন্তির গল্প খুঁজি না বরং বাবা তোমাতেই সন্ধান পাই শ্রেষ্ঠ কিংবদন্তির।

কোন জাদুর পরশে, মায়ার আবেশে বাবা আমাকে তোমার হৃদয়ের এতো কাছে টেনে নিলে? বল, এমন শক্তি কোথায় পেলে? আমিও কি তোমার মত করে তোমায় ভালোবাসতে পারবো? সে সামর্থ্য কি আমার আছে?

যখন আমি ক্ষুদ্র ছিলাম..
বৃহৎ ছিলে তুমি..
কেন বাবা ক্ষুদ্রতাকেই..
এবার সঙ্গী করলে তুমি...

বাবা! আমি কখনো এমন বড় হতে চাইনি যাতে তোমাকে ক্ষুদ্র হতে হয়। তবুও দেখো প্রকৃতি কত নিষ্ঠুর, যা তোমাকে নিয়ত দুর্বলতার চাদরে মুড়ে বার্ধক্যে উপনীত করে দিচ্ছে। বাবার অঙ্গে অঙ্গে ফুটে উঠেছ আজ বয়সের ছাপ। যে হাত শক্ত করে আমায় আগলে রাখতো সে হাত দুর্বল হয়েছে বটে; কিন্তু আমাকে ভালো রাখার চিন্তা দুর্বল হয়নি মোটে। সে এখন ভালো থাকার চেয়ে খারাপ থাকে বেশি। সারাজীবন বাবাদের সংগ্রামেই যায়। যৌবন যায় সন্তানকে মানুষ করার চিন্তায়, আর বার্ধক্য যায় একটু ভালো থাকার আশায়। অথচ প্রকৃতি স্বার্থপর ভাবে কতটা জঘন্য আচরণ উপহার দেয়! সে তার নিয়মের ব্যত্যয় ঘটাতে চায়না কেন? একটু ঘটালে কি এমন ক্ষতি হয়?

বাবারা ভালো থাকুক।

বাবা এমন যদি হত..
আমার আয়ু তোমায় দিয়ে..
আর ক’টা দিন ধরার মাঝে..
পাশাপাশি কাঁধ জড়িয়ে..
ছোট্ট বেলার গল্প বলে...
আমায় হাসাতে....
হাত জড়িয়ে বলো বাবা...
নতুন করে হাঁটতে শেখাবে....

বাবা! তুলনাহীন এক শব্দের প্রয়োগ। এখানে স্নেহের গভীরতা অতল, ভালোবাসার বন্ধন ইস্পাত কঠিন, ভালো রাখার প্রেষণা আকাশচুম্বী। এমন মহৎ প্রাণের ঋণের ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্রাংশ পূরণ করার সাধ্য কারো নাই। শুধু এটুকুই চাওয়া, যাতে আমাদের কোন আচরণের দ্বারা বাবা কষ্ট অনুভব না করেন। সৃষ্টিকর্তার শেখানো পথেই তাঁকে বলি, আমাদের বাবারা আমাদেরকে যেভাবে সারাজীবন আগলে রেখেছেন তুমি তেমন করে তাদের আগলে রেখো, ভালো রেখো। অন্তরের সবটা জুড়ে বাবা তুমি রইবে যতদিন এ হৃদয়ে স্পন্দন থাকবে, শিরায় শিরায় রক্তের অনুরণন ঘটবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত