দ্বিজেন শর্মা

১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ২৩:১৩

মাধবকুণ্ড, বিধ্বস্ত প্রতিমা

প্রকৃতিবিদ ও বিজ্ঞান লেখক অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন। ২০০০ সালে “বড়লেখা অতীত ও বর্তমান” বইয়ে সদ্য প্রয়াত এই নিসর্গসখার লেখা ‘মাধবকুণ্ড: বিধ্বস্ত প্রতিমা’ প্রকাশিত হয়। লেখকের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে লেখাটি সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত হলো।

দু’দশক পরে ১৯৮৫ সনে দূরদেশ থেকে বাড়ি ফিরলে শরফুদ্দিন  আমাকে গাছটির তলায় দাঁড়া করায়। চম্বল গাছ। আমার বয়সীই হবে। আজকের হিসাবে প্রকাণ্ডই। সারা গাঁয়ে এখন বড় গাছ নেই। আমাদের বাড়িও প্রায় শূন্য। শরিকবর্গের অনটন মোকাবিলায় সবই কতল হয়ে গেছে। এটিও যেত। যায়নি, মরার আগে জন্মভূমিতে শেষ দিনগুলি কাটাব এমন একটা ধারণায় বিশ্বাসী আমার জনাকয়েক শুভানুধ্যায়ীর জন্য। আমার আস্তানা তৈরিতে ওটা লাগবে এমন একটা ওজর দেখিয়ে তারা এটিকে ঠেকিয়ে রেখেছিল। আমি গাছটার গায়ে হাত বুলাই,কাণ্ডে কান পেতে ধরি। সে যেন সাড়া দিয়ে মাথা দোলায়। অনেক উঁচুতে নিবিড় পত্রসজ্জার ফাঁকে টুকরো টুকরো আকাশ উঁকি দেয়। গাছে মুখ ঘষি। একটা অদ্ভুত গন্ধ আমাকে আবিষ্ট করে। আমি চোখ বুজি। অদ্ভুত অনেক দৃশ্য দেখতে পাই, মার যৌবনের মুখশ্রী, অগ্রজের কৈশোর, পিতার অন্তিম শয্যা।

পরদিন ঘুরতে বেরোই। গন্তব্য মাধবকুণ্ড। বাংলাদেশের একমাত্র জলপ্রপাত। আমাদের বাড়ি থেকে হাঁটাপথে ঘণ্টা দুয়েকের দূরত্ব। দশ মিনিটের মধ্যেই চৌরাস্তার মোড়ে পৌঁছুই। অবাক কাণ্ড। অনেকগুলি রিক্সা দাঁড়িয়ে। একটা বাস চলে গেল ধূলোর মেঘ উড়িয়ে। ট্রাক, মিনিবাসও দেখলাম। রীতিমত বিপ্লব। যত হাটি তত অবাক হই। বিদ্যুৎ এসে গেছে কোথাও কাঠের, কোথাও বাঁশের খুঁটিতে ভর দিয়ে। করাতকল বসেছে। পাশেই গাদা করা খণ্ড খণ্ড গাছ, যেন লাশের স্তূপ। লাগোয়া আসবাবের দোকান। সেও একাধিক। পেট্রোডলারের দৌলতে নতুন নতুন বাড়িঘর উঠছে। তাই ইট, কাঠ ও আসবাবের জমাট ব্যবসা। মনশ্চক্ষে বালুঘড়ির চেহারা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। একদিক শূন্য হয়ে আরেক দিক ভরে ওঠেছে। দূরের পাহাড়ের নীলচে শরীরে কুশ্রী পাঁচড়ার প্রকোপচিহ্ন, অনেকগুলি দাগ। গাছপালা ওপড়ানো হাতের খাবল।

যতদূর যাই বালুঘড়ির চেহারাটা ক্রমেই স্পষ্টতর হতে থাকে। পাহাড়ের শ্যামল আঙরাখা বড়ই ছেঁড়াখোঁড়া। কোথাও সামান্যতম রিফুকর্মের চিহ্ন নেই। ফসলী মাঠে পুকুর কেটে বাড়িঘর তৈরি হচ্ছে। কৈশোরের দেখা বনঘন টিলাগুলি এখন কচ্ছপের পিঠের মতো চাঁচাছোলা। নেওয়ার ইচ্ছা গ্রাসী, দেওয়ার সামান্যতম সদিচ্ছাও অনুপস্থিত। ইতোমধ্যে চা বাগান দখল করে নিয়েছে বনের সিংহভাগ। ইদানিং অনেকেই রাবার-চাষের কথাও ভাবছে। তাতে পাহাড়ের বাকিটুকুও উজাড় হয়ে যাবে। উন্মত্ত ভূমিবুভুক্ষার পরিণতি কী? “মানুষের কতটা জমি প্রয়োজন’-লেভ তলস্তয়ের সেই গল্পটির কথাই মনে আসে।

