আলমগীর হোসাইন

১৩ জুলাই, ২০১৯ ১৫:২৬

কয়েকটি সু-খবর, একটি ফেসবুক পোস্ট এবং

আজকাল ফেসবুকে অনেক কিছুই প্রকাশ করা হয়না, এই যেমন পোস্ট করবো করবো করেও নয়ন বন্ডের মৃত্যুর আনন্দটা পোস্ট করা হয়নি। ভাল ইনকাম থাকলে আর সময় পেলে এই খুশিতে মিষ্টি বিতরণ করতাম, কারণ হিংস্ররা মরে গেলে মানুষেরা কিছুটা মুক্তি পায়। ধন্যবাদ জানানো হয়নি মাইকিংয়ের মাধ্যমে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি করে অতঃপর বিনা ঘুষে  সিলেটের ৩৪৮ জনকে পুলিশে চাকরি দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করা সিলেটের পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন সাহেবকে। উনার একটা ছবি দিয়ে স্যালুট জানাতে চেয়েছিলাম। ডাউনলোড করে গ্যালারিতেও রেখেছি কিন্তু কি লিখবো?  আশানুরূপ ভাষা খোঁজে পাওয়ার অভাবে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে পোস্ট করা হয়নি।

এমন কি স্বাগত জানানো হয়নি বিনা ঘুষে চাকরি পাওয়া সারা দেশের নতুন পুলিশ সদস্য ভাই-বোনদের, যাদের কাছে আশা করতেই পারি ঘুষ বিহীন কর্ম জীবন। সিলেটে হাইটেক পার্ক নির্মাণ সম্পন্ন হলে কর্মসংস্থান হবে প্রায় ৫০ হাজার জনের সেই আশার খবরটাও পোস্ট করা হয়নি। পোস্ট করা হয়নি অক্সফোর্ডে বাংলাদেশী মেয়ে আনিশার ভিপি হওয়ার গল্পটাও। অজস্র অরাজকতার ভিড়ে এত গেল কয়টা সু-খবর। হাতে গুনা কয়েকটা সু-খবরতো প্রতিদিন হারিয়ে যায় অসংখ্য অরাজকতার ভিড়ে।

অরাজকতার খবর আর তার বিশ্লেষণের জন্য আজকাল মন সায় দেয়না। কোনটা রেখে কোনটা পোস্ট করবো? ধর্ষণের পোস্ট দিয়ে শুরু করবো? কোন যায়গাটা উল্লেখ করে করবো গার্মেন্টস, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, ট্রেন, লঞ্চ, না বাসের? কত বছর বয়স দিয়ে শুরু করবো? দুই, আড়াই না এর চেয়ে বেশি? সেই বেশিটা সর্বোচ্চ কতো?  সত্তর না আশি?  না তার চেয়ে বেশি? কোন অবস্থা দিয়ে শুরু করবো কলিগের হাতে কলিগ, বসের কাছে কর্মচারী, শিক্ষকের কাছে ছাত্রী, বন্ধু না নিকটা আত্মীয়ের কাছে ধর্ষণের কথা? নাকি সবচেয়ে বড় আশ্রয়স্থল বাবার কাছে মেয়ের ধর্ষণ হওয়ার কথা?

কাকে দিয়ে শুরু করবো?  সম্প্রতি ঢাকার ওয়ারীতে নরপিশাচ হারুনের কাছে ধর্ষিত শিশু সায়মা ধর্ষণের আলোচিত ঘটনা দিয়ে? নাকি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থেকে মেয়েকে ধর্ষণের দায়ে আটক নরপশু পিতা আলাল হুদার কথা দিয়ে? যখন লেখাটি লিখছিলাম তখনো অনলাইনে জুড়ে নতুন কিছু ধর্ষণ, নির্যাতনের খবর। কোনটা রেখা কোনটার প্রতিবাদ করে ফেসবুকে পোস্ট দেবো? যদিও এসব বিকৃত মানসিকতার মানুষদের নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিতেও ঘৃণা হয়। তবু দেই, কারণ ওদের বিচার হওয়া জরুরী।

এদের কারনেইতো দেশে আজ ধর্ষণের মিছিল। এ যেন জ্যামিতিক হারে বাড়ছে ধর্ষণের সংখ্যা। শুধু মাত্র চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত গণমাধ্যমে পাওয়া গেছে ৩৯৬ জন নারী-শিশু হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের খবর। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের তথ্য মতে ২০১৮ সালে শুধু শিশুদের নিয়ে ১হাজার ৩৭টি ইতিবাচক সংবাদের বিপরীতে নেতিবাচক সংবাদ ছিল ২হাজার ৯শত ৭৩টি। এত গেল শুধুমাত্র শিশুদের পরিসংখ্যান বাকি সংখ্যাটা আপনারই ধারনা করুন।

সংবাদের কথা বাদ দিলেও আড়ালে থেকে যায় অসংখ্য ধর্ষণ, নির্যাতনের কথা।  সংবাদের বাহিরের ধর্ষণ বা  নির্যাতনের পরিসংখ্যান কি ভাবে বের করবো? কয়টা জানবো? নারী নির্যাতনের পরিসংখ্যানে ফেনীর নুসরাত, ঢাকা মুগদার হাসি বেগমের কথা সবাই জানি কিন্তু বাকি গুলো এবং সেই অপ্রকাশিত সংবাদ গুলো? যা অজান্তেই রয়ে গেছে আমাদের। এগুলোই শেষ করা যাচ্ছেনা তার মাঝে ইদানীং অরাজকতার পাতায় আরেকটা খবর যোগ হয়েছে। বলাৎকার! তাও মাদ্রাসায়! এসব বিকৃতমনাদের খবর প্রতিদিন ফেসবুকের পাতায় ভাইরাল হয়। যা মানুষ হিসেবে আমাদের জন্য চরম লজ্জা আর অপমানের। কারণ এই নরপশুরা দেখতে অবিকল মানুষের মতো। ভাবছি  আজ কি কোন পাবলিক প্লেসে কোন ধর্ষকের ছায়া মাড়ালাম যার খবর প্রকাশ হয়নি? এমন কারো সাথে হয়তো হ্যান্ডশেক করেছি যার হ্যান্ড হ্যামার হয়ে কিছু পূর্বেও বউকে সাইজ করে এসেছে!

অরাজকতার লাগামহীন মাত্রার বিরুদ্ধে প্রতিদিন কোন না কোন প্রতিবাদে প্রতিবাদ মুখর হয়ে ওঠে ফেসবুকবাসী। একটার পর আরেকটা পোস্ট কাবার করে জাগ্রত ফেইসবুক জনতা। লেখনে ওয়ালাদের ভিড়ে সময়ের অভাবে আমি থেকে যাই একজন দেখনে ওয়ালা দর্শক। তবু এগিয়ে যাই সমস্যা আর সমাধানের সন্ধানে। এগিয়ে যাওয়ার জন্য আর এগুতে পারছিনা। এবার একটু পিছনে যাই। সেই নয়ন বন্ডের কাছে। যার মৃত্যুতে অন্য সবার মতো আমিও খুশি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে নয়ন বন্ডওতো মানুষ ছিল, তার ভেতরেওতো স্বপ্ন ছিল একটি অনাগত সুন্দর জীবনের।

কিন্তু তাকে মানুষ থেকে অমানুষ বানিয়ে দিল কারা? যদিও নয়ন বন্ডের এমন মৃত্যুর জন্য তার কুকর্ম দায়ী, কিন্তু তার এ কুকর্মময় জীবনের জন্য দায়ী আমাদের অসুস্থ রাজনীতির দাবা খেলা।  পাঞ্জার জোর বাড়াতে নেতারা দাবার গুটি হিসেবে একেকটা নয়ন বন্ড বানায়, অতঃপর এরা সমাজের বিষফোঁড়া হয়ে নিন্দার কবলে পড়ে মৃত্যুটাও কলঙ্কিত করে তুলে। কিন্তু এই বিষফোঁড়া উৎপাদের যায়গায় প্রশাসন মলম লাগায় না।  ফলে সমাজে বিষফোঁড়ার সংখ্যা বাড়তেই থাকে।

দেশে যখন বিচারের জন্য হাহাকার ঠিক তখনই ধর্ষকদের বিরুদ্ধে জেগে ওঠে হারকিউলিস, যদিও  বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কিংবা আইন হাতে তুলার পক্ষে গিয়ে হারিকউিলিস বা আইন হাতে তোলে নেওয়ার এ ধরনের গ্রুপকে সমর্থন করতে পারিনা! কিন্তু মনে প্রাণে চাই দেশে এরকম আইন হোক ধর্ষণের প্রমাণে ধর্ষক যাবে ফায়ার স্কোয়াডে অতঃপর লাশের উপরে লাল রক্তে লেখা থাকবে। যদি এভাবে মরতে চাও তবে ধর্ষণ করতে পারো। শুধু ধর্ষণ নয় প্রতিটি হত্যার বিচারেও এমন কঠোর আইন জরুরি।

ঘটনার পরে এবার আসি অঘটনে। এডিটিং করে খুনের গুজব, বা জীবিত ব্যক্তির মৃত্যুর সংবাদ দিয়ে ফেসবুক গরম করা গুজববাজ আজব জাতি আমরা। ফেসবুক গরম করার কোন ইস্যু না পেলে গুজব বানাই। সঠিক খবর না জেনেই অন্যের ফেসবুক পোস্ট দেখে সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের মৃত্যুর মিছিল শুরু করি অতঃপর টিভিতে খবর হয় এরশাদ সাহেব চোখ মেলেছেন, ডাকলে সাড়া দিচ্ছেন। শঙ্কায় আছি সেই সমস্ত মাথা ওয়ালা মানুষদের নিয়ে যারা উদ্বিগ্ন নিজেদের মাথা কাটার ভয়ে।

বুঝ হওয়ার পর থেকে ছোটবেলায় মিথ্যা ভয়ের বোকামির কথা মনে করে হাসতাম। সেই কথা যখন এই সময়ে এসে গুজব রটে, আর গুজব থামাতে সরকার পর্যন্ত নড়েচড়ে বসতে হয় তখন আর হাসি আসেনা। এইসব গুজব বিক্রেতা আর গুজব ক্রেতাদের হাটে মানুষের সংখ্যা হয়তো গুজব মানুষের সংখ্যার চেয়ে কম। ভাবছি আমার আশেপাশেও নিশ্চয় কিছু গুজব মানুষ আছে যারা চিন্তিত মাথা কাটার ভয়ে! আমি চিন্তিত এ সকল বিজ্ঞ মাথা ওয়ালাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে। ভাবছি মহামূল্যবান এই মাথা রেখে এরাও কি ঘুমায়? ভাবছি এরাও কি স্বপ্ন দেখে একটি উন্নত, সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশের। কি ভাবে দেখে?

আলমগীর হোসাইন
শিক্ষার্থী: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় (মাস্টার্স) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ

আপনার মন্তব্য

আলোচিত