সিলেটটুডে নিউজ ডেস্ক

১৩ নভেম্বর, ২০১৭ ০২:৪০

আজ হুমায়ূন আহমেদের ৭০তম জন্মদিন

বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে জ্বল জ্বল করা নক্ষত্র তিনি। তার বইয়ের ভাষায় কথার জাদুতে মোহিত হননি এমন বাঙালি পাঠক পাওয়া যাবে না। তার নির্মিত চরিত্র হিমু, মিসির আলীরাও পাঠকের কাছে তারকা হয়ে গেছে।

এই কথার জাদুকর আর কেউ নন হুমায়ূন আহমেদ। কিন্তু তাকে ছাড়াই আজ সোমবার পালিত হচ্ছে তার জন্মদিন। আজ সোমবার হুমায়ূন আহমেদের ৭০ তম জন্মদিন। ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন তিনি।

হুমায়ূন আহমেদকে হারানোর শোক আজও লালন করছেন লাখো পাঠকের হৃদয়। তবুও আনন্দ আয়োজনে ভক্ত-পাঠকরা আজ পালন করছে তার জন্মদিন। তবে জন্মদিনের আনুষ্ঠানিকতা তেমন পছন্দ ছিল না হুমায়ূন আহমেদের।

তবুও রাত ঠিক ১২টা ১ মিনিটে প্রিয়জনদের নিয়ে ঠিকই কেক কাটা হতো। সকাল হলে ভক্তরা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাত প্রিয় লেখককে। এছাড়া দিনব্যাপী নানা আয়োজন তো থাকতই।

হুমায়ূন আহমেদের ছোট ভাই অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল দেশের একজন খ্যাতিমান শিক্ষক এবং কথাসাহিত্যিক। সর্বকনিষ্ঠ ভ্রাতা আহসান হাবীব রম্য সাহিত্যিক এবং কার্টুনিস্ট। হুমায়ূন আহমেদের ছোট তিন বোন শিকু, শিফু ও মনি।

ছোটকালে হুমায়ূন আহমেদের নাম রাখা হয়েছিল শামসুর রহমান। ডাক নাম কাজল। তার বাবা নিজের নাম ফয়জুর রহমানের সঙ্গে মিল রেখে ছেলের নাম রাখেন শামসুর রহমান। পরবর্তীতে তিনি নিজেই নাম পরিবর্তন করে হুমায়ূন আহমেদ রাখেন।

বাবার চাকরি সূত্রে নেত্রকোনা, দিনাজপুর, বগুড়া, সিলেট, পঞ্চগড়, রাঙামাটি ও বরিশালে তার শৈশব কেটেছে। সেই সুবাদে দেশের বিভিন্ন স্কুলে লেখাপড়া করার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি বগুড়া জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেন এবং রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে সব গ্রুপে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। পরে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন এবং সেখান থেকেই বিজ্ঞানে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন শাস্ত্রে অধ্যয়ন করেন এবং প্রথম শ্রেণিতে বিএসসি (সম্মান) ও এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন।

হুমায়ূন আহমেদ মুহসীন হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন এবং ৫৬৪ নং কক্ষে ছাত্রজীবন অতিবাহিত করেন। জনপ্রিয় কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা তার রুমমেট। এমএসসি শেষে হুমায়ূন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে পলিমার রসায়ন বিষয়ে গবেষণা করে পিএইচডি লাভ করেন। তবে প্রচারবিমুখ এই বিস্ময় পুরুষ সাধারণত নামের শেষে কখনও ‘ড.’ উপাধি ব্যবহার করতেন না।

কর্মে প্রবেশ করেন ১৯৭৩ সালে, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত থাকা অবস্থায় প্রথম বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ‘তোমাদের জন্য ভালোবাসা’ লিখেছিলেন। ১৯৭৪ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। লেখালেখিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় একসময় অধ্যাপনা ছেড়ে দেন তিনি।

১৯৭৩ সালে দাম্পত্য জীবন শুরু করেন। হুমায়ূন আহমেদের প্রথম স্ত্রীর নাম গুলতেকিন আহমেদ। ভালোবেসে তিনি গুলতেকিনকে বিয়ে করেছিলেন। হুমায়ূন আহমেদের উত্থান ও তার প্রথম জীবনের সংগ্রামে নেপথ্যের নায়িকা হয়ে ছিলেন তার স্ত্রী। হুমায়ূন আহমেদ তার ‘হোটেল গ্রেভার ইন’বইতে সেই সাক্ষ্য নিজেই দিয়ে গেছেন।

হুমায়ূন-গুলতেকিন দম্পতির তিন মেয়ে এবং দুই ছেলে। তিন মেয়ের নাম বিপাশা আহমেদ, নোভা আহমেদ, শীলা আহমেদ এবং ছেলের নাম নুহাশ আহমেদ। অন্য আরেকটি ছেলে অকালে মারা যায়।

১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যভাগ থেকে শীলার বান্ধবী এবং তার বেশ কিছু নাটক-চলচ্চিত্রে অভিনয় করা অভিনেত্রী শাওনের সঙ্গে হুমায়ূন আহমেদের ঘনিষ্ঠতা জন্মে। এর ফলে সৃষ্ট পারিবারিক অশান্তির অবসানকল্পে ২০০৫ সালে গুলতেকিনের সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয় এবং ওই বছরই শাওনকে বিয়ে করেন।

এ ঘরে তাদের তিন ছেলে-মেয়ে জন্মগ্রহণ করে। প্রথম ভূমিষ্ঠ কন্যাটি মারা যায়। সেই কন্যার নাম রেখেছিলেন লীলাবতী। তাকে একটি বইও উৎসর্গ করেছিলেন হুমায়ূন। ছেলেদের নাম নিষাদ হুমায়ূন ও নিনিত হুমায়ূন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হলের ছাত্র থাকা অবস্থায় সাহিত্যে যাত্রা শুরু করেন ‘নন্দিত নরকে’ উপন্যাসের মাধ্যমে, ১৯৭২ সালে। ‘শঙ্খনীল কারাগার’ তার ২য় গ্রন্থ। তারপর থেকে যেখানেই হাত দিয়েছেন হুমায়ূন, সেখানেই সোনা ফলেছে। সময়ের অববাহিকায় দীর্ঘদিনের সাহিত্য জীবনে তিনি রচনা করেছেন প্রায় তিন শতাধিক গ্রন্থ, যা বিশ্ব সাহিত্যে একজন লেখক হিসেবে তাকে দিয়েছে অনন্য মর্যাদা।

তার রচনাসমগ্রের মধ্যে এইসব দিনরাত্রি, জোছনা ও জননীর গল্প, মন্দ্রসপ্তক, দূরে কোথাও, সৌরভ, নি, ফেরা, কৃষ্ণপক্ষ, সাজঘর, বাসর, গৌরীপুর জাংশান, বহুব্রীহি, আশাবরি, দারুচিনি দ্বীপ, শুভ্র, নক্ষত্রের রাত, আমার আছে জল, কোথাও কেউ নেই, আগুনের পরশমণি, শ্রাবণ মেঘের দিন, মেঘ বলেছে যাবো যাবো, মাতাল হাওয়া, শুভ্র গেছে বনে, বাদশাহ নামদার, এপিটাফ, রূপা, আমরা কেউ বাসায় নেই, মেঘের ওপারে বাড়ি, আজ চিত্রার বিয়ে, এই মেঘ, রৌদ্রছায়া, তিথির নীল তোয়ালে, জলপদ্ম, আয়নাঘর, হুমায়ূন আহমেদের হাতে ৫টি নীলপদ্ম ইত্যাদি অন্যতম।

লিখেছেন অসংখ্য ছোট গল্প। তার ছোট গল্পগুলো বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। ভৌতিক গল্পেও জুড়ি নেই হুমায়ূনের। এর বাইরে কবিতা ও গান লেখাতেও হাত চালিয়েছেন। বিশেষ করে একজন গীতিকবি হিসেবে হুমায়ূন ‘বরষার প্রথম দিনে’‘যদি মন কাঁদে তবে চলে এসো’‘চাঁদনি পসর রাইতে যেন আমার মরণ হয়’‘চাঁদনী পসরে কে আমারে স্মরণ করে’‘আমার ভাঙা ঘরে’‘ও আমার উড়াল পঙ্খিরে’ ইত্যাদি গানে নিজেকে কালজয়ী করে রেখেছেন।

তার জন্মদিনকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে হুমায়ূন ভক্তরা বৈচিত্রময় আয়োজন করেন প্রতি বছর। এবারেও তার ব্যতিক্রম নয়।

হুমায়ূনের জন্মদিন উপলক্ষে তারই জন্মভিটা কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুর গ্রামে শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী ও হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা, হুমায়ূন আহমেদের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

প্রতি বছরের মতো এবারেও দেশীয় চ্যানেলগুলোতে থাকছে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে স্মৃতিচারণমূলক নানা আয়োজন। তারমধ্যে আলাদা করে হুমায়ূন মেলা পালন করবে চ্যানেল আই। সেখানে উপস্থিত থাকবেন হুমায়ূন আহমেদের পরিবার ও শোবিজের নানা অঙ্গনের তারকারা।

পাশাপাশি চ্যানেল আইয়ের সেরাকণ্ঠ খ্যাত শিল্পী রাফসান মান্নান, চম্পা বনিক ও বাংলার গানের শিল্পী শারমিন গাইবেন নন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে। ‘গানে গানে সকাল শুরু’ নামের অনুষ্ঠানে তারা গান পরিবেশন করবেন। ১৩ নভেম্বর সকাল ৭টা ৩০ মিনিট থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিতব্য পুরো অনুষ্ঠানেই এই শিল্পীরা গাইবেন শুধুমাত্র হুমায়ূন আহমেদের লেখা গানগুলো।

এছাড়া সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার হলে হুমায়ূন আহমেদের লেখা প্রথম মঞ্চ নাটক ‘নৃপতি’র প্রদর্শনী করবে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়।

দীপ্ত টিভিতে সোমবার সকাল ৭টা ৩০মিনিটে প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দীপ্ত প্রভাতী’। হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ দীপ্ত প্রভাতীতে অতিথি হিসেবে থাকবেন সেলিম চৌধুরী। তিনি গাইবেন হুমায়ূনের লেখা কিছু গান।

এছাড়াও বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচার হবে হুমায়ূন আহমেদ স্মরণে আলোচনা অনুষ্ঠান, সংগীতানুষ্ঠান, হুমায়ূন সাহিত্য নিয়ে নির্মিত নাটক-টেলিছবি। কিছু চ্যানেলে হুমায়ূন আহমেদের নির্মাণে চলচ্চিত্রও প্রচার হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত