মিহির রঞ্জন তালুকদার

১৪ আগস্ট, ২০১৭ ১২:১৬

গুরুর মর্যাদা ও শ্রীকৃষ্ণ

“যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত।
অভ্যুত্থানমধর্মস্য তদাত্নানং সৃজাম্যহম্।
পরিত্রাণায় সাধূনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম্।
ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে।”

অর্থাৎ পৃথিবীতে যখনই ধর্মের গ্লানি হয় এবং পাপ বৃদ্ধি পায়, তখনই আমি শরীর ধারণ করিয়া পৃথিবীতে অবতীর্ণ হই। আমি যুগে যুগে অবতীর্ণ হইয়া সাধুদিগের পরিত্রাণ, পাপিদের বিনাশ এবং ধর্ম সংস্থাপন করি।

আজ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ৫২৪৩ তম শুভ জন্মাষ্টমী। পৃথিবীতে যখন অন্যায়, অত্যাচার বেড়ে যায় তখনই ভগবান বা ঈশ্বর কোনও না কোনও রূপে পৃথিবীতে আবির্ভূত হন। তেমনি দ্বাপর যুগের রোহনী নক্ষত্রের অষ্টমী তিথিতে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। অধর্ম, অন্যায় অত্যাচার থেকে দেশকে রক্ষা করতে এবং কংস আর জরাসন্ধের মত অত্যাচারী রাজাদের দমন করার জন্য দ্বাপর যুগের আজকের এই দিনে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ।

গুরুকে ‘তুমি’ বলিয়া নির্দেশ করিলেই তাঁহাকে বধ করা হয়;

কুরুক্ষেত্রে ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির এবং কর্ণের ভীষণ যুদ্ধে যুধিষ্ঠির আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করেছিলেন। তখন অর্জুন যুদ্ধক্ষেত্রে যুধিষ্ঠিরকে না দেখে ভীষণ চিন্তিত হয়ে পরলেন। কর্ণের সহিত যুদ্ধে তিনি জীবিত আছেন কি না সন্দেহ! তখন অর্জুন যুধিষ্ঠিরের সন্ধানে শিবিরে ফিরে এল।

যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে অর্জুনের এভাবে ফিরে আসাতে যুধিষ্ঠির অর্জুনকে এই বলে ধিক্কার জানাতে লাগলেন যে, ‘হে অর্জ্জুন! তোমার সৈন্যগণ নিপীড়িত ও পলায়িত হইয়াছে এবং তুমিও কর্ণকে সংহার করিতে একান্ত অসমর্থ হইয়া ভীতমনে ভীমকে পরিত্যাগপূর্বক (ভীম তখন যুদ্ধরত ছিল) আমার নিকট সমুপস্থিত হইয়াছ।এখন বুঝিলাম আর্য্যা কুন্তীর গর্ভে জন্ম পরিগ্রহ করা তোমার নিতান্ত অনুচিত হইয়াছে।’ এধরনের অনেক কটুবাক্য বলার এক পর্যায়ে বলিলেন, ‘এক্ষণে তুমি বাসুদেবকে গাণ্ডীব-শরাসন প্রদান কর।

একথা শুনার পর অর্জ্জুন রোষাবিষ্ট হয়ে যুধিষ্ঠিরের বিনাশ-বাসনায় অসিগ্রহণ করিলেন। অর্জ্জুনকে ক্রুদ্ধ দেখে শ্রীকৃষ্ণ বলিলেন, হে পার্থ! তুমি কি নিমিত্ত খড়গ গ্রহণ করিলে? এক্ষণে ত তুমার কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী উপস্থিত নাই। এ কথা বলে কৃষ্ণ অর্জ্জুনকে নিরস্ত্র করিলেন। কিন্তু অর্জ্জুনের প্রতিজ্ঞা ছিল যে, “তুমি অন্যকে গাণ্ডীব-শরাসন সমর্পণ কর”, এই কথা যিনি আমাকে কহিবেন, আমি তাঁহার মস্তক ছেদন করিব; এখন কীভাবে অর্জ্জুনের প্রতিজ্ঞা রক্ষা করা যায় সে সম্পর্কে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যে উপদেশ দিয়েছিলেন তাহলো-এই জীবলোকে মাননীয় ব্যক্তি যতদিন সম্মান লাভ করেন, ততদিন তিনি জীবিত বলিয়া নির্দিষ্ট হইতে পারেন। তিনি অপমানিত হইলে তাঁহাকে জীবন্মৃত বলিয়া নির্দেশ করা যায়। হে অর্জ্জুন! গুরুকে ‘তুমি’ বলিয়া নির্দেশ করিলেই তাঁহাকে বধ করা হয়।

কাজেই আমাদের সকলের স্মরণ রাখা উচিৎ যে, শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিদের, গুরুজনদের সর্বদাই সম্মান দিয়ে কথা বলা উচিৎ। তাদেরকে যখনই অপমান করা হয় এটা তাদের নিকট মৃত্যু সমান।

  • মিহির রঞ্জন তালুকদার: কলাম লেখক; শিক্ষক, বালাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ সিলেট।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত