রিপন দে

১৪ আগস্ট, ২০১৮ ১৬:২০

লজ্জাবতী বানর

নাম লজ্জাবতী বানর। তবে বাঁদরামির লেশ নেই তিল পরিমাণ। বরং লজ্জায় শরমের এক প্রতীকী ছবি দেখা যায় তাদের মাঝে।

দিনের বেলায় দুই উরুর মধ্যে মাথা গুজিয়ে দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলে। অনেক এলাকায় এদেরকে মুখচোরা বানরও বলে। তবে বানর প্রজাতির মধ্যে এদেরকে শামুক বানরও বলা হয়।
 
এরা মাঝে মাঝে গাছের মগ ডালে পা দিয়ে আঁকড়ে ধরে উল্টো হয়ে ঝুলে থাকে। ঘন চির সবুজ বনে বসবাস করে, চলাচল করে খুব ধীর-স্থিরে। দিনের বেলায় বের হয় না, নববধূর মত নিজেকে আড়ালে রাখতে পছন্দ করে। যত্রতত্র ঘুরাঘুরি করে না। নিজের এলাকায় ছেড়ে যেতে চায় না।

মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, রেমা কালেঙ্গা বনবিট, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানসহ সিলেট ও চট্টগ্রামের ঘন সবুজ বনে এদের দেখা যায়। তবে সে দেখা খুব হাতেগোনা। কারণ এরা নিশাচর প্রাণি এবং দিনের বেলায় গহিন বনের ভিতর এক জায়গায় শামুকের আকার ধারণ করে বসে থাকে। পরিবারসহ এদের দেখা খুব বিরল ঘটনা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণী বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বন্যপ্রাণী গবেষক ড. মনিরুল হাসান খানের প্রাপ্ত তথ্যমতে বাংলাদেশে একমাত্র প্রাণি জগতের আলোকচিত্রী আদনান আজাদ আসিফ লজ্জাবতী বানরের বাচ্চাকাচ্চাসহ একসাথে দেখতে পেরেছেন এবং তাদের ছবি তুলেছেন।
 
তবে তাদের সংখ্যা কত তা নিয়ে সঠিক কোন হিসেব নেই প্রাণিবিদদের কাছে। তবে আশংকাজনক ভাবে কমছে এদের সংখ্যা। কিছুদিন যাবত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র হাসান আল-রাজী চয়নের নেতৃত্বে একটি গবেষক দল এদেরকে নিয়ে গবেষণা শুরু করেছে। এরা ১ জন বা ২ জনের দলে থাকে তবে বাচ্চা।

বর্তমানে বাংলাদেশে প্রাণিজগতের বেশিরভাগ প্রাণি আজ বিরল বা বিপন্ন প্রজাতিতে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। আর দিনে দিনে যত বেগে প্রাণি কমছে তত বেগেই প্রকৃতি হারাচ্ছে তার স্বাভাবিক প্রাকৃতিক ভারসাম্য। প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হলে তা মানব সমাজের জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। বৈচিত্র্যময় সুন্দর প্রাণী জগতের অন্যতম সুন্দর। এ প্রাণিদের একটি হচ্ছে লজ্জাবতী বানর। লজ্জাবতী বানর বনের ঝোপঝাড়ে তেমন একটা নামে না। এরা লম্বা গাছের মগডালে থাকে।

প্রাণিজগতের আলোকচিত্রী ও বন্যপ্রাণি গবেষক আদনান আজাদ আসিফ জানান, লজ্জাবতী বানর নিশাচর প্রাণী। বছরে একবার একটি করে বাচ্চা দেয়। তাদের ইংরেজি নাম Slow loris এবং বৈজ্ঞানিক নাম Nzcticebus coucang। গহিন সবুজ বনের ভিতরে লম্বা গাছের মগডাল থেকে গাছের কচিপাতা, গাছের আঠা, কষ, ছোট ছোট পোকামাকড়, ছোট পাখি এবং বিভিন্ন প্রাণিদের ডিম সাধারণত তারা খাদ্যে হিসেবে গ্রহণ করে। তবে অন্য বানরের মত তারা হাত দিয়ে খায় না, পাখির মত সরাসরি মুখ লাগিয়ে খায়।

তিনি আরও বলেন, এরা খুব শান্ত স্বভাবের। অন্যান্য বন্যপ্রাণির চেয়ে তারা বেশ ধীরে চলে । বিশেষ প্রয়োজন না হলে দিনে এরা চলাচল করে না। অন্য প্রজাতির বানরের ছেয়ে এদের লেজ খুবই ছোট। সাধারণত ৩০ থেকে ৩৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয় যা দুর থেকে চোখে পড়ে না তেমন একটা। এরা সাধারণত একটা করে বাচ্চা দেয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত