সিলেটটুডে ডেস্ক

০৮ মার্চ, ২০১৮ ০২:১২

দেশটা নিরাপদ না, তবু আমরা কোথাও যাচ্ছি না: ইয়েশিম ইকবাল

লেখক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের প্রাণনাশের উদ্দেশে পরিচালিত হামলার পর তাঁর মেয়ে ইয়েশিম ইকবাল বলছেন, দেশটা নিরাপদ না, তবু তারা দেশ ছাড়বেন না।

বুধবার (৭ মার্চ) নিজের ওয়েবসাইটে লিখিত এক ব্লগে ইয়েশিম ইকবাল দুঃসময়ে যারা পাশে ছিলেন, সহযোগিতা করেছেন তাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। বলছেন হামলার ঘটনায় তাদের বিস্ময় ও উদ্বেগের কথাও।

ইয়েশিম ইকবাল লিখেন, আমরা বিস্মিত এবং অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। যারা এই লেখাটি পড়ছেন তাদের অনেকের মতো আমিও গভীর দুঃখের অনুভূতিতে আচ্ছন্ন। প্রচণ্ড অস্বস্তি নিয়ে লক্ষ্য করছি আমাদের দেশটা নিরাপদ না। যে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আমি বেড়ে উঠেছি সেই ক্যাম্পাসে আমার বাবা ছুরিকাহত হয়েছেন। তাও এমন সময়ে যখন তিনি একটা অনুষ্ঠান উপভোগ করছিলেন! একজন বন্ধু জিজ্ঞেস করেছিল, “কেন ইয়েশিম আপু? এতসব ঘটার পরেও কেন তোমরা এখানে থাকবে?” মনে হচ্ছে অনেক মানুষ দেশের পরিস্থিতি নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছে।

জাফর ইকবালের মেয়ে লিখেন, আমরা যা যা পেয়েছি সেগুলোর প্রতিটি বিন্দু উপভোগ করা আমাদের অধিকার এবং একইসঙ্গে দায়িত্ব এবং এটা আমাদের দায়িত্ব যেসব জিনিস আমরা এখনো পাইনি সেসবের জন্য যুদ্ধ অব্যাহত রাখা। সম্ভবত আমাদের সন্তানরা সেটা পাবে।

"যখন সময়টা অনেক কঠিন হয়ে যায়, রাগে-ক্ষোভে-কষ্টে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা হয় (আমি জানি কারণ আমি নিজেই সেই জায়গাতে আছি); তখন সমস্যা থেকে পালিয়ে যাবার জন্যে প্রস্তুতি নেবেন না। খুব গভীর গভীর করে একটা নিঃশ্বাস নিন। নিজের চারপাশে তাকান আর আশেপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সাহসগুলো এনে আবার নিজের মধ্যে জড়ো করুন। এই সাহস হয়তো কঠিন পথের বাধা পেরিয়ে আসতে গিয়ে আপনি হারিয়ে ফেলেছিলেন! মেরুদণ্ড শক্ত করে মাথা তুলে শিনা টান করে দাঁড়ান। তারপর আপনার পরবর্তী পদক্ষেপ কি হবে খুঁজে নিন।"

তিনি লিখেন, আমি খুব ভালো করেই জানি, আমি এই কথাগুলো বলতে পারছি কারণ আমার বাবা জীবিত আছেন এবং ভালো আছেন। ইতোমধ্যেই এই সিমেস্টারের পাঁচটা কোর্স কিভাবে শেষ করবেন সেটা নিয়ে কথা বলছেন আমার বাবা। এই মুহূর্তে আমি সেইসব পরিবারের কথা চিন্তা করছি যাদের প্রিয়জনরা এই যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন। অনেক কন্যা আছেন যাদের বাবা আর সুস্থ হয়ে ফিরেননি। আমি আপনাদের কথাও ভাবছি।

বাংলাদেশ বসবাসটাকে উপভোগ করেন উল্লেখ করে ইয়েশিম ইকবাল লিখেন, আমি এই দেশে আছি কারণ এখানে থাকতে আমি পছন্দ করি। এই জায়গাটা আমি এমন নির্মম ঘটনা দিয়ে সংজ্ঞায়িত করি না। এসব ঘটনা এবং যারা এসব ঘটায় তারা হচ্ছে সমস্যা। এই সমস্যা আমাদের জরুরি ভিত্তিতে মোকাবিলা করতে হবে। এই সমস্যাগুলো টিউমার কিংবা ফাঙ্গাসের মতো। সমস্যাগুলো বিশ্রী। এই সমস্যাগুলো বেড়ে উঠেছে কারণ আমরা এগুলো সমাধানের জন্যে যথেষ্ট কাজ করিনি। এই সমস্যাগুলোর মূলোৎপাটন করতে হবে আমাদেরকে।

"এই দেশটা এই সমস্যাগুলোর জন্য না। এই দেশটাতে রয়েছে ছায়ানট আর শিল্পকলা একাডেমির মতো আনন্দের জায়গা, যেখানে আমি হৃদয়ের গান খুঁজে পাই। ইতিহাসের অনেক ঘাত-প্রতিঘাত স্বত্ত্বেও এই ছোট দেশটা বিজ্ঞানে, শিল্পে, সাহিত্যে তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে!"

দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ইয়েশিম ইকবাল আরও লিখেন, আমি কৃতজ্ঞ। বিশেষত, তাদের কাছে যারা সেই মুহূর্তে আমাদের পাশে ছিলেন এবং খুব দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছেন। তারা নিজেদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা না করে আমার বাবার যত্ন নিয়েছেন। সারাদেশে যারা এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করছেন। তাদের সবাইকে ধন্যবাদ। আপনাদের প্রতিবাদের শব্দ আমার মনে শক্তি জোগায়। গত কয়েকদিনে যারা আমাদের জন্য ভালোবাসার অপার সমুদ্র খুলে দিয়েছেন তাদেরকে ধন্যবাদ। আপনারাই আমাদের ভরসার জায়গা।

উল্লেখ্য, গত শনিবার (৩ মার্চ) শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে হামলার শিকার হন লেখক, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। বর্তমানে তিনি ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন আছেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত