বিনোদন ডেস্ক

১৪ আগস্ট, ২০১৮ ২৩:২০

রাস্তা কারো বাপের না!

ভারতের মুম্বাইয়ের লোকমানিয়া তিলক রোড। শহরের ব্যস্ততম সড়কগুলোর একটি। উল্টো দিক থেকে একটি প্রাইভেটকার সড়কে ঢুকে পড়লে ট্রাফিক সার্জেন্ট থামান গাড়িটিকে। গাড়ির চালককে নমস্কার দিতেই চশমা-পরা সুদর্শন চালক হেসে বলেন, ‘সরি, আমি আপনাকে দেখিনি।’ সার্জেন্টও হেসে বলেন, ‘কিন্তু আমি আপনাকে দেখেছি।’

ওই ট্রাফিক পুলিশ কে জানেন? বলিউড সুপারস্টার অক্ষয় কুমার!

এর পরের গল্প আরো মজার।

সার্জেন্ট খুবই বিনয়ের সঙ্গে চালককে বলেন, ‘আমি আপনার বাবাকে ভালোভাবে চিনি। আপনাকে দেখামাত্র বুঝেছি, আপনি তাঁরই ছেলে। উনি খুবই সম্মানীয় মানুষ। তাঁর সব বই পড়েছি। আমি উনার বড় ভক্ত। আজ সকালেও উনার ছবিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছি।’ নিজের বাবা সম্পর্কে এমন অজানা তথ্য শুনে চমকে যান চালক। ইতস্তত করে বলেন, ‘ছবি? আমার বাবা তো বেঁচে আছেন।’ সড়কের পাশের খুঁটিতে নেমপ্লেট : লোকমানিয়া তিলক রোড। ওইদিকে একবার তাকান সার্জেন্ট। অবাক হয়ে তিনিও বলেন, ‘তিলক?... তিলক সাহেব বেঁচে আছেন?’ চালকের পাশেই বসা ছিলেন তাঁর স্ত্রী। তিনি একবার স্ত্রীর দিকে তাকান। তারপর সার্জেন্টের দিকে তাকিয়ে জানান, তাঁর বাবার নাম রসিকলাল। সার্জেন্ট বলেন, ‘রসিকলাল? এটা আপনার বাবার রাস্তা না? তো, নো-এন্ট্রিতে এন্ট্রি কেন নিয়েছেন?’

চালক ইতস্তত করতে থাকেন। বুঝতে পারেন সার্জেন্টের কথার মর্ম। পুলিশের কাছে ক্ষমা চান। এরপর পুলিশ হেসে তাঁর হাতে জরিমানার কাগজ ধরিয়ে দেন। বলেন, ‘আপনার সুরক্ষার জন্য ট্রাফিক নিয়ম পালন করা জরুরি, ঠিক আছে?’ এরপর তাঁকে গাড়ি ঘুরিয়ে সঠিক রাস্তা দিয়ে যেতে বলেন। চালক নিজে নিজেই বলতে থাকেন, ‘রাস্তা কারো বাবার না।’

ভারতে প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষের প্রাণ যায় সড়ক দুর্ঘটনায়। ট্রাফিক আইন অমান্য ও বেপরোয়া গাড়ি চালানোর ঘটনা অহরহ ঘটে। সড়কে শৃঙ্খলা আনতে ও জনসচেতনতার লক্ষ্যে ভারতের সড়ক যোগাযোগ ও হাইওয়ে মন্ত্রণালয় এই বিজ্ঞাপনটি অনলাইনে ছেড়েছে। যার স্লোগান, ‘সড়ক সুরক্ষা, জীবন রক্ষা।’ ইন্ডিয়ান অ্যাডভারটাইজিং কোম্পানি লিমিটেড (আইএসিএল) একাধিক বিজ্ঞাপন তৈরি করেছে। বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করা হয়, ‘হ্যাশট্যাগ :  ট্রান্সফরমিং ইন্ডিয়া।’

এবার আরেকটি বিজ্ঞাপনের গল্প। এখানেও পুলিশ সার্জেন্ট অক্ষয় কুমার!

শহরের ব্যস্ততম রাস্তার মধ্যেই এক তরুণ মোটরসাইকেল চালাচ্ছে। তার পেছনে দুই তরুণী বসা। কারো মাথায় হেলমেট নেই। ট্রাফিক সিগন্যালে লালবাতি জ্বলছে। সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই তাদের। হাসছে। মজা করছে। লালবাতি উপেক্ষা করে রাস্তা পার হতে চাইছে। এ সময় ট্রাফিক সার্জেন্ট মোটরসাইকেলচালককে থামায়। তার মাথায় হেলমেট।

সার্জেন্টকে দেখে দুই তরুণী মোটর সাইকেল থেকে নেমে যায়। অক্ষয় হেসে বলেন, ‘বসেন ম্যাডাম, বসেন’। তরুণীরা দাঁড়িয়ে থাকে। তারপর মোটরসাইকেলচালক তরুণকে ইঙ্গিত করে দুই তরুণীকে বলেন, ‘এর দিকে তাকান। এর নাক-চোখ দেখুন, অবিকল এর বাবা মেহমুদের মতো।’ চালককে আরো বলেন, ‘আপনার বাবা আমাদের হাসিয়েছেন, কাঁদিয়েছেন, মনোরঞ্জন করেছেন।’ তিনি মেহমুদের একটি গানও গেয়ে শোনান।

মেহমুদ বলিউডের নামকরা কমেডিয়ান। ২০১৫ সালে এই শিল্পীকে স্মরণীয় করে রাখতে মুম্বাইয়ের একটি সড়ক তাঁর নামে নামকরণ করা হয়। যার নাম ‘হাস্যকলাকার মেহমুদ চক।’ এটি শহরতলি জুহুর ১০ নম্বর সড়ক।

যা হোক, ঠিক ওই মুহূর্তে একজন পৌঢ় তরুণের ঘাড় চেপে ধরে বলে, ‘তুই এখানে কী করছিস আর এই মেয়ে দুটো কে?’ অক্ষয় উল্টো লোকটিকে বলেন, ‘কিন্তু ভাইসাহেব, আপনি কে?’ লোকটি উত্তর দেয়, ‘আমি ওর বাবা।’ অক্ষয় তারপর ওই তরুণকে বলেন, ‘তুই উনার ছেলে? মেহমুদের ছেলে না? হাস্যকলাকার মেহমুদের ছেলে না? এটা তোর বাবার রাস্তা না?’ বাইকার মাথা নিচু করে বলে, ‘না’। অক্ষয় তাকে বলেন, ‘তো হেলমেট ছাড়া দুই তরুণীকে পেছনে বসিয়ে বাইক চালাতে তোর লজ্জা করে না?’ এরপর তাকে জরিমানার কাগজ ধরিয়ে দেন। তরুণ নিজে নিজে বলতে থাকে, ‘রাস্তা কারো বাপের না।’

বলিউড তারকা অক্ষয় কুমারের ‘সড়ক সুরক্ষা, জীবন রক্ষা’ বিজ্ঞাপনটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ছে। বিজ্ঞাপনটির বার্তা শুধু ভারতেই নয় পুরো বিশ্বেই পৌঁছে যাচ্ছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত