তওহীদ ফিতরাত হোসেন

১৭ ফেব্রুয়ারি , ২০১৮ ২২:১৮

শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগেই সমাধান নয়

শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। জাতিকে ধ্বংস করার জন্য তার মেরুদণ্ড শিক্ষা ব্যবস্থাকে শেষ করে দিলেই হল। বাংলাদেশে বিগত কয়েক বছর ধরে ছোট ক্লাস থেকে বড় ক্লাস পর্যন্ত প্রশ্নপত্র যেভাবে ফাঁস হচ্ছে তাতে জাতি মেধাশূন্য হতে খুব দেরি নাই। এ অপরাধে শুধু মন্ত্রী আর প্রশাসনকে দোষারোপ করলে চলবে না। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, তার মা-বাবা সকলেই এখানে যারযার অবস্থান থেকে জড়িত এই অসহনীয় অপরাধে। আসল শিক্ষা থেকে যেন সার্টিফিকেট অনেক বেশি প্রয়োজন। শুধু রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই সেক্টরটিকে না দেখে সকলের নিজস্বতার প্রশ্নে এক হওয়া উচিত।

দেশ মধ্যম আয়ে উন্নত এবং ২০৩০ নাগাদ উন্নত দেশ হিসাবে অবস্থান নেবে যদি উন্নয়নের এই ধারা বজায় থাকে। কিন্তু চিন্তা চেতনায় উন্নত কি হতে পারছি? অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলেও মানসিক অবনমন চলছেই।

জাতি গঠনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে শিক্ষা। সেই শিক্ষা ব্যবস্থা আজ মাফিয়া চক্রের হাতে জিম্মি। বারবার প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে। নীচ থেকে শুরু করে উপরের যেকোনো ধরনের পরীক্ষার এই প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার পরও দিনের পর দিন শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করে অপরাধ ও অপরাধীকে সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে অবিরত। রাষ্ট্র কি তবে অপরাধীর হাতে জিম্মি? অপরাধী আইনের চেয়ে শক্তিশালী হতে পারেনা।

অসুস্থ শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন লক্ষ্যে ২০১০ সালে ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দায়িত্ব দিয়েছিলেন সৎ মানুষ নুরুল ইসলাম নাহিদকে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ কমিউনিস্ট রাজনীতির মানুষ। কমিউনিস্ট থেকে গণফোরাম ঘুরে আওয়ামী লীগে থিতু হয়েছেন। নেত্রীর আস্থাভাজন বটে। কিন্তু নেত্রীর আস্থার প্রতিদান দিতে গিয়ে তিনি বারবার নাজেহাল হচ্ছেন এই শক্তিশালী মাফিয়া কর্তৃক। তার আজকের অসহায় এই অবস্থা প্রমাণ করে বাংলাদেশে সৎ আর ভাল মানুষের অবস্থান। তিনি সৎ এটাই তার অপরাধ। নানা ভাবে এই সহজ সরল মানুষটিরে নাজেহাল করেই যাওয়া হচ্ছে প্রতিনিয়ত। অনেকেই আবার তার পদত্যাগ দাবি করছেন। কিন্তু পদত্যাগ কি সব সমস্যার সমাধান করে দেবে?

জিয়াউদ্দিন বাবলু স্বৈরাচার এরশাদের সহচর, ৯০-এর ছাত্র ঐক্য কর্তৃক ঘোষিত 'গণদুশমন' ডাকসুর সাবেক জিএস বাবলু সংসদে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন। চোরের মার বড় গলা। বাবলুর মত রাজনৈতিক নেতারা আজ সংসদে দাড়িয়ে অর্থমন্ত্রী মুহিত আর নুরুল ইসলাম নাহিদের মত সৎ ও লড়াকু মানুষের পদত্যাগ দাবি করে। অপরাধীদের রক্ষায় বাবলুর মত বিশ্বাসঘাতক রাজনীতিবিদেরা আসলে মাফিয়াদের রক্ষায় সদা সচেষ্ট। পদত্যাগ দাবি করার সাথে সাথে বলা উচিত সমস্যার সমাধান কী?

কে এই জিয়াউদ্দিন বাবলু ? ৮০ দশকে যখন বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ এরশাদ শাহীর বিরুদ্ধে সোচ্চার তখন জিয়া উদ্দিন বাবলু ডাকসু জিএস। আকতারুজ্জামান ভিপি। ছাত্র সমাজ তখন জান্তা এরশাদ শাহীর বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ এবং সোচ্চার। বাসদ নেতা জিয়াউদ্দিন বাবলু বড় ছাত্রনেতা তখন তিনি ছাত্র সমাজের তীব্র আন্দোলনের বুকে ছুরি মেরে জান্তার পক্ষ নেন। নির্বাসিত হন জনগণের ভালবাসার মণিকোঠা থেকে। বিশ্বাসঘাতকতা করেন বাংলাদেশের ছাত্র জনতার সাথে।

পরিস্থিতি বিবেচনায় বলা যায় দুই একজন নেতা বা মন্ত্রী শুধু সৎ হলেই চলে না, বরং উল্টো হয়। দুর্নীতিগ্রস্থ শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং তার প্রতিটি নির্বাহী স্তর একা এক মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর আশীর্বাদ নিয়ে সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। এদের মোকাবেলায় টাস্ক ফোর্স গঠন করে পরিকল্পনা মোতাবেক এগিয়ে যেতে হবে। একজন নাহিদের পদত্যাগ যদি সব সমস্যার সমাধান হয় তবে তা করা যেতে পারে। কিন্তু সুযোগ সন্ধানীদের উচিত মন্ত্রীর পদত্যাগ দাবির সাথে সাথে উত্তরণের পথ বাতলে দেওয়া।

সরকার এবং মন্ত্রীর উচিত কঠোরতার সাথে আইন প্রয়োগ করা। ছোট ছোট অন্যায়কে প্রশ্রয় দিলে একদিন অন্যায়কারীরাই শক্তিশালী হয়ে উঠবে। আর বাংলাদেশে অন্যায়কারীরা নিজেদের যেন ধরাছোঁয়ার ঊর্ধ্বে নিজেকে মনে করছে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া নকল প্রতিরোধ সম্ভব নয়। বিরোধিতার জন্য শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চাওয়া মানে শিক্ষা ব্যবস্থার বারোটা বাজানো অপরাধীকে আরও শক্তিশালী প্রমাণ করে অধিক হারে প্রশ্ন পত্র ফাঁসের সুযোগ করে দেওয়া।

  • তওহীদ ফিতরাত হোসেন: সাবেক জি এস, এমসি কলেজ সিলেট।
  • প্রকাশিত লেখায় মতামত, মন্তব্য ও দায় লেখকের নিজস্ব।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত