সত্যজিৎ চক্রবর্তী

০৪ জুলাই, ২০১৭ ১৯:০৪

গফুর

স্যাটায়ার

আহা শরৎ বাবু আজ যদি বেঁচে থাকতে কি খুশিই না হতে! যে গফুরের কাহিনী লিখে গোটা একটা শতক মানুষকে কাঁদাইছো নিজে কাঁদছ, যে খেতে না পেরে ঘটিবাটি বিক্রি করেছিলো সেই গফুর হ্যা কাকা সেই গফুর এখন ইচ্ছে হলেই ঢাকা থেকে খুলনা গিয়ে গ্রিল হাউজে বসে রাতের খাবার খায়। কিন্তু বড্ড দুষ্টু হয়েছে গো কাউকে না বলে চলে যাওয়ায় তার সাগরেদরা তার চ্যালারা সারাদিন চিক্কুর দিয়া কাঁদছে। চিন্তায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরও গলা শুকিয়ে যাচ্ছিলো।

আমরাও সারাদিন চিন্তায় চিন্তায় শুকিয়ে যাচ্ছিলাম। শুকিয়ে যাওয়ায় ঘন ঘন লুঙ্গির গিট টাইট দিতে হচ্ছিলো।

তুমি জানো শরৎ কাকা যে গফুর মহেষকে মেরে রাতের আঁধারে চলে গিয়েছিল দারিদ্রের জন্য একটা রিকশাও ভাড়া করতে পারেনি  সে গফুর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসে খুলনা থেকে ঢাকা আসতে ছিলো।

মনে আছে ঘরের চাল থেকে টেনে টেনে পঁচা খড় মহেষকে দেয়ায় ঘরের দেয়াল ধ্বসে পড়ছিলো মাথার উপরে পড়োপড়ো বাড়িতে জ্বরক্লিষ্ট মহেষ শুয়ে থাকত? এখন সে সিসি ক্যামেরাওয়ালা বাড়িতে থাকে।

সে এখন প্রচন্ড ক্ষমতাশালী আন্তর্জাতিক মানুষ তবে সে এখনো বলদ পালে তাদেরকে আদর করে কিন্তু কোন হিন্দুয়ানি নামে ডাকে না। এখন তার বিশাল খামার লাখে লাখে বলদ সাথে রেখেছে ছাগল পালন কর্মসূচি। তার ইন্দনে লাখে লাখে ছাগল ঢাকা জড়ো হয়ে নিমেষে একটা নগরীকে চারণভূমি বানায়ে ফেলে।

এখনো আগের মতই বলদ ছাগলকে পঁচা খড় খাওয়ায়, পার্থক্য শুধু আগে খাওয়াতো দারিদ্রের কারণে আর এখন খাওয়ায় অল্প সময়ে অধিক লাভের আশায়। এখন সে ভালো খড় পঁচায় আর ইউরিয়া মাখায় তারপর খেতে দেয় আর  স্নেহের আবাল্গুলার মাথায় পরম মমতায় হাত বুলায়।  তার পঁচা খড়গুলো খেয়ে ছাগলগুলো বেড়ে উঠে আর ম্যাৎকারে ম্যাৎকারে কানে তালা লাগিয়ে দেয়।

তবে সবচেয়ে আশ্চর্য কি জানো? ওই যে গফুরের চিরশত্রু ভট্টাচার্য হ্যা সেই খাঁটাস তর্কররত্ন,  এখন সে গফুরের একনিষ্ট চ্যালা তার হাইব্রীড ছাগল-গরু উৎপাদন খামারের সুপারভাইজার কাম চিটাগুড় সাপ্লাইয়ার। সে গফুরের নিজস্ব উদ্ভাবিত পঁচা খড়ে পরম যত্নে চিটাগুড় মাখায়ে দেয় আর নির্বোধ প্রানীগুলা সুস্বাদু আর পুষ্টিকর ভেবে চিবিয়ে চিবিয়ে খায় আর আরো বড় আরো ধাড়ি ছাগল বলদ হয়ে ওঠে।

তোমার অশিক্ষিত গফুর এখন শিক্ষিত হয়েছে কাকা!  তার শিক্ষার ঠেলায় রবীন্দ্রনাথের কাঁচা খুলে পড়ে আমরা জানতে পারি রবীন্দ্রনাথ হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক আর নজরুল আত্মপরিচয়ের সংকট থেকে সেক্যুলার। চোখ কপালে উঠে গেছে সত্যি বলছি আমি গিয়ে প্রতিবাদ করে বলেছিলাম "এজন্যই নজরুল মানবতার কবি আর আপনি জামাতের" এজন্য তোমার গফুর আমাকে ব্লক করেছে।

তবে সে এখনো লুঙ্গি পরে পিছনে বিদ্যাদেবীর মূর্তি রেখে মওদুদিবাদের দিকনির্দেশনা দেয় খেলাফতি আন্দোলনের আগুনে ঘি ঢালে, জঙ্গিবাদী রাজনীতির খসড়া দাড় করায়, মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে জঙ্গিদের তুলনামূলক বিশ্লেষন লিখে।

একদম শেষে একটা মন ভালো করা খবর দেই গফুর এখন আর বিপত্নিক নয় সে বিয়ে করে ঘর আলো করেছে। যাইহোক মা মরা আমিনা একটা মা পেয়েছে সেটাই অনেক।
তোমার গল্পের সেকেন্ড পার্ট এসে গেছে- নাম "রাইজ অব গফুর "। এখন গফুর প্রচন্ড দাপুটে তার ছাগুবাহিনীর দাপটে  সবাই এখন কাঁপে তোমার মতন নাস্তিকের ঘিলু রাস্তায় ছড়িয়ে থাকে আর গফুর আর খাটাস ভট্টাচার্য তর্করত্নের যৌথ তত্ত্বাবধানে পঁচাখড় চিটাগুড়ের মিশেলে  ছাগল আর বলদ গুলো পরিপুষ্ট হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত