সিলেটটুডে ডেস্ক

০৮ ডিসেম্বর, ২০১৯ ১৩:৩৬

প্রস্তাবিত চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন দমনমূলক হতে যাচ্ছে

ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশ এর আয়োজনে ‘চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন ২০১৯’এর খসড়াপাঠ ও বিচার সভায় বক্তারা বলেছেন, প্রস্তাবিত ‘চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন- ২০১৯ দমনমূলক একটি আইন হতে যাচ্ছে, যা চলচ্চিত্র-সংস্কৃতির জন্য ভীষণ বিপদজনক হবে। প্রস্তাবিত এই আইনটি নিয়ে অধিকতর বিচার-বিশ্লেষণ হওয়া জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন।

শনিবার (৭ ডিসেম্বর) বিকালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশ (এফএফএসবি) আয়োজনে প্রস্তাবিত ‘চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন ২০১৯’ এর খসড়াপাঠ ও বিচার বিষয়ক একটি জাতীয় সভায় বক্তারা এমন মন্তব্য করেন।

ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজের সভাপতি স্থপতি লাইলুন নাহার স্বেমির সভাপতিত্বে সভায় দেশের ৪০টি চলচ্চিত্র সংসদের প্রতিনিধিগণ ছাড়াও তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা, চলচ্চিত্র শিক্ষক, চলচ্চিত্র গবেষক ও চলচ্চিত্র কর্মীগণ অংশগ্রহণ করেন।

ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ও ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি বেলায়াত হোসেন মামুন ‘চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন ২০১৯’ এর খসড়াপাঠ করেন। পাঠ শেষে তিনি প্রারম্ভিক আলোচনার সূত্রপাত করেন। বেলায়াত হোসেন মামুন তার প্রারম্ভিক আলোচনায় বলেন, বাংলাদেশের সকল চলচ্চিত্র বিষয়ক আইনের একটি প্রধান সমস্যা হলো এই আইনগুলো সবই প্রণীত হয়েছে চলচ্চিত্র নির্মাতা ও কর্মীদের স্বাধীনতাকে সীমিত করবার অভিপ্রায়ে। এই প্রবণতার শুরু হয় ১৯১৮ সালে প্রণীত সিনেমাটোগ্রাফ আইনের সূত্র ধরে। ব্রিটিশ কলোনিয়াল শাসনের সময় ব্রিটিশ সরকারের যে মনোভাবে স্থানীয় মানুষদের শাসন ও নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনায় আইন প্রণীত হয়েছে, সেই একই ধারা আমরা পাকিস্তান পর্বে প্রণীত আইন এবং বাংলাদেশ পর্বে প্রণীত আইনে দেখতে পাচ্ছি। প্রস্তাবিত চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইনটিও সেই একই ধরণের দমনমূলক আইন। এই আইনটির মধ্যে চলচ্চিত্র নির্মাতা বা কর্মীর মত ও অভিব্যক্তি প্রকাশের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করা হয়েছে, যা আমাদের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। এই আইন অধিকতর আলোচনা-পর্যালোচনা ছাড়া গৃহীত হওয়া উচিত নয়।

সভায় আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান, চলচ্চিত্র গবেষক আ আল মামুন। তিনি বলেন, শিল্পীর স্বাধীনতার বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব না দিতে পারলে আমরা কোনোভাবেই উন্নতি করতে পারবো না। কিন্তু দুঃখজনক হলো বাংলাদেশে তা দেখা যায় না। বর্তমান বিশ্ব মানুষের স্বাধীনতার পরিসরকে ক্রমাগত বৃদ্ধি করবার চেষ্টা করছে। সেখানে আমরা যদি আমাদের শিল্পীদের, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও কর্মীদের স্বাধীনতার পরিসরকে সংকুচিত করি তবে আমরা উল্টো পথে আছি বলতে হবে। বর্তমান সকল আইনকেই আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বিচার করতে হবে। বর্তমানে চলচ্চিত্রের যে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ তা আমাদের বিবেচনায় নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাতা ও কর্মীদের অবাধ সৃষ্টিশীলতার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্রের কাজ হওয়া উচিত শিল্প ও শিল্পীকে সহযোগিতা করা, তাকে বাধা দেয়া নয়।

জ্যেষ্ঠ চলচ্চিত্র সংসদকর্মী ও এফএফএসবি এর সাবেক সভাপতি সিরাজুল ইসলাম খান বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়েছি একটি গণতান্ত্রিক ও অবাধ সার্টিফিকেশন পদ্ধতির। আমরা চেয়েছি সেন্সর বোর্ডের মত পশ্চাৎপদ পরিস্থিতি থেকে মুক্ত হওয়ার। কিন্তু দুঃখজনক হলো যে আইনটি সরকার প্রস্তাব করেছে তা পাঠে আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি এটা আগের যে কোনো আইনের থেকেও বেশি দমনমূলক আইন। এখানে রেটিং প্রস্তাব করা হয়েছে ঠিক, কিন্তু এর পাশাপাশি চলচ্চিত্রকে কর্তন, বাতিল ও আইনগতভাবে হয়রানির সকল ব্যবস্থা প্রবলভাবে উপস্থিত আছে। তাহলে এটা কেমন সার্টিফিকেশন হলো?

এফএফএসবি-এর সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের সাবেক সভাপতি বিপ্লব মোস্তাফিজ বলেন, এই আইনটির বিষয়ে বলতে গেলে বলতে হয় এ আইন চলচ্চিত্রের ভালোর জন্য প্রস্তাব করা হয় নি। এই আইন আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে আর সকল চলচ্চিত্র নির্মাতা ও কর্মীকে আরও অসহায় করে তুলবে। তাই এই আইনকে আমাদের মনোযোগ দিয়ে বিচার করা উচিত। যে আইন চলচ্চিত্র-সংস্কৃতিকে অবাধ না করে বেঁধে ফেলতে চাইতে পারে তাকে গ্রহণ করবার কোনো কারণ দেখি না।

সভায় আরও দেন ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক অদ্রি হৃদয়েশ, রণেশ দাশগুপ্ত চলচ্চিত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক রিপন কুমার দাশ, নারায়ণগঞ্জ ফিল্ম সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক কাজী জাহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ ফিল্ম ইন্সটিটিউট অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ইমতিয়াজ পাভেল প্রমুখ। তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের মধ্যে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সাকী ফারজানা, পার্থিব রাশেদ, কাজী আতিকুল ইসলাম অভি, তানভীর আহমেদ মুন্না, রুমকি রুসা, কামরুন নাহার মুন্নী প্রমুখ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত