বিনোদন ডেস্ক

০৪ জুন, ২০১৯ ১৯:১৪

মাহফুজুর রহমানের গান শুনতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের দাবিতে মানববন্ধন

বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন বাংলায় ঈদের অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ড. মাহফুজুর রহমান গান গাইবেন। এ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে নানা আলোচনা। এরই মধ্যে মাহফুজুর রহমানের গানের সময় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের দাবিতে রাজশাহীতে মানববন্ধন করেছেন তাঁর ভক্তরা। মঙ্গলবার (৪ জুন) দুপুরে নগরীর আলুপট্টি মোড়ে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।

প্রতিবছরের মতো এবারের ঈদুল ফিতরেও ভক্তদের গান শোনাবেন এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান ড. মাহফুজুর রহমান। ২০১৭ সালে তিনি ঈদুল আজহায় প্রথম গান নিয়ে হাজির হন নিজের মালিকানাধীন টেলিভিশনের পর্দায়। তাঁর কণ্ঠে একক সংগীতানুষ্ঠানটি প্রচারিত হওয়ার পর তা ভাইরাল হয়। শুধু ভাইরালেই শেষ নয়, গান প্রচারিত হওয়ার পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয় আলোচনা। তবে এরই মধ্যে ড. মাহফুজুর রহমানের অনেক ভক্ত গড়ে উঠেছে। যারা তাঁর গানের অনুষ্ঠানের জন্য অপেক্ষায় থাকেন।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহী নগরীর আলুপট্টিতে টেলিভিশনে ড. মাহফুজুর রহমানের অনুষ্ঠান দেখার জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের দাবিতে নয়জন ভক্ত মানববন্ধন করেন। মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন নিরাপদ প্রজন্ম চাই-এর আহ্বায়ক ফয়সাল তানভীর, ইয়ুথ অ্যাকশন ফর সোশ্যাল চেইঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সামিউল শাওন, কবি ও লেখক হুমায়ুন কবির পিন্টু, নিরাপদ প্রজন্মের সদস্য সাইফুর অপু, মিলন, পান্না ও লিটন। আর এই আয়োজনের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ ও প্রচারের প্রত্যাশায় নিরাপদ প্রজন্ম চাই-এর আহ্বায়ক ফয়সাল তানভীর আগের দিন খুদেবার্তা (এসএমএস) পাঠান স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের মুঠোফোনে।

মানববন্ধন চলাকালে বক্তারা বলেন, যে কাউকে নিয়ে ট্রল করাটা আমাদের একটি অসুস্থ মানসিকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংগীত সার্বজনীন। এখানে সব মানুষের বিচরণের অধিকার রয়েছে। কারও গান ভালো না লাগলে তাঁকে এড়িয়ে যাওয়া উত্তম। কিন্তু ট্রল করা সমীচীন নয়।

বক্তারা এ জাতীয় মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে আমাদের আরো সতর্ক থাকা উচিত, যাতে দেশের স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে কোনো গোষ্ঠী বিদ্রুপ করতে না পারে।

মানববন্ধনের আয়োজন করার কারণ হিসেবে নিরাপদ প্রজন্ম চাই সংগঠনের আহ্বায়ক ফয়সাল তানভীর বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি আমাদের দেশের স্বনামধন্য ও প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই ব্যঙ্গ করেন। পৃথিবীর কোনো দেশেই এ ধরনের কালচার নেই। আমরা এই নীতিবাচক কালচার থেকে বর্তমান প্রজন্মকে বের করে আনতে চাই। আমরা কাউকে খুশি করার জন্য এই মানববন্ধন করিনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা যেন যাকে তাকে যখন তখন ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ না করি, মানুষের মাঝে এ ধরনের সচেতনতাবোধ জাগ্রত করতেই আমরা মানববন্ধনের আয়োজন করেছি। আমরা চাই এ ধরনের কালচার থেকে বের হতে। আমরা মানুষকে সম্মান দিতে চাই।

বিডি সার্ভিস ২৪ ডট নেট নামের একটি ওয়েবসাইটের কর্ণধার ফয়সাল তানভীর বলেন, ড. মাহফুজুর রহমানের গান সবার পছন্দ হবে এমন কথা নেই। তাঁর গান যাদের পছন্দ হবে না, তাঁরা গান শুনবেন না। তাই বলে তাঁকে নিয়ে তো আজেবাজে মন্তব্য করা শোভন নয়। শুধু মাহফুজুর রহমান নয়, কারো ক্ষেত্রেই এমনটি হওয়া উচিত নয়। আমরা মানুষের মধ্যে এই বোধ জাগ্রত করতেই মানববন্ধনের আয়োজন করেছি।

নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের দাবি প্রসঙ্গে ফয়সাল তানভীর বলেন, টেলিভিশনে গত বছর মাহফুজুর রহমানের অনুষ্ঠানের দিন অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ ছিল না। ফলে অনেকেই তাঁর অনুষ্ঠান দেখতে পারিনি। যারা টেলিভিশনে তাঁর অনুষ্ঠান দেখতে পারিনি, তাঁরা পরে ইউটিউবে সে অনুষ্ঠান দেখেছেন। কিন্তু সবার তো ইউটিউব দেখার সুযোগ নেই। কারণ, ইউটিউবে অনুষ্ঠান দেখতে হলে ইন্টারনেট খরচ আছে।

দেশের প্রথম স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান ড. মাহফুজুর রহমান। এটিএন নিউজেরও চেয়ারম্যান তিনি। একসময় তিনি ছিলেন সফল পোশাকশিল্প ব্যবসায়ী। একাধিকবার জাতীয় রপ্তানি ট্রফিও পেয়েছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত চ্যানেল এটিএন বাংলা পেয়েছে এমি অ্যাওয়ার্ডসহ বহু পুরস্কার। গান গাইতে ভালোবাসেন তিনি।

ঈদের তৃতীয় দিন রাত সাড়ে ১০টায় এটিএন বাংলায় ড. মাহফুজুর রহমানের একক সংগীতানুষ্ঠান প্রচারিত হবে। অনুষ্ঠানের নাম ‘মন থেকে রইল শুভ কামনা’। অনুষ্ঠানের ১০টি গানের রেকর্ডিং ও ভিডিও ধারণ শেষ হয়েছে। বিশ্বের নানা দেশের বিভিন্ন স্থানে গানের দৃশ্যায়ন ধারণ করা হয়েছে।

২০১৬ সালে মাহফুজুর রহমান ‘হৃদয় ছুঁয়ে যায়’ শিরোনামে প্রথম একক গানের অনুষ্ঠান করেন। ২০১৭ সালের ঈদুল ফিতরে প্রচারিত হয় তাঁর গান নিয়ে অনুষ্ঠান ‘প্রিয়ারে’। একই বছর তাঁর একক সংগীতানুষ্ঠান ‘স্মৃতির আলপনা আঁকি’ ব্যাপক আলোচিত হয়। গত বছর তাঁর একক সংগীতানুষ্ঠান ‘বলো না তুমি কার’ এটিএন বাংলায় প্রচারিত হয়।

তবে ড. মাহফুজুর রহমানের গাওয়া গান নিয়ে যাঁরা সমালোচনা কিংবা আলোচনা করেন, এসব নিয়ে একদমই চিন্তা করেন না তিনি। তিনি বলেন, ‘বিশেষ একটা শ্রেণি আছে, যারা সব সময় আমার পেছনে লেগে থাকে। আমি ভালো করলেও পেছনে কথা বলে, আবার খারাপ কিছু করলেও করে। আমি ব্যক্তিগতভাবে ফেসবুক পছন্দ করি না। ফেসবুকের ইতিবাচক অনেক ব্যাপার আছে। কিন্তু তরুণ প্রজন্ম এটার অপব্যবহার বেশি করছে।’

মাহফুজুর রহমানের গাওয়া উল্লেখযোগ্য গানগুলো হলো ‘স্মৃতির আলপনা আঁকি’, ‘কত সুন্দর তুমি’, ‘একা থাকার যন্ত্রণা’, ‘একটা মন দাও’ ইত্যাদি।

গান গাওয়ার পাশাপাশি মাহফুজুর রহমান ‘স্মৃতির আলপনা আঁকি’ শিরোনামে একটি উপন্যাসও প্রকাশ করেছেন। এ ছাড়া ‘ভালোবাসি তোমাকে’, ‘আরো সাবধান’, ‘বিদ্রোহ চারিদিকে’ এই চলচ্চিত্রগুলোর গল্প তাঁর লেখা ছিল।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত