বিবিসি বাংলা

০৬ এপ্রিল, ২০১৮ ২৩:৩৭

সালমান খান: ‘মানুষ হত্যায়’ ছাড়া, হরিণ হত্যায় সাজা!

ভারতের রাজস্থানের যোধপুরের আদালতে যখন সালমান খানের সাজা হয়, আদালতের বাইরে সেসময় উল্লাস করে মিষ্টি বিতরণ করেছে একদল মানুষ। ওরা রাজস্থানের 'বিশনয়' সম্প্রদায়ের।

১৯৯৮ সালের অক্টোবরে এই সম্প্রদায়ের মানুষই সালমান খান সহ একটি শুটিং ইউনিটের আরও কজনের বিরুদ্ধে দুটি কৃষ্ণ হরিণ - যা চিংকার নামেও পরিচিত - হত্যার অভিযোগে মামলা করে।

চিংকার হরিণ ভারতে সংরক্ষিত প্রাণীর তালিকায়। সে কারণে, সাথে সাথেই সালমানকে তখন গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, যদিও ১০ দিন পর তিনি জামিনে ছাড়া পান।

২০ বছর পর বৃহস্পতিবার সেই মামলায় তার পাঁচ বছর সাজা হলো।

এর মাঝে ফুটপাতে গাড়ি উঠিয়ে মানুষ হত্যার মামলায় তিনি রেহাই পেয়েছেন। কিন্তু দুটি হরিণ শিকারের মামলা তাকে ছাড়েনি।

প্রধান কারণ বিশনয় সম্প্রদায় এই মামলার পেছনে ক্রমাগত লেগে ছিল।

ভগবান বিষ্ণুর পূজারি বিশনয় সম্প্রদায় কয়েকশ বছর ধরে ২৯টি রীতি অক্ষরে অক্ষরে মানার চেষ্টা করে। আর সেই সব রীতির মোদ্দা কথা - প্রকৃতির সুরক্ষা, বৃক্ষ রক্ষা, জঙ্গলের প্রাণী রক্ষা।

বিশেষ করে চিংকার হরিণকে বিশনয় সম্প্রদায় পবিত্র হিসাবে গণ্য করে। এই হরিণকে তারা বলতে গেলে পুজো করে।

প্রাচীন হিন্দু পুরানের এই কৃষ্ণ হরিণের উল্লেখ রয়েছে যে এরা ভগবান কৃষ্ণের রথ টানতো। চিংকারকে মানা হয় বাতাস এবং চাঁদের বাহন হিসাবেও।

বিশ্বাস এবং ভক্তির কারণেই প্রভাবশালী বিশনয় সম্প্রদায় ২০ বছরেও এই মামলা নিয়ে হাল ছাড়েনি। সাথে ছিল প্রাণী ও পরিবেশ সংরক্ষণের আন্দোলনকারীদের সাহায্য।

কোথায় মেলে এই কৃষ্ণ হরিণ?
সংখ্যা দিন দিন কমতে থাকলেও ভারত, পাকিস্তান এবং নেপালে এই হরিণ দেখা যায়।

ভারতের রাজস্থান এবং গুজরাটের মরু এলাকায় এগুলো চেখে পড়ে বেশি।

পুরুষ চিংকারের ওজন বড় জোর ৪৫ কেজি। উচ্চতা ৭৪-৮৮ সেমি। মাদি চিংকার অপেক্ষাকৃত ছোট।

বর্ণচোরা হরিণ
চিংকারের প্রধান বৈশিষ্ট্য এটি রং বদলায়। বর্ষার শেষে পুরুষ চিংকারের রং থাকে কালো। কিন্তু শীতের সাথে সাথে রং হালকা হতে হতে এপ্রিল নাগাদ বাদামি হয়ে যায়।

বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ আরাফ তাহসিন বিবিসিকে বলের এমনকি ব্রিটিশদের সময়ে উদয়পুরে ঝাঁকে ঝাঁকে চিংকার দেখ যেত, কিন্তু এখন সেই দৃশ্য বিরল।

"এরা ঘন জঙ্গলের প্রাণী নয়, সমতলে খোলা জায়গা এদের পছন্দ। যেহেতু এ ধরণের জায়গা দ্রুত মানুষের দখলে চলে যাচ্ছে, ফলে এরা বিপদে পড়েছে"।

দুশ বছর আগে যেখানে ভারতে এই হরিণের সংখ্যা ছিল ৪০ লাখের মত, ২০১০ সালে সেটি নেমে আসে মাত্র ৫০হাজারে । ফলে, চিংকার শিকার পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে ভারতে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত