ফারুখ আহমেদ

২৪ জুন, ২০১৬ ১৫:৩৪

‘বড়বাপের পোলায় খায়, ঠোঙ্গায় ভইরা লইয়া যায়’

সারাদিন রোজা রেখে ইফতারের সুখের চেয়ে বড় সুখ আর কোনো কিছুতেই নেই। ইফতারের জন্য রোজাদারদের কত রকমারি আয়োজন। রমজানের ইফতার হল প্রতিটি মুসলমানের ঘরের শ্রেষ্ঠ খাবার। প্রতি ঘরেই ইফতার রান্না করা হয়। তবু বাইরে থেকে কিছু না কিছু কিনে আনা চাই-ই চাই।

এখন মহল্লায় মহল্লায় ইফতারের দোকান, ইফতার বাজার বসছে ঢাকা নগর জুড়ে। বেইলি রোড থেকে ৩০০ ফিট এলাকা সর্বত্রই চোখে পড়ে ইফতারের বাজার। কিন্তু প্রায় দুইশ' বছর আগে থেকে ইফতারের মুল বাজারটি বসে আসছে পুরান ঢাকার চকবাজারে।

আমরা ঈদ-তেহার বা বিভিন্ন উৎসব পার্বনে মেলা দেখে অভ্যস্থ। রমজান মাসে চকবাজারে বসে অন্যরকম মেলা। সেই মেলা হচ্ছে ইফতার মেলা। চকবাজারের ইফতার এর সুনাম আর ঐতিহ্য দেশজুড়ে। এই নগরের মানুষ চকবাজারের ইফতার কিনে আনন্দ পান, অনেকে সখের বসে ছুটে যান ইফতার কেনার জন্য চকবাজার।

পবিত্র মাহে রমজান শেষ হয়ে এল বলে। বিগত দিনের ঐতিহ্য বজায় রেখে রমজানের শুরু থেকেই চকবাজারের ইফতার পাড়া সেজেছে রকমারী ইফতার সাজে।

চকবাজার ইফতার পাড়া মোঘল ঐতিহ্যের ধারক। এখানকার ইফতারের মধ্যে অন্যতম- আস্ত মুরগীর কাবাব, মোরগ মুসল্লাম, বটি কাবাব, টিকা কবাব, কোফ্তা, চিকেন কাঠি, শামী কাবাব, শিকের ভারী কাবাব, সূতি কাবাব, কোয়েল পাখির রোষ্ট, কবুতরের রোষ্ট, জিলাপী, শাহী জিলাপী, নিমকপারা, সামুচা, আলাউদ্দিনের হালুয়া, হালিম, দইবড়া, সৌদি পানীয় লাবাং, কাশ্মিরী সরবত, পুরি এবং ৩৬ উপকরণের মজাদার খাবার 'বড়বাপের পোলারা খায়’সহ অনেক পদ।

 আস্ত মুরগীর রোস্ট

 জিলাপী প্রতি কেজির দাম ১০০ টাকা, আর শাহী জিলাপীর দাম ১২০ থেকে ১৬০ টাকা। হালিম ১২০ থেকে ২৭০টাকা। এখানে নূরানী, ডিসেন্ট আর আনন্দের হালিম খুব জনপ্রিয়। শিকের ভারি কাবাব চকবাজার ছাড়া আর কোথাও পাবেন না। এক কেজি কাবাবের দাম ৪০০ টাকা। দই বড়া ছয় পিসের বক্স ৬০ থেকে ১৫০ টাকা, পনির কেজি প্রতি মুল্য ১৮০ টাকা, চিকেন কাঠি প্রতিটির দাম ৩০ থেকে ৬০টাকা, কোয়েল পাখির রোষ্ট প্রতিটি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, খাসির রান ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, আস্ত মুরগীর রোষ্ট ২০০ থেকে ৩০০ টাকা, কবুতরের রোষ্ট ১১০ থেকে ১৬০ টাকা, পুরি প্রতিটি ৩ টাকা থেকে ১০ টাকা আর চকের সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার 'বড়বাপের পোলায় খায়, ঠোঙ্গায় ভইরা লইয়া যায়' এর কেজি প্রতি দাম হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা।

 খাসির টিক্কা

 সূতি কাবাব

 চকবাজারের ইফতার পাড়া রমজানের প্রথমদিন থেকেই এসব মুখরোচক খাবারের হাঁকডাক আর ক্রেতাদের উপচে পড়া ভীড়ে থাকছে মুখরিত। তথাপি চারদিক কাঁপিয়ে যে খাবারের জন্য চিৎকার বেশী নজর কেড়েছে তা হল ‘বড় বাপের পোলারা খায়, ধনি গরীব সবাই খায়, মজা পাইয়া লইয়া যায়।’ যার হাঁকডাকে চিরচেনা চকবাজারের চেহারা দুপুরের পর থেকেই পাল্টে গিয়ে পরিণত হয় সত্যিকারের ইফতার মেলায়।

ছবি: লেখক

আপনার মন্তব্য

আলোচিত