দেবকল্যাণ ধর বাপন

১৫ অক্টোবর, ২০১৬ ১৬:১০

‘এসো মা লক্ষী বসো ঘরে’

‘শঙ্খ বাজিয়ে মাকে ঘরে এনেছি, সুগন্ধে ধূপ জ্বেলে আসন পেতেছি, প্রদীপ জ্বেলে নিলাম তোমায় বরণ করে, আমার এ ঘরে থেকো আলো করে।’ ধনের দেবী লক্ষী। প্রায় প্রতি ঘরে ঘরেই দেবী লক্ষীর পূজা হয়ে থাকে। মহিষাসুরমর্দিনীর আগমনে আনন্দময় হয়ে উঠেছিল ধরণী। জীবনের জ্বালা ভুলে মানুষ মেতেছিল উৎসবের আনন্দে। চিন্ময়ীর বিদায়ের বার্তা ভুলে মানুষ আবার মেতে উঠছে লক্ষী পূজার উৎসব ও আনন্দে।

সৌভাগ্য ও ধন সম্পদের অধিষ্ঠাত্রী দেবী শ্রী শ্রী লক্ষী মায়ের পূজা আজ। সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব এটি। ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ঘরে ঘরে লক্ষী পূজা উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে। ধন সম্পদের দেবী হওয়ায় বিভিন্ন মন্দির ছাড়াও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে লক্ষী পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, এই রাতে ধনসম্পদ, প্রাচুর্য, সৌন্দর্য ও সমৃদ্ধির দেবী লক্ষী বিষ্ণুলোক হতে পৃথিবীতে নেমে আসেন এবং মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ‘কে জেগে আছ?’ এই প্রশ্ন করেন।

লক্ষীপূজার নানা সাজ-সরঞ্জামের মধ্যে বিশেষ উপাচার হলো আলপনা৷ বাংলা ‘আলপনা' শব্দ এসেছে সংস্কৃত ‘আলিমপনা' থেকে, যার অর্থ আস্তরণ প্রদান করা৷ পূজার আগের দিন নতুন আতপ চাল ভিজিয়ে রেখে পরদিন তা মিহি করে বাটার নিয়ম। বাড়ির সদস্যরা চালবাটা ও জল মিশিয়ে তৈরি করেন এক মসৃণ গোলা। এরপর এক টুকরো কাপড়ের মধ্যে তা পেঁচিয়ে হাতের মধ্যে দিয়ে চালের মিশ্রণে ডুবিয়ে মেঝেতে ফুটিয়ে তুলেন আলপনা৷ বিশেষ করে ধানের ছড়ী ও দেবীর পা হলো লক্ষীপূজায় আলপনার প্রধান আকর্ষন৷

বাংলাদেশে চান্দ্র আশ্বিন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে অর্থাৎ কোজাগরী পূর্ণিমায় দেবী লক্ষীর আরাধনা করা হয়ে থাকে। এছাড়া প্রতি বৃহস্পতিবার সধবা স্ত্রীগণ নিজ নিজ গৃহে লক্ষীর পূজা করে থাকেন।

কিন্তু বাংলার বাইরে দেবী পূজিতা হন গৌণ চান্দ্র কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে, অর্থাৎ দীপান্বিতা অমাবস্যার রাত্রে। এই পূজা সাধারণত বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গা পূজার পরেই হয়ে থাকে। লক্ষীপূজা কোজাগরী লক্ষীপূজা নামেও পরিচিত। কোজাগরী শব্দটি এসেছে ‘কো জাগর্তি’ থেকে, যার অর্থ ‘কে জেগে আছো?’

লক্ষী হলেন ধনদেবী। মা লক্ষী–ধনসম্পদের ঝুড়ি নিয়ে ঘর আলো করে থাকেন৷ বাঙালি হিন্দুরা মেতে ওঠে তাঁর আরাধনায়, লক্ষীর কৃপা পাওয়ার আশায়৷ ফলমূল-নৈবেদ্যর পাশাপাশি অবশ্যই থাকতে হবে বিভিন্ন স্বাদের নাড়ু৷ মূলত নারকেল, চিনি ও এলাচের মিশ্রণে তৈরি হয় নারকেল নাড়ু৷ এছাড়াও থাকে তিলের নাড়ু ও ক্ষীরের নাড়ু৷

পঞ্জিকা মতে, রোববার (১৬ অক্টোবর) রাত আটটায় পূর্ণিমা লেগে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত থাকবে। তাই দু’দিনই কোজাগরী লক্ষী মায়ের পূজা উদযাপন করবেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত