মনজুর কাদের চৌধুরী

১৭ অক্টোবর, ২০১৫ ১৩:৪৯

একটি বাচ্চা কাছিম ও কিছু ভালোবাসার গল্প

মোহাম্মদ জসিম হক। পড়েন সিলেট এম.সি.কলেজের ইংরেজি সাহিত্য বিভাগে। থাকেন সিলেটের মিরাপাড়ায়  একটি মেসে। ভোরে হাঁটাহাঁটি  বহুদিনের অভ্যাস ।যথারীতি বৃহস্পতিবার বেরিয়েছেন হাটতে। মিরাপাড়া মসজিদ পাড়ি দিয়েছেন।হঠাত দেখেন রাস্তায় একটি কচ্ছপের বাচ্চা হাঁটছে। তিনি আমাদের মতোই এক প্রানীপ্রেমী বা তথাকথিত বিদঘুটে মানুষের মতে পাগলই।

যেকোনো সময় প্রাণ হারাতে পারে কচ্ছপটি। গাড়ির নিচে চাপা পড়তে পারে রাস্তায় অসংখ্য কুকুরও আর মানুষরূপী ভক্ষকগুলো তো আছেই।
তিনি কচ্ছপটি নিজের কোলে তুলে নিলেন। নিজের কাছে রাখলেন।কিন্তু কি করবেন এটাকে?

উনার এক বান্ধবী মারফত সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ এবং প্রাণী অধিকার সংগঠন প্রাধিকারের  কথা জানতে পারলেন। ফেইসবুকে পেইজ আছে,এটা যেনে যোগাযোগ করলেন। আমি ছিলাম ৯-৫ টার ক্লাস । মনটা পড়ে রইছে ঐখানে। কি অবস্থা ছোট্ট কাছিমটির।

বিকেলে আমি যোগাযোগ করি ভূমি সন্তান বাংলাদেশের সমন্বয়কারী আশরাফুল কবির ভাইয়ের সাথে। প্রকৃতির জন্য পাগলপ্রায় একজন মানুষ। তিনি সব কাজ ফেলে ছুটে আসেন। আমি,আশরাফ ভাই এবং শোয়েব  ভাই মিলে ছোট্ট কচ্ছপ্টটিকে উদ্ধার করতে যাই। গিয়ে সুস্থই পাই এটিকে।

আমি চিহ্নিত (identified) করি এটা Lissemys punctata andersoni  (Spotted flap shell turtle) শুনধি কাছিম। এটি আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে  পাওয়া যায়। যেহেতু এটা omnivore , so কিছু মাছ খাবার হিসেবে দিয়েছি।

একজন বন অফিসারের পরামর্শ নিই। এটাকে তিনি খাদিমনগর বা টিলাগড় অবমুক্ত করার জন্য পরামর্শ দেন। কিন্তু এটি একা। আমি প্রথমত তার survivality নিয়ে ভাবতেছি। দ্বিতীয়ত breeding ই যদি করতে না পারে তাহলে অবমুক্ত করে কি হবে?? তৃতীয়ত ওটা অপ্রাপ্তবয়স্ক , তাই আরও আছে এ এলাকায়।

সারা রাত ভেবে এবং পরামর্শ কারীদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হয় হাওড়ে অবমুক্ত করা হবে।কিন্তু তার বড় হাওড়গুলো অনেকদূর। এরই মাঝে চিন্তা করি রাতারগুল ছাড়া যায় কিনা? যোগাযোগ করি রাতারগুল সবুজ-বিপ্লব সমিতির সভাপতি মুখলেসুর রহমান ভাইয়ের সাথে। তিনি জানান মাঝে মাঝে ঐ এলাকায় কাছিম দেখা যায়।

শুক্রবারে আমি, আশরাফ ভাই, জনি ভাই মিলে এটাকে অবমুক্ত করতে রওয়ানা হই। আমাদের সাথে যোগ দেন আরেক প্রাধিকারিয়ান শাহরুল আলম। গ্রিন এক্সপ্লোর সোসাইটির অরচিসমন দত্ত, সুব্রতসহ অনেকে।  রাতারগুল সবুজবিপ্লব সমিতির সহায়তায় আমরা কাছিমটি অবমুক্ত করি।

উল্লেখ্য যে মিরাপাড়ায় আমরা আরও কিছু কাছিমের সন্ধান পেয়েছি। শহুরে দালানের তাণ্ডবে আর মানুষের অত্যাচারে এগুলো বছর খানেকের মাঝে হারিয়ে যাবে। আশা করি বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় এগিয়ে আসবে। এ গুলোও রাতারগুল অবমুক্ত করে রাতারগুলকে জীববৈচিত্র্যের আধার করতে পারব। যদিও রাতারগুলের হৃদপিণ্ডে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বানানো ওয়াচ টাওয়ার জীব বৈচিত্র্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আশা করি বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় আমাদের সহায়তা নিয়ে পূর্ণ উদ্যমে কাজ শুরু করবে।আমাদের নিজেদের বাচার জন্য , পৃথিবীকে বাসযোগ্য করার জন্য প্রাণীদের প্রতি ছড়িয়ে দেই আমাদের উষ্ণ ভালোবাসা।


লেখক: পাবলিক রিলেশন সেক্রেটারি , প্রাধিকার।।
 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত