আসাদুজ্জামান, ফ্রান্স থেকে

১৩ জানুয়ারি, ২০১৬ ২০:৩১

‘পিঁয়ের লন্তুস’ শান্তির বার্তা বহন করে চলা এক আড়ালের মানুষ

পিঁয়ের লন্তুস (Pierre Lantuas) জন্ম ১৯৮৫ সালের ১৩ জানুয়ারি প্যারিসে। সেখানেই ছোটবেলা কেটেছে এবং বেড়ে উঠা। বর্তমানে বসবাস করছে ফ্রান্সের মার্সেই শহরে। পেশায় একজন শিক্ষক,পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মানুষকে ফ্রেঞ্চ ভাষা শিক্ষা দেন।

বয়স ২০ এর কোটা পেরোনোর পর আমেরিকাতে গমন এবং সেখানেই “শ্রী চিন্ময় ওয়াননেস-হোম পিস রান” সংগঠনের সাথে পরিচয়। তাঁদের কার্যক্রম দেখে ভাল লেগে যায় এবং সেই থেকে হয়ে যান তাঁদের একজন। সেই থেকে চলছে শান্তির বার্তাবাহী মশাল হাতে বিশ্ব শান্তি এবং ভ্রাতৃত্বের বার্তা বহন করে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার কাজ।

আজ থেকে ৯ বছর পূর্বে ২০০৬ সালে প্রথমবারের মত “পিস রানে” ১ সপ্তাহের জন্য অংশগ্রহণ করেন। সেই সময় পরিভ্রমণ করেন নর্দার্ন লাইট এলাকা। এরপর থেকে প্রতিবছর চলতে থাকে পৃথিবীর মানুষের কাছে শান্তি আর ভ্রাতৃত্বের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার কাজ।

২০০৭ সালে পর্তুগাল দিয়ে শুরু তারপর ৩ মাসে দৌড়ান স্পেন, মরক্কো, ইতালি, বেলজিয়াম, গ্রীস, হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া, অস্ট্রিয়া। এভাবেই চলে আসছে আজ অবধি। সর্বশেষ ছিল ২০১৫ এর জুলাই মাসে পুরো আইসল্যান্ড পরিভ্রমণ।

এবার কিছু অভিজ্ঞতা তাঁর নিজের ভাষায় শুনা যাক- দৌড়ে থাকাকালীন সময়ে রাতে থাকার জন্য বেছে নেয়া হয় স্কুল ঘর,স্পোর্টস ক্লাব,অথবা সরকারী অফিসের কোন কামরা। বেশী মানুষ হলে কামরার সংখ্যা বৃদ্ধি পায় না হলে একটিতেই সবাই একসাথে থাকি। নিজেদের রান্নাবান্না নিজেরাই করে খাই সবসময়,মাঝেমধ্যে বাইরের। বেশিরভাগ দেশের মানুষই ভালভাবে গ্রহণ করে আমাদের বার্তাকে,মাঝেমধ্যে দু একটি দেশ ব্যতিত।

প্রতিদিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে সকাল ৯ টার ভিতরেই দৌড় শুরু করতে হয়। আমরা একেকজন গড়ে প্রতিদিন ২০ কিলোমিটার মত করে মোট ১৫০ কিলোমিটার মত দৌড়াই,তবে কেউ চাইলে আরও বেশিও দৌড়ায়। যখন একজন একটু হাঁপিয়ে যাই তখন আমরা আলোর মশালটি একজন থেকে অন্যজনে বদল করি,এটাই হচ্ছে ভ্রাতৃত্বের নিদর্শন। আর আমরা প্রধানত স্কুলের ছোট ছোট বাচ্চাদের কাছে আমাদের শান্তির বার্তাটি পৌঁছে দিতে সবচেয়ে বেশি চেষ্টা করি।

পথিমধ্যে স্কুলের বাচ্চাদের নিয়ে বিভিন্ন খেলার আয়োজন করি। খেলার আনন্দের সাথে সাথে তাঁদের কাছে বিশ্ব শান্তির বার্তা পৌঁছানোর চেষ্টা করি আমরা। বৃষ্টি হোক,অথবা অন্য কোন বাধা আমরা আমাদের প্রতিদিনের দৌড় সম্পন্ন করি প্রতিদিন।

আর সর্বশেষ আইসল্যান্ড আমাদের জন্য খুবই উপভোগ্য ছিল। খুব সুন্দর দেশ,জনসংখ্যা খুবই কম,যেখানেই গেছি সবাই আমাদের খুবই উষ্ণভাবে গ্রহণ করেছে। আমরা আইসল্যান্ডের রাজধানী রেইকিয়াভিক থেকে জুলাই ১ তারিখে যাত্রা শুরু করে পুরা আইসল্যান্ড পরিভ্রমণ করে শেষ করি জুলাইয়ের ২৪ তারিখ। পথিমধ্যে কিছু জায়গায় দৌড়ানো একটু দুষ্কর ছিল তা ব্যতিত আর কোন সমস্যা হয়নাই। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে সবাই আমাদেরকে খুবই আন্তরিকভাবে গ্রহণ করেছিল সেখানে।

ওই বছরের এপ্রিলের ১ তারিখ থেকে শুরু হবে ২০১৬ এর প্রথম যাত্রা। শান্তির বার্তাবাহী মশাল হাতে দীর্ঘ ৬ মাসে দলের সাথে পরিভ্রমণ করবেন আমেরিকা,মেক্সিকো এবং কানাডা।তারপর ফিরবেন নিজ দেশ ফ্রান্সে।

বিশ্ব থেকে এই যুদ্ধ নামের বিভীষিকা দুর হোক,বিশ্বের সবার মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ দৃঢ় হোক। বিশ্ব থেকে হানাহানি উঠে গিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা পাক। তাঁর এবং “পিস রান” এর শান্তির বার্তা বিশ্বের সবার কাছে পৌঁছাবে,এই বিশ্বাস মনেপ্রাণে করি। একদিন বিশ্বের সবাই মিলেমিশে একসাথে শান্তিতে বসবাস করব এই আশা রাখি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত