আব্দুল করিম কিম

১৯ নভেম্বর, ২০১৭ ১৬:৪৭

জন্মশতবর্ষে অভিবাদন প্রিয়দর্শিনী ইন্দিরা

আজ বাংলাদেশের জন্মযুদ্ধের অকৃত্তিম বন্ধু শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর জন্মদিন। আজ তাঁর জন্মশতবর্ষ। জন্মশতবর্ষে অভিবাদন জানাই প্রিয়দর্শিনী ইন্দিরা গান্ধীকে।  ১৯১৭ সালের ১৯ নভেম্বর ভারতের এমন এক পরিবারে তাঁর জন্ম, পরাধীনতার যুগেও যাদের পরিচিতি ছিল বিশ্বময়। ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সংগ্রামী কংগ্রেস নেতা মতিলাল নেহেরুর নাতনি, বিখ্যাত পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরুর কন্যা ছিলেন ইন্দিরা। জন্মই তাঁর রাজনৈতিক পরিমন্ডলে।

পিতা জওহরলাল নেহেরু ভারতীয় রাজনীতির ইতিহাসে বিচরণ করেছেন সূর্য্যের মত। রাজনীতিতে ইন্দিরা তাঁর পিতার চেয়ে কোনো অংশে কম ছিলেন না, বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে পিতাকেও ছাড়িয়ে গেছেন । ভারতের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। আনুষ্ঠানিক ডিগ্রি না থাকলেও ইন্দিরা ছিলেন উচ্চশিক্ষিত । পড়ালেখা করেছেন সুইজারল্যান্ড ও অক্সফোর্ডে। ১৯৩৪-৩৫ সালে যোগ দেন শান্তিনিকেতনে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর নামকরণ করেন ইন্দিরা প্রিয়দর্শিনী । সেই থেকে প্রিয়দর্শিনী গান্ধী নামেই পরিচিত হন ইন্দিরা ।

১৯৪২ সালের পরপরই ভারতের রাজনীতিতে তিনি সক্রিয় হয়ে ওঠেন ইন্দিরা গান্ধী। তিনটি অসাধারণ গুণের অধিকারী ছিলেন- অসাধারণ ব্যক্তিত্ব, প্রখর রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি এবং সিদ্ধান্তের দৃঢ়তা অটল। অনেকেই তাঁর এ গুনকে দোষ হিসাবে চিহ্নিত করতে চেয়েছেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ঘটনাবলীর বিশ্লেষকরা মনে করেন, ঐ তিন গুণের কারনেই ইন্দিরা সমকালের অন্যান্য নেতার চেয়ে অনেক অগ্রসর ছিলেন। দক্ষিণ এশীয় রাজনীতি নয়। বিশ্ব রাজনীতির প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছিলেন ইন্দিরা।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তাঁর অকুণ্ঠ সমর্থন ইতিহাসে চিরঃস্মরণীয়। স্বাধীনতার জন্য বাংলাদেশের মানুষ যদি দেশের বাইরের কারও কাছে এককভাবে ঋণী হয়ে থাকে, তাহলে সেই ঋণ ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর কাছে। দূরদর্শিনী ইন্দিরা'র দুঃসাহসিকতায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন সহজতর হয়েছিল । ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭১ সালে আমাদের পাশে না থাকলে এ অসম যুদ্ধে জয়লাভ করা দুঃসাধ্য ছিল। অনেক বছর লেগে যেত স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হতে।  এতে শহীদের সংখ্যা কোটির ঘর অতিক্রম করতে পারতো। ইন্দীরা গান্ধী যা করেছেন বাংলাদেশের জন্মযুদ্ধে, কোন দিন সে ঋণ শোধ করা সম্ভব নয়। ঐ সময়ে ইন্দিরা গান্ধীর সামান্য উদাসিনতা বা সিদ্ধান্তহীনতায় সাতকোটি বাংলাদেশির ভবিষ্যত অন্ধকার হয়ে যেতে পারতো।

২৫ মার্চ-এর পর ভারত আমাদের জাতীয় নেতাদের আশ্রয় না দিলে পাকিস্থানি হানাদারদের হাত থেকে উনাদের কাউকেই রক্ষা করা সম্ভবপর হতো না। পাকিস্থানি বর্বরদের অত্যাচারে প্রায় এক কোটি লোক ভারতে আশ্রয় নেয়। ভারত সরকার নিজেদের যথেষ্ট সমস্যা থাকার পরও আমাদের শরণার্থীদের জন্য আশ্রয়, খাদ্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। এই সাহায্য না পেলে অনাহারে, বিনাচিকিৎসায় অনেক লোক মারা যেত । প্রায় তিন লাখ মুক্তিযুদ্ধার আশ্রয়, খাদ্য ও প্রশিক্ষণ দিয়েছে ভারত । আন্তর্জাতিক আইন লঙঘণ করে মুক্তিযুদ্ধাদের হাতে অস্ত্র দেয়া হয় । মুজিব নগর সরকার, মুক্তিবাহিনী, মুজিব বাহিনী গঠন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষনে ভারতের সামরিক প্রশিক্ষকদের বিশেষ ভূমিকা ইন্দিরা গান্ধীর কারনেই হয়।

ইন্দিরা গান্ধী পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের যুদ্ধ নিয়ে বিশ্ব মিডিয়ায় কী বলছেন সেটা সে সময়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল । পাকিস্তান তখন স্বাধীন রাষ্ট্র হওয়ায় এর ভিতরে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের করা যুদ্ধকে বাকি সব দেশ গৃহযুদ্ধ হিসেবেই দেখতে চেয়েছে। যুদ্ধের পরপরই কিছু আন্তর্জাতিক মিডিয়া ও রাষ্ট্রপ্রধানরাও সেভাবেই বিশ্লেষণ করছিলেন। কিন্তু ইন্দিরা গান্ধী ততদিনে পূর্ব পাকিস্তান নয়, পূর্ব বাংলা বলে সম্বোধন শুরু করছিলেন । ২৫ মার্চ ঢাকায় গণহত্যার পর ২৭ মার্চ ভারতের লোকসভায় ভাষণ দিয়ে করণীয় তুলে ধরেন তিনি । ৩১ মার্চ বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধে সর্বাত্মক সহযোগিতার প্রস্তাব লোকসভায় উত্থাপন করলে সর্বসম্মতিক্রমে তা পাস হয়।
 
মুজিবনগর সরকার গঠন হওয়ার পরপরই আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন ইন্দিরা । মে মাসে বেলগ্রেডের বিশ্বশান্তি কংগ্রেসে ভারতীয় প্রতিনিধিরা ইন্দিরা গান্ধীর বাণী পাঠ করেন। বাণীতে বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন প্রসঙ্গে প্রায় ৮০টি দেশের প্রতিনিধি করতালি দিয়ে সাদরে গ্রহণ করেন। এর আগষ্টে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে প্রহসনের বিচার শুরু হয়, বিচারে বঙ্গবন্ধু মৃত্যুদন্ড হয়। ইন্দিরা গান্ধী এই রায় বাতিলের জন্য পৃথিবীর প্রায় সব প্রভাবশালি দেশে সফর করে পাকিস্থান সরকারকে চাপে রাখার অনুরোধ জানায়। ৮ আগস্ট বিশ্বের সব রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের কাছে ভারত সরকারের পক্ষে প্রেরিত এক বার্তায় শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন রক্ষায় ও তার মুক্তির দাবিতে ইয়াহিয়া খানের ওপর চাপ সৃষ্টির আহ্বান জানান ।

এতে কাজ হয়, পাকিস্থান সরকার রায় স্থগিত রাখতে বাধ্য হয়। ইন্দিরা গান্ধীর এই উদ্যোগের জন্যই আমরা স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুকে পেয়েছিলাম। মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে তিনি বিশ্বময় চষেছেন। ইন্দিরা গান্ধীর কারনেই আমরা রাশিয়াকে পাশে পেয়েছিলাম। ২৮ সেপ্টেম্বর ক্রেমলিনে সোভিয়েত নেতা ব্রেজনেভ, পোদগর্নি ও কোসিগনের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ৬ ঘণ্টা আলোচনা করেন। সোভিয়েত নেতা বাংলাদেশ বিষয়ে ভারতের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন। এর পরই সোভিয়েত-ভারত যুক্ত ইশতেহার প্রকাশ পায়। ৩ অক্টোবর সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট নিকোলাই পদগর্নি দিল্লি সফর করেন।জাতিসংঘে সেভিয়েত ইউনিয়ন যুদ্ধবিরতির মার্কিন প্রস্তাবে ভেটো না দিলে আমরা হয়তো ফিলিস্তিনের মত আজও ঝুলে থাকতো।

৯ অক্টোবর শিমলায় সর্বভারতীয় কংগ্রেসের উদ্বোধনী ভাষণে ইন্দিরা গান্ধী বলেছিলেন, ভারত বাংলাদেশের ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামে পাশে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। পরদিনই তিনি কঠিন ভাষায় বলেন, বাংলাদেশ প্রশ্নে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের আলোচনার কোনো সম্ভাবনা নেই। ২৪ অক্টোবর বাংলাদেশ পরিস্থিতি ও শরণার্থী সমস্যা সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে সর্বশেষ অবস্থা জানানোর উদ্দেশে ১৯ দিনের বিশ্ব সফরে বের হন তিনি। ২৫ অক্টোবর ব্রাসেলসে তিনি বাংলাদেশের জনগণের গণতন্ত্র রক্ষার সংগ্রামে বিশ্ব বিবেককে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। ২৮ অক্টোবর ভিয়েনাতেও তিনি বাংলাদেশ পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন। ৩১ অক্টোবর ব্রিটেন সফর করেন। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী অ্যাওয়ার্ড হিথের সঙ্গে বাংলাদেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা দেন। ৪ নভেম্বর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের সঙ্গে ১২৫ মিনিট বৈঠক করেন। এরপর তিনি ফ্রান্সে যান। ফরাসি প্রেসিডেন্টের দেওয়া ভোজসভায় তিনি বাংলাদেশে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার চিত্র তুলে ধরেন। তিনি প্যারিস থেকে জার্মানি আসেন। জার্মান চ্যান্সেলর উইলি ব্রান্টের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেন । নভেম্বর জুড়েই তিনি বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বিশ্বনেতাদের কাছে ভারতের সমর্থনের কথা প্রচার করেন। ৩০ নভেম্বর রাজ্যসভায় ভাষণে বাংলাদেশ থেকে সব পাকিস্তানি সেনা ফিরিয়ে এনে বাঙালিদের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানান। ৩ ডিসেম্বর রাত ১২টা ২০ মিনিটে ভারতবাসীর উদ্দেশে ভাষণ দেন। ভাষণের মূল বিষয় ছিল বাংলাদেশ প্রসঙ্গ। তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সর্বশক্তি দিয়ে মোকাবিলা করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন । ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বরে নিজের বক্তব্য থেকে খুব সচেতনভাবে পূর্ব বাংলা শব্দটি কেটে ফেলে বাংলাদেশকে প্রবেশ করান তিনি। ৬ ডিসেম্বর লোকসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে বাংলাদেশকে ভারত কর্তৃক স্বীকৃতি প্রদানের কথা ঘোষণা করেন। ১২ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ লাগিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা দেন ।

১৩ ডিসেম্বর জাতিসংঘের মহাসচিবকে পত্র লিখেন, ১৫ ডিসেম্বর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নিক্সনের কাছে অতিজরুরি বার্তা পাঠান। বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতার এ যুদ্ধে প্রশিক্ষণ প্রদান আর অস্ত্রের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য তিনি খরচ করেন ভারতের প্রায় সাত হাজার কোটি রুপি। ইন্দিরা গান্ধী নিজের সৈন্যদের পাঠিয়ে দেন বাংলাদেশকে সাহায্য করতে। পাঠিয়েছেন বিমানশক্তি।আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে সহায়তাদান কালে ভারতের সেনাবাহিনীর ৩৬৩০ জন নিহত এবং ৯৮৫৬ জন আহত এবং ২৩০ জন নিখোঁজ হয়েছিল। এই ত্যাগ ইন্দিরা গান্ধীর। তার মতো মহীয়সী নারীর বিচক্ষণ পদক্ষেপ ও অবদান ছাড়া আমরা স্বাধীনতা সহজে লাভ করতে পারতাম না। এ কথা অকুণ্ঠচিত্তে স্বীকার করার মানসিকতা থাকা উচিত আমাদের ।মিত্রবাহিনী গঠন না হলে যুদ্ধ কবে নাগাদ শেষ হত, অনুমান করা কঠিন ছিল । জাতিসংঘে পাকিস্থানের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভারতীয় প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্রকে কুটনৈতিক ভাবে পরাস্থ করে । ফলে পাকিস্থানি বাহিনী আত্মসমর্পন  করতে বাধ্য হয় । জন্ম হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের । বাঙ্গালীদের আত্মমর্যাদার প্রতি সম্মান দেখিয়ে  ইন্দিরা গান্ধী মাত্র পঞ্চাশ দিনের মাথায় ভারতীয় বাহিনীকে প্রত্যাহার করে নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেন। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের কারাগার থেকে স্বসম্মানে ফিরিয়ে আনা ও বাংলাদেশের পুর্ণগঠনে ইন্দিরা গান্ধীর সাহায্য অব্যাহত থাকে। বাংলাদেশের প্রতি তাঁর এই মমত্ববোধ বৈরী পাকিস্থানের ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে ছিল না, ছিল নিপীড়িত বাঙ্গালিদের উপর পাকিস্থানী শাসকদের মানবতা বিরোধী অপরাধের প্রতিবাদ-প্রতিরোধ।

ইতালির বিখ্যাত সাংবাদিক ওরিয়ানা ফ্যালাসি শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। সে সাক্ষাৎকারে ইন্দিরা নিজের সম্পর্কে অনেক কথাই বলেছেন । নিজের আদর্শ সম্পর্কে বলেছেন, আমার নিজের একটা আদর্শ আছে- কেউ শূন্যে কাজ করতে পারে না। অবশ্যই কোনো কিছুতে বিশ্বাসী হতে হবে। আমার বাবা বলতেন, তোমার মনটাকে অবশ্যই খোলা রাখতে হবে। কিন্তু মনের মধ্যে কিছু রাখতে হবে। তা না হলে ধ্যান-ধারণাগুলো আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে বালির মতো গড়িয়ে পড়বে। কথা হলো আমার একটা আদর্শ আছে, কিন্তু আমি গোঁড়া নই। এখন গোঁড়া থাকা যায় না। বিশ্ব দ্রুত বদলাচ্ছে। এমনকি কুড়ি বছর আগে তুমি যা চাইতে এখন তা সঙ্গতিহীন, পরিত্যক্ত। ভারত এখনো দারিদ্রপীড়িত। স্বাধীনতার কোনো সুফল জনগণের বিরাট অংশ আজো পায়নি- তাহলে মুক্ত হয়ে কী লাভ? আমরা কেনই বা মুক্ত হতে চেয়েছিলাম ? শুধু কি বৃটিশকে তাড়াতে? এ ব্যাপারে আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট। আমরা সব সময় বলেছি যে, উপনিবেশবাদের প্রতিনিধি বৃটিশের বিরুদ্ধেই শুধু আমাদের সংগ্রাম নয়, আমাদের সংগ্রাম ভারতে বিরাজমান সব অন্যায়-অনাচারের বিরুদ্ধে। সমস্ত ব্যবস্থার ত্রুটি, বর্ণ প্রথা বা অর্থনৈতিক অবিচারের ফলে সৃষ্ট সমস্যা ভারতে মারাত্মক দুষ্টগ্রহ। এসব কিছুই নির্মূল হয়নি।কুড়ি বছর পর আমরা রাজনৈতিকভাবে মুক্ত হয়েছি। কিন্তু আমরা যে লক্ষ্য স্থির করেছিলাম তা অর্জিত হয়নি।

ওরিয়ানা ফ্যালাসি প্রশ্ন করেন, তাহলে আপনি কোন পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছেছেন?

ইন্দিরা গান্ধী জবাবে বলেন, এটা বলা শক্ত। তুমি কি কখনো পর্বতারোহণ করেছো? কোনো পর্বতের শিখরে উঠলে মনে হবে তুমি সর্বোচ্চ শিখরে উঠেছো। কিন্তু সে ধারণা বেশিক্ষণ টিকে না। শিগগিরই দেখবে, তুমি যে শিখরে উঠেছো তা খুব নিচু। উঁচু শিখরে উঠতে হলে বহু পর্বতে আরোহণ করতে হবে। উঁচুতে উঠতে থাকলে উঠতে ইচ্ছা হবে। দেশভাগের কারন ও উপমাহদেশের চলমান অশান্তির অন্যতম কারন ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি।

মানুষকে অবমাননা করে ধর্মকে সম্মান করার যে ভয়ংকর খেলা চলছে, সেই খেলার প্রেক্ষিতে ওরিয়ানা ফ্যালাসি'র কাছে দেয়া সাক্ষাৎকারে ইন্দিরা গান্ধী নিজের ধর্ম চিন্তা নিয়ে বলেছেন, অবশ্যই আমি মন্দিরে যাই না, ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা বা সে রকম কিছু করি না। কিন্তু ধর্ম বলতে যদি ঈশ্বরের উপরে বিশ্বাসের বদলে মানবতায় বিশ্বাস বুঝানো হয়, মানুষের মঙ্গল করার কথা, মানুষকে সুখী করার কথা বলা হয়, তাহলে আমি অবশ্যই ধার্মিক।

লেখক: সমাজকর্মী, পরিবেশ আন্দোলনের সংগঠক।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত