এইচ এম আলমগীর

১৮ ডিসেম্বর, ২০১৬ ২০:২৬

শীতার্তদের উষ্ণ হাসিতে শীতের আমেজ ছড়িয়ে পড়ুক সর্বত্র

মৃদু শৈত্য প্রবাহে প্রকৃতির গায়ে হাল্কা শীতের আঁচ লেগেছে, দিনদিন বাড়ছে তার গাঢ়তা। অনেকেই গায়ে জড়িয়ে ফেলেছেন ভারি কাপড়। ফুটপাতে হকারদের ব্যবসায় এসেছে পরিবর্তন। পাতলা কাপড় সরিয়ে এখন মোজা, মাফলার, কানটুপি, সুয়েটার সহ নানান ধরনের শীতের পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসেছেন তারা। বড় বড় শপিং মলে জ্যাকেট, ভারি সুয়েটার আর দেশি-বিদেশি শীত কাপড়ের বিকিকিনি চলছে পুরোদমে। দোকানের ফ্যাশন-ডলগুলোতেও লেগেছে শীতের মডেল। ক্রেতা টানতে ডিসকাউন্টসহ নানান অফার চলছে ব্রান্ডের দোকানে।

যদিও পুরোদমে শীত পড়েনি এখনো, তবু শীত বরণের সকল আয়োজন জমে উঠেছে বেশ। শহর কিংবা গ্রাম- সর্বত্র শীতের টানটান উত্তেজনা। কড়া লিকারের চায়ের গরমে নরমগরম নানান গল্প, আড্ডা আর তর্কে সরগরম হয়ে ওঠে চায়ের দোকান। গ্রামের ঘরে ঘরে জিভে জল নেমে আসা মৌ মৌ পিঠার গন্ধ আর তার লোভনীয় স্বাদে শীতটা হয়ে ওঠে চরম উপভোগ্য। শহরেও বসে শীতের পিঠার নানান মেলা। শীতের পিঠার মধ্য ভাঁপা পিঠা, চিতই পিঠা, পুলি পিঠা, মেরা পিঠা, নারকেল পিঠা, চুটকি পিঠা, পাতা পিঠা, পাটি সাপটা, পোয়া পিঠা, মালাই পিঠা, সন্দেশ, খেজুরের পিঠা, ক্ষীর পুলি ইত্যাদি বাহারি পিঠার স্বাদে-গন্ধে পিঠা প্রেমিদের কেড়ে নেয় মন।

ইতোমধ্যে খেজুর রস চুরির অগ্রিম পরিকল্পনা সেরে নিয়েছে দুষ্টু ছেলের দল। ব্যাডমিন্টন কিংবা ভলিবলের কোর্ট কেটে খেলা শুরু করে দিয়েছে তারা। দর্শনীয় স্থানগুলোতে বাড়ছে পর্যটকদের আনাগোনা। চারদিকে বর-কনে দেখাদেখি আর বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করতে ঘটকদের কাটছে ব্যস্ত সময়। কেননা এ যে বিয়ের মৌসুম। মূলত আবহাওয়া অনুকূল থাকায় যুগ যুগ ধরে বিয়ের জন্য শীত ঋতুর কদরই সবচেয়ে বেশী। বিয়ে ছাড়াও এ ঋতুতে আয়োজন করা হয় নানান সামাজিক আচার অনুষ্টানের। এভাবেই শীতের আনন্দে দিনের পরে রাত আবার রাতের পরে দিন আসে, বাড়ে শীতের তীব্রতা। ভোরের কুয়াশার ঘন আবরনে প্রকৃতি লুকায় মুখ। ঘাসের ডগা আর পত্র পল্লবে জমে উঠে স্নিগ্ধ শিশিরের বিন্দু বিন্দু কণা। সকালের সব আয়োজন মুছে দিয় ঝলমলে সোনালি রোদের আলোয় প্রকৃতিতে লাগে আরেক নতুন রং। কিন্তু তারপরেও প্রকৃতির এই অপরূপ খেলায় হেরে যায় কিছু মানুষ। যাদের জীবনে রং বলতে বোঝায় শীত কাপড়ের অভাবে খড়কুটো জ্বালিয়ে কোনোমতে কাটানো একেকটি কঠিন রাত। খোলা আকাশের নিচে পাতলা চাদর কিংবা চটের বস্তা মুড়ি দিয়ে ঘুমাতে গিয়ে ঠান্ডার নির্মমতায় বিলিন হওয়া একেকটি জীবন। দারিদ্র্যের কষাঘাতে অভাবের তাড়নায় কেনা হয়না কোনমতে শীত পার করার মতো একটা সুয়েটার। কোনো কোনো পরিবারের সকল সদস্যকেই পোহাতে হয় শীতের নির্মম যন্ত্রণা। শীত উপভোগ কিংবা পিঠা নয়, তাঁরা চায় একটি শীত বস্ত্র।

শীত পুরোদমে পড়ে গেলে লোক দেখানো সমাজসেবীরা সমাজ সেবার নামে নিজের নাম ফুটানোর তালে বেতাল হয়ে পড়েন। মূলত সেবার উদ্যেশ্যে নয়, কম্বল দেয়া ছবিকে সম্বল করে সংবাদপত্রে খবর হওয়ার একটা পাঁয়তারা মাত্র। কিছু কিছু সংগঠনও স্বার্থ উদ্ধারে নেমে পড়ে মাঠে। কয়েকটি পাতলা কম্বল নিয়ে শুরু করে দৌড়ঝাঁপ। তাইতো ভুক্তভোগিদের কপালে থেকেই যায় চির দুঃখের কুয়াশা।

কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সমাজসেবী সংগঠন কিংবা সমাজসেবকেরা যদি শীতের শুরু থেকেই শীত বস্ত্র বিতরণ শুরু করে দেন, তবে হয়তো কঠিন শীতে ঝরবে না আর কোন প্রাণ। আশার বিষয় হলো, সচেতন তরুণরা শীতার্তদের ব্যাপারে সোচ্চার হয়েছেন। ফেইসবুকে বিভিন্ন ইভেন্টের মাধ্যমে টাকা ও পুরোনো শীতের কাপড় সংগ্রহ করতে মাঠে নেমে পড়েছেন তাঁরা। সমাজের স্বাবলম্বীরা এই তরুণদের করতে পারেন সহায়তা। আগেভাগে নড়েচড়ে বসা উচিৎ রাজনৈতিক দলগুলোকেও।

শুধুমাত্র নাম ফুটাতে ফটো তুলার জন্য বসে না থেকে দয়া করে শীতার্তদের জন্য এগিয়ে আসুন। খোলা আকাশের বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য হোন সংঘবদ্ধ। তাহলে শীতের আমেজ ছড়িয়ে পড়বে সর্বত্র। যদি আপনি, আমি এবং আমরা ওদের গায়ে দিতে পারি উষ্ণতার পরশ, তবেই তো শীত হবে সবার জন্য উপভোগ্য। আসুন, শীতটাকে উপভোগ করি শীতার্ত মানুষের উষ্ণ হাসিতে, শীতটাকে উপভোগ করি ভালোবাসায়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত