আহমদ ইমরান

০২ এপ্রিল, ২০১৯ ১৬:২৪

লোভের আগুনে সিলেট মৃত্যুপুরী!

সিলেট ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত। রয়েছে আগুনের ঝুঁকিও। কারণ বেশিরভাগ মার্কেটেই আগুন নিয়ন্ত্রণের যন্ত্রপাতি নেই। এ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বারবার সর্তক করেছেন সিলেটবাসীকে। এছাড়া সিলেটের একাধিক একাধিক মার্কেট, সরকারি-বেসরকারি অফিস ও বাসাবাড়ি ব্যবহারের অনুপযুক্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সেই হিসেব ধরে সিলেটের বিভিন্ন পর্যায়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা করেছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন ও ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স। এরপর এসব ভবন ব্যবহারের অনুপযোগী হিসেবে উল্লেখ করে ভবন মালিক কিংবা মার্কেট সর্তক করেছে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান। এই সর্তকতা দিয়ে দায় সেরেছে কর্তৃপক্ষ। আর ভবন কিংবা মার্কেটের মালিকরা তাদের লাভের আশায় শঙ্কা আর কর্তৃপক্ষের নোটিশ আমলে না নিয়ে মার্কেট বা ভবন ব্যবহার করছেন। ব্যবসায়ীরাও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এসব মার্কেট বা ভবনে নিশ্চিন্তে ব্যবসা করছেন। বসবাসকারী কিংবা মার্কেটের ক্রেতারা অসহায় হয়ে এসব মৃত্যুপুরীতে যাচ্ছেন।

সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক) এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তালিকা অনুযায়ী, সিলেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও ধসে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে ১৯২টি সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ভবন, মার্কেট-শপিংমল, আবাসিক হোটেল, বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও জ্বালানি তেলের স্থাপনা, চার জেলার সব গুরুত্বপূর্ণ (কেপিআই) স্থাপনা। এছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ বা বিএনবিসি আইন না মানায় যে কোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে এমন ২৩টি ভবন রয়েছে সিসিকের তালিকায়।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তালিকানুযায়ী সিলেটের মার্কেট ও শপিংমলগুলোর মধ্যে ২২টি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের অধিক ঝুঁকিপূর্ণ আর ৩২টি ঝুঁকিপূর্ণ। বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও জ্বালানি তেলের ডিপোর মধ্যে ৩টি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ও ৮টি ঝুঁকিপূর্ণ। সাধারণভাবে সন্তোষজনক পর্যায়ে আছে ৬টি। এছাড়া ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ঝুঁকিতে রয়েছে ৪৮টি আবাসিক হোটেল ও বিভাগের চার জেলার ৫০টি কেপিআই স্থাপনা। এসব স্থাপনায় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাসহ বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) আইনও মানা হয়নি।

এরমধ্যে সিলেট নগরীর ওয়েস্ট ওয়ার্ল্ড শপিং সিটি, বু-ওয়াটার শপিং সিটি, সিলেট প্লাজা, আল-হামরা শপিং সিটি, মিতালী ম্যানশন, শুকরিয়া মার্কেট, বন্দরবাজারের মধুবন সুপার মার্কেট, সিটি সুপার মার্কেট, চায়না মার্কেট, খয়রুন ভবন মীরবক্সটুলা, আড়ং নয়াসড়ক, কুদরত উল্লাহ, লন্ডন ম্যানশনের মতো মার্কেটগুলো রয়েছে।

একবার চিন্তা করুন তো এসব মার্কেটে গড়ে প্রতিদিন কত মানুষ যায়। আর কতজন ব্যবসায়ী এসব মার্কেটে ব্যবসা করছেন। যদি কোন দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে কত মানুষের প্রাণহানি হতে পারে। একবার এসব চিন্তা করুন?

তবে আরেকটি কথা হচ্ছে, আমাদের স্বভাব হচ্ছে যতক্ষণ পর্যন্ত কোন ঘটনা না ঘটে। তা নিয়ে আমরা আলোচনা করি না বা আলোচনা করার প্রয়োজন মনে করি না। কেন? অথচ দুর্ঘটনা ঘটার পর গণমাধ্যমে খবর হবে। তখন দেখা যাবে ভবন ব্যবহারের অনুপযোগী ছিল। ভবনে পর্যাপ্ত পরিমাণ নিরাপত্তা ছিল না ইত্যাদি ইত্যাদি। আসলে তখন এসব বলে কিংবা এসব কথা শুনিয়ে কি দায় এড়ানো যায়? হয়তো দায়িত্বপ্রাপ্তরা দায় এড়াতে পারেন, সেজন্য কোনো দুর্ঘটনা ঘটার পর তারা তৎপর হয়ে উঠেন। সংবাদ মাধ্যমের সামনে নিজেদের চেহারা দেখিয়ে অভিযানের ফিরিস্তি দেন। আবার যখন আরেকটি নতুন ঘটনা ঘটে তখন এসব বিষয় আবার তলে পড়ে যায়। এভাবে আর কত?

গত মাসে সারাদেশ জুড়ে প্রায় প্রতিদিনই আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রায় দুই শতাধিক লোকের প্রাণ গেছে। সাথে পুড়ে গেছে সাজানো গোছানো সংসার। এলোমেলো হয়ে গেছে এসব পরিবারের জীবন। এছাড়া অনেকেই হয়েছেন পথের ফকির। গত কয়েকদিনে সিলেটেও দুটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব অগ্নিকাণ্ডে তেমন ক্ষয়ক্ষতি না হলেও মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এসব আতঙ্ক দিন দিন বেড়েই চলেছে। সেই সাথে বাড়ছে কর্তৃপক্ষের ঘুমের পরিমাণও। হয়তো এই ছোটোখাটো আগুন তাদের ঘুম ভাঙানো জন্য যথেষ্ট নয়।

রাজধানী ঢাকায় চুড়িহাট্টা ও বনানীর অগ্নিকাণ্ডের পর ঢাকায় রাজউক অভিযান পরিচালনা করছে। এতে করে নড়েচড়ে বসেছেন ভবন মালিকরা। তারাও তড়িঘড়ি করে ভবনগুলোতে অগ্নিনিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন। তবে সিলেটের এসব ভবনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে একাধিকবার উদ্যোগ নিলেও আলোর মুখ দেখেনি। শুধুই আশ্বাস আর অভিযানের ঘোষণায় সীমাবদ্ধ আছে। কেন, এভাবে নীরব থাকা রহস্যজনক। তবে কি? কর্তৃপক্ষ পোড়া লাশের কর্তৃপক্ষ বসে আছে?

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত