দোদুল খাঁন

২৭ মে, ২০১৭ ১৮:০৪

মুসলিমপ্রধান দেশে দেশে ভাস্কর্য (পর্ব ১)

ভাস্কর্য ও মূর্তিসংক্রান্ত বিরোধের মাঝেই সুপ্রীম কোর্টের সামনে থেকে ন্যায়বিচারের প্রতীক লেডি জাস্টিসিয়া এর ভাস্কর্য অপসারণ করা হয়েছে। আর একে হেফাজত মৌলবাদী গোষ্ঠীর কাছে সরকার ও দেশের প্রগতিশীল চেতনার অপমৃত্যু হিসেবেই গণ্য করছেন বিদ্বজনেরা।

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট জনসংখ্যার দেশে ভাস্কর্য থাকতে পারে কী না, এ প্রশ্নে যখন প্রকাশ্যেই আন্দোলন ও অভিযোগ করছে দেশের বৃহত্তম ইসলাম ধর্মভিত্তিক অরাজনৈতিক জোট হেফাজতে ইসলাম; তখন প্রাসঙি্গকভাবেই আলোচনায় আসছে মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর ভাস্কর্য।

ভাস্কর্য চিন্তাশীল সৃষ্টিকর্ম আর এর মাধ্যমে একটি জাতি বা গোষ্ঠীর ইতিহাস, ঐতিহ্য ও বীরগাঁথা যেমন প্রকাশিত হয়, তেমনি ভাস্কর্যের মধ্যে দিয়ে একটি দেশের সৃজনশীল চিন্তার উন্মেষ প্রকাশ পায়। আর বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো মুুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দেশগুলোর প্রায় সবকয়টিতেই রয়েছে ভাস্কর্য শিল্পের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস।

ভাস্কর্যের দেশ ইন্দোনেশিয়া

পূর্বে হিন্দু ও বৌদ্ধ অধ্যুষিত ইন্দোনেশিয়া অধুনা বৃহৎ মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম।

দেশটিতে ইসলাম রক্ষায় অসংখ্য আইন-কানুন থাকলেও দেশটি তাঁর প্র্রাচীন ঐতিহ্য ও ইতিহাসের প্রতি আজও সমান গুরুত্ব বজায় রাখছে।

পাশের ছবির ভাস্কর্যটি ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপের দেনপাসার রাস্তার পাশে অবস্থিত যা দেশটির প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী পোশাকে নৃত্যরত এক নারীর প্রতিকৃতি ফুটিয়ে তুলেছে। বালি দ্বীপের প্রায় প্রতিটি সড়কের পাশে, প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা অংশে রয়েছে একাধিক ভাস্কর্য। আর প্রতিটি ভাস্কর্যই বহন করে চলেছে এই দ্বীপরাষ্ট্রের অতীতের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস।

ঐতিহ্যের প্রতিকৃতি ইরান

যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসী নীতিমালার বিরোধিতাকারী যে মুসলিম অধ্যুষিত  দেশটির দিকে সারা বিশ্বের নজর থাকে সবসময়, সেদেশটি হল ইরান।

পারস্য নামক রাজ্য, যারা মূলত অগ্নিপূজারি ছিল; তারাই পরবর্তিতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে এবং বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে ইরান আজ একটি মুসলিমপ্রধান দেশ।

ইরানের পথে পথে রয়েছে অজস্র ভাস্কর্য আর এর সবই প্রায় ইরানের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের স্মারক।

পাশের ছবিটি ইরানের মাশদাহতে অবস্থিত একটি ভাস্কর্যের। আর এ ভাস্কর্যে ইরানের ১৮ শতকের শাসক নাদের শাহ এর প্রতিকৃতি রয়েছে যার পেছনে রয়েছেন তিনজন যোদ্ধা।

১৯৭৯ সালে ইরানি গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাজতন্ত্রের পতন ঘটায় এবং ইরানে একটি ইসলামী প্রজাতন্ত্র স্থাপন করে। ইরানে প্রচুর উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্য শিল্প রয়েছে। বেশির ভাগই ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বদের স্মরণে নির্মিত।

যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—তেহরানের ফেরদৌসী স্কয়ারে স্থাপিত মহাকবি ফেরদৌসীর মূর্তি, ইরানের হামাদানে ইবনে সিনার মূর্তি, তেহরানের লালেহ পার্কে ওমর খৈয়ামের ভাস্কর্য, কবি হাফিজের ভাস্কর্য, খোরাসানের মাসাদে নাদির শাহর মূর্তি।

ইরানের ইসলামী বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি (১৯০১-১৯৮৯) বা ইমাম খোমেনির একাধিক ভাস্কর্য ও ম্যুরাল রয়েছে ইরানে।

কামাল আতাতুর্কের তুরস্ক

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট রাষ্ট্র তুরস্ক তার প্রতিটি ধাপেই স্মরণ করে আধুনিক তুরস্কের স্থপতি মোস্তফা কামাল আতাতুর্ককে। আর দেশটির প্রায় প্রতিটি শহরেই রয়েছে কামাল আতাতুর্কের ভাস্কর্য, স্মৃতি বিজরিত নানা স্থাপনা।

পাশের ভাস্কর্যটির নাম ভিক্টরি মনুমেন্ট। এ ভাস্কর্যটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো ১৯২৭ সালে। পরবর্তীতে ২০০২ সালে এটি পুণসংস্কার করে বর্তমান রূপ দেয়া হয়।

তুরস্ক বর্তমান সময়ে সারা বিশ্বে মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর দাবির ব্যাপারে স্বোচ্ছার থাকা দেশ হওয়া স্বত্ত্বেও ভাস্কর্যের ব্যাপারে তাদের চিন্তাচেতনা আধুনিক।

আর তাই দেশটিতে কেবল কামাল আতাতুর্কের ভাস্কর্যও নয়, দেশটির অন্যতম আকর্ষণ কিংবদন্তী প্রেমিক-প্রেমিকা চরিত্র শিরি ও ফরহাদের ভাস্কর্য যা দেশটির আমাস্যাতে অবস্থিত।

কামাল আতাতুর্কের ভাস্কর্য ছাড়াও তুরস্কের উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্য হলো মর্মর সাগর তীরে পোতাশ্রয়ে অপূর্ব মর্মর মূর্তি, আঙ্কারাতে ইন্ডিপেনডেন্স টাওয়ারের পাদদেশে তুরস্কের জাতীয় সংস্কৃতির ধারক তিন নারী মূর্তি ও আন্তালিয়ায় এডুকেশন অ্যাক্টিভিস্ট তুরকান সায়লানের মূর্তি।

চলবে...

আরও পড়ুন: মুসলিমপ্রধান দেশে দেশে ভাস্কর্য (পর্ব-২)

আপনার মন্তব্য

আলোচিত