সামিউল্লাহ সমরাট

২৯ ডিসেম্বর, ২০১৪ ২৩:৫৮

বাবুল তংলার বাঁশি; ট্রেন থেকে ট্রেনে

রেলগাড়ির ঝমঝমা ঝম আওয়াজ ভেদ করে বাঁশির সুর কানে আসছে । মোহনীয় সে সুর...

সিলেট থেকে শ্রীমঙ্গল যাচ্ছি । কুলাউরা স্টেশন ছেড়ে এলাম । রেলগাড়ির ঝমঝমা ঝম আওয়াজ ভেদ করে বাঁশির সুর কানে আসছে । মোহনীয় সে সুর। মাথা তুলে এদিক ওদিক উঁকি দেই। এই বগির উত্তর প্রান্তে মধ্যবয়স্ক এক লোক একটি ছেলের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে । বাঁশি বাজাচ্ছে সেই ছেলেটিই । আমি  কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলাম। 

ট্রেনে এরকম দৃশ্য অহরহ মিলে যায়। তবুও কৌতূহল। ওরা হাঁটতে হাঁটতে আমার কাছাকাছি চলে এসেছে । হাতের ইশারায় থামালাম। বাঁশি থেমে নেই । অতি পরিচিত কিছু লোকগানের সুর একটার পর একটা তুলে চলেছে। লক্ষ্য করে দেখলাম ছেলেটির চোখ বন্ধ। ওকে ধরে রাখা লোকটিকে জিজ্ঞেস করে জানলাম তিনি ছেলেটির বাবা। নাম রাখাল তংলা। ছেলের নাম বাবুল তংলা । বাবুল তংলা জন্ম থেকেই অন্ধ। বয়স আনুমানিক ১৮, শারীরিক উচ্চতায় খুব একটা বেড়ে উঠেনি। আশে পাশের যাত্রীগণ বেশ অবাক হয়েই তার বাঁশি শুনছে। পেশাদার বংশীবাদকের মতই বাঁজিয়ে চলেছে ।  


জানা গেল দীর্ঘদিন থেকেই পিতা পুত্র এভাবেই ট্রেন থেকে ট্রেনে বাঁশি শুনিয়ে যাচ্ছেন যাত্রীদের। যাত্রীদের দেয়া অল্প কিছু টাকাই তাদের আয়ের পথ। রাখাল তংলা কুলাউড়া উপজেলার গাজিপুরা এলাকার চা শ্রমিক। এলাকার গান বা কীর্তনের দলের বাদর। তার কাছ থেকেই বাঁশি শিখেছে বাবুল। অন্ধ ছেলের উপর নির্ভর করে কেন নিজে কিছু করছেন না এ প্রশ্নের উত্তরে রাখাল তংলা যেন লজ্জাই পেলেন, বললেন ছেলেকে বাড়িতে রাখা যায়না, কেউ না কেউ বাঁশি বাজানোর কথা বলে সাথে নিয়ে যায়। এভাবে প্রায়ই সে হারিয়ে যায়। খুঁজে পাওয়া যায়না, সে আরেক বিড়ম্বনার গল্প। একদিন এক পুলিশ কর্মকর্তা বাবুলকে চোখে চোখে রাখার পরামর্শ দেন। কিন্তু বসে থাকলে তো আর সংসার চলেনা। তাই ছেলের বাঁশিই তার সম্বল।  


আপনার মন্তব্য

আলোচিত