বিনোদন ডেস্ক

২০ জুন, ২০১৮ ০১:৩৬

‘পরিণতির কাছে নিজেকে সমর্পণ করেছি’

বলিউডের গুণী অভিনেতা ইরফান খান এ বছরের শুরুতে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী। লন্ডনে চলছে তার চিকিৎসা। সম্প্রতি টাইমস অব ইন্ডিয়াকে এক সাক্ষাত্কারে ইরফান জানিয়েছেন, তিনি হাই-গ্রেড নিউরোএন্ডোক্রাইন ক্যান্সারে ভুগছেন। সাক্ষাত্কারে তিনি বলেছেন, ‘এ রোগের নাম আমার শব্দভাণ্ডারের নতুন সংযোজন। দুনিয়ায় এ রোগাক্রান্ত মানুষের সংখ্যা একেবারে নগণ্য। তাই এ রোগ নিয়ে খুব বেশি এখনো জানা যায়নি। এর চিকিৎসাও অজানা। আমি এ রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে গবেষণরাই অংশ।’

হঠাৎ করে জীবনের এ বাঁকবদল নিয়ে ইরফান বলেন, ‘‘আমি ছিলাম এক ভিন্ন দুনিয়ায়। একটা গতিময় ট্রেনে সফর করছিলাম; স্বপ্ন ছিল, নানা পরিকল্পনা, প্রেরণা, লক্ষ্য— এসব নিয়ে মগ্ন হয়ে ছিলাম। তারপর একদিন হঠাৎ কেউ আমার ঘাড়ে হাত রাখল। ঘাড় ফিরিয়ে দেখি ট্রেনের টিকিট চেকার। তিনি বললেন, ‘তোমার গন্তব্য চলে এসেছে, দয়া করে এবার ট্রেন থেকে নেমে যাও।’ আমি দ্বিধা নিয়ে বললাম, না, না। আমার গন্তব্যস্থল এখনো বহুদূর।”

ক্যান্সার জীবন সম্পর্কে ইরফানকে নতুন উপলব্ধিতে পৌঁছে দিয়েছে। বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের পরিসরে মানুষের অস্তিত্ব যে অতিশয় তুচ্ছ, সেটা যেন অনুভব করছেন ইরফান। ক্যান্সারের এ আকস্মিকতায় উপলব্ধি করলাম— “এ সংসার সাগরে আমি অনিশ্চিত স্রোতে ভেসে চলা একটা কর্ক ছাড়া আর কিছু নই। তারপরও আমরা প্রাণপণে এ জীবন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করি।” অসুস্থ অবস্থায় ইরফানের চাওয়া ছিল ভয় আর অনিশ্চয়তা যেন তাকে গ্রাস করতে না পারে। “কিন্তু একদিন ব্যথা আক্রমণ করল। এত দিন ব্যথা কী, শুধু সেটা জানতাম, কিন্তু এবার তার ধরন এবং তীব্রতা টের পেলাম। সান্ত্বনা, প্রেরণা— কোনোটাই আর কাজ করছিল না। আমার কাছে পুরো বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড কেবল ব্যথা। ব্যথাকে তখন ঈশ্বরের চেয়েও বড় মনে হচ্ছিল” — বলেন ইরফান।

লন্ডনে ইরফানের হাসপাতাল ক্রিকেটের মক্কাখ্যাত লর্ডস স্টেডিয়ামের পাশেই। লর্ডস ছিল ইরফানের ছেলেবেলার স্বপ্নের মক্কা। বলেছেন হাসপাতাল আর স্টেডিয়ামের মধ্যে দাঁড়িয়ে নিজের উপলব্ধি সম্পর্কে, ‘‘হাসপাতালে আমার ওপর একটা কোমা ওয়ার্ড ছিল। একবার হাসপাতালে আমার কামরার ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে মনে হলো, জীবন-মৃত্যুর খেলার মাঝে মাত্র একটা রাস্তা আছে। রাস্তার একপাশে একটা হাসপাতাল অন্যদিকে স্টেডিয়াম। ...জীবনে শুধু একটা জিনিসই নিশ্চিত, আর সেটা হলো ‘অনিশ্চয়তা’। এ উপলব্ধিই আমাকে আত্মসমর্পণ করিয়েছে— আজ থেকে চার মাস, আট মাস বা দুই বছর পর যা-ই হোক না কেন, আমি সেই পরিণতির কাছে নিজেকে সমর্পণ করেছি।’’

সংক্ষিপ্ত সাক্ষাত্কার শেষে ইরফান বলেছেন, ‘আমার উপলব্ধি হচ্ছে কর্কের (মানুষ) পক্ষে জীবন স্রোতকে নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজন হয় না। বরং আপনিই প্রকৃতির দোলনায় ধীরে ধীরে দুলছেন।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত