নিউজ ডেস্ক

২৪ জুলাই, ২০১৫ ০৯:২৪

কিংবদন্তি অভিনেতা উত্তম কুমারের প্রয়াণ দিবস আজ

বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা মহানায়ক উত্তম কুমারের ৩৪ তম প্রয়াণ দিবস আজ। ১৯৮০ সালের এই দিনে সবাইকে কাঁদিয়ে পরপারে পাড়ি জমান এই মহানায়ক। অভিনয়, মেধা ও যোগ্যতাবলে জীবদ্দশায় উত্তম কুমার নিজেকে অন্যরকম এক উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি একাধারে চলচ্চিত্র অভিনেতা, চিত্রপ্রযোজক ও পরিচালক ছিলেন। তার অভিনীত ছবির বেশিরভাগই দর্শকনন্দিত। বিশেষ করে তাঁর ও সুচিত্রা সেনের জুটি আজও স্মরণীয় হয়ে আছে দর্শক হৃদয়ে। বাংলা চলচ্চিত্রের অনেক দিন পার হয়ে গেলেও এই জুটির জনপ্রিয়তাকে এতটুকু স্পর্শ করতে পারেনি অন্য কোন জুটি।

উত্তম কুমার ১৯২৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বের কলকাতার আহিরীটোলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর নাম ছিল অরুণ কুমার চট্রোপাধ্যায়। পরবর্তীতে চলচ্চিত্রে পা রেখে হয়ে যান উত্তম কুমার। তিনি ১৯৩৫ সালে নাটকের দল ‘লুনার ক্লাব’ গঠন করেন এবং ১৯৩৬ সারে চক্রবেড়িয়া স্কুলে পড়ার সময় ‘গয়াসুর’ নাটকে অভিনয় করে প্রশংসা ও পুরস্কার লাভ করেন।

তিনি ১৯৪২ সালে কলকাতার সাউথ সাবারবার্ন স্কুর থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন এবং পরে গোয়েঙ্কা কলেজে ভর্তি হন। কলকাতা বন্দরে চাকরি নিয়ে কর্মজবিন শুরু কররেও গ্র্যাজুয়েট হওয়ার স্বপ্ন তাঁর পূরন হয় নি। সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসে তাকে চলচ্চিত্রে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে।

উত্তম কুমারের প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ছিল ‘দৃষ্টিদান’ এবং এ ছবির মাধ্যমেই তাঁর চলচ্চিত্রে অভিষেক হয়। এরপর একাধিক ছবিতে অভিনয় করে প্রশংসিত হন তিনি। পরবর্তীতে ১৯৫৩ সালে ‘অগ্নিপরীক্ষা’ ছবিতে সূচিত্রা সেনের সঙ্গে জুটি গড়ে অভিনয় শুরু করেন উত্তম কুমার। ১৯৫৩ থেকে ১৯৭৫ সার পর্যন্ত এ জুটি ৩০ টি ছবিতে কাজ করেন। সূচিত্রা সেন ছাড়াও সেই সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী সুপ্রিয়া চৌধুরী, সাবিত্রী চ্যাটার্জী, মাধবী মুখার্জী, শর্মিলী ঠাকুর, অঞ্জনা ভৌমিক, অপর্ণা সেন ও সুমিত্রা মুখার্জীর সঙ্গে জুটি বেঁধেও ব্যাপক সফলতা পান উত্তম কুমার। ১৯৫৬ সালে ‘নবজন্ম’ ছবিতে নিজের কণ্ঠে প্রথম গান গেয়েছেন তিনি।

উত্তম কুমার বহু সফল বাংলা চলচ্চিত্রের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি হিন্দি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছিলেন। তাঁর অভিনীত দিন্দি চলচ্চিত্রের মধ্যে ‘ছোটিসি মুলাকাত’, ‘অমানুষ’ এবং ‘আনন্দ আশ্রম’ অন্যতম। রোমান্টিক নায়ক ছাড়াও অন্যান্য চরিত্রে তিনি ছিলেন অবিস্মরণীয় ব্যাক্তিত্ব। তিনি সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় দুটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন। প্রথমটি ‘নায়ক’ এবং দ্বিতীয়টি ‘চিড়িয়াখানা’।

উত্তম কুমার পরিচালক হিসেবেও সফল। ‘কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী (১৯৮১), বনপলাশীর পদাবলী (১৯৭৩) ও শুধু একটি বছর (১৯৬৬) ছবির সাফল্য তাই প্রমাণ করে।

নিজের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে বাংলা-হিন্দী মিলিয়ে প্রায় ২০৯ টি ছবিতে অভিনয় করেছেন উত্তম কুমার। এর মধ্যে বেশিরভাগই দর্শকনন্দিত ও ব্যবসা সফল। অসাধারণ অভিনয়ের জন্য ভক্ত-দর্শক তাঁকে মহানায়ক উপাধি দিয়েছেন। তাঁর সেরা অভিনয়ের জন্য পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।

এছাড়াও পেয়েছেন দেশ-বিদেশের অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা। ব্যাক্তিগত জীবনে গৌরী চ্যাটার্জীকে বিয়ে করেছিলেন উত্তম কুমার। গৌতম চ্যাটার্জী নামে তাঁর এক ছেরে রয়েছে। ১৯৮০ সালের ২৪ শে জুলাই মাত্র ৫৩ বছর বয়সে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে যান মহানায়ক উত্তম কুমার। মৃত্যুর এত বছর পার হয়ে গেলেও বাংলা চলচ্চিত্রে উত্তম কুমারের জনপ্রিয়তার কাছাকাছিও এখন পর্যন্ত কেউ যেতে পারেনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত