উত্তম দাশ, সিকৃবি

২৭ মে, ২০১৬ ০০:৪৬

অভিজিৎ : রক্তের জন্য নিবেদিত প্রাণ

আপনার রক্তের গ্রুপ কি? ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করেই এই প্রশ্নটা আমাকে জিজ্ঞেস করতে যার দেরি হয় নি!  এক রক্ত সৈনিকের কথা বলছিলাম । তাঁর নাম অভিজিৎ রায়।  যে রক্তদানে নিবেদিত প্রাণ।

একজন মুমূর্ষ রোগীর জন্য এক ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন? এই খবর একবার অভিজিৎ এর কাছে পৌছলে তিনি রক্তদাতা কিভাবে যোগাড় করেন তা শুনে অবাক হওয়ারই কথা!  অভিজিতের কথায় এক ব্যাগ রক্তের বিনিময়ে যদি একজন মানুষ বেঁচে যায় তবে কেন এক ব্যাগ রক্তের জন্য ছুটাছুটি করব না!

২০১২ সালে প্রথমবার রক্তদান করার মাধ্যমে এই রক্ত সৈনিকের মানুষের কল্যানে যাত্রা শুরু হয়। এখন পর্যন্ত তিনি আট বার রক্তদান করেছেন  এবং  নির্দিষ্ট সময় পর পর মানুষের জীবন রক্ষার্থে  রক্তদান করে যাবেন বলে অঙ্গিকারবদ্ধ।

 দেশের যেকোন জায়গায়  রক্তের জন্য ক্যাম্পেইন হলে অভিজিৎ ছুটে যান সেখানে। সিলেটের চারটি জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় রক্তের জন্য ছুটেছেন । বৃহস্পতিবারও সিলেটের সুনামগঞ্জের গোবিন্দগঞ্জে রক্তদান নিয়ে এক ক্যাম্পেইনে যান তিনি ।

ঢাকার আজিমপুরের বাসিন্দা জ্যোতি রানী ফেসবুকে অভিজিৎকে নিয়ে লিখেন- “রক্তদানের এক ক্যাম্পেইনে তার সাথে পরিচয়। মানুষের প্রাণ বাঁচাতে এই ছেলেটি এত্ত দৌড়ায় যা সত্যি আমাকে উৎসাহিত করে। তার কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আমিও এখন রক্তদানের মাধ্যমে মানুষের পাশে দাড়ানোর চেষ্টা করি।''

অভিজিৎকে জিজ্ঞেস করি,  তাৎক্ষণিক কিভাবে রক্ত সংগ্রহ করো একজন মুমূর্ষ রোগীর জন্য?

অভিজিৎ বলে, প্রথমেই রোগীর আত্মীয় স্বজনদের বলি দ্রুত নিজেদের পরিবারের সবার রক্তের গ্রুপ নির্নয় করতে, নিজেদের পরিবারের মধ্যে পাওয়া গেলে তো ঝামেলা থাকে না। যদি তাও না হয় তাহলে পরিচিত বন্ধুদের মধ্যে খুঁজতে বলি। যদি তারপরও ম্যানেজ না হয় তাহলে নিজ জেলার স্বেচ্চাসেবক এবং রক্তদাতা সংগঠন /ব্লাড ব্যাংকে  যোগাযোগ করলে রক্ত ম্যানেজ হয়ে যায়।

লিডিং ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ফাল্গুনী দেবের এক আত্মীয় মুমূর্ষ অবস্থায় ছিলেন । তখন অভিজিৎ তাৎক্ষণিক রক্ত জোগাড় করে দেন বলে ফাল্গুনী জানান।

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফায়েজুর রহমান সৈকত নামের একজন জানান, ফেসবুকে পরিচয় অভিজিতের সাথে। যেকোন সময় রক্তের প্রয়োজন হলে অভিজিতের সাথের যোগাযোগ করলেই রক্তের সন্ধান পাই। অভিজিৎ থাকায় রক্ত নিয়ে এত চিন্তা করতে হয় না বলে জানান তিনি।

অভিজিতের বেড়ে ওঠা হবিগঞ্জ শহরে। ব্যবসায়ী বাবা এবং গৃহিনী  মায়ের  তিন সন্তানের মধ্যে অভিজিৎ সবার বড়। হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে বর্তমানে লিডিং ইউনিভার্সিটিতে সি.এস.সি ডিপার্টমেন্টে অধ্যয়নরত।

রক্তদান সবাইকে এগিয়ে আসার জন্য  অনুরোধ অভিজিতের। তিনি বলেন, রক্তদানে মানুষ এগিয়ে আসার জন্য প্রয়োজন ইচ্ছেশক্তি। প্রতি বছর বাংলাদেশে নয় লাখের ও বেশি লোকের রক্তের প্রয়োজন । আর রক্ত দান স্বাস্থ্যের জন্যও অনেক উপকারী।

ভবিষ্যতে শিক্ষক হওয়ার ইচ্ছে অভিজিতের এবং  আজীবন মানুষকে স্বেচ্চায় রক্তদানে উৎসাহিত করে যেতে চান।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত