ফয়সল আহমেদ মুন্না

১৯ জুন, ২০১৬ ২১:৫৯

বাবা, তুমি আছো অস্তিত্বজুড়ে

মাঝে মাঝে এমন একটা সময় সবার জীবনেই আসে, যখন মানুষ সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগে। তখন কারো পরামর্শ খুব জরুরী হয়ে উঠে। সে সময়ে পাশে দাঁড়ানোর মতো আদর্শ একজন মানুষ হচ্ছেন- বাবা। স্বভাবগত গাম্ভীর্যের জন্য বাবার সাথে সবার ঘনিষ্ঠতা একটু কম থাকে। কিন্তু সে মানুষের আমাদের প্রতি ভালোবাসার কোন ঘাটতি থাকে না।

‘বাবা আমি তোমাকে ভালোবাসি’- এই কথাটি কোনোদিন বলা হয় নি। বাবা, সত্যি তোমাকে অনেক ভালোবাসি আর মিস করি প্রতিনিয়ত। আমি একজন সাহসী ও বিপ্লবী মানুষের সন্তান, যার পরিচয় দিতে গর্বে বুকটা ভরে উঠে।

একটা সময় কতোবার কল্পনা করেছি, বাবার মৃত্যু একটা দুঃস্বপ্ন মাত্র, যেকোনো সময় বাবা ফিরে আসবে। এখনো মাঝেমধ্যে স্বপ্ন দেখি, আমি আর বাবা হাঁটছি  শহরের কোন রাস্তা দিয়ে। প্রতিটি মুহূর্তে বাবাকে মিস করি। আমি সবসময় মনে করি বাবা ছাড়া আমি একজন অসম্পূর্ণ মানুষ।

বাবা থাকলে যা কিছু হতো, যা শিখতাম, বাবার অবর্তমানে তা হয় নি আমার জীবনে। সবসময় মনে হয়, আমার মাথার উপর কোন বটবৃক্ষের ছায়া নেই। বাবা প্রবাসে বসবাস করার কারণে বাবার সঙ্গে জীবনের খুব অল্প সময় কাটিয়েছি আমি, তাই বাবাকে নিয়ে আমার খুব বেশি স্মৃতি নেই। কিন্তু বুকের গভীরে কোথাও একটা স্মৃতিসৌধ আছে যার মুখোমুখি দাঁড়ালেই বাবাকে মনে পড়ে, দেখতে পাই সেই বটবৃক্ষকে যাকে ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ।

অনুভবে স্পর্শ করতে পারি তার অস্তিত্ব। বাবা খুব বিপদে ফেলে গেছেন আমাকে! তিনি মাকে বলে গিয়েছিলেন, তার ছেলে অনেক বড় মানুষ হবে। বাবা, মানুষ আজও হতে পারিনি, তবে তোমার ইচ্ছে পূরণে প্রতিনিয়ত নিজেকে ভেঙ্গে মানুষ হয়ার চেষ্টায় রত তোমার সন্তান।

বাবা সব দিন সবসময় আমার কাছে ছিলেন একই রকম। আমার জন্য বাবা আলাদা ছিলেন না। কিন্ত আজ বিশ্ব বাবা দিবস। এদিনে তোমাকে খুব বেশী বেশী মনে পড়ছে। তোমাকে হারিয়েছি ১৫ বছর আগে । কিন্তু তোমাকে ভুলতে পরিনি একটি মুহুর্তের জন্যেও। কাউকে প্রকাশ করতে পারিনা হৃদয়ের আকুলতা। নীরবে, আড়ালে কত যে কেঁদে চলছি তা কাউকে বুঝাতে পারছি না।

বাবা, মৃত্যুর কাছাকাছি সময়ে যখন তুমি শয্যাশয়ী। ২০০১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি, রাত ৩ টায় যখন আমাদের ঘরে ১০/১২ জনের ডাকাতদল ঢুকে সব কিছু নিয়ে যাওয়ার পর তোমার মাথায় পিস্তল ধরে গুলি করে পালিয়ে যায়। ডাকাতরা পালিয়ে যাওয়ার পরে তোমাকে নিয়ে ছুটে গিয়েছিলাম হাসপাতালে। মৃত্যুযন্ত্রনা নিয়ে হাসপাতালের বেডে ঘুমিয়ে ছিলে। আমিও কেঁদে ছিলাম, কিছুই বলতে পারিনি, শুধুই  বলেছিলাম, আল্লাহ আমার বাবাকে মাফ করে দিন। ডাক্তার বলে দিয়েছে, তোমার অবস্থা সংকটাপন্ন। তোমাকে বাঁচানোর কোন পথ নাই। সেদিন খুব কষ্টে নিজেকে কন্ট্রোল করেছিলাম। আল্লাহর কাছে তোমাকে ভিক্ষা চেয়েছিলাম।

আল্লাহ সম্ভবত তোমাকে খুব বেশী পছন্দ করেছিলেন, তাই তোমাকে তার কাছে নিয়ে গেলেন। আমাদেরকে এতিম করে। আর বাবা ডাকা হয়নি সেই থেকে দীর্ঘ ১৫টি বছর। আর হবেও না কোনদিন। আর কেউ কোন স্বান্তনা দেয়নি তোমার মত করে, সাহস দেয়নি তুমি যেমন দিতে, মাথায় হাত বুলায়নি তুমি যেমন বুলিয়েছিলে।

বাবা, তুমি কেন চলে গেলে? প্রকৃতির এ নিষ্ঠুরতা আমি মানতে পারছি না, বাবা! প্রতিদিন নামাজের শেষে আমি তোমার শেখানো দোয়া দিয়েই তোমার জন্যে দোয়া করি। কি জানি, হয়ত তোমার মা-বাবার জন্যে দোয়া করে তুমিই সে শিক্ষা আমাদের দিয়ে ছিলে।

বাবা, আজ তোমায় খুব মনে পড়ে, তোমার অভাব প্রতিটি মুহুর্ত, প্রতিটি কাজে, প্রতি অবস্থাতেই অনুভব করি আমার অস্তিত্বজুড়ে।

লেখক : সাংবাদিক।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত