শিতাংশু গুহ

৩০ নভেম্বর, ২০১৮ ১১:৪২

নির্বাচন বানচালে দাঙ্গা?

হজ নিয়ে কু-মন্তব্য করায় মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েছিলেন লতিফ সিদ্দিকী। এবার তিনি টাঙ্গাইল-৪ থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন, পাননি। স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। পঙ্গু সাংবাদিক প্রবীর শিকদার ফরিদপুর-১ থেকে স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন। ওই আসনে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন মনোনয়ন পেয়েছেন। বিএনপি’র প্রার্থীও থাকছেন। ২০১৪-তে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন ১৭জন সংখ্যালঘু। এবার ১৮জন? হিন্দুদের দাবি ছিলো ৩০ থেকে ৬০টি আসন। মেলেনি। পক্ষান্তরে হেফাজত ও ওলামা লীগের দাবি ছিলো হিন্দুদের মনোনয়ন না দেয়ার। তারা জিতেছেন। বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট হয়তো চামড়া বাঁচাতে কিছু হিন্দুকে নমিনেশন দেবে।

ড. কামাল ও তার কন্যা সারা হোসেন নির্বাচন করছেন না। চট্টগ্রাম-১ আসনে বিএনপি প্রার্থী মোমিনুল ইসলাম ইউসুফকে ভোট না দেয়ার জন্যে তার পুত্র নিয়াজ মুর্শেদ এলিট আহ্বান জানিয়েছেন। সুব্রত চৌধুরী বলেছেন, দেশে কোন জামাত নেই, গণফোরামে জামাত নেই, যারা ছিলো তারা আওয়ামী লীগ-বিএনপি -তে মিশে গেছে। বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সুর হঠাৎ কেন পাল্টে গেলো বোঝা যাচ্ছে না? তিনি বলেছেন, নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু নয়? সাঈদী পুত্র শামীম পিরোজপুর-১ এবং রাজাকার আব্দুল আলিমের পুত্র ফয়সাল আলিম জয়পুরহাট-১ থেকে ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করছেন। হিরো আলম কোথায়? মুফতি ইলিয়াসুর রহমান জিহাদী ওয়াজ করে হিরোর বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেছেন।

অভিনেতা ফারুক আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন। খবর বেরিয়েছে, তিনি বলেছেন, ‘ইসলাম কায়েম করার জন্যে দেশ স্বাধীন করিনি, করেছি স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার জন্যে’। এরপর নাকি তার মনোনয়ন বাতিল হয়? আসলে এরশাদ একই আসনের প্রার্থী, অভিনেতা ফারুকের মনোনয়ন যদি বাতিল হয় তা হবে এরশাদের কারণে। অন্য কারণ খোঁজা ঠিক নয়। এরশাদ চাচা আবার অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। বলা হয়, এবার তিনি সত্যি সত্যি অসুস্থ। তাকে সিঙ্গাপুর পাঠানোর কথাবার্তা শোনা গেল? এরমধ্যে নিউজ এলো, মহাজোট জাতীয় পার্টিকে ৪৫টি আসন দিয়েছে। একই সাথে খবর, এরশাদ সুস্থ।

ঐক্যফ্রন্ট সিইসি’র অপসারণ চেয়েছে। সুপ্রিমকোর্ট এটর্নি ইউনুছ আলী আকন্দ নির্বাচনী তফসিল স্থগিত চেয়ে মামলা করেছেন। খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে পারছেন না। এটর্নি জেনারেল নৌকা পাননি। ভাগ্য খুলেছে, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ডঃ আব্দুল মোমেন-র। আবুল মাল মুহিতের আসনে তিনি মনোনয়ন পেয়েছেন। বদির আসনে আসছেন বধূ, লাউয়ের বদলে কদু। কবি হয়তো এজন্যেই গেয়েছেন, সতীর পুণ্যে পতির পুণ্য? রানার আসনে আসছেন রানার বাবা।

বরিশালে বাপ-বেটা নমিনেশন পেয়েছেন। বাগেরহাট-১ আসনে শেখ হেলাল উদ্দিন, বাগেরহাট-২ এ তদীয় পুত্র শেখ সারহান নাসের তন্ময়। তারানা হালিম নমিনেশন পাননি। সিইসি’র ভাগ্নে এস এম শাহজাদা সাজু নৌকা পেয়েছেন, পটুয়াখালী-৩। খুলনা-১ এ আওয়ামী লীগ পঞ্চানন বিশ্বাসকে মনোনয়ন দিয়েছে। জাতীয় পার্টির সুনীল শুভ রায় বলছেন, তিনি ওই আসনে মহাজোট মনোনীত প্রার্থী? শেখ হাসিনার কানের ডাক্তার প্রাণ গোপাল দত্ত মনোনয়ন না পাওয়াটা আশ্চর্যের বিষয়। ভূমি দস্যু দবিরুল ইসলাম ঠিকই নমিনেশন বাগিয়ে নিয়েছেন।

আওয়ামী লীগ চাইলে এবার ৫০জন হিন্দুকে নমিনেশন দিতে পারতো, দেয়নি কারণ মোল্লাদের চাপ আছে? এতে হিন্দুরা কিছুটা ক্ষুব্ধ। দশম জাতীয় সংসদে মুন্সিগঞ্জ -১ আসন থেকে নৌকা প্রতীকে বিপুল ভোটে জেতেন সুকুমার রঞ্জন ঘোষ। তিনি আউট। চাঁদপুরে সুজিত নন্দীর মনোনয়ন না পাওয়াটা অবাক করা? অসীম উকিল পেয়েছেন নেত্রকোনা-৩ থেকে। যশোর-৪ থেকে ২০ দলীয় জোট থেকে নির্বাচন করছেন, সুকৃতি মণ্ডল। এবারে নির্বাচনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নিরপেক্ষভাবে প্রায় এক শতাধিক হিন্দু তথা সংখ্যালঘু প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। এই সম্পৃক্ততা শুভ লক্ষণ।

পঞ্চগড়-১ আসনে আওয়ামী লীগ মোজারুল হক প্রধানকে মনোনয়ন দিয়েছে। মোজারুল হক হিন্দু সম্প্রদায়ের আতঙ্ক। কিছুকাল আগে তিনি এক জনসভায় হিন্দুদের গরুর মাংস খাইয়েছেন। তার মনোনয়ন বাতিলের দাবি উঠেছে। ওবায়দুল কাদের সিইসি-কে এসকে সিনহার কথা মাথায় রেখে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন পর্যবেক্ষক পাঠাচ্ছে না? আমেরিকা পাঠাচ্ছে?

আওয়ামী লীগে সংখ্যালঘুদের মধ্যে থেকে যারা মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন তাদের মধ্যে উল্লেখ্য হচ্ছে, ঠাকুরগাঁও-২ আসনে প্রবীর রায়; দিনাজপুর-২ এ ডঃ মানবেন্দ্র রায় মানব; ফরিদপুর-১ আসনে ডঃ দিলীপ কুমার রায়; পিরোজপুর-১ এ দিপ্তীশ চন্দ্র হালদার; ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ এ আদেশ চন্দ্র দেব; বাগেরহাট-৪ আসনে প্রবীর রঞ্জন হাওলাদার; বরিশাল-২ আসনে অধ্যক্ষ সুখেন্দু শেখর বৈদ্য; মাগুরা-১ আসনের পঙ্কজ সাহা; মৌলভীবাজার-৪ আসনে রণধীর কুমার দেব প্রমুখ।

চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর পুত্র নওফেল এবার নৌকার মাঝি। গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর সুব্রত ঠাকুর নৌকা পাননি, তিনি মতুয়া। মতুয়াদের এককাট্টা ভোট আছে। সিলেটে সুলতান মনসুর ‘জয় বাংলা; জয় ধানের শীষ’ শ্লোগান দিয়েছেন। জয় বঙ্গবন্ধু হলেই তো ল্যাটা চুকে যায়? বিএনপি-তে এবার “জয় বাংলা, জিয়ার সৈনিক-এক হও, নারায়ে তাকবির-আল্লাহু আকবার, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ, বা সব ধরণের স্লোগান উচ্চারিত হচ্ছে?

ইসি ওয়াজের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারী করেছিলো, সেই নিষেধাজ্ঞা বাতিল হয়েছে। শহীদুল ইসলাম বাবুল নাটোর-১ এ নৌকার মাঝি। স্থানীয়রা জানাচ্ছে, তিনি রাজাকার পুত্র; তার বাবা ছিলেন স্থানীয় শান্তি কমিটির সভাপতি। মাঝির অতীতও নাকি অন্ধকারাচ্ছন্ন। নৌকা এবার হেফাজত, ওলামা লীগ, নব্য জামাত, মাদক ব্যবসায়ী, খুনি, ধর্ম ব্যবসায়ী হাইব্রিড-এ ভরপুর। নৌকা এখন সবার ঠিকানা। তবে হিন্দুদের জন্যে নৌকায় স্থান সংকুচিত হচ্ছে?

যদিও রাজনৈতিক এতিমখানা গণফোরামের দরজা খোলা আছে। যারা সরাসরি বিএনপি করতে চাননা, বা আওয়ামী লীগও নয়, তারা গণফোরাম ভিড় জমাচ্ছেন। চৌকস ক্রিকেটার মাশরাফি নড়াইলে থেকে নৌকায় চড়ে ঢাকা আসতে চাচ্ছেন। আগে তিনি সমালোচনার ঊর্ধ্বে ছিলেন, এখন তার প্রতি মানুষের ভালোবাসা অর্ধেক হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকবে। হেফাজতি মুফতি রুহুল আমিন নৌকা পাননি, ইনি তিনি, যিনি প্রধানমন্ত্রীকে ‘কওমি জননী’ উপাধি দিয়েছিলেন।

ঝালকাঠি-১ আসনে নৌকার মাঝি বজলুল হুদা হারুনের বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল হয়েছে। সাবেক আওয়ামী মন্ত্রী আবু সাঈদ এবার ধানের শীষ নিয়ে পটুয়াখালী-৩ লড়বেন। আরেক মন্ত্রী এ কে খন্দকার-র অবস্থা একই। গোলাম মাওলা রনি তো বলেই দিয়েছেন, আজীবন ধানের শীষে থাকবেন? সুব্রত চৌধুরী ধানের শীষ নিয়ে ঢাকা-৬ থেকে লড়বেন। মৌলভীবাজার-৪ এ শান্তিপদ ঘোষ শান্তির অন্বেষায় মাঠে নেমে পড়েছেন। ইসিতে জামাতের নিবন্ধন বাতিল, কিন্তু জামাত ২৫টি আসনে ধানের শীষ নিয়ে লড়ছে।

দেশব্যাপী নির্বাচনী দামামা বেজে উঠলেও একটি শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে, শেষ পর্যন্ত নির্বাচনটি হচ্ছে তো? বাতাসে অনেক ধরনের থিওরি আছে। তেমনি একটি ভয়ঙ্কর থিওরি হচ্ছে, নির্বাচন বানচাল করতে ভয়াবহ ‘সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা’ ঘটানো হবে? সংখ্যালঘুরা তাই দাবি জানাচ্ছেন যে, প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে নির্বাচনের আগে বা পরে সংখ্যালঘু নির্যাতন রোধের দিক নির্দেশনা থাকতে হবে?

আপনার মন্তব্য

আলোচিত