শফিকুজ্জামান চৌধুরী

২০ এপ্রিল, ২০১৯ ১২:৩৮

শীতঘুম তো অনেক হলো!

একটি দেশে শিক্ষার্থীরা শরীরে সফেদ কাপড় জড়িয়ে প্রতিবাদমুখী হয়। প্লেকার্ডে স্লোগান লিখে ‘বিচার চাওয়ার চেয়ে মরে যাওয়া ঢের ভালো’। কতটুকু অসহায় হলে পড়লে এইরকম হতে পারে তা মানুষ মাত্রেই সকলের কাছে অনুমেয়। আর হবেই বা না কেন? আমরা কি পেয়েছি কোন হত্যাকাণ্ডের, কোন ধর্ষণের সুষ্ঠু বিচার? এমন উদাহরণ কি আমরা দেখাতে পারবো যা দেখে অপরাধীরা দ্বিতীয়বার সহস্রবার চিন্তা করে কোন বর্বরোচিত অন্যায় করতে?

আমাদের চারিপাশে পা বাড়ালেই মরার খুলি, গলিত মাংস, আর রক্তাক্ত খণ্ড খণ্ড মাংসের দলা। সবাই দেখছে। সবাই পড়ছে।

প্রতিদিন অনলাইনে, প্রিন্ট মিডিয়ায়, টেলিভিশনে এতো এতো লোমহর্ষক ঘটনা দেখে কারোর পক্ষে মাথা ঠিক থাকার কথা নয়। আর তারা তো ক্ষুদে শিক্ষার্থী। আক্রান্ত তো হচ্ছে তারাই। তাদের যৌক্তিক মানবীয় স্লোগান তাদের বোধে আসাটা খুবই স্বাভাবিক। কারণ রাষ্ট্র তাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। তাইতো তারা রাস্তায় নেমেছে। টি-সার্টে অনেকে লিখছে ‘গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না’।

রাস্তাঘাটে, স্টেশন-প্লাটফর্মে সর্বত্র অভুক্ত শিশুদের আহাজারি। আবার পুরুষের কামনার বলিও হয় এইসব অভুক্ত শিশু। রুগ্ন মায়ের শুকিয়ে যাওয়া স্তন আর বাবাদের কঙ্কালসার শরীর থেকে এখন আর ঘামও বেরোয় না। কৃষকরা মাটি কর্ষণ করে ফসল তুলেছে। তারপর ফসলে আগুন দিয়েছে। কারখানায় শ্রমিকের কালিমাখা মুখে হাজার কষ্টের মধ্যে এক চিলতে হাসি। কারণ তার মেয়েটা স্কুলে যায়। বাড়িতে বউটার মুখে উৎকণ্ঠা আর হাহাকারের শব্দ। কারণ তার মেয়েটার শরীরে কামার্ত কুকুরের হিংস্র থাবা। তাকে রক্তাক্ত করেছে।

ভিসা নিয়ে মায়ের সঙ্গে বাংলাদেশে বেড়াতে এসে একজন বিদেশি কিশোরীর ধর্ষণের শিকার হওয়া- এটা এদেশের জন্য স্বাভাবিক ঘটনা!

এখানে এখন মানুষরূপী ধর্ষকের আসন পাতা সবখানে। বেহুশ ক্ষমতাদর্পী ধর্ষক-মানুষেরা নোংরা আবর্জনা সরিয়ে নিজেদের খাবার টেবিল সাজায়। কারণ উল্লেখিত সব ঘটনা তাদের কাছে নোংরা-আবর্জনা। দুধের উপরের সরটা তারা তুলে নেয় আর আরামসে ঢেঁকুর তুলে গিলে। সেই সব মানুষ যারা মাটি খুঁড়ে তুলে আনা ফসলে নিজের ভাগ নিশ্চিত করতে পারে না তাদের জন্য তারা ফেলে রাখে উচ্ছিষ্ট।

তাদের উদ্দেশে তিনটি প্রশ্ন উত্থাপন করা যায় না- কী, কেন এবং কীভাবে?

রাষ্ট্রের নির্বাহী, আইন, বিচার বিভাগ এই তিনটি স্তম্ভ তাদেরকে পাহারা দেয়। আমাদের এই বিচারহীনতার সংস্কৃতির জন্য দেশে আজ হত্যা-গুম-খুন-ধর্ষণের পোয়াবারো অবস্থা।

আমাদের দরকার এখন একটি সাংস্কৃতিক যুদ্ধের। যে যুদ্ধে শুদ্ধ হবে আমাদের মনন-মগজ।

শীতঘুম তো অনেক হলো। এবার উঠে প্রতিহত করার সময় এসেছে। জাগুন, জেগে উঠুন অনাগত সুন্দর ভোরের জন্য।

  • শফিকুজ্জামান চৌধুরী: সুইডেন প্রবাসী।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত