রত্নদীপ দাস রাজু

১৩ মে, ২০১৮ ১৩:১১

আমার মা: বিশ্ব মাতা

আজ বিশ্ব মা দিবস। বিশ্বের সকল মায়েদের প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা। মা দিবসে আমি এক জয়ীতা মায়ের গল্প আপনাদের শোনাতে চাই। যিনি একাধারে একজন সফল গৃহিণী, একজন সফল চাকুরীজীবী, সমাজের প্রতি গভীর দায়িত্বশীল সমাজকর্মী, পিতামাতার প্রতি কর্তব্যপরায়ণ সুসন্তান এবং সন্তানদের কাছে স্নেহময়ী তথা দায়িত্বপরায়ণ মা। এই সফল ব্যক্তিটি হলেন আমার জন্মদাত্রী আমার প্রিয় মা- শ্রীমতি রত্না দাশ।

মা এই একটি অক্ষরে একটি শব্দ, যা বিশ্বভ্রমাণ্ডের যত শব্দ পুঞ্জি আছে এর মধ্যে সব চেয়ে উৎকৃষ্ট, আকর্ষণী ও মাধুর্যমণ্ডিত শব্দ। আর এই এক শব্দই যে কোন সন্তানের হৃদয়ের যত শূন্যতাই থাকুক না কেন, তা মুহূর্তের মধ্যেই বিলিন করে দেয়ার এক অভূতপূর্ব ক্ষমতা রাখে। সৃষ্টিকর্তার কী অপূর্ব লীলা। তাইতো কবি বলেছেন-

"মা নাই গৃহে যার
সংসার অরণ্য তার,
দেখিলে মায়ের মুখ
দূরে যায় সব দুখ।।"

আমার মা আমি বর্তমান সমাজের জন্য একজন আদর্শ মায়ের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। আমার মা একজন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা (ভিজিটর) ও বাবা একজন স্কুল শিক্ষক (বর্তমানে প্রয়াত)। ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি মা ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে সাংসারিক কাজ-কর্ম সম্পাদনের পাশাপাশি আমাদের চার ভাই-বোনদের লেখাপড়ায় বসানো, নাশতা করানো, তারপর স্নান করিয়ে খাবার খাইয়ে স্কুলে পাঠানো, বাবাকে কাজে সহযোগিতা করা, নিজে অফিসে যাওয়া, বিকেলবেলা বাড়ি ফিরে আবার গৃহস্থালি কর্ম, আমাদের পড়াশোনায় সহযোগিতা, পেশাগত দায়িত্বের বাইরেও বাড়িতে কোন রোগী আসলে তাকে চিকিৎসা-পরামর্শ দেওয়া, পরিবারের অন্য সদস্যদের ভালোমন্দ দেখা, নিজের মা বাবার খোঁজখবর নেওয়া ও প্রতি শুক্রবারে ছুটির দিনে তাঁদের দেখে আসা সর্বোপরি কোন ধরনের গৃহকর্মী ছাড়াই সমগ্র গৃহস্থালি ও অফিসিয়ালি কাজ একাই সামলাতেন। বর্তমানে চাকুরীতে অবসর নিলেও তাঁর ভোর ৫টায় ঘুম থেকে ওঠা আর রাত ১ টায় ঘুমানোর অভ্যাস এখনও বিদ্যমান। এত কিছুর পরও তিনি চাকুরী জীবনে দুবার শ্রেষ্ঠ পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা হিসেবে সম্মাননা সহ অনেক কৃতিত্ব অর্জন করেন।

আমাদের জন্য আমার মায়ের ত্যাগের অনেক গল্প আছে, যার সবটুকু টানছি না এখানে। শুধু একটি মাত্র উদাহরণ দিয়ে শেষ করব। ২০০০ সাল। আমার মায়ের কর্মস্থল নবীগঞ্জ উপজেলার করগাঁও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। ঐ সময় তাঁর উপজেলা পর্যায়ে সিনিয়র ভিজিটর পদে প্রমোশনের চিঠি আসে। ডিপার্টমেন্ট ও পরিচিতজনরা খুশি হলেও তাঁর মাঝে সে রকম কিছু নাই। কারণ এ পদে তাঁকে যোগদান করতে হবে আজমিরিগঞ্জ উপজেলায়। আমরা ভাই-বোনরা ছোট, কেউই মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হইনি। সংসার ও আমাদের পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটবে, তাই তাঁকে আর এ প্রমোশন গ্রহণ করা সম্ভব হয় নি। অথচ এ প্রমোশন পেতে তাঁর অনেক সহকর্মী বিভিন্ন উপায়ে বহুবার চেষ্টা করেও পারেননি।

আজীবন ত্যাগের মহিমায় ভাস্কর আমার মায়ের জীবন। বাবার প্রয়াণের পর মা আমাদের আগলে রাখছেন। এখন মা শুধু মা নন, তিনি মা-বাবা দুটোই। শুধু পরিবার পরিজনের প্রতিই নয়, সমাজের প্রতি তাঁর দায়িত্ব কর্তব্য পালন নির্দ্বিধায় তাঁকে একজন আদর্শিক ব্যক্তি হওয়ার অধিকার রাখে।

তাই আমার দৃষ্টিতে আমার মা বিশ্ব মাতা। আমার মা সহ বিশ্বের সকল মায়েদের সুদীর্ঘ, সুস্বাস্থ্য ও নিষ্কলুষ জীবন কামনাই হোক এবারের মা দিবসে পরম করুণাময়ের কাছে আমাদের সবার ঐকান্তিক প্রার্থনা।

  • রত্নদীপ দাস রাজু: শিক্ষানবিশ আইনজীবী; রাজনৈতিক কর্মী। ইমেইল: [email protected]

আপনার মন্তব্য

আলোচিত