আমি যে সড়ক দিয়ে হাঁটছি সেটি একদা তৈরি করেছিল বার্ম-অয়েল কোম্পানি। পাথারিয়া পাহাড়ে তাদের তেলখনিটি উপচে পড়ে শূন্য হয়ে গেলে কোম্পানি তল্পিতল্পা গুটিয়ে বিদায় নেয়। সড়কটি দীর্ঘ দিন হাঁটাপথ হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে। পাহাড়তলিতে আমাদের সামান্য ক্ষেতজমি ছিল। মার সঙ্গে আমি এপথে বহুবার গিয়েছি। রাস্তার দুপাশে তখন গভীর বন ছিল, ছিল অঢেল পাখপাখালি, এমনকি বুনো শূঁকুরের মতো হিংস্র জীবের সঙ্গে মোলাকাতের আশঙ্কাও। আজ এসব কিছু নেই। সড়কটিতে রিক্সার টুংটাং আওয়াজ শোনা যায়। ধূলো উড়িয়ে বাস-ট্রাক চলে। দেখলাম একটি গোরস্থানের কাছে ভেঁপু না-বাজানোর বিজ্ঞপ্তি টানানো। মাইল দুয়েক পেরোলেই খানিকটা খালি জায়গা, একটি মাঠ, ধানক্ষেত। ছবির ব্যাপ্তি স্থানের মতোই স্বস্তিকর। ওখানে খানিকটা জিরোতে বসি। ছেলেবেলায় মার কাছ থেকেই শুনেছি এখানকার জমিগুলিতে সোনা ফলে। এমন ফসলী জমি নাকি আর কোথাও নেই। সে অবশ্য অর্ধ শতাব্দী আগের ঘটনা। আজও কি জমিগুলো উর্বরা রয়েছে? সেই দিন মাঠটিকে ঘিরে রেখেছিল উঁচু গাছের বন। ব্যাত্যা মাটির উপরের স্তরে কামড় বসাতে পরত না। এখন গাছগুলি আর নেই, আছে ঝোপঝাড়। ভূমিক্ষয় নিশ্চয়ই বেড়েছে, কমেছে স্বাভাবিক উর্বরতা।

আমি গন্তব্যের দিকে এগুতে থাকি। একই দৃশ্য। ঘন অরণ্যের স্থলবর্তী অজস্র জোপজাড়ের বন। জ্বালানির অভাবে এই বনও একদিন উজাড় হয়ে যাবে। তারপর? আমরা যদি নতুন পরিকল্পিত বন সৃষ্টি করি তা কি আদি বনের অভাব পূরণ করবে? একই ধরনের অর্থকরী বৃক্ষপ্রজাতির পরিকল্পিত বনগুলি কৃত্রিম, স্থানীয় ইকোসিস্টেমের সঙ্গে বেমানান এবং অনেক সময় বিঘœকর। যথার্থ প্রাকৃতিক বনগুলি একেবারেই আলাদা। সেখানে পায়ের তলায় মাটি নেই, পাথরও নেই, এর বদলে আছে শুধু, পঁচাপাতা ও শুকনো গুঁড়ির স্তূপ। এইসব বনে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে পাতার রাশি ঝরছে, পচে যাচ্ছে, তার উপরে আবার ঝরা পাতার রাশি, আবার পড়েছে গাছের ডালপালা, গুড়ি। জায়গায় জায়গায় ষাট-সত্তর ফুট গভীর হয়ে জমে রয়েছে পাতার স্তূপ। কেবল মাধবকুণ্ড নয়। এরকম বনের স্মৃতি আমার আরো রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় চট্টগ্রামের বান্দরবন ও কক্সবাজারের কাছের জঙ্গলে ১৯৫৭ সালে আমরা গাছপালা সংগ্রহ করতে গিয়েছি। পঁচা পাতার স্তুুর ওখানে ৮-১০ ফিট উঁচু। আলো প্রায় পৌঁছায় না। কতসব জানা-অজানা অনুজীববের বাসভূমি, অসংখ্য জাতের গাছপালার একত্র সমাবেশ। এক অনন্য ইকোসিস্টেম। আমি বলি ইশ্বরের ভেজা কাঁথা। মানুষের পক্ষে যার বিকল্প নির্মাণ অসম্ভব। বাতাসের আর্দ্রতা টিকিয়ে রাখা ও আনুষঙ্গিক অজস্র সুফলের সঙ্গে জড়িত এই স্তরটির গুরুত্ব সমধিক। অরণ্য উচ্ছেদে ভূমিক্ষয় ও সংশ্লিষ্ট সমস্যা (অরণ্য বিপুল পরিমাণ বৃষ্টিজল শুষে নেয় এবং বাষ্পমোচনের মাধ্যমে বাতাসে ফিরিয়ে দিয়ে বন্যার আশঙ্কা কমায়। বৃষ্টির ফোঁটা সরাসরি মাটিতে পড়লে ভূমিক্ষয় বাড়ে, বন্যার জল কাঁদা ঘোলা হয়ে ওঠে এবং তাতে নদীতে পলি জমে, সেগুলির নাব্যতা কমে, বন্যার প্রকোপ বৃদ্ধি পায়) বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ইকোলজিক্যাল শৃঙ্খলের অনেকগুলি অঙটাও ভেঙে পড়ে। ট্রান্স-আমাজন সড়ক নির্মাণে ব্রাজিলের বৃষ্টিঘন অরণ্যের ব্যাপক ক্ষতির ফলে দক্ষিণ আমেরিকা তথা গোটা বিশ্বের আবহাওয়া সঞ্চালনে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটে। জলবিদ্যুৎ স্টেশনের জন্য বাঁধ নির্মাণেও এই অরণ্যের একটা বড় অংশ খোয়া গেছে। বিশ্বের জলবায়ুর উপর নিরক্ষীয় অঞ্চলের বনভূমির প্রভাব খুবই প্রকট বিধায় উন্নত দেশগুলি এই বন সংরক্ষণের খুবই আগ্রহী হয়ে ওঠেছে। এই কারণে ব্রাজিলের প্রকৃতি সংরক্ষণের সংগ্রামের অন্যতম সৈনিক চিকো মেন্দিস (১৯৪৪-১৯৮৮) বন ধ্বংসকারীদের হাতে নিহত হলে উন্নত বিশ্বে ব্যাপক আলোড়ন দেখা দিয়েছিল। প্রকৃত অপরাধীর কঠোর শাস্তিদানের দাবি ছাড়াও ওইসব দেশের সবুজ সংস্থাগুলি তাঁকে বহু মরণোত্তর পুরষ্কারে ভূষিত করে। প্রযোজক ডেভিড পুটম্যান প্রকৃতিপ্রেমী এই শহীদের জীবনী নিয়ে চলচ্চিত্র তৈরির অনুমতির জন্য মেন্দিসের স্ত্রীকে দিয়েছেন ১০ লক্ষাধিক ডলার। তাঁকে নিয়ে অনেকগুলি বই, বহু নিবন্ধ, রচনা ও টিভি দলিলচিত্র তৈরির কাজ চলছে।

গন্তব্যে পৌঁছাতে বেলা পড়ে আসে। মাধবকুণ্ড  হিন্দুতীর্থও। এখানে বারুণীস্নান ও চৈত্র মেলায় একদা বিপুল জনসমাগম হত। সেই আড়ম্বর কমে এলেও প্রব্রজ্যা থামেনি। তবে এখন জুটেছে একটি নতুন অনুষঙ্গ-ট্যুরিজম। জায়গাটা আজকাল আর দুর্গম নয়। ঘন বন পাতলা হয়ে এসেছে। শীতকাল বরৈ প্রপাতটি শীর্ণা। দূর থেকে অবিশ্রান্ত জলগর্জন শোনা যায় না। গোটা খাতটা শুকনো। চারপাশের খাড়া পাথুরে দেয়ালে কাটা দাগ, প্লাবনকালের  খরস্রোতের আঁচড়। সবকিছু ছিমছাম সাফসুতরা। মানুষের হাত পড়েছে প্রাকৃতিক গায়ে। সে আর অনূঢ়া নেই, নেই তার আরণ্যক লাবন্যশ্রী। ছড়ান বোল্ডারে নানা জনের নাম ঠিকানা, সর্বত্র ছেঁড়া কাগজ, কৌটা। চড়ুইভাতির নিয়মিত সৌখিন সফর জায়গাটার অনেক বেশি শ্রীহানি ঘটিয়েছে। পূজারিণীকে এখন পসারিণী বানিয়েছে। অরণ্যের স্থিতিসাম্য যে কতটা স্পর্শকাতর তা আরেকবার প্রত্যক্ষ করলাম।

কিন্তু অবিলম্বেই আমার চিন্তার খাতবদল ঘটে। চোরের নজর সদাই বোঁচকার দিকে। শ’খানেক মিটার ওপর থেকে লাফিয়ে পড়া এই জলধারায় একটি ছোটখাটো টার্বাইন বসালে কিছুটা বিদ্যুৎ নিঙড়ানো যাবে কি? নবায়নসাধ্য শক্তির মোহন প্রলোভন। আমার যৌবন নদীবশীকরণ ও জলবিদ্যুৎ উৎপাদনকে উন্নয়নের একটি বড় চাবিকাঠি ভেবেছি। আজকাল এই উৎসাহে কিছুটা ভাটা পড়ছে। সবগুলি শক্তি-উৎসের মতো এখানেও নেতির দিক ন্যূন নয়। এতে নদীর মৃত্যু ঘটে, স্বাভাবিক ইকোসিস্টেমে বৈকল্য দেখা দেয়, বিপুল পরিমাণ উর্বরা জমি বা বনভূমি জলে ডুবে যায় এবং সর্বোপরি পলিপতনের ফলে এমনকি খোদ বাঁধাটাই অকেজো হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। এই সঙ্গে অঢেল অর্থলগ্নির ব্যাপারটাও বিবেচ্য বৈকি। মাধবকুণ্ডের ক্ষেত্রেও এসব বিষয় বিবেচ্য। মাধবকুণ্ডের ক্ষেত্রেও এসব বিষয় বিবেচ্য। প্রসঙ্গত এঙ্গেলসের মতো কট্টর বস্তুবাদী মনীষীর একটি সতর্কবাণী মনে আসে: “প্রকৃতির ওপর আমাদের জয়লাভ নিয়ে বাড়াবাড়ি ধরনের আত্মতুষ্টির কোনো হেতু নেই। এই ধরনের প্রতিটি বিজয়ের জন্য প্রকৃতি প্রতিশোধ নিতে ভুলে না। সন্দেহ নেই, প্রত্যেকটি বিজয় শুরুতে অপ্রত্যাশিত সুফল ফলায়, কিন্তু অতঃপর তাতে সম্পূর্ণ পৃথক, অচিন্তিতপূর্ব কুফল দেখা দেয়, যাতে প্রায় সর্বদাই প্রথমটি বাতিল হয়ে যায়।”

সূর্যাস্তের আগেই মাধবকুণ্ডে আঁধার নামে। জলমর্মর নৈশব্দের গভীরতা বাড়ায়। আমি বসেই থাকি। ভয়ের কিছু নেই। কাছেই খাসিয়াদের পুঞ্জি, পানের জুমখেত। তাদের বৌঝিরা ছড়া থেকে জল নিচ্ছে। আমার চিন্তা খাত বদলায়। কৈশোরের কথা মনে পড়ে। কতবার এখানে এসেছি। বারুণীস্নানে লোকের ভিড়, দিগম্বর সন্ন্যাসী দেখার কৌতূহল, ভিনগাঁয়ের লোকদের সঙ্গে হঠাৎ দেখার চমক, পূর্জা-আর্চা, মায়ের আঁচল ধরে চৈত্র মেলায় ঘুরে বেড়ান, পাগল-করা বাঁশির সুর, ফেরিওয়ালার কাঁধের লাঠিতে গাঁথা সোলার পাখির ওড়াউড়ি, ময়রার দোকানের প্রলুব্ধকর সওদা।

খট খট আওয়াজে হঠাৎ আমার চিন্তায় ছেদ পড়ে। পাহাড়ের অনেক উপরে কারা গাছ কাটছে। জলমর্মর চাপা পড়ে। প্রতিধ্বনিত এই নিঝুম শব্দ¯্রােত কর্ণবিদারী হয়ে ওঠে। অসহ্য। আমি উপরের দিকে তাকাই। জমাট অন্ধকারে কিছুই দৃষ্ট হয় না। খাসিয়া পুঞ্জির আলোর ফুলকিতে পরিবেশ আরও ভৌতিক হয়ে ওঠে। প্রকৃতির উপর বলাৎকাররত কারা এই লম্পট? করাতকল, ইট ভাঁটার মালিকদের লোক? না, সরাসরি তারা কেউ নয়। এ হলো ঘনীভূত লোভের লোলজিহ্বা। আমি চিকো মেন্দিস নই। এই জিহ্বা টেনে ধরার মতো সাহস আমার নেই। অসহায় আমি ঠায় দাঁড়িয়ে থাকি। খট খট আওয়াজ ক্রমে কফিনে পেরেক ঠোকার শব্দের মতো ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। এ কার কফিন? সম্ভবত আমাদের সকলের,গোটা মানবজাতির।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত