দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় বইমেলা

 প্রকাশিত: ২০১৬-০১-৩০ ২৩:৪৭:০৯

 আপডেট: ২০১৬-০১-৩০ ২৩:৫১:৩১

সিলেটটুডে ডেস্ক:

ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকে মাসব্যাপী অনুষ্ঠিতব্য বইমেলাকে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় বইমেলা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক।

তিনি শনিবার (৩০ জানুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন,  এবারে যে পরিসরে মেলার আয়োজন করা হচ্ছে তা বইমেলার ইতিহাসে আগে কখনো হয়নি।     

এই মেলা দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় বইমেলা হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক।  

গত বারের মতো এবারও বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলা চলবে। মেলার আয়োজক বাংলা একাডেমির ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে হীরক জয়ন্তী এবারের মেলায় নতুন মাত্রা পেলো।

শনিবার বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. শামসুজ্জামান খান বইমেলার বিস্তারিত জানিয়েছেন।

উদ্বোধন
ড. শামসুজ্জামান খান জানান, পহেলা ফেব্রুয়ারি মেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  এসময়  বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০১৫ প্রদান করা হবে। উদ্বোধনী মঞ্চে সৈয়দ শামসুল হক রচিত এবং বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বঙ্গবন্ধুর বীরগাঁথা বইয়ের ব্রেইল ও অডিও সংস্করণ প্রকাশিত হবে।

বাংলা একাডেমির সভাপতি প্রফেসর এমেরিটাস আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর সহ দেশ-বিদেশের শিল্প-সাহিত্যের গুণীজন।

আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসব
মেলার বিশেষ আকর্ষণ আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসব। এই উৎসবটি আয়োজন করা হয়েছে ৩ ফেব্রুয়ারি। এতে বাংলা ভাষার কবিদের সঙ্গে থাকছেন ব্রিটিশ কবি ও জীবনানন্দ অনুবাদক জো উইন্টার, চেক প্রজাতন্ত্রের লেখক-গবেষক রিবেক মার্টিন, আন্তর্জাতিক প্রকাশনা সমিতির (আইপিএ) এর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক রিচার্ড ডেনিস পল শার্কিন এবং জোসেফ ফেলিক্স বুরঘিনো সহ অন্যান্য কবিরা।

শহীদদের সম্মানে চত্বর
গ্রন্থমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশকে ১৫টি গুচ্ছে সাজানো হয়েছে। এসব চত্বরের নামাঙ্কিত থাকবে ভাষাশহীদ আবুল বরকত, আবদুস সালাম, শফিউর রহমান, রফিকউদ্দিন আহমদ, আবদুল জব্বার, শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরী, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, আলতাফ মাহমুদ, সিরাজুদ্দীন হোসেন, ডা. আলীম চৌধুরী, সেলিনা পারভীন, শিশুসাহিত্যিক সাজেদুল করিম, হাবীবুর রহমান, ফয়েজ আহমদ এবং রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই এর নামে।

শিশুকর্নার
এবার শিশুকর্নার মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে থাকবে। এই কর্নারকে শিশুকিশোর বিনোদন ও শিক্ষামূলক অঙ্গসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। মাসব্যাপী গ্রন্থমেলায় এবারও শিশুপ্রহর ঘোষণা করা হবে।

স্টল ও প্যাভিলিয়ন
একাডেমি প্রাঙ্গণে ৮২টি প্রতিষ্ঠানকে ১১১টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩২০টি প্রতিষ্ঠানকে ৫৪০টি ইউনিট নিয়ে মোট ৪০২টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৫১টি ইউনিট এবং বাংলা একাডেমিসহ ১৪টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে মোট ৬০০০ বর্গফুট আয়তনের ১৫টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

৩০ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলনে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান জানিয়েছেন, ‘গত বছরের তুলনায় এবার প্রায় ১০০টির বেশি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। গত বছর বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সব মিলিয়ে সাড়ে ৫শ স্টল ছিল। এবছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬শ ৫১তে।

লিটল ম্যাগাজিন কর্নার
৯২টি লিটল ম্যাগাজিনকে বর্ধমান হাউজের দক্ষিণ পাশে লিটল ম্যাগাজিন কর্নারে স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ক্ষুদ্র প্রকাশনা সংস্থা এবং ব্যক্তি উদ্যোগে যারা বই প্রকাশ করেছেন তাদের বই বিক্রি ও প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকবে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের স্টলে।

বইমেলায় কমিশন হার
গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বই ৩০% কমিশনে এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫% কমিশনে বই বিক্রি করবে।

একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলা একাডেমির ২টি প্যাভিলিয়ন, একাডেমি প্রকাশিত অভিধান বিক্রয়কেন্দ্র, একাডেমির শিশুকিশোর প্রকাশনা ভিত্তিক বিক্রয়কেন্দ্র এবং একাডেমির সাহিত্য মাসিক উত্তরাধিকার এর বিক্রয়কেন্দ্র থাকবে।

বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ব্যবস্থা
বরাবরের মত এবারও একাডেমি নজরুল মঞ্চে ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের ব্যবস্থা থাকবে।

লেখককুঞ্জ
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে রবীন্দ্র স্মৃতিবিজড়িত শিলাইদহ কুঠিবাড়ির আদলে লেখককুঞ্জ নির্মাণ করা হয়েছে।

মিডিয়া সেন্টার
বরাবরের ন্যায় সংবাদকর্মীদের সংবাদ সংগ্রহ ও পাঠানোর জন্য মেলায় মিডিয়া সেন্টার থাকবে তথ্যকেন্দ্রের উত্তর পাশে।

এটুআই কর্তৃপক্ষ গ্রন্থমেলায় তাদের নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন, তথ্যকেন্দ্রের সর্বশেষ খবরাখবর এবং মেলার মূল মঞ্চের সেমিনার প্রচারের ব্যবস্থা করবে। ওয়াইফাই সুবিধা থাকবে মেলার উভয় অংশে।  

মেলার প্রচার কার্যক্রমের জন্য তথ্যকেন্দ্র থাকবে বর্ধমান ভবনের পশ্চিম বেদিতে এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।

প্রবেশপথ
গ্রন্থমেলায় টিএসসি, দোয়েল চত্বর দিয়ে দুটো মূল প্রবেশ পথ, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে তিনটি পথ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ ও বাহিরের আটটি পথ থাকবে। এবারই প্রথম সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের সুবিধার্থে একটি নতুন সুপ্রশস্ত গেট নির্মাণ করা হয়েছে।   

নিরাপত্তা ব্যবস্থা
গ্রন্থমেলার প্রবেশ ও বাহিরপথে পর্যাপ্ত সংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ পুলিশ, র‍্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাসমূহের নিরাপত্তা কর্মীবৃন্দ। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার জন্য মেলায় এলাকাজুড়ে দু’শতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত বইমেলা
গ্রন্থমেলা সম্পূর্ণ পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত থাকবে। দুটি স্টল-ওয়ারি একটি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র এবং প্রশিক্ষিত অগ্নিনির্বাপক কর্মী থাকবেন।

মেলার সময়সূচী
ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন মেলা চলবে বিকাল ৩টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত। ছুটির দিনে মেলা চলবে সকাল ১১ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত। এছাড়া ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮ টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

পুরষ্কার
অমর একুশে গ্রন্থমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ২০১৫ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগতমান বিচারে সেরা গ্রন্থের জন্য প্রকাশককে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’ এবং ২০১৫ গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে শৈল্পিক বিচারে সেরা গ্রন্থ প্রকাশের জন্য ৩টি প্রতিষ্ঠানকে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেয়া হবে।

এছাড়া ২০১৫ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগত মান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য ১টি প্রতিষ্ঠানকে ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’ এবং এ বছরের মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্টলের নান্দনিক সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে ‘কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ প্রদান করা হবে।
 
প্রতিদিন সন্ধ্যায় মেলার মূল মঞ্চে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।

থাকবেন অভিজিৎ, দীপন ও অনন্ত বিজয় দাশ
২০১৫ সালের বইমেলা থেকে ফেরার পথে ধর্মীয় মৌলবাদী জঙ্গি কর্তৃক খুন হন লেখক, গবেষক, ব্লগার অভিজিৎ রায়। এরপর বইমেলার বাইরে একই চক্রের হাতে খুন হন বিজ্ঞান লেখক, ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ ও জাগৃতি প্রকাশনীর কর্ণধার ফয়সাল আরেফীন দীপন। বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে এ লেখক-প্রকাশকদের উদ্দেশ করে কোন কিছু না থাকলেও অগণন পাঠকের কাছে ভাস্বর হয়ে থাকবেন তারা।  বইমেলায় জাগৃতি প্রকাশনীর স্টল দীপনের কথা জানাবে। ঠিক একইভাবে লেখক-ব্লগার অভিজিৎ রায় ও অনন্ত বিজয় দাশের বইগুলোও জানিয়ে যাবে তাদের উপস্থিতি।

আপনার মন্তব্য