বইমেলার ডায়েরি-২

 প্রকাশিত: ২০১৮-০২-০৩ ০১:৪২:১৪

রেজা ঘটক:

শুক্রবার ছিল অমর একুশে বইমেলার দ্বিতীয় দিন। ছুটির দিন হওয়ায় বইমেলা শুরু হয় সকাল এগারোটায়। এদিন ছিল শিশুদের জন্য প্রথম শিশুপ্রহর। চলে দুপুর ১টা পর্যন্ত। এবারের মেলায়ও প্রতি সপ্তাহে শুক্রবার ও শনিবার শিশুপ্রহর।

শিশুপ্রহরে শিশুদের জন্য প্রকাশনা উৎসব, রচনা প্রতিযোগিতা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, আলোচনাসভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানান আয়োজন ছিল। শিশুদের মনোরঞ্জন করতে সিসিমপুরের বিভিন্ন কার্টুন চরিত্রকে দেখা যায়। শিশু মঞ্চে ইকরি, টিকটিক, হালুমদের সঙ্গে খেলা করছে তারা। স্টলগুলোতেও শিশুদের ভিড়ও ছিলো চোখে পড়ার মতো। স্টলগুলোতে বিকিকিনিও হয়েছে বেশ।

বইমেলায় বরাবরের মতো এবারও শিশু কিশোরদের জন্য আলাদা রাখা হয়েছে শিশু চত্বর। মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের পূর্বপাশে এটির অবস্থান। এখানে শিশুদের জন্য ইন্টারেস্টিং সব নির্মল বিনোদনেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বিকেলে অমর একুশে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘শহীদ নূতন চন্দ্র সিংহ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সজিব কুমার ঘোষ। আলোচনায় অংশ নেন মহীবুল আজিজ, প্রফুল্ল চন্দ্র সিংহ এবং রাশেদ রউফ। এতে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক আবদুল মান্নান।

সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ফাহিম হোসেন চৌধুরী, মিতা হক এবং অণিমা রায়। যন্ত্রানুসঙ্গে ছিলেন বিশ্বজিৎ সরকার (তবলা), রিচার্ড কিশোর (গীটার), সুমন রেজা খান (কী-বোর্ড)।

অমর একুশে গ্রন্থমেলায় দ্বিতীয় দিন নতুন বই এসেছে ৫৪টি। বাংলা একাডেমির জনসংযোগ দফতর থেকে শুক্রবার পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এর মধ্যে গল্প চারটি, উপন্যাস আটটি, প্রবন্ধ তিনটি, কবিতা ১৯টি, গবেষণা দুটি, শিশুতোষ গ্রন্থ তিনটি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে দুটি, ভ্রমণ নিয়ে দুটি, ধর্মীয় একটি, অনুবাদ একটি এবং অন্যান্য নয়টি বই রয়েছে।

আজকে বইমেলায় খুব ঘুরেছি বললে ভুল হবে। বরং বলা উচিত জমিয়ে আড্ডা মেরেছি। এখনো স্টল সজ্জার কাজ শেষ হয়নি। লিটলম্যাগ কর্নার অনেকটা ভূতুরে এখনো। গত বছরের প্রায় দ্বিগুণ ছোটকাগজকে এবার স্টল বরাদ্দ দেওয়ায় বহেরাতলায় আমাদের আড্ডার জায়গাটি একদম নেই বললেই চলে। দুই সারি করে খোঁয়াড় বানিয়ে লিটলম্যাগকে এবার একেবারে গুহায় ঢুকিয়ে দিয়েছে বাংলা একাডেমি।

বইমেলা প্রাঙ্গণে কোনো চায়ের স্টল নাই। শুধু কফি খেয়ে তো আমরা অভ্যস্ত না। তাই যতক্ষণ চায়ের স্টল না পাব ততক্ষণ আমাদের এই বেদনাবোধ একাডেমি বুঝবে না। সারা বছর আমরা কবি-লেখকরা অপেক্ষা করি এই প্রাণের মেলার। একটু আড্ডা হবে, চা হবে, সিগারেট হবে, এসব না হলে আড্ডাও কী আর জমে বলুন?

বাংলা একাডেমি এবার লিটলম্যাগ চত্বরের ম্যানেজমেন্টে এখন পর্যন্ত ফেল মার্কও পায় নাই। মাইনাসে আছে। আশা করি শিঘ্রই একাডেমি বইমেলা প্রাঙ্গণে চা স্টলের ব্যবস্থা করবে। নতুবা আমরা ভাগাভাগি করে কেউ কেটলি, কেউ চা, কেউ চিনি নিয়ে বইমেলায় ঢুকব। আমরা চা বানিয়ে খেতে জানি। বন্ধুদের আড্ডায় আসার আমন্ত্রণ থাকল।

সবাইকে অমর একুশে বইমেলার শুভেচ্ছা। বইমেলা অমর হোক। ভাষা শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা করি। জয়তু অমর একুশে গ্রন্থমেলা। জয়তু ভাষার মাস।
২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

  • রেজা ঘটক: কথাসাহিত্যিক, চলচ্চিত্র নির্মাতা।

আপনার মন্তব্য