বইমেলার ডায়েরি-২৩

 প্রকাশিত: ২০১৮-০২-২৫ ১২:০৪:৩২

 আপডেট: ২০১৮-০২-২৫ ১২:২৯:৫৩

রেজা ঘটক:

শনিবার ছিল চব্বিশে ফেব্রুয়ারি। অমর একুশে বইমেলার শেষ শনিবার। ছুটির দিন হওয়ায় বইমেলা শুরু হয়েছে সকাল ১১টায়। শেষ হয়েছে যথারীতি রাত নয়টায়। ছুটির দিনের কারণে সকালটা ছিল ছোট্ট সোনামণিদের জন্য। বেলা একটা পর্যন্ত ছোট্ট সোনামণিরা বইমেলার মাঠ জমিয়ে রেখেছে। দুপুর গড়িয়ে বইমেলায় বড়দের ভিড় বাড়তে থাকে। তবে শুক্রবারের চেয়ে ভিড় কিছুটা কম ছিল। সে তুলনায় বই বিক্রিও ছিল ভালো। প্রকাশকদের মুখে তাই হাসির রেখাও ছিল বেশ।

শনিবার শ্রাবণ প্রকাশনী প্রকাশ করেছে মফিজ ইমাম মিলন সম্পাদিত 'অক্টোবর বিপ্লবের শতবর্ষ: সমাজতন্ত্রের ভবিষ্যৎ'। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী কামরুল আহসান। তিউড়ি প্রকাশন থেকে প্রকাশ পেয়েছে জেসমিন মুন্‌নীর ভ্রমণগদ্য ‘সুখী মানুষের দেশে’। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী আল নোমান। বইটির মূল্য ১৫০ টাকা।

চৈতন্য থেকে প্রকাশ পেয়েছে কবি শামীম রেজা'র কাব্যগ্রন্থ 'কবিতাসংগ্রহ'। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী সব্যসাচী হাজরা।

আগামী প্রকাশনী থেকে প্রকাশ পেয়েছে সিরাজুল ইসলাম মু‌নিরের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস 'এক সাগর রক্তের বিনিময়ে'। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ-সাহিত্যে এযাবতকালে প্রকাশিত উপন্যাসের মধ্যে ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে’ সবচেয়ে বড় কলেবরের উপন্যাস। এই উপন্যাসের মহানায়ক এক জ্যোতির্ময় পুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। উপন্যাসটিতে ধারাবাহিকভাবে ১৩১টি অন্তর্গত উপাখ্যান বা এপিসোড রয়েছে । বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী ধ্রুব এষ।

গতকালও বইমেলায় অনেক ঘোরাঘুরি আর আড্ডা হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চের পাশে ছিল খেরোখাতা'র আড্ডারুদের বৈঠকি আড্ডা। ওই আড্ডায় অল্প সময়ের জন্য ঢু দেবার সুযোগ হয়েছিল দ্বিতীয় প্রচেষ্টায়। এর বাইরে গোটা সময় গেছে আড্ডা মেরে।

বইমেলায় ঢুকেছিলাম কবি নীলসাধু আর আমি একসাথে। শুরুতে বাংলা একাডেমির বহেরাতলায় লিটলম্যাগ কর্নারে গিয়ে পেলাম মুক্তিযোদ্ধা মহিব-উল ইসলাম ইদু ভাই, সারাহ বন্য, শাফি সমুদ্র, চারু পিন্টু, ঋষি এস্তেবান, ইভা, হাসানআল আব্দুল্লাহ, মাহবুব মিত্র, অজন্তা অনিদ্রিতা, রাবেয়া আকতার ও শামসুদ্দিন হিরা ভাইকে। কিছুক্ষণ আড্ডা মেরে আমরা উদ্যানে গেলাম।

সেখানে প্রথমে দেখা হলো কবি ফরিদ কবির ও মুগ্ধ'র সাথে। দলবেঁধে আমরা মুক্ত মঞ্চে গেলাম খেরোখাতা'র আড্ডা খুঁজতে। খেরোখাতার কাউকে না পেয়ে আবার শ্রাবণে গিয়ে আড্ডা। সেখানে পেলাম লীনা পারভিন, রবীন আহসান, মৃতাঞ্জলি মৃত্তিকা, শামসুন নাহার সুমা, মাসুদ আহমেদ, ফারুক মঈনুদ্দীন ভাইকে। সেখান থেকে গেলাম ঘুড়িতে। পেলাম শিমুল, শামীমা আপাসহ ঘুড়িদের বিশাল টিমকে।

তারপর আবার দলছুট আড্ডা। মাহমুদ হাফিজ ভাইসহ গেলাম বিদ্যাপ্রকাশে। সেখানে পেলাম মোহিত কামাল ও জুলফিয়া ইসলামকে। একটু পরে পেলাম মুর্শিদা রিয়াসাত মণিকে। সেখানে আবার যোগ দিলেন ফারুক মঈনউদ্দীন ভাই। আবার দলছুট। ভিন্নচোখে পেলাম আলী আফজাল খানকে। পথে পেলাম জাকির তালুকদারকে। মাঝখানে দেখা হলো দ্রাবিড় সৈকত ও তার বিচ্ছু বাহিনীর সাথে। কিছুক্ষণ আড্ডা দিল স্বর্ণ আর ওর পা ভাঙা বন্ধু। তারপর সব্যসাচীতে পেলাম সানজানাকে।

এক চক্কর মেরে সাধুদা, কাজী ফয়সল ও লিয়াকত লিকুসহ বাংলা একাডেমি'র স্টলে। বন্ধুদের কিছু দুর্লভ বই কিনলাম। সেখানে দেখা হলো নিশাত মজুমদারের সাথে। তারপর আবার লিটলম্যাগে গিয়ে জম্পেস আড্ডা। এবার যোগ দিল কালের লিখন ও অভি। লিটলম্যাগে আড্ডা শেষে বইমেলা থেকে বের হয়ে সোজা হাকিমচত্বরে এসে আরেকবার আড্ডা।

হাকিম চত্বরের আড্ডা শেষে শাহবাগ এসে পেলাম গুণদাকে। এবার গুণদার কবিতাকুঞ্জ ভ্রমণের ছবি দেখা ও ২১ ফেব্রুয়ারি কাশবনে গুণদার একুশে উদযাপনের গল্প শোনা আর ফুরোয় না। মাঝখানে তপন বাগচী পরিচয় করিয়ে দিলেন দৃষ্টি সম্পাদক বীরেন মুখার্জী'র সাথে। গুণদা আমাকে তার বিচ্ছু বাহিনী না আসা পর্যন্ত আটকে রাখলেন। খাওয়ালেন নারকেল-চিড়া-মিষ্টি।

এরপর আমাদের সাথে যোগ দিল মাহবুব মিত্র ও তার গং। কিছুক্ষণ পর কবি সফেদ ফরাজী ও তার পরিবার। সফেদের মেয়ের নাম মৃত্তিকা মন্ময়। মৃত্তিকা আমাদের রাশিয়া ওয়ার্ল্ড কাপ ফুটবলের টিকিট ধরিয়ে দিয়ে একটা মজার খেলা খেলালো। তখন আমাদের সাথে যোগ দিল ময়মনসিংহ কবিগং। কবি অতনু তিয়াস, কবি শতাব্দী কাদের ও অন্যরা। পরে গুণদা থেকে বিদায় নিয়ে পথে আবার কবি আলতাফ শাহনেওয়াজ ও নাজলা'র সাথে দেখা।

অতনু ছেলের ফোন পেয়ে চলে গেলে শতাব্দীসহ আমরা আরও কিছুক্ষণ আড্ডায় মেতে রইলাম।

অমর একুশে বইমেলার আর মাত্র চার দিন বাকি। বন্ধুরা বইমেলায় আসুন, নিজের পছন্দের বই কিনুন। প্রিয়জনকে বই উপহার দিন। সবাইকে অমর একুশে বইমেলার শুভেচ্ছা। বইমেলা অমর হোক। ভাষা শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা করি। জয়তু অমর একুশে গ্রন্থমেলা। জয়তু ভাষার মাস।
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

  • রেজা ঘটক: কথাসাহিত্যিক, চলচ্চিত্র নির্মাতা।

আপনার মন্তব্য