শাহআলম সজীব

০৩ ডিসেম্বর, ২০১৯ ২৩:১৯

কর্মীবান্ধব একজন নেতা চাই

অতি সাধারণ কেউ গেছেন বাসায়, তাকেও ঘরে ঢুকার অনুমতি নিতে হয়না। বসার রুম থেকে শুরু করে বাসার ভেতরে প্রায় সব রুমেই নেতাকর্মীদের অবাধ বিচরণ। এমনকি কেউ কেউ রান্নাঘর পর্যন্ত চলে যান কী রান্না হচ্ছে দেখতে। এমনই এক নেতা সিলেট-২ (বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর ও বিশ্বনাথ উপজেলা) আসনের সাবেক সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী।

শফিক ভাইর বাসায় কেউ গেছেন চা-বিস্কিট, মিষ্টি আর ফলমূল না খেয়ে খালি মুখে কেউ ফিরেছেন এমন মানুষ একজনও খোঁজে পাওয়া দুষ্কর হবে। রাতের বেলা কেউ গেছেন, বাসায় যা আছে তাই দিয়েই খেয়ে এসেছেন। না হলে রান্না করান আবার। তার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য কাউকে এক মিনিটও অপেক্ষা করতে হয়না। বাসার ভেতরে অবাধ যাতায়াত সবার।

দলের কেউ অসুস্থ, খবর শুনেছেন। সেটা যতই রাত হোক তবুও তাকে দেখতে ছুটে গেছেন। সিলেটের ওসমানী হাসপাতালে প্রতিদিন কম করে হলেও ২/৩ বার ছুটে যান হাসপাতালে ভর্তি দলের অসুস্থ নেতাকর্মীকে দেখতে। যথাসাধ্য চেষ্টা করেন তাদের সহায়তা করে।

অন্যদিকে সিলেটের যেকোনো উপজেলায় দলের কোন নেতাকর্মী বা তাদের কোন স্বজন মারা গেছেন। খবর শুনে ছুটে গেছেন তাদের বাড়িতে। সান্ত্বনা দিছেন, পরে বারবার ফোন করে খবর নিচ্ছেন। এমন মানবিক এবং কর্মীবান্ধব নেতা সিলেট অঞ্চলে আওয়ামী পরিবারে খুবই কম আছেন।

সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী সভাপতি হবেন কি হবেন না তার সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তবে আওয়ামী পরিবারের একজন কর্মী হিসেবে আমরা এমন কাউকে সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক চাইনা, যিনি স্থায়ীভাবে ঢাকায় থাকেন। সভাপতি হিসেবে এমন কাউকে চাইনা, যিনি দীর্ঘদিন জেলা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা সত্বেও জেলা কমিটির সভায় উপস্থিত থাকতেন না নিয়মিত। সিলেটের সিংহভাগ উপজেলায় সাংগঠনিক সফরে আসার নজির নাই, নিজ এলাকার বাহিরে কর্মীদের সাথে চেনাজানা বা সম্পর্কও নাই; এমন কোন নেতাকেও চায় না তৃণমূলের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।

আমরা চাই কর্মীবান্ধব নেতা, যিনি সার্বক্ষণিক সিলেটে থাকবেন। যিনি দিনে অন্তত দুবার ছুটে যাবেন সিলেট ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি দলের অসুস্থ নেতাকর্মীকে দেখতে। আওয়ামী পরিবারের কেউ মারা গেছে সিলেটের যে প্রান্তে বা যে উপজেলায়, মারা যাওয়া লোকটার পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে ছুটে যাবেন তাদের বাড়িতে। তাদের পাশে দাঁড়াবেন, সহানুভূতি জানাবেন।

পাশাপাশি আরেকটা বিষয়ে অবতারণা করতে চাই। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন। সিলেট -২ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেলেন শফিক ভাই। কিন্তু জোটের শরিক জাতীয় পার্টিও এই আসন চায়। মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন নিজেই সরে দাঁড়ালেন নির্বাচন থেকে। মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিলেন। তিন উপজেলার নেতাকর্মীরা বলেছিলেন নির্বাচন করতে। শফিক ভাই বললেন, আমি নির্বাচন করলে বিজয়ী হবো কিন্তু শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী না হলে আমি শফিক চৌধুরী এমপি হয়ে কী করবো। নির্বাচন এবং গণতন্ত্রের ধারাবাহিতা রক্ষার বৃহৎ স্বার্থে আমাকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে হবে এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে বিজয়ী করতে হবে। গত ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ সংসদ নির্বাচনেও সরে দাঁড়ালেন জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে ছাড় দিয়ে।

দলের জন্যে এমন ত্যাগ তিতিক্ষা কয়জন নেতা করতে পারেন? স্বার্থ যেখানে সবার কাছে আগে, সেখানে শফিক চৌধুরীর ত্যাগ দলের জন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আমরা ত এমনই নেতা চাই, এমন সভাপতি চাই।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

  • শাহআলম সজীব : সদস্য, বালাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ।
  • প্রকাশিত লেখায় মত, মন্তব্য, বিশ্লেষণ লেখকের নিজস্ব, এখানে সিলেটটুডের সম্পাদকীয় নীতির প্রতিফলন নাও প্রকাশ পেতে পারে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত