সিলেটটুডে ডেস্ক

১০ ডিসেম্বর, ২০১৭ ১৩:২৮

৫৬ যুবকের ব্যতিক্রমী উদ্যোগে গ্রামবাসী পেলেন ভাসমান সেতু

যশোরের মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ বাজারের সাথে ঝাঁপা গ্রামের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিলো নৌকা। এ দুটি গ্রামের মধ্যে ঝাঁপা বাঁওড় হওয়ায় শত শত বছর ধরে ঝাঁপা গ্রামবাসী নৌকা পার হয়ে রাজগঞ্জ বাজারে আসছেন। একইভাবে নৌকায় স্কুল-কলেজে যাতায়াত করছেন ওই এলাকার শতশত শিক্ষার্থী।

দুই গ্রামবাসীর এমন দুর্ভোগ নিরাসনে উদ্যোগী হলেন ঝাঁপা গ্রামের ৫৬ জন যুবক। তাদের নিজস্ব অর্থায়নে শুরু হয় বাঁওড়ের ওপর ভাসমান সেতু তৈরির কাজ।

সেতু নির্মাণের জন্য যুবকরা গঠন করেছেন ঝাঁপা গ্রাম উন্নয়ন ফাউন্ডেশন। প্রায় ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে তৈরি করছেন এক হাজার ফুট লম্বা প্লাস্টিকের ড্রামের ওপর লোহার সেতু। নিজেদের বুদ্ধিমত্তা আর পরিকল্পনা অনুযায়ী ৮৩৯টি প্লাস্টিকের ড্রাম, ৮শ’ মণ লোহার অ্যাঙ্গেল পাত ও ২৫০টি লোহার সিটের মাধ্যমে লোহার পাত দিয়ে একের পর এক ড্রাম যুক্ত করে তৈরি করেছেন চার ফুট চওড়া এক হাজার ফুট দীর্ঘ সেতুটি।

ফাউন্ডেশনের সভাপতি মেহেদী হাসান টুটুল বলেন, "বছর খানেক আগে বাঁওড় পাড়ে বসে গল্প করছিলাম গ্রামের শিক্ষক আসাদুজ্জামানসহ ৫-৬ জন। তখন বাঁওড় থেকে মেশিনে বালি তোলা হচ্ছিল। সেই মেশিনটি রাখা হয়েছিল প্লাস্টিকের ড্রামের ওপর ভাসমান অবস্থায়। তাই দেখে হঠাৎ বুদ্ধি আসে শিক্ষক আসাদুজ্জামানের মাথায়। ড্রাম যদি ভারি মেশিন ভাসিয়ে রাখতে পারে, তবে সেতু কেন নয়? আসাদুজ্জামানের যুক্তি মনে ধরে উপস্থিত সবার। শুরু হয় গ্রামবাসীর সাথে বৈঠক, এরপর ফান্ড তৈরির কাজ।"

তহবিল গঠন সম্পর্কে টুটুল জানান, "চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি আমরা গ্রামবাসীর সাথে প্রথম বৈঠকে বসি। কয়েক দফা আলোচনার পর গ্রামের দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত ৫৬ যুবকের সমন্বয়ে গড়ে তোলা হয় ঝাঁপা গ্রাম উন্নয়ন ফাউন্ডেশন। এরপর সবাই ২০-৩০ হাজার টাকা করে জমা দিয়ে তৈরি করি তহবিল। পরে আগস্ট মাসের দিকে শুরু হয় ভাসমান সেতু তৈরির কাজ।"

টুটুল আরো জানান, "সেতু তৈরিতে কোন প্রযুক্তি জ্ঞান ব্যবহার করা হয়নি। তবে আমরা উপজেলা প্রকৌশলীর সাথে পরামর্শ করেছি। এমনকি জেলা প্রশাসকের দপ্তরেও কথা বলা হয়েছে।"

আগামী ১ জানুয়ারি সেতুটি জনগণের ব্যবহারের জন্য খুলে দেয়া হবে বলে জানিয়ে টুটুল বলেন, "আগে খেয়া পারাপারের জন্য মাঝিদের গ্রামবাসী সপ্তাহে পাঁচ টাকা করে আর বছরে এক মণ করে ধান দিতেন। ওই একই খরচে গ্রামবাসী সেতুটি ব্যবহার করতে পারবেন। তবে অন্য এলাকার লোকজন যেমন টাকা দিয়ে খেয়া পার হতেন, সেতু পার হতে তাদেরকে সেই খরচ দিয়ে চলাচল করতে হবে। আর এই টাকা সংগ্রহ করবেন ঘাটে নৌকা চালানো সেই চার মাঝি। এতে করে মাঝিদের সংসার যেমন চলবে, তেমনি উঠে আসবে সেতু নির্মাণের খরচও।"

সেতুর ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল, ভ্যান, নসিমন, প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাস পারাপার হতে পারবে বলে জানান সেতুর নির্মাতারা।

মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমান বলেন, "ঝাঁপা বাওড়ের ওপর সেতু তৈরির কাজ আমিও দেখেছি। কমিটির কেউ আমাকে বিষয়টি জানায়নি। সেতু পারাপারে গ্রামবাসীর নিজেদের মধ্যে অর্থ আদায়ের বিষয় থাকতে পারে।" তথ্যসূত্রঃ ওয়ান নিউজ বিডি

আপনার মন্তব্য

আলোচিত