নিজস্ব প্রতিবেদক

২১ এপ্রিল, ২০১৬ ১৫:৩৯

মতিউল বারী খুর্শেদ : ‘জীবনের স্পর্ধা দেখে নত হোক প্রাণহারী যম’

মতিউল বারী চৌধুরী খুর্শেদ। নাম শুনলেই সদা হাস্যোজ্জ্বোল তারুণ্যদিপ্ত একটি মুখ চোখের সামনে ভেসে ওঠে। ভেসে ওঠে কর্মবীর একটি মানুষের মুখ। জীবনভর নানা ঝড়ঝঞ্ঝা সামলে যিনি এগিয়ে গেছেন অভীষ্ঠ লক্ষ্যের দিকে। অবিচল থেকেছেন নিজের আদর্শ আর নীতির পথে।

মতিউল বারী খুর্শেদের নানাবিধ পরিচয়। কোন পরিচয়টা আগে দেওয়া যায় সেটা নিয়ে দ্বন্দ্বে পরতে হবে যে কাউকে। তিনি একাধারে সাবেক ছাত্রনেতা, ব্যাংকার, সাংবাদিক এবং সমাজকর্মী। তাঁর কর্মপরিধি ব্যাপক ও বৈচিত্রময়।

নিজের কর্মপথে অনেকবারই বাধার সম্মুখিন হয়েছেন মতিউল। আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যুরমুখ থেকেও ফিরে আসতে হয়েছে তাকে। তবু আঘাত-বাধা জয় করে ফিনিংস পাখির মতো আবার জেগে ওঠেছেন বারবার। কিছুতেই পরাভূত করা যায়নি তাকে। পরাজয় শিকার করেননি কখনো।

ফলে তরুণদের কাছে মতিউল বারী খুর্শেদ হয়ে ওঠেছেন অনুকরণীয়। যিনি ভাঙ্গেন, কিন্তু মচকান না। যাকে আক্রান্ত করা যায়, কিন্তু পরাজিত করা যায় না।

স্মরণ করা যেতে পারে ১৯৯৯ সালের কথা। ১৯৯৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর। মতিউল বারী তখন তুখোড় ছাত্রনেতা। সন্ত্রাসীদের ব্রাশফায়ারে মারাত্মকভাবে আহত হন মতিউল। ক্ষতিগ্রস্ত হয় তার দুটি কিডনি। প্রায় সঙাহীন অবস্থায় চিকিৎসার জন্য দ্রুত ঢাকায় প্রেরণ করা হয়। মতিউল বারীকে দেখতে হাসপাতালে ছুটে আসেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। দীর্ঘদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে বিজয়ীর বেশে ফিরে আসেন মতিউল বারী।

এতো গেলো রাজনীতির মাঠে যুদ্ধজয়ের কথা। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও তিনি নিজের বিবেকের কাছে সবসময় ছিলেন আপোষহীন ও অনমনীয়।

২০০০-২০০৫ সাল। সারাদেশ জুড়েই তখন জঙ্গিবাদীদের আস্ফালন। ব্যতিক্রম নয় সিলেটও। সিলেটে একের পর এক জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটছে। চারদিকে তখন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, আতঙ্ক। তখন নিজের ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেন মতিউল। একের পর এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করতে থাকেন তিনি। স্বাভাবিকভাবেই সেসময় অনেক হুমকী-ভীতির মুখোমুখি হতে হয় তাকে। তবু দমে যান নি মতিউল। দমে যাওয়ার পাত্র তো তিনি নন। তাঁর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের সূত্র ধরে গ্রেফতার হয় সিলেটের জঙ্গিরা। সিলেটে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এমন সাহসী ও অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্যে সরকারের একটি সংস্থা তাকে পুরস্কৃত করতে চায়। কিন্তু মতিউল বারী খুশেদ বিনয়সহকারে তা ফিরিয়ে দেন।

স্মরণ করা যেতে পারে কথিত ১/১১ ’এর বিভীষিকাময় সময়ের কথাও। সিলেটে তখন সাংবাদিকদের উপর নিপীড়ন শুরু হয়। গ্রেফতার করা হয় একাধিক সাংবাদিককে। আরো অনেক সাংবাদিককে গ্রেফতারের পরিকল্পনা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।  তখন কঠোর ভূমিকা পালন করেন মতিউল। তার দৃঢ় ও অনমনীয় ভূমিকার কারণে হয়রানি ও নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পান অনেক সাংবাদিক। এক রাতে সীমাবদ্ধ থাকে সাংবাদিক গ্রেফতার অভিযান।

ব্যাংকার হিসেবেও সফল মতিউল। এক্ষেত্রেও রেখেছেন নিজের যোগ্যতার স্বাক্ষর। ফলে অল্প সময়েই ব্যাংকিং ক্ষেত্রে সুনাম কুড়িয়েছেন এই তরুণ।

যিনি এমন কর্মবীর, যিনি হামলা-ষড়যন্ত্র-রক্ষচক্ষু উপেক্ষা এগিয়ে চলেছেন সব সময়, সেই মতিউল বারী খুর্শেদ এখন লিভার সক্রমনে আক্রান্ত। যে মুখে সব সময় লেগে থাকে হাসি, সেই প্রিয় মুখটি এখন বড় বেশি পানশে, মলিন। মুখজুড়ে উদ্বেগ আর চিন্তার ছাপ।

২০১৫ সালের নভেম্বরে মতিউল বারী খুর্শেদের লিভারে জটিলতা দেখা দেয়। এরপর থেকে এক নতুন লড়াই শুরু হয় তার। এই লড়াই ব্যাধির বিরুদ্ধে। শরীরের ভেতরে নিভৃতে বাসা বাঁধা অসুখের বিরুদ্ধে। এ লড়াই তো মানুষের আজন্মকালেরই। সৃষ্টি আদি হতেই মানুষ রোগ-ব্যাধির বিরুদ্ধে লড়াই করে এসেছে। ব্যাধিকে জয় করতে গিয়েই তো মানুষ আবিস্কার করেছে অসামান্য এক শক্তি- যার নাম বিজ্ঞান। অদম্য প্রাণশক্তি বরাবরই এ লড়াইয়ে বিজয়ী করেছে মানুষকে। বিজয় হয়েছে বলেই তো এই পৃথিবী এখনো মানুষের। পুরাকালীন ব্যাধিকে জয় করতে পেরেছে বলেই তো মানুষ আজ আধুনিক মানুষ।

মতিউল বারীও এ লড়াইয়ে নিশ্চয়ই বিজয়ী হবেন। শত বাধা বিপত্তি যাকে পরাজিত করতে পারে নি, যে মতিউল বারী ‘জ্বলে পুড়ে ছারখার, তবু মাথা নোয়াবার নয়’,  তিনি সামান্য অসুখের কাছে পরাজয় স্বীকার করে নেবেন- তা তো হতে পারে না। সামান্য অসুখের কাছে মানুষেরা পরাজিত হলে, এ পরাজয় তো কেবল ব্যক্তি মানুষের নয়, বরং মানব সভ্যতারই পরাজয়।

মতিউল বারী খুর্শেদও নিশ্চয়ই সুস্থ হয়ে উঠবেন। আবার হেসে উঠবে তার মুখ। ফিরবে প্রাণচাঞ্চল্য। নব উদ্যোমে ফিরবেন নিজের কর্মক্ষেত্রে। আরো কতকিছু করার বাকী রয়ে গেছে তাঁর। ভাগ্যও তো বরাবরই বীরেদের পক্ষে। মতিউল বারী খুর্শেদও তো বীর।
আমাদের শুভকামনা, সাহস আর প্রার্থনা তাকে এই যুদ্ধজয়ের লড়াইয়ে প্রেরণা জোগাবে। শক্তি জোগাবে। আল মাহমুদের কবিতার মতো তাই প্রত্যাশা- ‘জীবনের স্পর্ধা দেখে নত হোক প্রাণহারী যম।’

সুস্থ হয়ে উঠুন মতিউল বারী খুর্শেদ।  

আপনার মন্তব্য

আলোচিত