সিলেটটুডে ডেস্ক

০২ জুন, ২০১৮ ০০:৪২

বাংলাদেশে আর যাবো না: কবির সুমন

দুই বাংলার প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী কবির সুমন। গান লিখেছেন বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে খুন হওয়া ফেলানী খাতুনকে নিয়ে, লিখেছেন নন্দীগ্রাম, শাহবাগ আন্দোলন ও সমসাময়িক বেশ কিছু ঘটনা নিয়ে। এই কবির সুমনই ক্ষোভ আর অভিমানের সুরেই এবার বললেন বাংলাদেশে আর কোনদিন আসবেন না।

সম্প্রতি বাংলাদেশের বেসরকারি টিভি চ্যানেল সময় টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন কবির সুমন। সেই সাথে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বাংলাদেশকে যা চেনার আমি চিনে নিয়েছি।’

তিনি জানালেন, সর্বশেষ তিনি যখন বাংলাদেশে এসেছিলেন, তখন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে তাঁর একক গানের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। কিন্তু কিছু মানুষের বাধার মুখে সেই অনুষ্ঠানে তিনি গান গাইতে পারেননি।

‘বাংলাদেশে আমার সন্তানপ্রতিম কয়েকজন ছেলে চেষ্টা করল আমার একটা একক অনুষ্ঠান করতে। সেটা বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে। তারা হল বুক করল। তাদের হাতে সেই কাগজ ছিল। আয়কর এবং অন্য যা কিছু দেওয়ার, সব তারা দিয়েছে। আমি ঢাকায় গিয়ে জানতে পারলাম, আমাকে ওখানে গান গাইতে দেওয়া হবে না। বাংলাদেশের কারা যেন ওখানে বাধা দিচ্ছে’ বললেন কবির সুমন।

তিনি বললেন, ‘আমার নামে সেখানে বলা হয়- কবির সুমন ভারতের শিল্পী, তাঁকে এখানে গান গাইতে দেওয়া হবে না।’

এই কারণেই আর বাংলাদেশে আসেননি কবির সুমন। আর বাংলাদেশে আসবেন না বলেও মনে করেন এই শিল্পী।

১৯৯৬ এবং ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন এই সঙ্গীত শিল্পী। দুটি সফরই ছিল সঙ্গীত অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে। ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের আমন্ত্রণে করা এই দুটি অনুষ্ঠানে ৫২ লাখ টাকা উঠেছিল জানিয়ে কবির সুমন বলেন, ‘এই টাকাটা তুলেছিলাম মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের জন্য। একটি আমেরিকান পত্রিকা যা কিনা বাংলাভাষা-ভাষিরা বের করেন, সেখানেই টাকার অংকটা দেখেছিলাম। নিজে একটা পয়সাও আমি নিইনি।’

তিনি আরো বলেন, ‘দুটি সংগীত সফরে কষ্ট করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের জন্য টাকা তুলেছি। প্রতিটি শোয়ে আমি পৌনে তিন ঘণ্টা করে আমি গান করেছি। একটি কানাকড়িও নিইনি। কেন নেব? এটা আমার কর্তব্য মনে করেছি। কিন্তু তারা সেসব ভুলে গেছেন। এবার তারা আমাকে আটকে দিলেন। বাধা দিলেন। এরপর আমি আর বাংলাদেশে যাইনি। বাংলাদেশে আর যাব না।’

বাংলাদেশকে ভালোবাসেন উল্লেখ করে কবির সুমন বলেন, ‘আমার দেশ যদি বাংলাদেশ হতো, খুব ভালো লাগত। ওই সময় সুফিয়া কামাল খালাম্মার সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছিল। আমার ভাবতে খুব ভালো লাগে।’

বাংলাদেশ সরকার যদি আপনাকে নেওয়ার ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়, সাংবাদিকের এই প্রশ্নের জবাবে কবির সুমন বলেন, ‘কেন যাব? তখন বাংলাদেশ সরকার কোথায় ছিল? তারা কী করেছিল? তাদের একবারও মনে হলো না, এই লোকটি দুই দফায় এসে টাকা তুলে দিয়ে গেছে ভালোবাসার জায়গা থেকে।’

ভীষণ অভিমান নিয়েই সুমন বললেন, ‘বাংলাদেশ আমার ভীষণ প্রিয় জায়গা, কিন্তু যাবার ইচ্ছে নেই আর। দেখুন আমি আর বেশিদিন বাঁচতে চাই না। বেশিদিন বাঁচার ইচ্ছেও নেই আমার। তবে বাংলাদেশকে আমার চেনা হয়ে গেছে।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত